কৃষি ও বৃক্ষ মেলার উদ্দেশ্য বর্ণনা কর কৃষি ও বৃক্ষ মেলার গুরুত্ব কী তা বল

কৃষি ও বৃক্ষ সম্পর্কে সাধারণভাবে দেশের আপামর জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি এ বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার
লক্ষে কৃষি বিষয়ক আধুনিক প্রযুক্তি যেমন: উন্নত ফসলের জাত, আধুনিক চাষাবাদের কলাকৌশল, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি,
কৃষকের উৎপাদিত দর্শনীয় কৃষি সামগ্রী, বিভিন্ন প্রকারের ফল-ফসল ও বৃক্ষের চারা সর্বসাধারণের মাঝে প্রদর্শন ও বিক্রি
করার জন্য উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে যে মেলার আয়োজন করা হয় তাকে কৃষি ও বৃক্ষ মেলা বলে অভিহিত করা
হয়। সাধারণভাবে কৃষি ও বৃক্ষ মেলায় জনসাধারণের মাঝে কৃষি ও বৃক্ষ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ফুলফল-ফসল সম্পর্কিত উন্নত জ্ঞান সম্প্রসারণ, ফসল ও বৃক্ষের চারা উৎপাদন, রোপণ ও সুষ্ঠ ব্যবহারের আগ্রহ সৃষ্টির প্রয়াস
চালানো হয়। মেলা হচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য প্রদর্শনী, আকর্ষনীয় পণ্যের বেচাকেনা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের একটি
কৌশল । কাজেই যে মেলায় কৃষি পণ্য প্রদর্শন, বিক্রয় ও কৃষকদের মাঝে এতদবিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টির আয়োজন করা হয়
তাকে কৃষি মেলা বলে। সাধারণত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগেই প্রতিবছর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ মেলার
বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। দেশের বনভূমি সংকুচিত হওয়ার প্রেক্ষিতে যুবজাগরণ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সরকার ১৯৯৪ সালে
সর্বপ্রথম জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষমেলা প্রবর্তন ও তিন মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান চালু করে। বৃক্ষরোপণে সাধারণ মানুষের
আগ্রহ সৃষ্টির জন্য ১৯৯০ সাল থেকে ’বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার’ ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। বৃক্ষরোপণকে একটি
সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার লক্ষে ২০০১-০২ সাল থেকে প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়সহ বিভাগ, জেলা ও উপজেলা
পর্যায়ে বৃক্ষ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে কৃষি ও বৃক্ষ মেলা কৃষকদের মাঝে নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি হস্তান্তরের
একটি শক্তিশালী মাধ্যম। নি¤েœর পাঠসমূহে কৃষি ও মেলার উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব, বৃক্ষ মেলার উপযোগী প্রজাতি নির্বাচন,
উপজেলা ও জাতীয় পর্যায়ে বৃক্ষ মেলার আয়োজন ও বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কৃষি ও বৃক্ষ মেলা বর্তমান বাংলাদেশের সমাজ জীবনে একটি প্রয়োজনীয় আনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই
প্রতিবছর একটি নিদিষ্ট সময়ে এ মেলাগুলো নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে যে মেলায় সচরাচর
বিরল ও উন্নতজাতের কৃষি সামগ্রী, কৃষি প্রযুক্তি ও উপকরণ প্রদর্শন ও বেচাকেনা হয় তাকেই কৃষি মেলা বলে। অন্যদিকে
যে মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের চারা উৎপাদন, রোপণ, সংরক্ষণ ও সুষ্ঠ ব্যবহারের আগ্রহ সৃষ্টির প্রয়াস চালানো হয়
তাকে বৃক্ষ মেলা বলা হয়।
কৃষি মেলার উদ্দেশ্য
ক. কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট, ব্যক্তি উদ্দ্যোগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তি এ মেলায় প্রদর্শন করা।
খ. উদ্ভাবিত উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তিসমূহ সরাসরি প্রদর্শনপূর্বক এগুলো গ্রহণের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার ব্যাপারে
জনগণকে উৎসাহিত করা।
গ. কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ও উদ্ভাবিত কলাকৌশলের মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদেরকে এ ধরণের উদ্ভাবনে আরও
আগ্রহী করে তোলা।
ঘ. সাধারণ জনগণকে পুরানো অলাভজনক পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতির সুফল গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা।
ঙ. শস্য উৎপাদন ও সংরক্ষণে পরিবেশবান্ধব জৈবিক পদ্ধতির ভালোমন্দ হাতে কলমে প্রদর্শন করা.
