ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ বলতে একটি ব্যবস্থাপনাকে বোঝায় যেখানে একই সময়ে একই জায়গায় ধান ও
চিংড়ির চাষ করা হয়। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে একটি বিশেষ গভীরতায় পানি থাকে যা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত
হয়। ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ধান হলো মূখ্য ফসল আর চিংড়ি হলো গৌণ ফসল। ধান ক্ষেতের জৈব সার,
রাসায়নিক সার, মাটি ও পানি মিলে প্রাকৃতিকভাবে যে পরিবেশ তৈরি হয় তা গলদা চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত পরিবেশ।
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষের সুবিধা : ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষের সুবিধাগুলো নি¤েœ দেওয়া হলো :
১. একই জমিতে একই সাথে ধান ও চিংড়ি পাওয়া যায়।
২. চিংড়ি ধানের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফেলে এবং ধানের কোনো ক্ষতি হয় না।
৩. কম পুজিতে ধানের সাথে চিংড়ি চাষ করা যায়।
৪. চিংড়ির অব্যবহৃত খাদ্য ধানের সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৫. চিংড়ির জন্য কম সাম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করতে হয়।
৬. চিংড়ির চলাফেলার কারণে ধানের দ্রæত বৃদ্ধি হয়।
৭. ধান ক্ষেতে পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়।
৮. ধানের ফলনও বেশি হয় এবং মুনাফা অধিক হয়।
৯. ধানের জমিতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে চিংড়ির বিষ্ঠা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে।
১০. ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষের ফলে দুধরনের কাজের জন্য কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়।
ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি :
বাংলাদেশের অধিকাংশ জমিতেই ধানের চাষ হয়। আর এসব জমির প্রায় অর্ধেক জমিতে মৌসুমী ভিত্তিতে সফলভাবে
গলদা চিংড়ি চাষ সম্ভব। সাধারণত ধান ক্ষেত্রে দুভাবে চিংড়ি চাষ করা হয়।
১. ধানের সাথে চিংড়ি চাষ (যুগপৎ পদ্ধতি)।
২. ধানের পরে চিংড়ি চাষ (পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি)।
নি¤েœর প্রথম পদ্ধতিটি আলোচনা করা হলো :
১. ধানের সাথে চিংড়ি চাষ (যুগপৎ পদ্ধতি) : সাধারণত আমন ও বোরো মৌসুমে ধান ক্ষেতে পানি থাকে। তখন উক্ত
মৌসুমে সহজেই ধানের সাথে চিংড়ি চাষ করা যায়। বছরে দু’বার এধরনের চাষ সম্ভব হয়। এদেশের হাওর ও নিচু
এলাকায় ধানের সাথে গলদা চিংড়ি চাষের সুযোগ রয়েছে। ধানের সাথে চিংড়ি চাষের ধাপগুলো নি¤œরূপ :
ক. জমি নির্বাচন : সব ধরনের জমিতে এ ধরনের চাষ সম্ভব নয়। যেসব জমিতে বছরে ৪ - ৬ মাস পানি থাকে
সেসব জমিতে চাষ করা যায়। যে জমিতে বন্যায় পানি উঠেনা, দোআঁশ মাটি, প্রয়োজনীয় পানি সেচ দেয়ার
ব্যবস্থা আছে। জমির পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি এবং কৃষকের গৃহের নিকটবর্তী সেখানে চিংড়ি চাষ কতে হবে।
খ. জমি প্রস্তুতকরণ : সঠিক সময়ে যথানিয়মে জমিতে চাষ ও মই দিয়ে ধান চাষের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। এতে
জমি উপযুক্ত হবে। ধানের সাথে চিংড়ি চাষের সময় জমিতে সবসময় কমপক্ষে ৫ - ৬ ইঞ্চি পানি থাকা প্রয়োজন।
