পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ
স্বাদু পানিতে চিংড়ি চাষ :স্বাদু পানিতে যে চিংড়ি চাষ করা হয় তাকে গলদা চিংড়ি বলা হয়। বাংলাদেশে
অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের প্রায় সর্বত্রই গলদা চিংড়ি পাওয়া যায়। প্রজনন মৌসুমে এরা অল্প লবণাক্ত পানিতে ডিম ছাড়ার জন্য
চলে আসে। পুকুর, দিঘি, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওর ইত্যাদি জলাশয়ে এককভাবে কিংবা রুই জাতীয় মাছের সাথে গলদা
চিংড়ি চাষ করা যায়। তাছাড়া এদেশে ধানক্ষেতেও বর্তমানে গলদা চিংড়ির চাষ শুরু হয়েছে। গলদা চিংড়ি চাষের জন্য
পুকুরের গভীরতা ১-১.৫ মিটার হলে ভালো হয়। যেকোনো আকারের পুকুরে এ চিংড়ি চাষ করা যায়। তবে ব্যবস্থাপনার
সুবিধার্থে আয়তাকার পুকুরে চিংড়ি চাষ করা অধিকতর উপযোগী।
ক. গলদা চিংড়ি খ. গলদা চিংড়ির পোনা
চিত্র-২.২.১ : গলদা চিংড়ি
গলদা চিংড়ির পোনা : বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী বিশেষ করে মোহনার সাথে সংযুক্ত নদীর নিচু অঞ্চলে যেখানে জোয়ারভাটার প্রভাব বিদ্যমান সেখান থেকে মার্চ হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে গলদা চিংড়ির পোনা
পাওয়া যায়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে স্থাপিত মৎস্য হ্যাচারিগুলোতে মার্চ হতে আগস্ট মাস
পর্যন্ত কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত চিংড়ির পোনা পাওয়া যায়। সাধারণ ও বৈজ্ঞানিক উভয় ভিত্তিতেই গলদার পোনা শনাক্ত
করা যায়। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক উৎস হতে সাধারণত তরুণ (ঔাঁবহরষব) গলদার পোনা সংগৃহীত হয়। এদের শনাক্ত
সহজতর। এদের গায়ে কালো ফোটা এবং মাথার ক্যারাপেসে বা খোলসে কালো দাগ থাকে। শিরবক্ষের খোলসে লম্বালম্বি
কয়েকটি রেখা থাকে। লার্ভার আকার বড় হলে উদর খÐকের সংযোগস্থলে নীল বর্ণের ডোরাকাটা দাগ দেখা যায়।
বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা লার্ভা অবস্থা হতে পোস্ট লার্ভা পর্যায় পর্যন্ত এদের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে
সহজেই শনাক্ত করা যায়।
চাষ পদ্ধতি : আমাদের দেশে সনাতন, উন্নত হালকা এবং আধানিবড়ি চাষ পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়। তবে
উন্নত হালকা চাষ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের পূর্বে স্থান নির্বাচন, মাটি ও পানির গুণাগুণ, ক্ষতিকর প্রাণি নিয়ন্ত্রণ, পানি ব্যবস্থার
উন্নয়ন, মাটি ও পানির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য চুন, সার ও সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে
বিবেচনা করা হয়। এ পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টি গলদার পোনা ছাড়া সম্ভব। পুকুরের আয়তন
০.৫ হেক্টর থেকে ৫ হেক্টর এবং আকৃতি আয়তাকার হলে উত্তম হয়।
স্থান নির্বাচন : প্রাকৃতিক উৎস, যেমন- নদ-নদী, খাল-বিল অথবা গভীর-অগভীর নলক‚প, হস্তচালিত নলক‚পের সাহায্যে
পরিমাণ মত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায় এমন স্থানকে গলদা চিংড়ি চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত। খামারের
জমির উপরিভাগ প্রায় সমতল বা একদিকে সামান্য ঢালু হলে ভালো হয়।
মাটির গুণাগুণ : এঁটেল, দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটি গলদা চিংড়ি চাষের জন্য উত্তম। এ ধরনের মাটির পানি ধারণ
ক্ষমতা অধিক এবং এ মাটি দিয়ে সহজেই পুকুরের বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব। ৫ থেকে ৬.৫ পিএইচ (চ
ঐ
যুক্ত মাটি চিংড়ি
চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।
পানির গুণাগুণ : পানির গুণাগুণের ওপর চিংড়ির উৎপাদন অনেকাংশে নির্ভরশীল। চিংড়ির কাক্সিক্ষত উৎপাদন পাওয়ার জন্য
পানির গুণাগুণ নি¤œরূপ হওয়া প্রয়োজন।
পানির স্বচ্ছতা ২৫-৩৫ সে.মি.
