দুধ উৎপাদন বৃষ্টির নিয়ামকসমূহ সম্পর্কে জান দুধ উৎপাদনের সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা

দুধ হলো আদর্শ খাদ্য, যা খাদ্যের প্রায় সব উপাদান বহন করে। সুস্থ ববল গাভী থেকে পরিমিত দুধ পাওয়া
যায়। আমাদের দেশের গাভীগুলোর দুধ উৎপাদনক্ষমতা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। এর পেছনে কিছু পরিবেশ
ও জাতগত কারণ রয়েছে। এক এক জাতের গাভীর দুধ উৎপাদনক্ষমতা একেক রকম। জাত ছাড়াও অন্য বিষয় আছে, যা
দুধ উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক। আগে জেনে নেয়া যাক কোন বিষয়গুলোর ওপর দুধ উৎপাদন নির্ভরশীল।
গাভীর আকার : গাভীর আকারের ওপর উৎপাদন অনেকটা নির্ভর করে। সাধারণত বড় আকারের গাভী থেকে বেশি দুধ পাওয়া যায়।
পুষ্টি : গাভীর পুষ্টির ওপর অনেকাংশে দুধ উৎপাদন নির্ভর করে। দুধ নিঃসারক কোষে দুধ সৃষ্টি করতে পারে যদি পর্যাপ্ত
পুষ্টি পায় আর গাভীর পুষ্টির উৎস দুটি- তার নিজের দেহ এবং খাদ্য।
বাছুর প্রসবের সময় : বাছুর প্রসবের সময়ের ওপর দুধ উৎপাদন নির্ভর করে। শরৎকালে গাভীর বাচ্চা প্রসবে বসন্ত ঋতুতে
প্রসব অপেক্ষা প্রায় ১০% অধিক দুধ উৎপাদিত হয়। এর কিছু আবহাওয়াগত কারণ রয়েছে।
বয়স : সাধারণত গাভী তার তিন থেকে ছয় (বাছুর সংখ্যা) দুধকাল সর্বোচ্চ পরিমাণ দুধ দেয়।
স্বাস্থ্য : গাভীর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে দুধ উৎপাদন অনেকটা ভালো হয়।
আদর্শ ব্যবস্থাপনা : দুধ দোহনের উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা এবং বাসগৃহ ও অন্যান্য সামগ্রীর পরিচালনা দুধ উৎপাদনে প্রভাব রয়েছে।
ড্রাই পিরিয়ড বৃদ্ধি : ড্রাই পিরিয়ড বলতে গাভীর বাছুর বড় হওয়ার পর থেকে পুনরায় গর্ভবতী হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়কে
বোঝায়। এই সময় সাধারণত ৫০-৬০ দিন হলে ভালো হয়। এই সময়ে গাভী তার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে এবং পরবর্তী
বাছুরের জন্য নিজের দেহকে সুষ্ঠুভাবে তৈরি করতে পারবে। আজ এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, ড্রাই পিরিয়ড বৃদ্ধি
পেলে দুধ উৎপাদন বাড়ে।
সুষম খাদ্যের সরবরাহ : গর্ভবতী গাভীর জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য সরবরাহ। এ সময় প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি প্রয়োজন, যা
গাভীর নিজের ও বাছুরের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ। গাভীর পুষ্টির ওপর নির্ভর করে দুধ উৎপাদনক্ষমতা ও বাচ্চার দেহের গঠন। তাই গর্ভবতী গাভীকে বিশেষভাবে সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ : দেহের পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সুষম পানি প্রয়োজন। পরিমিত পানি দেহের মেটাবলিজম ঠিক রাখে।
প্রসবকালে গাভীর পরিচর্যা নিশ্চিত করা : গাভীর বাছুর প্রসবকালে নিতে হবে বাড়তি পরিচর্যা। এ সময় গাভীকে নরম
বিছানার (খড় বিছিয়ে) ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত বকনা গরুর ক্ষেত্রে প্রথম বাছুর প্রসবকালে সমস্যা একটু বেশি হয়।
তাই বাছুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাভীকে কিছু কুসুম গরম পানি ও তার সঙ্গে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ কিছু খাওয়াতে হবে। এতে
গাভীর শরীর ঠিক থাকে। এ সময় মিল্ক ফিভার (দুধ জ্বর) যাতে না হয় সে জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম খাবারের সঙ্গে
দিতে হবে। বাছুর প্রসবের প্রায় এক সপ্তাহ আগে ভিটামিন ডি খাওয়ালে গাভীর জন্য সহায়ক হয়।
গাভীকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা : বাছুর প্রসবের পর গাভীকে সঠিকভাবে গোসল করাতে বা পরিষ্কার করতে হবে। শীতের
দিন হলে হালকা গরম পানি দিযে হলেও পরিষ্কার করতে হবে; যা দেহের বহি:পরজীবী দূর করতে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে
সহায়তা করে। আর তাপমাত্রার সঙ্গে দুধ উৎপাদনের একটা সম্পর্ক রয়েছে। বাছুর প্রসবের পর এমনিতেই দেহের দুর্বলতা
প্রকাশ পায়। এর সুযোগ নিয়ে জীবাণু সহজে বংশ বিস্তার ও রোগ ছড়াতে পারে। আর জীবাণু পরজীবীর জন্য উপযুক্ত
পরিবেশ হলো অপরিচ্ছন্নতা। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মতি পরিষ্কার রাখতে হবে। গরমকালে প্রতিদিন না হলেও
সপ্তাহে অন্তত দুবার গোসল করানো ভালো। শীতকালে তেমন সম্ভব না হলে ব্রাশ দিয়ে শরীরের লোম পরিষ্কার করতে
হবে। এতে লোমের অর্থাৎ সারা শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক থাকে, যা দুধ উৎপাদনে সহায়ক।
গাভীর বাসস্থান পরিচ্ছন্ন রাখা : যে স্থানে গাভীকে রাখা হয় তার ওপর গাভীর স্বাস্থ্য ও দুধ উৎপাদন অনেকটা নির্ভর করে।
ভালো ভ্যানটিলেশন, শুকনো ও স্যাঁতসেঁতেমুক্ত পরিবেশে গাভীকে রাখতে হবে। এতে লোমের অর্থাৎ সারা শরীরে
রক্তপ্রবাহ ঠিক থাকে, যা দুধ উৎপাদনে সহায়ক। বাচ্চা প্রসবের আগে ও পরে কিছু দিন বাসস্থানকে আগে আরামদায়ক
করতে শুকনো খড় ব্যবহার করা উত্তম। ময়লা-আবর্জনা যেখানে সেখানে রাখা উচিত নয়। এতে কৃমি বৃদ্ধি পেতে পারে। সপ্তাহে অন্তত দুবার বিøচিং পউডার দিয়ে গাভীর স্থানের মেঝে পরিষ্কার করতে হবে। এতে জীবাণুর প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কমানো যায়।
পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাসের সরবরাহ করা : গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়াতে কাঁচা ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। সুষম খাদ্যের
পাশাপাশি কাঁচা ঘাস দুধ উৎপাদন বাড়ায়। ঘাসের বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতিতে দুধের উৎপাদন বাড়ায়।
নির্দিষ্ট সময়ে দোহন করা : প্রতিদিন একই সময়ে দুধ দোহন করলে এর উৎপাদন ভালো থাকে। গাভীর দেহের হরমোন
তখন ভালো কাজ করতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ে একই ব্যক্তি দ্বারা দুধ দোহন করলে দুধ উৎপাদনের মান ভালো থাকে বলে
প্রমাণিত কয়েছে। অন্য ব্যক্তি বা পদ্ধতির পরিবর্তন হলে গাভী অনেকটা বিরক্ত হয়। ফলে দুধ উৎপাদন কমে যায়।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দোহন শেষ করা : দুধ নিঃসরণের সঙ্গে জড়িত হরমোন অক্সিটোসিন মাত্র ৮ মিনিট কাজ করে। এ
জন্য ওই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ দুধ পেতে দোহন শেষ করতে হবে।
ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স খাওয়ানো : বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের মিক্সড পাউডার পাওয়া যায়, যা ভিটামিন, মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করে দুধ উৎপাদন বাড়ায়। ভিটামিন ডি, বি-সহ বিভিন্ন নামে বাজারে পাওয়া যায়; যা খাবারের সঙ্গে সরবরাহ করতে হয়।
সারসংক্ষেপ
দুধ অন্য যে কোন খাদ্য উপাদান থেকে শ্রেষ্ট। দুগ্ধবতী গাভীর জন্য সুষম খাদ্য অপরিহার্য। বিশেষ করে কাঁচা ঘাস
যোগানের মাধ্যমে দুধের পরিমান ও গুনগত মান বাড়ানো যায়। সুষম খাদ্যের পাশাপাশি গাভীর স্বাস্থ্য, জৈব নিরাপত্তা ও
বসবাসের পরিবেশের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১৪.৬
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। গাভী তার কত বাছুর সংখ্যা পর্যন্ত সর্বোচ্চ দুধ দেয়?
