ফসল বিন্যাস কি এবং এর উপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান সমূহ শস্য পর্যায়ের সংজ্ঞা জানতে পারবেন ও শস্য পর্যায়ের সিডিউল তৈরী করা

ফসল বিন্যাস : কোন এলাকায় প্রতি বছর ১২ মাস সময়ে মৌসুমভিত্তিক ফসল উৎপাদনে অনুসরণকৃত ধারাকে ফসল
বিন্যাস বলা হয়। ফসল বিন্যাসকে কোন এলাকার শস্যোৎপাদন ধারা বা শস্যচাষ বলা হয়। কোন এলাকার খরিপ-১ (১৬
ফেব্রæয়ারি-১৫ জুন) মৌসুমে পাট, খরিপ-২ (১৬ জুন-১৫ অক্টোবর) মৌসুমে আমন ধান ও রবি (১৬ অক্টোবর-১৫
ফেব্রæয়ারি) মৌসুমে গম আবাদ হলে উক্ত এলাকার ফসল বিন্যাস: পাট - আমন ধান - গম। ফসল বিন্যাস দেশের সকল
এলাকায় একই রকম নয়। ফসল বিন্যাসের এ ভিন্নতা অনেকগুলি উপাদান দ্বারা নির্ধারিত বা প্রভাবিত হয়ে থাকে। প্রভাব
বিস্তারকারী উপাদানগুলিকে প্রধানত ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) জলবায়ুগত উপাদান
খ) মৃত্তিকাগত উপাদান
গ) আর্থ-সামাজিক উপাদান
জলবায়ুগত উপাদান : সাধারণত কোন একটি ফসল তার চাহিদা অনুযায়ী তাপমাত্রা, পানি, সূর্যালোক, দিবাদৈর্ঘ্য, বৃষ্টিপাত
প্রভৃতি জলবায়ুর উপাদানসমূহ যে অঞ্চলে পায় সেই এলাকাতেই অভিযোজিত হয়ে থাকে। এলাকা ও মৌসুমভিত্তিক
অভিযোজিত/খাপ খাওয়ানো ফসলসমূহ হতে অন্যান্য উপাদান বিবেচনায় কিছু ফসল নির্বাচিত হয়ে যায়। রবি মৌসুমে
দেশের উত্তরাঞ্চলে নিম্নতাপমাত্রায় গম উৎপাদন ভালো হওয়ায় ঐ অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকার ফসল বিন্যাসে গম স্থান পেয়েছে।
মৃত্তিকাগত উপাদান : কোন ফসলের সুষ্ঠু-স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও সর্বোচ্চ ফলনের সক্ষমতা নির্ভর করে প্রয়োজনীয় জলবায়ুগত
পরিবেশ ও উপযুক্ত মাটির উপর। জলবায়ুগত উপাদান অনুকূল হলেও মাটির গুণাগুণ ভালো না হলে উক্ত ফসল কাঙ্খিত
ফলন দিতে ব্যর্থ হয়। মাটির গুণাগুণ, বন্ধুরতা, বুনট, আর্দ্রতা, লবণাক্ততা, অ¤øমান (ঢ়ঐ), খাদ্যোৎপাদনের প্রাপ্যতা প্রভৃতি
দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। চর এলাকার মাটি হালকা বুনট হওয়ায় সাধারণত ঐ সকল এলাকার ফসল বিন্যাসে তরমুজ, বাদাম,
মিষ্টি আলু জাতীয় ফসল দেখা যায়। অ¤øীয় মাটিতে চা, আনারস ভালো হয়। উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত মাটিতে সব
ধরনের ফসল জন্মায় না। তবে নারিকেল, সুপারী, স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়। উচু বা মাঝারী উচু এলাকায় চাষাবাদের
জন্য অনেক ফসল নির্বাচনের সুযোগ থাকলেও হাওড় বা নীচু এলাকায় জলি আমন ছাড়া অন্য ফসল লাগানোর সুযোগ থাকে না।
আর্থ-সামাজিক উপাদান : কোন এলাকার জলবায়ু ও মাটি অনেক ফসলের জন্য অনুকূল হলেও কিছু ফসল ঐ এলাকার
কৃষকরা নির্বাচন করে যার সাথে উক্ত এলাকায় জনগণের আর্থিক ও সামাজিক কিছু উপাদান জড়িত। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য,
এলাকাভিত্তিক ফসলের চাহিদা, বাজারমূল্য, বিপনন ব্যবস্থা, কৃষকের আর্থিক অবস্থা, ফসল আবাদের উপকরণের প্রাপ্যতা,
ঋণ ব্যবস্থা, ফসল সংরক্ষণ সুবিধা, পরিবহণ সুবিধা, খাদ্যাভাস, সরকারী নীতিমালা, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রভৃতি। এক
সময় এ দেশের অধিকাংশ এলাকায় ফসল বিন্যাসে খরিপ-১ মৌসুমে পাট থাকলেও এখন কম। কারণ আন্তর্জাতিক ও
অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় এবং বাজারমূল্য কম হওয়ায় কৃষক পাট চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে
পাট শস্যোৎপাদন ধারা থেকে বাদ পড়েছে। ভাত নির্ভর খাদ্য তালিকার জন্য প্রায় সব এলাকায় ধান একটি সাধারণ
ফসল। কৃষক তার নিজের পারিবারিক খাদ্য নিশ্চয়তার জন্য ধান নির্বাচন করে থাকে। এলাকার কৃষকদের আর্থিক অবস্থা
ভালো হলে লাভজনক যে কোন ফসল চাষের উদ্যোগ নিতে পারে কিন্তু আর্থিক সংকট থাকলে কম পুজিতে হয় এমন
ফসলই ঐ এলাকায় চাষাবাদ করতে দেখা যায়। কোল্ডস্টোরেজ থাকলে ঐ সকল এলাকায় কৃষকরা আলু চাষে বেশি আগ্রহী
হয়ে থাকে। শহরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ফসল বিন্যাসে লাভজনক শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।
ফসল বিন্যাসের সুবিধা ও অসুবিধা : এলাকার জলবায়ু, মাটি ও চাহিদা বিবেচনা করে লাভজনক ফসল নির্বাচনের মাধ্যমে
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রচলিত ফসল বিন্যাস অবলম্বনে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব হয় না।
ফসল বিন্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি : এলাকার জলবায়ু ও মৃত্তিকা দ্বারা অভিযোজিত ফসলসমূহের মধ্যে
হতে কয়েকটি ফসল বিন্যাসে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এর জন্য আর্থ-সামাজিক উপাদানসমূহই মূলত দায়ী। যার কারণে
ফসল বিন্যাসে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কোন এলাকার জন্য অধিকসংখ্যক লাভজনক ফসল নির্বাচনের সুযোগ তৈরির
লক্ষ্যে উচ্চ ফলনশীল আলোক নিরপেক্ষ জাত উদ্ভাবন, আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তর, ঋণসুবিধা, বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন,
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, গুদামঘর তৈরি, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনয়ন করতে হবে। যা মানুষের সুষম খাবার নিশ্চিত করে এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে। জমির প্রকার বা ধারা অনুসারে আমার দেশে ফসল বিন্যাসের উদাহরণ দেয়া হলোজমির ধরন ফসল বিন্যাসের প্রকৃতি
উচু জমি ১. বোরো- আমন-পতিত
২. আলু-বোরো-আমন
৩. ডাল-পাট-পতিত
৪. গম-কাউন-আমন
৫. টমেটো-আউশ-সবজি
মাঝারি জমি ১. আলু-বোরো-ডাল
২. গম-আমন-ডাল
৩. সরিষা-বোরো-আমন
৪. বোরো-আমন-সরিষা
৫. টমেটো-আউশ-সবজি
নিচুজমি ১. আলু-বোরো-বোনা আমন
২. বোরো-আমন-পতিত
৩. কাউন-আমন-পতিত
৪. গম-বোরো-আমন
৫. পাট-আমন-পতিত
সারসংক্ষেপ
ফসল উৎপাদনে কোন এলাকায় অনুসরণকৃত বাৎসরিক ধারাকে ফসল বিন্যাস বলা হয়ে থাকে। ফসল বিন্যাস নির্দিষ্ট এলাকার জলবায়ু, মৃত্তিকা ও আর্থসামাজিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। ফসল বিন্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে নতুন ফসল জাত উদ্ভাবন, এলাকাভিত্তিক কৃষি সমস্যা দূরীকরণ, আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন আবশ্যক।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১৭.৬
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। দেশের উত্তরাঞ্চলে ফসল বিন্যাসে গম অন্তভুর্ক্ত হওয়ার প্রধান কারণ কি?
