কৃষি ঋণের ধারণা
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ যেমন- অধিক উৎপাদনশীল বীজ, সার, বালাইনাশক
ইত্যাদি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে কৃষক যে ঋণ গ্রহণ করে তাকে কৃষি ঋণ বলে। কৃষি ঋণ হচ্ছে মূলত কৃষক
কর্তৃক কৃষি উপাদান ও প্রযুক্তি ক্রয়ের জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে শর্তসাপেক্ষে নিদিষ্ট মেয়াদের জন্য
ঋণ গ্রহণ করা। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়াও কৃষি ভ‚মির উন্নতি সাধন, উৎপাদিত পণ্যের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন,
বাজারজাতকরন ইত্যাদি কাজের জন্য কৃষকের যে ঋণের প্রয়োজন হয় তাই হলো প্রধানত কৃষি ঋণ। এদেশে কৃষকরা
দরিদ্র বলে উৎপাদনের প্রয়োজনে নিজস্ব তহবিল থেকে সবসময় প্রয়োজনানুযায়ী অর্থ যোগান দিতে পারে না বিধায় তারা
বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ নেয়। আমাদের দেশে ঋণের অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলো অসংগঠিত
অনিশ্চিত ও শোষণমূলক হওয়ায় কৃষকদেরকে বাধ্য হয়ে ঋণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলোর মুখাপেক্ষী হতে হয়। কৃষি
ঋণের প্রাতিষ্ঠানিক উৎস দেশী ও বিদেশী হতে পারে। দেশীয় উৎসের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও সমবায় সমিতি এবং
অনুমোদিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (এনজিও) হলো প্রধান। বিদেশী উৎসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা
ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য।
কৃষি ঋণের ধরণ
কৃষি উৎপাদন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং সময় সাপেক্ষ পদ্ধতি। জমির কর্ষণ থেকে আরম্ভ করে উপকরণ ক্রয়,
উৎপাদিত পণ্যের সংরক্ষরণ এবং বাজারজাতকরণের প্রত্যেক ধাপেই কৃষকের অর্থের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও প্রাকৃতিক
দূর্যোগে ফসল নষ্ট হলে কৃষককে বাঁচার জন্যও অর্থ ধার করতে হয়। এতে যে উদ্দেশ্যেই কৃষক ঋণ গ্রহণ করুক না কেন
সময়ভেদে তা মূলত তিন ধরণের হয়ে থাকে। যথা- ক) স্বল্পমেয়াদি খ) মধ্যমেয়াদি এবং গ) দীর্ঘমেয়াদি। বিভিন্ন মেয়াদের
ঋণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা নি¤েœ প্রদান করা হলোক) স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ : স্বল্পমেয়াদ বলতে সাধারণত একবছর বা বারোমাস পর্যন্ত সময়সীমা বোঝায়। সুতরাং এই
সময়সীমার জন্য কৃষকের যে ঋণ চাহিদার প্রয়োজন হয় তাকে স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ বলা যেতে পারে। সাধারণত
স্বল্পমেয়াদে যেসব উদ্দেশ্যে কৃষক ঋণ নেয়, সেগুলো নি¤œরুপ হয়ে থাকে।
১) সাম্য ঋণ : সাধারণত ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বা ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনে কৃষককে এ ঋণ দেয়া হয়।
২) উপকরণ সংগ্রহের জন্য ঋণ: বিভিন্ন ধরণের কৃষি উপকরণ যেমন- সার, বীজ, কীটনাশক, আগাছানাশক ইত্যাদি ক্রয়ের
জন্য স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ নেয়া হয়।
৩) চাষাবাদ ছাড়াও অন্যান্য কৃষি কাজের ঋণ: চাষাবাদ বর্হিভ‚ত কৃষিকাজ যেমন- মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু
পালন ইত্যাদি কাজেও কৃষক স্বল্পমেয়াদি ঋণ সংগ্রহ করে।
খ) মধ্যমেয়াদি কৃষি ঋণ : সাধারণত এক বছরের উর্দ্ধ থেকে পাঁচ বছর সময়সীমায় যে কৃষি ঋণ দেয়া হয় তাকে
মধ্যমেয়াদি কৃষি ঋণ বলা হয়। মধ্যমেয়াদি কৃষি ঋণ যেসব উদ্দেশ্যে দেয়া হয় হলো১) বিভিন্ন ধরণের কৃষি যন্ত্রপাতি এবং উপকরণ যেমন: লাঙ্গল, ট্রাকটর, পাওয়ারট্রিলার, গরু-মহিষ ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য এ
ঋণের প্রয়োজন হয়।
২) কৃষি ব্যবস্থা যান্ত্রিকীকরণের জন্য ভূমি কর্ষণ যন্ত্র ছাড়াও শস্য মাড়াই যন্ত্র, গভীর নলক‚প ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য এ ঋণ
নেয়া হয়।
৩) কৃষি উপকরণ এবং উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের জন্য যানবাহন যেমন- অটোরিক্সা, ছোট ট্রাক, ভ্যানগাড়ি ইত্যাদি ক্রয়ের
জন্য মধ্যমেয়াদি ঋণ নেয়া যায়।
গ) দীর্ঘমেয়াদি কৃষি ঋণ: পাঁচ বছর সময়কালের উর্দ্ধ সময়ে পরিশোধ করা হয় এমন ঋণ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি কৃষি ঋণ
