সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে করণীয়সমূহ বর্ণনা করুন।

রোগ শোক, সুখ-অসুখ নিয়েই আমাদের জীবন। সারাজীবন পুরোপুরি রোগমুক্ত থাকা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। নানা কারণে আমাদের দেহ কখনও না কখনও অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা রোগাক্রান্ত হয়। শরীর রোগাক্রান্ত হওয়া বা অসুস্থ হওয়াকে সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সারাজীবন রোগমুক্ত থাকা না গেলেও রোগ হতে দেহকে বাঁচানো বা রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এজন্য সাধারণ রোগের ধরন ও রোগ জীবাণু সংক্রমণের বিষয়ে
প্রাথমিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা
আমরা আগেই জেনেছি যে, শরীর বা দেহ রোগাক্রান্ত হলে তাকে স্বাস্থ্য সমস্যা বলা হয়। আমাদের দেশের জনগণের সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো হলোÑ ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, হাম, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হুপিং কাশি, চোখ ওঠা, যক্ষা ইত্যাদি। এছাড়া ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিসের মত জটিল রোগগুলোও আমাদের দেশের অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা হয়।
রোগের কারণ ও ধরন
আমাদের দেহে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। সব ধরনের রোগের কারণ বা উৎস এক নয়। একেক রোগের কারণ একেক রকম। আমাদের চারপাশের পরিবেশে অসংখ্য রোগ জীবাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব রোগ জীবাণু নানা উপায়ে দেহে
প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে রোগ জীবাণু দেহে প্রবেশ করে সহজেই
দেহকে রোগাক্রান্ত করে। এতে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকলে জীবাণু সহজে আক্রমণ করতে পারে না। কোনো কোনো রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অথবা কোনো বস্তুর মাধ্যমে আশেপাশের অন্য ব্যক্তিদের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এসব রোগকে সংক্রামক রোগ বলে। মানুষের দেহের মাধ্যম ছাড়া পানি, বাতাস, খাদ্য ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে। যেমন- সর্দি-কাশি, চোখ ওঠা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, য²া, টাইফয়েড, জন্ডিস, কলেরা ইত্যাদি। যেসব রোগ মানুসের দেহ বা অন্য কোনো মাধ্যমে অপরের দেহে সংক্রমিত হয় না তাকে অসংক্রামক রোগ বলে। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি এসব রোগ বহন করে কিন্তু তার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তি আক্রান্ত হয় না। যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার ইত্যাদি।
স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিকার
রোগের সংক্রমণ এবং বিস্তার ঠেকাতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনসচেতনতা। সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি নিজে এবং সমষ্টিগতভাবে সকলে সচেতন হলে বাংলাদেশের সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার অধিকাংশই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য রোগ ও রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে প্রত্যেকের আত্মসচেতন হতে হবে। রোগ সংক্রমণ হতে সতর্ক থাকতে হবে এবং রোগ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষার সব নিয়ম ও উপায় মেনে চলতে হবে। এতে একদিকে যেমন শরীর সুস্থ ও সবল থাকবে, অন্যদিকে সবল দেহে রোগ আক্রমণের প্রতিরোধ ব্যবস্থাও দৃঢ় থাকবে। ফলে, দেহ সহজে রোগে
আক্রান্ত হতে পারবে না।
সংক্রমক রোগ প্রতিরোধ
আমরা আগেই জেনেছি যে, বিভিন্ন ধরনের রোগের উৎস বা কারণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। ঠিক একইভাবে একেক ধরনের রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থাও একেক রকম। এদেশের সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত রোগসমূহ প্রতিরোধ করতে হলে এসব
রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা উপায়গুলো জানা প্রয়োজন। সাধারণভাবে কয়েকটি সাবধানতা বা পন্থা অবলম্বন করলে অধিকাংশ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিচে রোগ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বা উপায় আলোচনা করা হলো:
১। টিকা গ্রহণ: বসন্ত, য²া, হেপাটাইটিস, হাম, ধনুষ্টংকার, পোলিও, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি ইত্যাদি রোগের টিকা বাংলাদেশে দেয়ার সুব্যবস্থা আছে। নবজাতক, শিশু, কিশোর, প্রাপ্ত বয়স্ক ইত্যাদি বয়সভেদে যে
সময় ও সময়সীমার জন্য যে টিকাটি প্রযোজ্য সে অনুযায়ী টিকা নিয়ে নেয়া জরুরী। এতে উপরের রোগসমূহের প্রতিরোধ ক্ষমতা দেহে তৈরি হয় ও রোগ সংক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
২। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বলতে নিজ নিজ দেহ, নখ, দাঁত, কান, চুল, হাত, পা ইত্যাদির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে বোঝায়, এর সাথে সাথে পরিধেয় পোশাক এবং ব্যবহার্য আসবাবপত্র, চাদর, বালিশ, তোয়ালে, চিরুনী, জুতা, মোজা, থালাবাসন, গোসলখানা ও ঘরবাড়ি, শৌচাগার, বাগান ইত্যাদির পরিচ্ছন্নতাও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার মধ্যে পড়ে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করলে রোগ জীবাণু তথা রোগ হতে দূরে থাকা যায়।