ক) শীতকালে নিম্ন তাপমাত্রা খ) অধিক বৃষ্টিপাত
গ) উচ্চ তাপমাত্রা ঘ) দিবাদৈর্ঘ্য।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ২ ও ৩ নং প্রশ্নের উত্তর দাও।
শফিক সাহেব মাঝারী উঁচু জমিতে একটি শস্য খামার করেন। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাকে পরামর্শ দিলেন।
২। কোন বিষয়ে পরিকল্পনা করতে বললেনর) শস্য পরিকল্পনা রর) ফসল বিন্যাস ররর) শস্য পর্যায়
ক) র, রর খ) রর, ররর গ) র, ররর ঘ) র, রর, ররর
৩। শফিকের ফসল বিন্যাস কোনটিক) বোরো-আমন-সরিষা খ) গম-বোরো-আমন
গ) বোরো-আমন-পতিত ঘ) পাট-আমন-পতিত
সৃজনশীল প্রশ্ন
১। মেহেরপুর গ্রামের শামীম মিয়া বেশ কিছু আবাদি জমি রয়েছে। কিন্তু তেমন আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন না। তাই স্থানীয়
কৃষি কর্মকর্তার কাছে পরামর্শের জন্য গেলেন। তিনি ফসলের একটি শস্য পঞ্জিকা দেখিয়ে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিলেন। এরপর শামীম মিয়াকে ফসল চাষে শস্য পর্যায় অবলম্বনের জন্য দিক নির্দেশনা দিলেন। পরামর্শ কাজ করায় শামীম লাভবান হলেন।
ক) শস্য পঞ্জিকা কি?
খ) শস্য পর্যায়ের মূলনীতি লিখুন?
গ) কৃষিকর্মকর্তা কেন ফসল চক্র অবলম্বন করতে বললেন ব্যাখ্যা করুন।
ঘ) শস্য পর্যায় অবলম্বন করে লাভবান হলেন বিষয়টি মূল্যায়ন করুন।
২। কৃষি সম্পর্কিত অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহের সনাক্তকরণ সমাধান, নির্দেশনা ও বর্ণনা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানই হল কৃষি
অর্থনীতি। কৃষি অর্থনীতি খামার করন মূল্য ও বিপনন সম্পর্কে ধারনা দেয়। আর সঠিক খামারকরনের ধারনার মাধ্যমে
একজন কৃষক লাভবান হতে পারে।
ক) কৃষি অর্থনীতি কি?
খ) খামার করনের উদ্দেশ্য লিখুন।
গ) খামারের কার্যাবলী উপস্থাপন করুন
ঘ) খামার পরিচালনা নীতিমালা বিশ্লেষণ করুন।
উত্তরমালা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১৭.১ ঃ ১। ক ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১৭.২ ঃ ১। ক ২। খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১৭.৩ ঃ ১। ঘ ২। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১৭.৪ ঃ ১। ঘ ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১৭.৫ ঃ ১। ঘ ২। ক ৩। গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১৭.৬ ঃ ১। ক ২। ঘ ৩। ক

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]