শস্য পরিকল্পনা কি শস্য পরিকল্পনার অর্থনৈতিক বিষয়গুলো আলোচনা কর শস্য পঞ্জিকার শস্য পর্যায় ব্যাখ্যা কর

শস্য পরিকল্পনা
সাফল্যজনকভাবে ফসল উৎপাদনের পূর্বশর্ত হল শস্য পরিকল্পনা। বৈজ্ঞানিক ও সঠিকভাবে শস্য পরিকল্পনা প্রনয়ন করলে
ফসল উৎপাদনের ধারা বজায় থাকবে এবং উৎপাদন বহুলাংশে বেড়ে যাবে। শস্য পরিকল্পনা যেমন- প্রাকৃতিক বিষয়ের
উপর নির্ভর করে তেমনি কৃষকের পারিবারিক খাদ্য চাহিদা, শ্রম ও পুঁজির সংস্থান, আর্থিক সঙ্গতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিতে
হয়। সাধারণভাবে শস্য পরিকল্পনা প্রনয়নের জন্য পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক বাজেট করতে হবে। যেসব অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে
বিবেচনা করতে হবে তা হলোক) পারিবারিক খাদ্য চাহিদা।
খ) কৃষকের মোট জমির পরিমান।
গ) পারিবারিক শ্রমের পরিমান।
ঘ) উপকরণ খরচ ও পুঁজির পরিমান।
ঙ) ঋনের সংস্থান।
চ) আগাম জাতের ফসল।
ছ) ফসল চক্র অণুসরণ করা।
জ) ফসলের দাম।
ঝ) নগদ অর্থের চাহিদা।
শস্য পঞ্জিকা
সঠিক শস্য নির্বাচন এবং সফলভাবে শস্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন একটি নির্দেশিকা। এই নির্দেশিকাই শস্য পঞ্জিকা।
ফসলের জীবনকাল, উৎপাদন কৌশল প্রভৃতি তথ্যাবলিকে সারণি ছক, রেখাচিত্র বা চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপনাকে ফসল
পঞ্জিকা বলে, অর্থাৎ কোন মাসে কোন কাজ সম্পাদনা করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত পরিকল্পনাই শস্য পঞ্জিকা।
শস্য পঞ্জিকার প্রকারভেদ
শস্য পঞ্জিকা নি¤œ লিখিতভাবে তৈরি করা যায়।
ক) ছক/সারণিমূলক: এই শস্য পঞ্জিকাতে সারণির মাধ্যমে ফসল সংক্রান্ত ও চাষাবাদ কলাকৌশল তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
১। বিস্তারিত/বর্ণনামূলক।
২। মাসওয়ারী/কাজভিত্তিক।
খ) রেখাচিত্র: এ ধরনের পঞ্জিকায় রেখাচিত্রের মাধ্যমে শস্যে বপনকাল, বৃদ্ধির, পাকার এবং কর্তনের সময় প্রকাশ করা হয়।
গ) ছবি সম্বলিত: এই পঞ্জিকায় ফসলের চাষাবাদ কৌশল বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। নিরক্ষর কৃষকগণের জন্য পঞ্জিকা উপযোগী তবে ব্যয়বহুল।
শস্য পঞ্জিকার গুরুত্ব:
১। ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন কলাকৌশল সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়।
২। বিভিন্ন ফসলের জীবনকাল সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা যায়।
৩। শস্য পর্যায় তালিকা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৪। শস্য চাষ পরিকল্পনা প্রণয়নে সহজতর করে।
৫। খামার ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়।
৬। কোন কারনে ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হলে ফসল পঞ্জিকার মাধ্যমে সেই স্থানে বিকল্প ফসল চাষ করা যায়।
৭। ফসল উৎপাদনের আয়ব্যয় হিসাব করা সহজ হয়।
শস্য পর্যায় বা ফসল চক্র
একটি নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচিত কিছু শস্য ধারাবাহিকভাবে জন্মানোকে শস্য পর্যায় বলে। ক্রমবর্ধমান
জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এবং মাটির উর্বরতা সংরক্ষনের জন্য সঠিক শস্য পর্যায় বা শস্য চক্র অনুসরন
