গলদা ও বাগদা চিংড়ির পার্থক্য বর্ণনা কর বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা বল

চিংড়ি বাংলাদেশের একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের দেশের অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর এবং বিশাল
উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে চিংড়ি চাষের বিপুল সম্ভাবনা। এদেশের জলাশয়ে রয়েছে ৬৭টি প্রজাতির চিংড়ি। তবে প্রধানত
গলদা ও বাগদা এই দুইটি প্রজাতির চিংড়িই চাষ হয়ে থাকে। গলদা মিঠাপানির পুকুর-দিঘীতে আর বাগদা উপকূলীয়
এলাকায় চাষ হয়ে থাকে। চিংড়ি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। তাই চিংড়ি চাষে এদেশের আর্থসামাজিক
অবস্থার উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে চিংড়ির পরিচিতি, বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা, পুকুরে ও ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষ, ধান
ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ, উপক‚লীয় এলাকায় এককভাবে বাগদা চিংড়ি চাষ, লবণ ক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষ ও প্রদর্শিত চিংড়ি (গলদা ও বাগদা) শনাক্তকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চিংড়ি সাধারণত মিঠা ও লোনা পানিতে বাস করে। মিঠা পানির চিংড়ি বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ জলাশয়, যেমন- পুকুর,
ডোবা, দিঘি, খাল-বিল, নদী-নালা ও ধানক্ষেতে বাস করে। লোনাপানির চিংড়ি সমুদ্রের লোনা পানিতে এবং
মোহনার ইষৎ লবণাক্ত পানিতে বাস করে।
বাংলাদেশে চাষযোগ্য প্রজাতি : বাংলাদেশে বিভিন্ন জলাশয়ে প্রায় ৬৭টি প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। এর মধ্যে মিঠা
পানির গলদা চিংড়ি এবং লোনা পানির বাগদা, চাকা ও হরিণা চিংড়ির চাষ লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
গলদা চিংড়ি : বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গলদা চিংড়ি বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- গোদা চিংড়ি, শলা চিংড়ি, ছোয়া,
ইচা ইত্যাদি। গলদা চিংড়ির বৈজ্ঞানিক নাম Macrobrachium rosenbergii এবং ইংরেজিতে Giant Prawn বলা হয়।
প্রাপ্তিস্থান :এই চিংড়ি মিঠা বা স্বাদু পানিতে বাস করে। বাংলাদেশের দাউদকান্দি, বাগেরহাট, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে এদের অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।
বাগদা চিংড়ি : বাগদা সামুদ্রিক ও লোনা পানির চিংড়ি। তবে এদের পোনা (পি.এল) মোহনায় পাওয়া যায়। বাগদা চিংড়ির
বৈজ্ঞানিক নাম হলো Penaeus monodon। ইংরেজিতে এদেরকেGiant tiger prawn eবলা হয়।
প্রাপ্তিস্থান : বাগদা চিংড়ি লোনা পানিতে বাস করে। বাংলাদেশের বাগেরহাট (উর্ধ্বমোহনায়), চালনা (মোহনা), খুলনা
(পশুর নদীর মুখে নি¤œ মোহনায়), পটুয়াখালি (রাঙাবালী), খেপুপাড়া (মোহনায়), কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বঙ্গোপসাগর
এদের বিচরণ ক্ষেত্র।
বাগদা ও গলদা চিংড়ির মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য:
পার্থক্যের বিষয় গলদা চিংড়ি বাগদা চিংড়ি
১. বাসস্থান স্বাদু পানিতে বাস করে লোনা পানিতে বাস করে
২. মাথা ও ক্যারাপেস আকারে বড়, দেহের ওজনের প্রায় অর্ধেক ছোট এবং দেহের ওজনের প্রায় একতৃতীয়াংশ
৩. রোস্ট্রাম আকারে বড় বাঁকানো ছোট সোজা
৪. এন্টোনিউল তিন ফ্লাজেলাযুক্ত দুই ফ্লাজেলাযুক্ত
৫. বর্ণ হালকা সবুজ থেকে বাদামি হালকা বাদামি
৬. দ্বিতীয় সুরাকা প্রথম ও তৃতীয় দেহ খÐকে আংশিক আবৃত
থাকে
প্রথম সুরাকা দ্বারা আংশিক আবৃত তৃতীয়
সুরাকা আংশিক আবৃত রাখে
৭. থ্যালাইকাম পুরুষ বা স্ত্রী কোনটাতেই নেই স্ত্রী বাগদায় আছে
৮. খাদ্যাভাস সবর্ভুক প্রাণীভুক
৯. ডিম ধারণ নিষিক্ত ডিম ধারণ করে ডিম পরিস্ফুটনের জন্য বুকে ধারণ করে।
১০. বক্ষ উপাঙ্গ প্রথম দুইটি চিলেটে রূপান্তরিত হয় প্রথম তিনটি চিলেটে রূপান্তরিত হয়।
১১. তৃতীয় ম্যক্সিলিপে ৪-৬ সন্ধি বিশিষ্ট ৭টি সন্ধিবিশিষ্ট
১২. দৈহিক বৃদ্ধি স্বাদু ও অল্প লবণাক্ত পাণিতে দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে মোহনা ও গভীর সমুদ্রে দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে।
বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা
বিশ্বের সর্বত্র বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সকল প্রকার প্রাকৃতিক আমিষ জাতীয় উপাদানের মধ্যে চিংড়ি হচ্ছে
একটি অত্যন্ত মূল্যবান উপাদেয় খাদ্য। বিশ্বের চিংড়ি উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে
রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশ চিংড়ি সম্পদে খুবই সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে
চিংড়ি একটি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং
স্থানীয় সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা অতি উজ্জ্বল। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পোশাক শিল্পের
পরেই চিংড়ির স্থান। চিংড়ি চাষে কাঁচামাল, চিংড়ির পোনা এ দেশের প্রাকৃতিক উৎস হতে সহজেই পাওয়া যায়। চিংড়ি চাষ
বর্তমানে একটি শিল্প হিসেবে চিহ্নিত। এ শিল্পে স্বল্প ব্যয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, দিঘি এবং দেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের
৪৮০ কি.মি. তটরেখা বরাবর ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অর্থনৈতিক এলাকাসমূহে চিংড়ি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের উপক‚লীয় অঞ্চলে স্থানীয় কৌশলে প্রায় অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। উৎপাদনের
উপকরণ খরচ, জমির ইজারা মূল্য, শ্রমিকের মজুরি এবং পোনার কম মূল্য, অনুক‚ল প্রাকৃতিক পরিবেশে মাটি ও পানির
গুণগত মান, বাজারে আকর্ষণীয় মূল্য, আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক বিধায়
বাংলাদেশের চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। বর্তমানে বাংলাদেশে উপক‚লীয় অঞ্চলে প্রায় ১,৪০,০০০ হেক্টর জমিতে
চিংড়ির চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে খুলনা অঞ্চলে ১,১০,০০০ হেক্টর ও কক্সবাজার অঞ্চলে ৩০,০০০ হেক্টর। এছাড়াও দেশের
১৬টি জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমি গলদা চিংড়ি চাষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশের মিঠা পানিতে বিশেষ করে ধানক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এদেশের শুধুমাত্র চিংিড়ির
পোনা ধরার কাজেই জড়িত আছে ২-৫ লাখ লোক। তাছাড়া চিংড়ি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে প্রায় ১.৫-২ লাখ
লোক জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশে চিংড়ি চাষ প্রধানতঃ প্রচলিত ও আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে হচ্ছে। যার শতকরা ৭৫ শতাংশ
জমিতে প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে এবং উৎপাদন হার হলো প্রতি হেক্টরে ২০০-২৫০ কেজি। বাংলাদেশের বিশাল চিংড়ি
চাষ এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, চাষ পদ্ধতির সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে
চিংড়ি উৎপাদন অনেকগুণ বাড়ানো সম্ভব। সুতরাং আমরা দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি যে, বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের উজ্জ্বল
সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে চিংড়ি রপ্তানি করে যে আয় তার পরিমাণ জাতীয় আয়ের শতকরা প্রায় ৭.৮ ভাগ। রপ্তানি আয়ে চিংড়ির অবদান প্রায় ৮.৫%।
সারসংক্ষেপ
চিংড়ি সাধারণত মিঠা ও লোনা পানিতে বাস করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন জলাশয়ে প্রায় ৬৭টি প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। এর
মধ্যে মিঠা পানির গলদা চিংড়ি এবং লোনা পানির বাগদা, চাকা ও হরিণা চিংড়ির চাষ লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
আমাদের দেশের বিশাল জলরাশীতে রয়েছে চিংড়ি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.১
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। পিনিডি পরিবারের স্ত্রী চিংড়ি কোথায় ডিম পাড়ে?
ক) গভীর সমুদ্রে খ) মোহনার লবনাক্ত পানিতে
গ) ধান ক্ষেতে ঘ) নদী নালায়
২। একটি পূর্ণাঙ্গ চিংড়ির সম্পূর্ণ দেহকে প্রধানত কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?
ক) তিন ভাগে খ) দুই ভাগে
গ) চার ভাগে ঘ) পাঁচ ভাগে

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]