গ. জমিতে আইল বা বাঁধ নির্মাণ : ধান ক্ষেতের চারপাশে উঁচু করে আইল বা বাঁধ তৈরি করতে হবে যেন বন্যার
সময় বাইরে থেকে পানি না ঢুকে।
ঘ. ধানের জাত নির্বাচন : বাংলাদেশে প্রায় সব ধরনের জাতের ধানের সাথেই চিংড়ি চাষ করা যায়। তবে উচ্চ
ফলনশীল খাটো বা মাঝারি লম্বা এবং হেলে না পড়ে এমন জাতের ধানের সাথে চিংড়ি চাষ সহজ হয়।
ঙ. গর্ত খনন : জমির যে অংশ একটু ঢালু বা নিচু সে অংশে মোট জমির ৩ - ৪ ভাগ বা প্রতি বিঘাতে ১ শতাংশ
মাটিতে ২ - ৩ ফুট গভীর গর্ত করতে হয়।
চ. পোনা মজুদ : সাধারণত ধান রোপনের ১০- ১৫ দিন পর জমিতে ৬ ইঞ্চি পানি থাকা অবস্থায় শতাংশে ১২ -
১৫টি গলদা চিংড়ির পোনা ছাড়তে হয়।
ছ. পোনা ছাড়ার সময় : সাধারণত সকালে পোনা ছাড়া হয়। পোনা ছাড়ার সময় ক্ষেতের পানির তাপমাত্রা পাত্রের
পানির তাপমাত্রার সাথে মিশায়ে নিতে হয়।
জ. অন্যান্য ব্যবস্থাপনা : চিংড়িকে দ্রæত বৃদ্ধির করার জন্য নিয়মিত গোবর, ক্ষুদিপানা এবং চিংড়ির দেহের ওজনের ২
- ৩ ভাগ পরিমান চালের কুঁড়া দিতে হয়। জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না, তবে অত্যাবশ্যক হলে চিংড়ি
গর্তে আটকিয়ে শুধু জমিতে ব্যবহার করতে হবে।
ঝ. চিংড়ি আহরণ : ধান কাটার পর পানি কমে গেলে চিংড়ি নর্দমা ও গর্তে চলে যাবে। তখন চিংড়ি আহরণ করতে
হবে। ধান কাটার পর সেচ দিয়ে চিংড়ি রাখার সুবিধা থাকলে চিংড়ি রেখে দিয়ে চিংড়িকে বড় হবার সুযোগ দিতে
হবে।
ঞ. চিংড়ি উৎপাদন বা ফলন : সাধারণত ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ করলে ৩ - ৪ মাসেই প্রতি হেক্টরে ১০০ -
১৫০ কেজি চিংড়ি এবং ১.২ - ২.০ টন ধান উৎপাদিত হয়।
ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষে অসুবিধা :
১. কোনো কোনো সময় অনেকদিন বৃষ্টি না হলে পানি শুকিয়ে গেলে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
২. কখনো কখনো পানির গভীরতা চিংড়ি চাষের জন্য অনুক‚ল হয় না।
৩. বন্যা হলে আইল ভেঙ্গে চিংড়ি ভেসে যেতে পারে।
৪. ধানের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক চিংড়ির ক্ষতি করতে পারে।
সারসংক্ষেপ
ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ি চাষ বলতে এমনি একটি ব্যবস্থাপনাকে বোঝায় যেখানে একই সময়ে একই জায়গায় ধান ও
চিংড়ির চাষ করা হয়। এক্ষেত্রে একটি নির্ধিষ্ট সময় ধরে একটি বিশেষ গভীরতায় পানি থাকে যা চিংড়ি চাষের জন্য
উপযুক্ত হয়। ধান ক্ষেতে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ধান হলো মূখ্য ফসল আর চিংড়ি হলো গৌণ ফসল। সাধারণত ধান
ক্ষেতে দুভাবে চিংড়ি চাষ করা হয়। যেমন: ধানের সাথে চিংড়ি চাষ (যুগপৎ পদ্ধতি) এবং ধানের পরে চিংড়ি চাষ
(পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি)।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.৩
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। ধানের সাথে চিংড়ির চাষ পদ্ধতি কোন্টি?
ক) পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি খ) যুগপৎ পদ্ধতি
গ) একক চাষ পদ্ধতি ঘ) অনবরত চাষ পদ্ধতি
২। ধানের সাথে চিংড়ি চাষে জমিতে সবসময় কতটুকু পানি থাকা প্রয়োজন?
ক) ১২-১৬ ইঞ্চি খ) ৮-১০ ইঞ্চি
গ) ৩-৪ ইঞ্চি ঘ) ৫-৬ ইঞ্চি
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র