করা অত্যাবশ্যক। শস্য পর্যায়ের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী ফসলগুলো সাজাতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য
পর্যায়ক্রমে চাষ করতে হবে। শস্য পর্যায় সাধারণত ২-৪ বছর হলে লাভজনক ফসল উৎপাদন সম্ভব। শস্য পর্যায়ের নীতিমালা
১। স্থানীয় জলবায়ু, মাটি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে ফসল নির্বাচন করতে হবে।
২। অগভীর শস্য উৎপাদনের পর গভীর শস্য উৎপাদন করতে হবে।
৩। অধিক পুষ্টি উপাদান শোষণকারী ফসলের পর কম খাদ্যেপাদান শোষনকারী ফসলের চাষ করতে হবে।
৪। অধিক লাভজনক ফসল নির্বাচন করতে হবে। যেমন- শহর এলাকার নিকট শাক সবজি, চিনি কলের পাশে আখ ও
পাট কল শিল্প এলাকার পাশে পাট ফসল নির্বাচন করতে হবে।
৫। পশু খাদ্যের উপযোগী ফসল শস্য পর্যায়ে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
৬। শস্য পর্যায় এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সারাবছর শ্রমিকের কাজ থাকে।
৭। স্থানীয় চাহিদা ও বাজার ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে ফসল নির্বাচন করতে হবে।
৮। তিন বা চার বছর পর এক মৌসুম জমি পতিত রাখতে হবে।
শস্য পর্যায় অবলম্বনের মৌলনীতি : প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্পন্ন অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে
শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে নি¤œবর্ণিত বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
১. এলাকার জলবায়ু ও মাটিতে অভিযোজিত ফসলসমূহ হতে কৃষকের পারিবারিক চাহিদা (খাদ্য, নগদ অর্থ, গো-খাদ্য ইত্যাদি) ও বাজারমূল্য বিবেচনায় লাভজনক ফসল নির্বাচন করতে হবে।
২. ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও প্রযুক্তির প্রাপ্যতা বিবেচনা করে ফসল নির্বাচন করা।
৩. লিগুমিনোসী পরিবারের ফসল নির্বাচন করা।
৪. গভীরমূলী/অগভীরমূলী ফসল পর্যায়ক্রমে চাষ করা।
৫. সবুজ সার ফসল চাষ করা।
শস্য পর্যায়ের সুবিধা
১। বছরে একাধিক ফসল পাওয়া যায়।
২। জমির উর্বরতা রক্ষা পায়।
৩। কৃষকের সুষম খাবারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে।
৪। মোট উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধি পায়।
৫। সারা বছর শ্রমিকের কাজের সৃষ্টি হয়।
৬। খামার ব্যবস্থাপনার কাজ সুশৃঙ্খল হয়।
অসুবিধা
১। শস্য পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদী ফসল অন্তভুর্ক্ত করা যায় না।
২। বাজার মূল্যের কারণে শস্য পর্যায় ব্যাহত হতে পারে।
৩। সব এলাকায় শস্য পর্যায় অবলম্বন সম্ভব হয় না।
কখন শস্য পর্যায় বাস্তবায়ন হয় না
১. ফসলের বাজার মূল্য অস্থিতিশীল থাকলে।
২. নির্বাচিত ফসলের বীজসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দু®প্রাপ্যতা হলে।
৩. ভূমির বন্ধুরতার কারণে কোন এলাকায় বিশেষ কোন ফসল অধিক লাভজনক হলে।
৪. বর্ষজীবি উদ্ভিদ চাষ করলে শস্য পর্যায় অবলম্বন সম্ভব হয় না।
শস্য পর্যায় সিডিউল তৈরির ধাপসমূহ
১. সাধারণত যত বছরের জন্য শস্য পর্যায় অবলম্বন করা হবে জমিকে ততটি খন্ডে বিভক্ত করা হয়। তবে জমি বেশি বড়