৩। ব্যক্তিগত সুঅভ্যাস গঠন: পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক কিছু কিছু সুঅভ্যাস আমাদেরকে রোগ বিস্তার ও রোগে আক্রান্ত হতে রক্ষা করতে পারে। যেমন- শৌচকাজ এর পরে, খাবার তৈরির পূর্বে, খাওয়ার পূর্বে, খাদ্য পরিবেশনের পূর্বে, খাওয়া পূর্বে, বাইরে থেকে বাসায় ফেরার পর, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার পর, ঘর-দোর পরিষ্কার করার পর ইত্যাদি ক্ষেত্রে
ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করলে নানা ধরনের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
৪। খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও পরিবেশনে সতর্কতা: স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও পরিবেশনের বিষয়ে যতœবান ও সতর্ক হওয়া উচিত।
৫। কীট-পতঙ্গ হতে সাবধানতা: কীট-পতঙ্গ এবং বিষাক্ত ছোট বড় প্রাণি হতে নিরাপদে থাকতে হবে। মশার কামড়, সাপে কাটা, কুকুরে কামড়ের মত দুর্ঘটনা একটু সাবধানতার সাথে চলাফেরা করলেই এড়ানো সম্ভব।
৬। নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ: জীবাণুমুক্ত, টাট্কা খাদ্য গ্রহণ এবং বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
৭। স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা দূরীকরণ: স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা দূর হলে অনেকাংশেই সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিকার করা সম্ভব।
৮। রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি: রোগ প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে বেশি মনোযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়।
এলক্ষ্যে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সভা, সেমিনার, আলোচনা, টকশো, বক্তৃতা, পোস্টার, লিফলেট, নাটক, সিনেমা ইত্যাদি মাধ্যমের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
আমাদের দেশের সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো হলো- ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, হাম, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হুপিং কাশি, চোখ ওঠা, য²া, এলার্জি ইত্যাদি। এছাড়া, ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, ডায়বেটিস, হৃদরোগ, কিডনী অকার্যকর ইত্যাদি জটিল রোগও রয়েছে। এসব রোগের মধ্যে কিছু রোগ জীবাণু দ্বারা
আক্রান্ত হয়ে সৃষ্টি হয়। আবার, কিছু রোগ দৈহিক অবস্থা পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়। যেসব রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ হতে কোনো মাধ্যমে আশেপাশের অন্য ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়ে তাদের সংক্রামক রোগ বলে। যেমন- সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর, ইনফ্লুংয়েঞ্জা, হাম, বসন্ত, জন্ডিস ইত্যাদি। যেসব রোগ রোগাক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে অন্য কোনো সুস্থ দেহে
ছড়ায় না তাদের অসংক্রামক রোগ বলে। যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, হৃদরোগ ইত্যাদি। সংক্রামক বা অসংক্রামক সব ধরনের রোগ প্রতিকার করার চাইতে প্রতিরোধ করাই আমাদের দায়িত্ব। টিকা গ্রহণ, ব্যক্তিগত
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা, ব্যক্তিগত সুঅভ্যাস গঠন, খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও পরিবেশনে সতর্কতা, নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ,
কীট-পতঙ্গ ও বিষাক্ত প্রাণি হতে সাবধানতা অবলম্বন, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অজ্ঞতা দূর, রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। কোনটি সংক্রামক ব্যাধি?
(ক) জন্ডিস (খ) ক্যান্সার
(গ) হৃদরোগ (ঘ) ডায়াবেটিস
২। আমাদের দেশের সাধারণ অসংক্রামক রোগগুলো হলোÑ
র. উচ্চ রক্তচাপ
রর. ইনফ্লুয়েঞ্জা
ররর. ক্যান্সার
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর
(গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
সৃজনশীল প্রশ্ন
১। শেফালি গ্রামে থাকে। বান্ধবীদের সাথে বনে, বাদাড়ে, মাঠে, ঘাটে ঘুরে বেড়াতে সে খুবই পছন্দ করে। প্রায়ই তার
ঠান্ডা লেগে জ্বর আসে।
ক. সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো কী কী?
খ. দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে কী হতে পারে?
গ. শেফালি কোন কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে?
ঘ. আপনার মতে শেফালির জন্য রোগ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো কী হওয়া উচিত?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব কী?
২। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষা বলতে কী বোঝায়?
৩। এদেশের সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো কী কী? রুন।
উত্তরমালা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৪.১ : ১। গ ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৪.২ : ১। ক ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৪.৩ : ১। ক ২। গ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]