(ক) ১-২ (খ) ২-৩
(গ) ৩-৬ (ঘ) ৪-৭
২। গাভীর ড্রাই পিরিয়ড কত দিন হরে উত্তম?
(ক) ৪০-৫০ দিন (খ) ৫০-৬০ দিন
(গ) ৬০-৭০ দিন (ঘ) ৭০-৮০ দিন
ব্যবহারিক : বাণিজ্যিক ডেইরি ফার্ম পরিদর্শন ও প্রতিবেদন তৈরি
মূলতত্ত¡: বাণিজ্যিক গাভী পালন করতে হলে গাভীর জন্য ভাল বাসস্থান প্রয়োজন। বাণিজ্যিক খামার বড় রাস্তার
পাশে উঁচু জায়গায় করতে হয় যাতে বৃষ্টির পানি না জমে এবং দুধ দোহনের পর তাড়াতাড়ি স্থানান্তর করা যায়।
প্রোটিনের চাহিদা পূরণে দুধের কোন বিকল্প নেই। আর তার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে উন্নত জাতের দুধাল গাভী
পালন। ব্যবহারিক পাঠের এ অংশে একটি বাণিজ্যিক ডেইরি খামার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উন্নত জাতের গাভী
পালনের জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।
চিত্র-১৪.৭.১ : ডেইরি ফার্ম
প্রয়োজনীয় উপকরণ
১. একটি বাণিজ্যিক খামর
২. খাতা, কলম ইত্যাদি
কাজের ধারা
১. প্রথমে শ্রেণীশিক্ষরের সাথে কয়েকজন ছাত্র মিলে একটা দল গঠন করে কলেজের নিকটবর্তী কোন বাণিজ্যিক
ডেইরি খামর পরিদর্শনে বের হন।
২. খামার বিভিন্ন জাতের গাভী এবং তাদের ঘর পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করে খাতায় নোট করুন।
৩. খামারের গাভীর খাদ্য প্রদান ও অন্যান্য লালন পালন ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে খাতায় লেখুন।
৪. গাভীর রোগ- ব্যাধির চিবিৎসা ও টিকা প্রদান সম্বন্ধে খামার তত্ত¡বধায়কের নিকট থেকে জেনে নিন।
৫. খামারের দৈনিক কার্যক্রম, উৎপাদন, আয় ও খরচের হিসাব রেজিস্টার খাতা দেখে বুঝে নিন এবং নোট করুন।
৬. খামারের দুধ দোহন পদ্ধতি ও পরিমাণ জেনে নিন।
৭. খামারের অন্যান্য স্বাস্থ্যসম্মত পালন ব্যবস্থা খাতায় নোট করুন।
সাবধানতা
১. খামার তত্ত¡াবধায়কের অনুমতি ছাড়া খামারের কোন জিনিসপত্রে হাত না দেওয়া বা ব্যবহার না করা।
২. গবাদি পশুগুলোকে অযথা বিরক্ত না করা।
খামারের সমস্ত কার্যক্রম দক্ষতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]