চ. উন্নত প্রজাতির গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির জাত প্রদর্শনের মাধ্যমে কৃষকদের আর্থিক লাভের বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করা।
ছ. সমম্বিত খামার ব্যবস্থাপনার সফল সম্পর্কে প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাস্তব জ্ঞান দেওয়া।
কৃষি মেলার গুরুত্ব
সরকার কৃষি সম্পর্কিত সামাজিক কলাকৌশল জনগণের দোরগোড়ায় পৌছানোর জন্য কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর, মাৎস্য ও
পশুপালন অধিদপ্তরসহ কৃষি সম্পর্কিত সব ধরনের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তা সত্তে¡ও
কৃষির উন্নয়ন ও কৃষি সম্পদের বিপণনের জন্য কৃষি মেলা ব্যাপক ভ‚মিকা পালন করে। কারণ মেলা অনুষ্ঠানের সময়
ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়াও শুধু বিনোদনের জন্য ব্যাপক সংখ্যক মানুষের সমাগম হওয়ায় মেলায় প্রদর্শিত পণ্য ও প্রযুক্তিসমূহ
সাধারণ মানুষের নজর কাড়ে। জনে জনে আলোচনার ফলে বিষয়টি অধিক সংখ্যক মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে
আসে। এমন নানাবিধ কারণে কৃষি মেলার গুরুত্ব অত্যধিক।
বৃক্ষ মেলার উদ্দেশ্য
ক. বৃক্ষ রোপণে জনগণের সচেতনতা সৃষ্টি করা ।
খ. জনগনকে বৃক্ষের সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের সমাহার ঘটানো ও এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা।
গ. জনগণকে বৃক্ষ রোপণে আগ্রহী করে তোলার জন্য তাদের প্রয়োজনানুযায়ী চারা সরবরাহ করা।
ঘ. আধুনিক জ্ঞান সমৃদ্ধ পুস্তিকা, লিফলেট, প্যামলেট, ফোল্ডার ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণকে আগ্রহী করে তোলা।
ঙ. কাঠের বহুবিধ ব্যবহার এবং এর নান্দনিক দিক জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরা।
চ. বৃক্ষরোপণ ও চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিক লাভের বিষয় প্রচার করা।
ছ. বৃক্ষরাজি সম্প্রাসারণের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করা।
বৃক্ষ মেলার গুরুত্ব
দেশের বনভূমি সংকুচিত হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বৃক্ষ সম্পদ বাড়ানোর জন্য বৃক্ষ মেলার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সরকারীভাবে
বন বিভাগ বৃক্ষ রোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার লক্ষে ১৯৯৪ সন থেকে দেশব্যাপী বৃক্ষ মেলার প্রবর্তন
করে। তারপর থেকে প্রতিবছর ঢাকায় বৃক্ষ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জনগণের স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণে এ মেলা মুূখরিত হয়ে
উঠেছে। প্রতিবছরই লাখ লাখ চারা বিক্রি হচ্ছে এবং বৃক্ষ রোপণ অভিযানকে স্বার্থক ও সফল করে তুলছে। বাংলাদেশের
ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এ মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। জনগণ এ মেলাসমূহের কারণে বৃক্ষ রোপণে আগ্রহী হওয়ায়
দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। জনবহুল
আমাদের এদেশে চাহিদার তুলনায় বৃক্ষ সম্পদ অপ্রতুল। এ পরিস্থিতিতে বৃক্ষ সম্পদ বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন যা
সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে আমাদেরকে বৃক্ষ রোপণ ও সংরক্ষণ করে এ
সম্পদকে বাড়াতে হবে। তাই জনগনকে উদ্ভুদ্ধ করে বনায়নে সম্পৃক্ত করার জন্যই বৃক্ষ মেলার আয়োজন একান্ত প্রয়োজন।
বর্তমানে বৃক্ষ রোপণ একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ উন্নয়নের আন্দোলনে পরিনত হয়েছে। সরকারও বৃক্ষ
রোপণকে একটি জাতীয় কর্মসূচী হিসেবে ঘোষনা করেছে। তাই বৃক্ষ রোপণের এ কর্মসূচীকে সামগ্রিকভাবে সার্থক করে
তুলতে হলে বৃক্ষ মেলার মাধ্যমে চারার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বৃক্ষ রোপণ মৌসুমে জনসাধারণ অনেক সময়
ভালো চারা না পেয়ে নি¤œমানের চারা রোপণ করেন। সেজন্য বৃক্ষ মেলার মাধ্যমে ভালো চারার সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক ভিত্তিতে এ মেলা অনুষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে।
সারসংক্ষেপ
কৃষি মেলার মাধ্যমে কৃষক ও সাধারণ জনগণ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি খুব সহজেই হাতের নাগালে পেয়ে যায় আর বৃক্ষ
মেলার মাধ্যমে বিচিত্র প্রজাতির গাছ পালার সাথে পরিচিত হওয়ায় মানুষ ব্যাপকভাবে বৃক্ষ রোপণে উৎসাহিত হয়। ফলে
পরিবেশের উন্নয়ন ঘটে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১৬.১
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
নিচের উদ্দীপকের আলোকে ১ নং ও ২ নং প্রশ্নের উত্তর দিন ।
জনগণকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করার জন্য প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এসব মেলায় উন্নত
জাতের বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের চারা পাওয়া যায়। বর্তমানে বৃক্ষরোপণে জনগণ ব্যাপকভাবে আগ্রহী হচ্ছে।
১। উদ্দীপকে উল্লেখিত মেলার নাম কি ?
ক) কৃষি ও বৃক্ষ মেলা খ) ফল ও সব্জি মেলা
গ) বীজের মেলা ঘ) ফুলের মেলা
২। এসব মেলার কারণে বৃক্ষরোপণ পরিণত হয়েছে -
র. সামাজিক আন্দোলনে।
রর. অর্থনৈতিক উন্নয়নের আন্দোলনে।
ররর. পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ আন্দোলনে।
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]