মহিষের প্রকারভেদ বল নদী ও জলাভ‚মির মহিষের জাত ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর বাংলাদেশের মহিষ

বাংলাদেশের সব এলাকেতেই মহিষ পালন করা হয়ে থাকে। তবে বিশেষ নদীর চর, সদুদ্র উপকূল দ্বীপাঞ্চল
এবং হাওর-বাঁওড় এলাকায় মহিষ পালন করা হয় বেশি। এদেশে গৃহপালিত মহিষের সংখ্যা প্রায় ১.৪৭
মিলিয়ন(বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৫-২০১৬)। মহিষ প্রধানত হালচাষ ও গ্রামীণ পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। তবে
মহিষের দুধ ও মাংস উৎকৃষ্ট খাদ্য। এ ছাড়া মহিষের গোবর জৈব সার ও জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মহিষের হাড়
পন্যসামগ্রী যেমন বোতাম, চিরুনি ইত্যাদি তৈরি এবং গবাদি প্রাণিখাদ্য ও সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
মহিষে জাতের শ্রেণীবিভাগ:
গৃহপালিত মহিষের জাতগুলোকে আবাসস্থান ও পারিপার্শি¦ক অবস্থার ওপর ভিত্তি কওে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাজলাভূমি মহিষ বা কাদাপানির মহিষ এবং নদী মহিষ বা পরিষ্কার পানির মহিষ
জলাভূমির মহিষ
জলাভূমির মহিষের বুক সাধারণত চওড়া, দেহ মাংসল ও গোলাকৃতির যা দেখতে অনেকটা ব্যারেলের মতো। এদের শিং
বেশ চওড়া, লম্বা ও চন্দ্রাকৃতির। ষাঁড় ও গাভীর ওজন সাধারণত যথাক্রমে ৫০০ ও ৪০০ কেজি। ষাঁড় ও গাভীর উচ্চতা
সাধারণত গড়ে ১৩৫ সে.মি, হয়ে থাকে। এদের পা খাটো এবং কপাল ও মুখমন্ডল চ্যাপ্টা। গায়ের রং গাঢ় ধূসর থেকে
সাদা হয়। চামড়ার রঙ নীলচে কালো থেকে ধূষর কালো হয়ে থাকে। গলকম্বলের উপরিভাগ থেকে গলার পাদদেশে পর্যন্ত
বক্রাকৃতির দাগ থাকে। এরা অত্যন্ত কম দুধ উৎপাদন করে, দৈনিক গড়ে ১ লিটারের মতো যা বাছুরের জন্যই যথেষ্ট নয়।
এরা ৩৯৪ দিনে গড়ে মাত্র ৩৩৬ লিটার দুধ দিয়ে থাকে। শারীরিক বৃদ্ধির হার কম, ফলে বয়: প্রাপ্তি বিলম্বে ঘটে; সাধারণত
তিন বছরের পূর্বে পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে না। গর্ভকালে ৩২৫-৩৩০ দিন। সাধারণত নিচুকর্দমাক্ত জলাভূমিতে থাকতে পছন্দ
করে, কাদায় গড়াগড়ি দেয় এবং জলাভূমি ও আইলের মোটা আঁশজাতীয় ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এরা প্রধানত
শক্তির কাজেই পটু। তাই হাল, মই ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়। দুধ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম কিন্তু মাংসের জন্য ভালো।
নদীর মহিষ
উন্নত জাতের মহিষের মধ্যে মুররা, নিলি রাভি, মনিপুরী, জাফরাবাদী, নাগপুরী, কুন্ডি, সুরাটি, টোডো, মন্ডা, সম্বলপুরী,
টরাই, মেহসানা উল্লেখযোগ্য। মুররা, নিলি রাভি জাতের মহিষ সরকারী খামারে ( মহিষ প্রজনন খামার, বাগেরহাট) পালন
করা হয়।
১। নীলি (ঘরষর)
এ জাতের মহিষের সাথে মুররা মহিষের বেশ মিল আছে। এদের অনেক বৈশিষ্ট্য প্রায় এক রকম।
বিজ্ঞানীদের মতে মুররা জাত থেকেই এদের উদ্ভব হয়েছে। তবে আকার, মুখাকৃতি ও কপালের মধ্যে বেশ পার্থক্য
বিদ্যমান। পাকিস্তানের মন্টগোমারি জেলার শতদ্রæ নদীর উভয় পাশে এদের আদি বাসস্থান। ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন
স্থানে নীলি জাতের মহিষ পাওয়া যায়। শতদ্রæ নদীর নীল পানির বর্ণনায় এদের নামকরণ নীলি রাখা হয়েছে।
জাত বৈশিষ্ট্য:
এদের গায়ের ও পশমের রং কালো। কিন্তু ১০-১৫% বাদামি রঙেরও
দেখা যায়। দেহাকৃতি মাঝারি ধরনের। কপাল, মুখ, থুতনি, পা এবং
লেজের অগ্রভাগে সাদা চিহ্ন দেখা যায়। অনেকটা লম্বাকৃতির মাথার
উপরিভাগ স্ফীত এবং দুচোখের মধ্যবর্তী স্থান একটু চাপা। ওলান এবং
সিনায় মাঝে মাঝে পিঙ্গল চিহৃ দেখা যায়। শিং ছোট ও শক্তভাবে
প্যাঁচানো ঘাড় লম্বা, চিকন ও মসৃণ। ওলান উন্নত লেজ লম্বা। ষাঁড় ও
গাভী মহিষের গড় উচ্চতা যথাক্রমে ১৩৭ ও ১২৭ সে.মি. এবং দৈর্ঘ্য