তাপমাত্রা ১৮-৩৪ সে.
দ্রবীভ‚ত অক্সিজেন ৫.৪ মি.গ্রা /লিটার
পানির পিএইচ (চ
ঐ
) ৭.৮৫
লৌহ ১.০ মি.গ্রাম/লিটার
পানির লবণাক্ততা ০-৪ পিপিটি
পুকুর প্রস্তুতি : পুকুরে উর্বরতা বৃদ্ধি, চিংড়ি পোনার যথাযথ বৃদ্ধি ও মৃত্যুহার হ্রাস করা, রাক্ষুসে প্রাণী দমন প্রভৃতির জন্য
পুকুর প্রস্তুতকরণ একান্ত অপরিহার্য। পুকুর প্রস্তুতকরণের ধাপগুলো নিচে দেওয়া হলো :
পুকুরের তলদেশ শুকানো :চিংড়ি চাষ আরম্ভ করার পূর্বে সম্পূর্ণ পানি পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। অতঃপর পুকুরের
তলদেশে ২-৫ সপ্তাহ সূর্যালোকে শুকাতে হবে। পুকুরের তলদেশের এবং পাড়ের সমস্ত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে
হবে।
রাক্ষুসে মাছ দমন : পুকুর শুকিয়ে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ এবং ক্ষতিকর প্রাণী (শামুক, ঝিনুক) ইত্যাদি দূর করা যায়।
যেসব পুকুর কোনক্রমেই শুকানো যায় না সেসব পুকুরে জাল টেনে বা ওষুধ প্রয়োগ করে রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকর প্রাণী দূর
করতে হবে। ৩-৫ পিপিএম রোটেনন পুকুরে প্রয়োগ করে অবাঞ্ছিত ও রাক্ষুসে মাছ ধ্বংস করতে হবে। তাছাড়া পানি
প্রবেশ ও নিষ্কাশন গেটে ০.৫-১০.০০ মি.মি. ফাঁক বিশিষ্ট নাইলনের জাল স্থাপন করে রাক্ষুসে মাছের প্রতিবন্ধক সৃষ্টি
করতে হবে। গলদা চিংড়ির একক চাষে পোনা মজুদের পরেও রোটেনন ও টি সীডকেক দিয়ে রাক্ষুসে মাছ দমন করা
সম্ভব।
চুন প্রয়োগ : মাটির উর্বরতা শক্তির ওপর চিংড়ির উৎপাদন নির্ভরশীল। তাই মাটিকে শোধন ও উর্বরতা বৃদ্ধির জন্যে পুকুরে
চুন প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত পুকুরের প্রতি শতাংশে ১.০ - ১.৫ কেজি চুন গুড়া করে অথবা পানিতে গুলে পুকুরের
তলদেশে বা পাড়ে ভালভাবে ছিটিয়ে দিতে হয়। চুন প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর ৫-১০ সে.মি. পানি নার্সারিতে ঢুকাতে হয়।
তবে চুন প্রয়োগের মাত্রা পিএইচ-এর ওপর নির্ভরশীল।
সার প্রয়োগ : চুন প্রয়োগের পরে পুকুরে পানি ঢুকিয়ে ৫-৭ দিন অপেক্ষা করতে হয়। অতঃপর হেক্টর প্রতি ৩০০ কেজি
গোবর, ২৫ কেজি ইউরিয়া, ১২ কেজি টিএসপি, ৫ কেজি পটাশ সার সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে আরও পানি মিশিয়ে
সমস্ত পুকুরে ভালোভাবে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পরপরই পানির গভীরতা ৪০-৫০ সে.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি
করে ১ সপ্তাহ রাখা উচিত।
পোনা মজুদ : চিংড়ি খামারের মাটির উর্বরতা, পানির গুণাগুণ, সম্পূরক খাবার প্রয়োগ ও পানির ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর
করে পুকুরের পোনা মজুদের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। উন্নত হালকা চাষ পদ্ধতিতে একক গলদা চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে
প্রতি হেক্টরে ১০,০০০ - ৫০,০০০টি পোনা ছাড়া সম্ভব।
পোনা মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা : পোনা মজুদের পর খুব সাবধানতার সাথে নিয়মিতভাবে এর পরিচর্যা করতে হবে।
বিশেষ করে খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পানি ব্যবস্থাপনা ও সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সার প্রয়োগ :প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদানের জন্যে পুকুরে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি সার দেয়া দরকার। রুই