বলা হয়। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ব্যবহার করে কৃষক তার জমির সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পানি নিষ্কাশন সমস্যা দূরীকরণ, ভ‚মি
উন্নয়ন, কৃষি খামারের অবকাঠামো প্রস্তুতকরণ প্রভৃতি করে থাকে।
কৃষি ঋণের উৎসসমূহ
পূর্বে একটু ধারণা দেয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশের কৃষকেরা প্রতিষ্ঠানিক ও অপ্রতিষ্ঠানিক উৎস থেকে সাধারণত কৃষি ঋণ
গ্রহণ করে থাকে। নি¤েœ এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।
ক) প্রতিষ্ঠানিক উৎস সমূহ: কৃষি ঋণ সরবরাহ করার জন্য যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানিক উৎস রয়েছে সেগুলো নি¤œরূপ১) বাংলাদেশ ব্যাংক: বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি কৃষকদেরকে কৃষি ঋণ প্রদান করে না। কিন্তু দেশের কেন্দ্রীয় হিসাবে
অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, বিভিন্ন ঋণ প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে কৃষি ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সংস্থা যেমন: বিআরডিবি, সমবায় সমিতি সমূহকে বাংলাদেশ ব্যাংক অত্যন্ত অল্প সুদে ঋণ
প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে কৃষি ঋণ বিতরণে উৎসাহিত করে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ’কৃষি ঋণ বিভাগ’ এবং ’কৃষি ঋণ
স্থিতিশীলকরণ বিভাগ’ নামে দ’ুটি বিভাগ চালু আছে।
২) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক : বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক তার ছয়শোরও অধিক শাখার মাধ্যমে সারাদেশের কৃষকদেরকে বিভিন্ন
মেয়াদে কৃষি ঋণ সরবরাহ করে থাকে।
৩) গ্রামীন ব্যাংক : প্রচলিত বাণিজ্যিক বাংকের বাইরে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হলে গ্রামীন বাংক। পল্লী অঞ্চলের গরিব
মানুষদের বিভিন্ন রকম অর্থনৈতিক কান্ডে উৎসাহী করার জন্য ঋণ প্রদান করাই হলো এ ব্যাংকের কাজ।
৪) কর্মসংস্থান ব্যাংক : কর্মসংস্থান ব্যাংক তার সবকটি শাখার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা ঋণ
প্রদান করে থাকে।
৫) সমবায় ব্যাংক : সাধারণত নানা ধরণের সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষি ঋণ প্রদান করে থাকে।
৬) বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) : বিআরডিবি এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রাম ভিত্তিক সমবায় সমিতির মাধ্যমে
কৃষকদেরকে সংগঠিত করে তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে একটি উৎপাদনমুখী শক্তিতে পরিণত করা। বিআরডিবি
তাদের কাজের সুবিধার্থে কৃষক সমবায় সমিতিসমুহকে নিয়ে উপজেলা/থানা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি গঠন করে।
বিআরডিবি কৃষকদের মূলধন গড়ে তোলার জন্য সমবায় সমিতির শেয়ার ক্রয় এবং সাপ্তাহিক ক্ষুদ্র সঞ্চয় সুবিধাও প্রদান
করে। প্রয়োজনে সমবায় কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির কাজও করে থাকে।
খ) অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসসমূহ :
কৃষকদের কৃষি ঋণ সরবরাহে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। ঋণ প্রাপ্তিতে কম
জটিলতা, তাৎক্ষণিক ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা ও ঋণ পরিশোধের কোন নির্ধারিত সময়সীমা না থাকায় গ্রামের অধিকাংশ দরিদ্র
কৃষক এসমস্ত উৎসসমূহ থেকে ঋণ গ্রহণে বেশী আগ্রহী হয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলোর বিবরণসহ ঋণের ধরণ নিয়ে নি¤েœ
আলোচনা করা হলো১) আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব : কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণের অন্যতম প্রধান উৎস হলো বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন। এ ঋণ
গ্রহণের সুবিধা হলো, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ঋণের জন্য কোন সুদ দিতে হয় না। ঋণের ক্ষেত্রে কোন রকম গ্যারান্ট্রিরও
প্রয়োজন হয় না। তবে এ ঋণ সবার ক্ষেত্রে সহজলভ্য নয়।
২) গ্রাম্য মহাজন ও ব্যবসায়ী : কৃষকের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে জরুরীভাবে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে এ ঋণ সহজে
পাওয়া যায়। গ্রামের এক শেণি দাদন ব্যবসায়ী ও মহাজনেরা অলংকার, জমি-জমা ও অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে
উচ্চ সুদহারে ঋণ প্রদান করে থাকে।
৩) দালাল ও ব্যাপারী : কৃষি পণ্যের বাজারে দালাল ও ব্যাপারীরা কৃষকদেরকে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে থাকে। এজন্য তারা
চড়াহারে সুদ আদায় করে। দালাল ও ব্যাপারীরা অধিকাংশ সময়ে কৃষকদের কাছ থেকে জমির ফসল অল্প দামে আগাম
ক্রয় করে রাখে। ফলে কৃষক কখনই ফসলের নায্যমূল্য পায় না। বরং প্রায়শই কৃষকরা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে
ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
কৃষি ঋণের প্রয়োজনীয়তা :
বাংলাদেশের কৃষকেরা গরিব বিধায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে সবসময় অর্থের সংস্থাপন করতে পারে
না। ফলে কৃষি উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হয়। এজন্য কৃষি ঋণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নি¤েœ কৃষি ঋণের
প্রয়োজনীয়তাগুলো আলোচনা করা হলো।
ক) কৃষি উপকরণাদি ক্রয়সহ শস্য সংগ্রহ, মাড়াই, ঝাড়াই, শুকানো, সংরক্ষণ প্রভৃতি কাজের জন্য ঋণের জন্য প্রয়োজন।
খ) উৎপাদিত কৃষি পণ্যের নায্যমূল্য পাওয়ার জন্য ফসল গুদামজাতকরণ, পণ্যের পরিবহণ ও বিপণনের জন্য কৃষি ঋণ
প্রয়োজনগ) প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঋণ
ঘ) পারিবারিক ব্যয় মেটানো
ঙ) ঋণ পরিশোধ
ক্ষুদ্র ঋণের ভ‚মিকা :
ক্ষুদ্র ঋণ দরিদ্রদের টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রথাগত ব্যাংকিং
ব্যবস্থা যেখানে পৌছাতে সক্ষম হয় না, সেখানে ক্ষুদ্র ঋণ সহজেই পৌছে দরজায় কড়া নাড়ে। এক হিসেবে বলা হয়েছে,
বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষ এ সেবা নিয়ে থাকে। ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো ঋণ দেয়ার পাশাপাশি উৎপাদনশীল
খাতসমূহে নানাভাবে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়ে থাকে। সাধারণ ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের এনানেই
পার্থক্য। ক্ষুদ্র ঋণ মানুষকে উৎপাদনশীল কার্যক্রমে সংযুক্ত করে। ফলে তৃণমূলের অর্থনীতিতে গতি আনে। এটি গরীব
মানূষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরী করলেও, দারিদ্র বিমোচনের একমাত্র চাবিকাঠি নয়। তবে ক্ষুদ্র
ঋণের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহারে সক্ষম গ্রহীতাদের অনেকে দারিদ্র চক্র ভেঙ্গে বেরিয়েও আসে। ব্রাকের স্বনামধণ্য অর্থনীতিবিদ ড.
মাহবুব হোসেন পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ১৯৮৮-২০০৭ সময়কালে গ্রামীণ দারিদ্রতা প্রতিবছর এক শতাংশ
হারে কমেছে। রক্ষণশীল অনেকের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ক্ষুদ্র ঋণের সহযোগিতায় নারীরা বাইরের জগতে পা ফেলতে
শুরু করেছে। নারীদের নেয়া ঋণে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অনেক ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের নজিরও সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য ও
শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের অংশ। এর ফলে তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধাভোগী পরিবারে
জন্মনিয়ণÍ্রনের হার, ছাত্রছাত্রীদের হার ও শিশুপুষ্টি বেড়েছে। কমেছে শিশু ও মার্তৃ মৃত্যুর হারও। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী
অথরটির (এম.আর.এ) ২০১৫ সালে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী দেশে সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থার সংখ্যা ৬৫৯।
শাখার ভিত্তিতে এসব সংস্থাকে খুব ছোট, মাঝারী, বড় ও বৃহৎভাবে ভাগ করা যায়। এম.আর.এ ক্ষুদ্র ঋণের সুদের হার ২৭
শতাংশ বেঁধে দিলেও পিকেএসএফ এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ২৫ শতাংশের বেশি সুদ নেয় না। বর্তমান পিকেএসএফ
এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্য ২২০। অবশিষ্ঠ ৪৩৯ টি সংস্থা ২৭ শতাংশ হিসেবে সুদ নেয়।
ক্ষুদ্র ঋণের ধরণ
ক্ষুদ্র শিল্প বা কুটির শিল্প স্থাপনের জন্য যে ঋণ প্রদান করা হয় তাহাই ক্ষুদ্র ঋণ। গ্রামীণ অঞ্চলের বিভিন্ন ছোট ছোট
অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন যে ঋণ চাহিদা সচরাচর করে থাকে তাহাও ক্ষুদ্র ঋণ।
কৃষিকাজ, পশুপালন, মৎস্য চাষ, কুটির শিল্পসহ নানা ধরণের পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য যে ঋণ ব্যবহার করা