যথাক্রমে ১৫৭ ও ১৪৭ সে.মি.।
২। রাভি (জধার)
এ জাতের মহিষ দুধের জন্য প্রসিদ্ধ। পাক-ভারতের অন্তর্গত রাভি নদীর উভয় পাশের্^ এদের আদি বাসভূমি। এজন্য এদের
নাম রাভি রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের লায়ালপুর জেলা, ওকারা, মন্টগোমারি, ভারতের গুজরাট ও চিনাব নদীর উপতাকায়
এবং ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে এদের পাওয়া যায়।
জাত বৈশিষ্ট্য:
রাভি মহিষ বৃহদাকৃতির দেহের অধিকারী। গাভীর মাথা মোটা ও ভারি। মাথার মধ্যভাগ উত্তল, শিং প্রশস্ত, মোটা ও
কোকড়ানো। থুতনি স্পষ্ট, ওলান সুগঠিত। লেজ বেশ লম্বা এবং প্রান্তদেশে সাদা লোম আছে। গায়ের রং কালো, তবে
কোনো সময় বাদামি রঙেরও হয়। ষাঁড় ও গাভী মহিষের উচ্চতা যথাক্রমে ১৩২ ও ১২৭ সেমি এবং দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৫৪
ও ১৪৯ সেমি এবং ওজন যথাক্রমে ৬০০ ও ৬৪৫ কেজি।
৩। মুররা
এ জাতের মহিষের উৎপত্তিস্থল ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে, দিল্লির আশপাশ এলাকা। বর্তমানে পাকিস্তানের
পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে এ জাতের মহিষ বেশি পাওয়া যায়। এটি দুগ্ধপ্রদানকারী বিশেষ জাত।
বৈশিষ্ট্য:
১. এদের দেহ আকারে বেশ বড় হয়।
২. শিং ছোট এবং বাঁকানো হয়।
৩. গায়ের রং সাধারণত কালো হয়।
৪. স্ত্রী মহিষের পিছনের তুলনায় সম্মুখ ভাগ হালকা হয়।
৫. এরা দুধের জন্য প্রসিদ্ধ।
৬. একটি গাভী মহিষ দিনে প্রায় ২২-২৭ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।
৭. কপাল বড়, চওড়া ও উন্নত।
৮. পা খাটো, মোটা এবং ওলানগ্রন্থি খুব বড়।
৯. দেহের পশ্চাৎ ভাগ অপেক্ষাকৃত চওড়া ও ভারী।
১০. গাভী ও ষাঁড়ের ওজন কম বেশি ৫৬৭ ও ৫৩০ কেজি।
১১. বলদ মহিষ হালচাষ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।
১২. বাঁট লম্বা, সামনের বাঁটের চেয়ে পিছনের বাঁট লম্বা।
১৩. বাৎসরিক দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০-৩০০০ লিটার।
বাংলাদেশের মহিষ
এদেশে মহিষের কোনো উল্লেখযোগ্য জাত নেই । উপকূলীয়, হাওর এবং আখ উৎপাদনকারী এলাকাসমূহে মহিষের বিস্তৃতি
তুলনামূলক ভাবে বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশের মহিষকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- নদী, জলাভূমি এবং
নদী ও জলাভূমির মহিষের সংকর। দেশের পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যে সমতলভূমিতে নদীর মহিষ দেখা যায়। এরা প্রধানত
ভারতের দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের মহিষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। দেশের পূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় জলাভূমির মহিষ ও সংকর মহিষের অবস্থান।
সারসংক্ষেপ
নদীর মহিষের মধ্যে মুররা, নিলি, রাভি, সুরাটি, জাফরাবাদি প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য্ মুররা, রাভি প্রভৃতি জাতের
মহিষ দুধ উৎপাদনের জন্য ভালো। এদেশের মহিষ তিন প্রকার। যথা- জলাভ‚মি, নদী এবং জলাভ‚মি ও নদীর মহিষের
সংকর। বাংলাদেশের মহিষের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা কম।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১১.৪
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। জলাভ‚মির মহিষের গর্ভাকাল কত দিন?
(ক) ২৯০-৩০০ দিন (খ) ২৭০-২৮০ দিন
(গ) ৩২৫-৩৩০ দিন (ঘ) ৩৫০-৩৬০ দিন
২। কোন জাতের মহিষের সাথে মুররা মহিষের মিল রয়েছে?
(ক) ম্যারিড (খ) নীলি
(গ) রাভি (ঘ) সুরাটি
৩। কোন জাতের মহিষ দুধের জন্য প্রসিদ্ধÑ
(ক) রাভি (খ) জাফরাবাদী
(গ) মুররা (ঘ) মেশানা

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]