জাতীয় মাছ চাষের একই নিয়মে পুকুরে সার ব্যবহার করতে হয়। প্রতি বছরে ১০০-১৫০ কেজি ইউরিয়া, ৫০-৭০ কেজি
টিএসপি এবং ৩০০০-৪০০০ কেজি গোবর এর পর সরবরাহ করতে হয়। এসব সার মাসিক ভাগ করে দুই কিস্তিতে, দুই
সপ্তাহ পর পর পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। শীতকালে পুকুরে সার দেয়ার প্রয়োজন নেই। পুকুরে অতিরিক্ত প্ল্যাঙ্কটন
জন্মালে সার ও খাবার সরবরাহ বন্ধ রাখতে হবে।
পানি ব্যবস্থাপনা : চিংড়ির সন্তোষজনক কাক্সিক্ষত উৎপাদনের লক্ষ্যে পুকুরের সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। পুকুরের
পানির ভৌত রাসায়নিক ও জৈবিক পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা দরকার। উন্নত হালকা চাষপদ্ধতিতে
পুকুরের পানির গভীরতা ১.২-১.৫ হওয়া উচিত। মজুদকৃত পানি মাসে ২ বার ৪০-৫০% পরিবর্তন করতে হয়। মাঝে
মাঝে পুকুরে জাল টেনে ও বাঁশ পিটিয়ে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে। পানির স্বচ্ছতা ২৩-৪০ সে.মি. হওয়া
উত্তম। সুষ্ঠুভাবে পানি ব্যবস্থাপনার ফলে কাক্সিক্ষত উৎপাদন সম্ভব।
পুকুর পর্যবেক্ষণ : পুকুরে চিংড়ি বেঁচে থাকার হার, দৈহিক বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রোগ বালাই ইত্যাদি নিরূপণ ও
শনাক্তকরণের জন্যে নিয়মিতভাবে পুকুর পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। রোগবালাই প্রতিরোধের ও চিংড়ির কাক্সিক্ষত উৎপাদন
পাওয়ার লক্ষ্যে নিচে উল্লেখিত কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে কি-না তা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
১. সঠিক পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট মাত্রায় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা।
২. পুকুরে অতিরিক্ত প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মালে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।
৩. উন্নত মানের সম্পূরক খাদ্য নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করা।
৪. পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাবলি নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৫. পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের স্বল্পতা ও আধিক্য যেন না হয় তা পর্যবেক্ষণ করা।
৬. চিংড়ি নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করছে কি-না এবং রোগাক্রান্ত হয়েছে কি-না তা পরীক্ষা করা।
৭. নির্দিষ্ট সময় পরপর পুকুরের পানি সঠিক মাত্রায় পরিবর্তন করা।
আহরণ : গলদা চিংড়ির ওজন যখন গড়ে ৮০ গ্রাম-এর উপর হয় তখন আহরণের উপযুক্ত সময়। এ অবস্থায় ১০-১৫টি
চিংড়ির ওজন ১ কেজি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে সাধারণত অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় গলদা চিংড়ি আহরণ করা হয়।
চাষের পদ্ধতি ভেদে গলদা চিংড়ির আহরণ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
১. গুণগত চাষ পদ্ধতিতে চিংড়ি আহরণ : এ পদ্ধতিতে একই সময়ে একই বয়সের পোনা পুকুরে মজুদ করা হয়। ৬-৭
মাস বয়সের চিংড়িগুলো বিক্রয়যোগ্য হলে জাল দিয়ে বড় চিংড়িগুলো ধরা হয়ে থাকে। রেণু পুকুরের সম্পূর্ণ পানি
নিষ্কাশন করে বাকি চিংড়ি ধরা হয়। গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে চিংড়ি আহরণ করা হয়ে থাকে। এ