হলে গুণিতক সংখ্যক ভাগে বিভক্ত করে একই শস্য পর্যায় সিডিউল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
২. খামারে জমির বন্ধুরতার ভিন্নতা থাকলে তা বিবেচনায় পৃথক শস্য পর্যায় সিডিউল তৈরি করতে হবে।
৩. শস্য পর্যায়ের মেয়াদ ও নির্বাচিত জমি কয় ফসলী অর্থাৎ বছরে কোন কোন মৌসুমে ফসল উৎপাদন হয় তা বিবেচনা
করে ফসলের সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। যেমন ৪ বছরের জন্য শস্য পর্যায় সিডিউল করার ক্ষেত্রে ৪  ৩ = ১২ টি
ফসল নির্বাচন করতে হবে।
৪. ফসল নির্বাচনের ক্ষেত্রে মৌসুম এবং মূলনীতি বিবেচনা করতে হবে যাতে কৃষকের চাহিদা ও জমির উর্বরতা রক্ষা হয়।
৫. ১ বছরের সিডিউল তৈরি করলেই ৪ বছরের সিডিউল সহজেই তৈরি করা যায়।
শস্য পর্যায় এর স্থায়ীত্বকাল : সাধারণত ৪-৫ বছর মেয়াদী হয়।
শস্য পর্যায় সিডিউল (মাঝারী উচু, তিন ফসলী জমি ও ৪ বছর মেয়াদী নমুনা)
১ম বছর :
জমির বøক
মৌসুম
বøক-১ বøক-২ বøক-৩ বøক-৪
খরিপ  ১ দেশী পাট ডাটা শাক ভূট্টা পুইশাক
খরিপ  ২ রোপা আমন ধান ধৈঞ্চা (সবুজ সার) রোপা আমন ধান ঢেড়স
রবি মসুর ডাল সরিষা গম টমেটো
২য় বছর :
জমির বøক
মৌসুম
বøক-১ বøক-২ বøক-৩ বøক-৪
খরিপ  ১ পুইশাক দেশী পাট ডাটা শাক ভূট্টা
খরিপ  ২ ঢেড়স রোপা আমন ধান ধৈঞ্চা (সবুজ সার) রোপা আমন ধান
রবি টমেটো মসুর ডাল সরিষা গম
৩য় বছর :
জমির বøক
মৌসুম
বøক-১ বøক-২ বøক-৩ বøক-৪
খরিপ  ১ ভূট্টা পুইশাক দেশী পাট ডাটা শাক
খরিপ  ২ রোপা আমন ধান ঢেড়স রোপা আমন ধান ধৈঞ্চা (সবুজ সার)
রবি গম টমেটো মসুর ডাল সরিষা
৪র্থ বছর :
জমির বøক
মৌসুম
বøক-১ বøক-২ বøক-৩ বøক-৪
খরিপ  ১ ডাটা শাক ভূট্টা পুইশাক দেশী পাট
খরিপ  ২ ধৈঞ্চা (সবুজ সার) রোপা আমন ধান ঢেড়স রোপা আমন ধান
রবি সরিষা গম টমেটো মসুর ডাল
শিক্ষার্থীর কাজ শস্য পর্যায়ের নীতিমালা অনুসরণ করে শহরের নিকটবর্তী মাঝারী উঁচু জমির জন্য ৪ বছর
মেয়াদী শস্য পর্যায়ে সিডিউল তৈরী করুন।
কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র ইউনিট ১৭
কৃষি অর্থনীতি পৃষ্ঠা-২৯১
সারসংক্ষেপ
নির্ধারিত সময়ে নির্বাচিত কিছু ফসল পর্যায়ক্রমে চাষাবাদ করাকে শস্য পর্যায় বলা হয়। শস্য পর্যায় অবলম্বনের মাধ্যমে
জমির উৎপাদন ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব। শস্য পর্যায়ের মাধ্যমে অধিক উৎপাদন ও মোট উৎপাদন বাড়ানো যায়।
খামারে স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকের অধিক মুনাফা ও সুষম খাবার নিশ্চিত করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১৭.৫
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। শস্য পঞ্জিকার প্রকারভেদ-
র) ছক/সারণিমূলক
রর) রেখাচিত্র
ররর) ছবি সম্বলিত
ক) র, রর খ) রর, ররর গ) র, ররর ঘ) র, রর, ররর
২। শস্য পঞ্জিকা হলক) শস্য নির্বাচন এবং সফলভাবে উৎপাদনের নির্দেশিকা
খ) ফসল উৎপাদনের পূর্বশর্ত
গ) নির্বাচিত কিছু শস্য জন্মানো ঘ) ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন কলাকৌশল
৩। শস্য পর্যায় কত বছর মেয়াদী হয়?
ক) ১-২ খ) ৩-৪
গ) ৪-৫ গ) ৬-৭

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]