হয় তাহাই ক্ষুদ্র ঋণ। ক্ষুদ্র ঋণ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে সরবরাহ করা হয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস
সমূহ অত্যধিক সুদহারের মাধ্যমে মানুষকে মূলত শোষণ করে। প্রাতিষ্ঠানিক উৎসসমূহ এ ধরণের শোষণ থেকে মুক্ত করে
কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধমে আতœনির্ভরশীল হওয়ার জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে থাকে। বলা হয়ে থাকে ক্ষদ্র ঋণ কার্যক্রমে সুদ
হার কিছুটা বেশি। এর বড় কারণ হলো, মূলধারার ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীগুলো কিছুটা অর্থ সঞ্চয় করে রাখে স্বাস্থ্য বীমা,
শিক্ষাঋণ ইত্যাদি কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য। দেশে এখনও সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা চালু হয়নি এবং নানা স্তরে শিক্ষার
সুযোগও সবার জন্য নেই। অনেকের মতে, ক্ষুদ্র ঋণের বিকল্প সরকারী সামাজিকবেষ্টনী কর্মসূচী । এগুলো দারিদ্র পরিস্থিতি
উত্তরণে সহায়ক কার্যক্রম, তবে ক্ষুদ্র ঋণের বিকল্প নয়। বরং মহাজনী ঋণী ক্ষুদ্র ঋণের বিধিবদ্ধ উৎসের বিকল্প হিসেবে
ইহার শুণ্যস্থান পূরণ করে থাকে। ক্ষুদ্র ঋণের বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোর উদ্দেশ্য থাকে গ্রাহক যাতে কোনভাবেই ঋণ খেলাপি না
হয়। অন্যদিকে মহাজনী উৎসের প্রত্যাশা হলো গ্রহীতার ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাতে না বাড়ে। গরীবরা খেলাপি হলে
আগাম শ্রম, আগাম ফসল ইত্যাদি বিক্রির সুবিধা নিয়ে থাকে এসব মহাজনীরা।
ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়ার শর্তাবলী
ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। নি¤েœ সেসব শর্তসমূহ উল্লেখ করা হলো -
১) ক্ষুদ্র ঋণ নিতে আগ্রহীকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির হতে হবে।
২) আগ্রহী ব্যক্তির অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ থাকলে ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে না
৩) ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
৪) ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিকে যে উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করা হবে সেটি বাস্তবায়নের জন্য সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিকতার
হতে হবে।
৫) কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িতদেরকে এ ঋণ প্রদানের জন্য বিবেচনা করা হয় না
৬) ঋন গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধের শর্তাবলি মেনে চলার মানসিকতা থাকতে হবে।
৭) যে প্রকল্পের জন্য ঋণ নেয়া হবে সেটির গ্রহণ যোগ্যতা থাকতে হবে।
৮) যুব ঋণের জন্য আগ্রহীকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশের কৃষিজীবি মানুষ সাধারণভাবে দরিদ্র হওয়ায় কৃষি কাজে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ সব সময় করতে পারে না।
ফলে কাঙ্খিত উৎপাদন পাওয়া সম্ভব হয় না। কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণের প্রচলন কৃষি উন্নয়নে সেজন্য ব্যাপক ভ‚মিকা পালন
করে। কৃষকের সামর্থ্যানুযায়ী বিভিন্ন ধরণের কৃষি ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকায় এ ঋণের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি
পাচ্ছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১৮.১
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
নিচের উদ্দীপকের আলোকে ১ নং ও ২ নং প্রশ্নের উত্তর দিন।
তারাকান্দা গ্রামের চাষীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দরিদ্র কৃষকদের আর্থ-সামাজিক
উন্নয়নের জন্য এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ সরবরাহ করা হয়।
১। ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রধান উৎস কোনটি ?
ক) প্রাতিষ্ঠানিক উৎস খ) অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস
গ) ব্যক্তিগত উৎস ঘ) এনজিও প্রতিষ্ঠান
২। উদ্দীপকের উক্ত কার্যক্রমের উদ্দেশ্য-
র. দরিদ্র মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা।
রর. সহজ শর্তে ও কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সুবিধা দেয়া।
ররর. মুনাফার জন্য দাদন ব্যবসা করা।
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র