পদ্ধতিকে আংশিক আহরণও বলা হয়।
২. অনবরত চাষ পদ্ধতিতে চিংড়ি আহরণ : এ পদ্ধতিতে পুকুরে পোনা মজুদের ৫-৬ মাস পর চিংড়ি বাজারজাতকরণের
উপয্ক্তু হয়। এ অবস্থায় প্রতি মাসে জাল দিয়ে বড় চিংড়ি আহরণ করে আবার সমান সংখ্যক পোনা পুকুরে মজুদ করা
হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে চিংড়ি আহরণ করা সুবিধাজনক।
৩. সম্পূর্ণ আহরণ : গলদা চিংড়ির একক চাষ, মিশ্র চাষ কিংবা ধানক্ষেতে সকল ক্ষেত্রেই এ পদ্ধতিতে চিংড়ি আহরণ করা
যায়। এ ধরনের আহরণের ক্ষেত্রে চিংড়ির আকার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তাই সবগুলো চিংড়ির গ্রেড একই রকম হয়
না। এ পদ্ধতিতে চিংড়িগুলোকে দীর্ঘদিন জলাশয়ে রাখতে হয়। এ পদ্ধতিতে সবগুলো চিংড়ি একসাথে বিক্রি করার ফলে
চাষীর মূলধন বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ থাকে।
ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষ
বাংলাদেশের অপেক্ষাকৃত নিচু ধানের জমিতে ঘের পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা যায়। অনুক‚ল জলবায়ু মাটি ও পানির কারণে
বাংলাদেশ পৃথিবীতে অন্যতম গলদা চিংড়ি উৎপাদনকারি দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ঘের হলো নিচু ধানের জমি
যার পাশে উঁচু জমি থাকে অথবা মাটির শক্ত বাঁধ থাকে। বর্ষাকালে এসব ঘের পানিতে ভরে যায় ফলে ধান চাষ করা সম্ভব
হয় না। তাই উক্ত সময়ে চিংড়ি চাষ করা হয়। বাংলাদেশে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা রোধ ও জলচ্ছ¡াস নিয়ন্ত্রনে যেসব
বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে সেসব বাঁধের ভিতরে ঘের তৈরি করে সহজেই গলদা চিংড়ি চাষ করা যায়। নি¤েœ ঘেরে গলদা
চিংড়ির চাষ পদ্ধতির ধাপ বর্ণনা করা হলো-
১. স্থান নির্বাচন : নিচু অঞ্চলে বর্ষাকালে ৫ - ৬ মাস ১ - ২ মিটার পানি থাকে বা ঘের করে পানি আটকিয়ে রাখা
যায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। ঘের এলাকা বন্যামুক্ত হতে হবে।
২. ঘের নির্মাণ : ঘেরের মাটির ঢ়
ঐ
৬ এর উপর হতে হবে। সুষ্ঠু ঘের ব্যবস্থাপনার জন্য ঘের এর আয়তন ২ - ১০
হে. হলে ভালো হয়। ঘের বর্গাকার বা আয়তাকার এবং চারদিকের বাঁধ মজবুত থাকতে হবে। পানির গভীরতা ১
মিটার হতে হবে। ঘের আগাছা ও শ্যাওলামুক্ত হতে হবে।
৩. ঘের প্রস্তুতি : ঘের পুরাতন হলে পরিষ্কার ও প্রয়োজনীয় মেরামত করে প্রস্তুত করতে হবে। প্রয়োজনে ঘের সেচে
ফেলে রুক্ষুসে মাছ ও তলার অতিরিক্ত কাঁদা অপসারণ করে রোদ লাগাতে হবে। অতঃপর তলদেশে চাষ দিয়ে
প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
৪. চিংড়ি চাষের সময় : ডিসেম্বর ফ্রেব্রæয়ারি এই সময়ের মধ্যে ঘের প্রস্তুতসহ চুন ও জৈবসার প্রয়োগ এবং পানি
সরবরাহ করে ফেব্রæয়ারি-মার্চ মাসে পোনা মজুদ করতে হবে।
৫. নার্সারিতে পোনা লালন : প্রাকৃতিক উৎস বা হ্যাচারির পোনা নার্সারি পুকুর বা পেনে ২ - ৬ সপ্তাহ পালন করে
ঘেরে ছাড়লে মৃত্যুর হার কম হয়। এক্ষেত্রে পুকুরের প্রতি শতাংশে ২০০০ - ৪০০০ টি পোষ্ট লার্ভা মজুদ করে ২
- ৬ সপ্তাহ পালন করতে হয়। প্রতিদিন ৪ বার খাদ্য দিতে হয়। পোনা ৪ - ৫ সে. মি. হলে ঘেরে ছাড়তে হবে।
৬. পানির গুণাগুণ : জোয়ার বা প্রাকৃতিক উৎস থেকে সরবরাকৃত পানির ঢ়
ঐ
৭.৫ - ৭.৮, তাপমাত্রা ২৫০
-৩০০
সে.
এবং ক্ষারত্ব ১০০ - ১৬০ পিপিএম হলে ভালো হয়। পানির গভীরতা ১ - ১.৫ মিটার ও স্বচ্ছতা ২৫ - ৩০ সে.
মি. হলে উত্তম।
৭. সার প্রয়োগ : ঘেরে পানি সরবরাহের ৫-৭ দিন পর সার প্রয়োগ করতে হয়। হেক্টর প্রতি ২০ কেজি গোবর, ১
কেজি ইউরিয়া ও ১ কেজি টিএসপি একত্রে মিশিয়ে পানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। সার দেয়ার পর পানির গভীরতা
৪০ - ৫০ সে.মি. বাড়াতে হবে।
৮. পোনা মজুদ : সার প্রয়োগের ১০-১৫ দিন পর ৫-৭ সে. মি. আকারের পোনা ছাড়তে হবে। প্রচলিত চাষ
পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে ৮০-১০০ টি, আধা নিবিড় পদ্ধতিতে ২০০-৩০০টি ও নিবিড় পদ্ধতিতে ১০০০-
২০০০টি পোনা ছাড়তে হবে।
৯. খাদ্য পরীক্ষা : সার প্রয়োগের ২০ - ২৫ দিন পর ঘেরে চিংড়ির প্রাকৃতির খাদ্য আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
১০. সম্পূরক খাদ্য তৈরি ও প্রয়োগ : গলদা চিংড়ির বৃদ্ধির জন্য সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। নি¤েœর তালিকা
অনুসারে খাদ্য তৈরি করতে হবে।
ক্রমিক নং খাদ্য উপাদানের নাম পরিমাণ (গ্রাম)
১. চালের কুঁড়া/গমের ভ‚ষি ৪০০ - ৬০০
২. খৈল (সরিষা/সয়াবিন/তিল) ১০০ - ২০০
৩. ফিস মিল ২০০ - ৩০০
৪. শামুক/ঝিনুকের গুড়া ৯৫
৫. লবণ ২.৫
৬. ভিটামিন মিশ্রণ ২.৫
এছাড়াও শামুক ও ঝিনুকের মাংস, ছোট মাছ, মাছের ডিম, কেচোঁ ও মরা চিংড়ি প্রভৃতি খাবার দিতে হবে। তৈরিকৃত খাদ্য
পুকুরে ছিটিয়ে বা ট্রেতে দলা বেঁধে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
১১. সার প্রয়োগ : প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য ১৫ দিন পর পর সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনীয় সারের
পরিমাণ নি¤œরূপ :
ক্রমিক নং সারের নাম সারের পরিমাণ (একরে)
১. গোবর ১৫ কেজি
২. ইউরিয়া ৬ কেজি
৩. টিএসপি ২.৫ কেজি
৪. এমপি ১ কেজি
ইউরিয়া ব্যাতীত অন্যান্য সারগুলো একত্র করে তিনগুণ পানির সাথে মিশিয়ে পুকুরে ছিটাতে হবে। দানাদার ইউরিয়া
সরাসরি ছিটাতে হবে।
১২. পানি ব্যবস্থাপনা : চিংড়ির সঠিক বৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য মাঝে মাঝে জাল টেনে, বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে
অক্সিজেন বাড়াতে হবে। চুন নিয়ে পানির স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
১৩. রোগবালাই দমন ও অন্যান্য পরিচর্যা : ঘেরে চিংড়ির রোগবালাই, মৃত্যুহার ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নিতে হবে। খোলস বদলানোর সময় আশ্রয় নেয়ার জন্য পুকুরে পাতাবিহীন ডালপালা পুঁতে দিতে হবে।
১৪. চিংড়ি আহরণ : গলদা চিংড়ি ৬ - ৮ মাসেই আহরণের উপযোগী হয়। এ অবস্থায় ১০- ১৫টি চিংড়ির ওজন ১
কেজি হলে চিংড়ি সংগ্রহ করা ভালো।
সারসংক্ষেপ
বর্তমানে আমাদের দেশে গলদা ও বাগদা এই দুইটি প্রজাতির চিংড়ি চাষ হচ্ছে। তবে ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ওপর চিংড়ি
চাষের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। ব্যবস্থাপনাগত দিক থেকে চিংড়ি চাষকে সনাতন, উন্নত-হালকা, আধা-নিবিড়
এবং নিবিড় পদ্ধতিতে ভাগ করা যায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.২
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। কোন ধরনের পুকুর গলদা চিংড়ি চাষের অধিকতর উপযোগী?
ক) আয়তাকার খ) বর্গাকার
গ) গোলাকার ঘ) যে কোন আকার
২। বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীর মোহনায় বছরের কোন্ সময় প্রচুর গলদা চিংড়ির পোনা পাওয়া যায়?
ক) জানুয়ারি হতে মার্চ পর্যন্ত খ) আগস্ট হতে মার্চ পর্যন্ত
গ) মার্চ হতে আগস্ট পর্যন্ত ঘ) সারা বছর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র