বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা

বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা
দক্ষ জনশক্তি জাতীয় উন্নয়নের একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ফলে
বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন কৌশল ও পদ্ধতির দ্রæত পরিবর্তন ঘটছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যবসা-বাণিজ্য,
পরিবহন, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত অসম ও প্রতিকূল
প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অসম-প্রতিযোগিতায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি ও শ্রমের
মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক এবং তথ্যপ্রযুক্তিসহ প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে দ্রæত দক্ষ
জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হবে। দেশের প্রয়োজন ছাড়াও বিদেশে দক্ষ জনশক্তির
চাহিদা রয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই চাহিদা আরো বাড়বে। কাজেই দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের
আয় অনেক বৃদ্ধি সম্ভব। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বিবেচনায় রেখে দক্ষ জনশক্তি তৈরির কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
এই শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিম্নরূপ :
১. দেশ ও বিদেশের চাহিদা বিবেচনায় রেখে সকল ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন স্তরের মানসম্পন্ন দক্ষ
জনশক্তির দ্রæত স¤প্রসারণ।
২. অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি ও শ্রমের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ শিক্ষার মাধ্যমে দ্রæত দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা।
৩. দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের আয় বৃদ্ধি করা।
মাদ্রাসা শিক্ষা
মাদ্রাসা শিক্ষায় ইসলাম ধর্ম শিক্ষার সকল প্রকার সুযোগ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষার্থীরা যেন ইসলামের আদর্শ ও
মর্মবাণী অনুধাবনের পাশাপাশি জীবনধারণ সংক্রান্ত জ্ঞান লাভ করতে পারে এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় পারদর্শী হয়
ও তার উৎকর্ষ সাধনে ভূমিকা রাখতে পারে তার জন্য যথার্থ জ্ঞান লাভের ব্যবস্থা করা হবে। সাধারণ বা ইংরেজি মাধ্যমে
পড়–য়া শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতায় তারা যেন সমানভাবে অংশ নিতে পারে সেজন্য মাদ্রাসা শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
নিম্নরূপ :
১. শিক্ষার্থীর মনে সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল (সা:) এর প্রতি অটল বিশ্বাস গড়ে তোলা এবং শান্তির ধর্ম
ইসলামের প্রকৃত মর্মার্থ অনুধাবনে সমর্থ করে তোলা।
২. দ্বীন ও ইসলামের ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য অনুকরণীয় চরিত্র গঠন এবং ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন দিক, ধর্মীয়
আচার-অনুষ্ঠান, সংস্কার সম্পর্কে জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা ও ধর্ম অনুমোদিত পথে জীবনযাপনের জন্য তাঁদেরকে
উদ্বুদ্ধ করার উপযোগী করে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা।
৩. শিক্ষার্থীরা এমনভাবে তৈরি হবে যেন তারা ইসলামের আদর্শ ও মর্মবাণী ভাল করে জানে ও বোঝে, সে অনুসারে
নির্ভরযোগ্য চরিত্রের অধিকারী হয় এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে সেই আদর্শ ও মূলনীতির প্রতিফলন ঘটায়।
৪. শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে অন্যান্য ধারার সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষায় সাধারণ আবশ্যিক বিষয়সমূহে অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি
বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করা।
ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে পরিচিতি, আচরণগত উৎকর্ষ সাধন এবং জীবন ও
সমাজে নৈতিক মানসিকতা সৃষ্টি ও চরিত্র গঠন। এই শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলোÑ প্রচলিত ব্যবস্থাকে গতিশীল করে
যথাযথ মানসম্পন্ন ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদান। প্রত্যেক ধর্মে ধর্মীয় মৌল বিষয়সমূহের সঙ্গে নৈতিকতার উপর জোর দেওয়া
এবং ধর্মশিক্ষা যাতে শুধু আনুষ্ঠানিক আচার পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্র গঠনে সহায়ক হয় সেদিকে নজর
দেয়া।
নৈতিকতার মৌলিক উৎস ধর্ম। তবে সামাজিক ও সংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং দেশজ আবহও গুরুত্বপূর্ণ উৎস। নৈতিকতা
শিক্ষার ক্ষেত্রে এসকল বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে নৈতিক শিক্ষাদান পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে।
উচ্চশিক্ষা
উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হবে জ্ঞান সঞ্চারণ ও নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন এবং সেই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলোর জন্য স্বশাসন ব্যবস্থা অপরিহার্য। বর্তমানে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার পারস্পরিক
নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প, অর্থনীতি ও অন্যান্য বিষয় পরস্পর
নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব বিকাশ,
বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার ও বিশ্বজগত সম্পর্কে অভিনব উপলব্ধি। এই পরিপ্রেক্ষিতেই জ্ঞানের জগতে সকল
বিচ্ছিন্নতা ও বিভক্তি অতিক্রম করে সমন্বয় সাধনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। বর্তমানে প্রচলিত উচ্চশিক্ষা
ব্যবস্থা বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন দেশের প্রয়োজন সম্পূর্ণভাবে মেটাতে সমর্থ নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চশিক্ষার
সামগ্রিক ব্যবস্থায় পুনর্বিন্যাস আবশ্যক। মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং ক্ষেত্রবিশেষে (যথাÑ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ব্যবসায়) বাস্তব
প্রশিক্ষণ দিতে পারে সেই আলোকে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ নিয়মানুসারে চালিত হতে হবে।
উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
১. কার্যকরভাবে বিশ্বমানের শিক্ষাদান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুসন্ধিৎসা জাগানো এবং মানবিক গুণাবলী অর্জনে সহায়তা
দান।
২. অবাধ বুদ্ধিচর্চা, মননশীলতা ও চিন্তার স্বাধীনতা বিকাশে সহায়তাদান করা।
৩. পাঠদান পদ্ধতিতে সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে দেশের বাস্তবতাকে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা, রাষ্ট্র ও সমাজের সমস্যা
সনাক্ত করা ও সমাধান বের করা।
৪. নিরলস জ্ঞানচর্চা ও নিত্যনতুন বহুমুখী মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার ভেতর দিয়ে জ্ঞানের দিগন্তের ক্রমস¤প্রসারণ।
৫. আধুনিক ও দ্রæত অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে কার্যকর পরিচিতি ঘটানো।
৬. জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের উপযোগী বিজ্ঞানমনষ্ক, অসা¤প্রদায়িক, উদারনৈতিক, মানবমুখী, প্রগতিশীল
ও দূরদর্শী নাগরিক সৃষ্টি।
৭. জ্ঞান চর্চা, গবেষণা, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী হতে জ্ঞানের নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি।
৮. মেধার বিকাশ এবং সৃজনশীল নতুন নতুন পথ ও পদ্ধতির উদ্ভাবন।
৯. জ্ঞান, সৃজনশীলতা এবং মানবিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নাগরিক সৃষ্টি।
প্রকৌশল শিক্ষা
বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে তো বটেই, আমাদের সমাজেও সাধারণ মানুষের জীবনে
সকলক্ষেত্রেই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান এবং এগুলোর প্রয়োগ হয়ে পড়েছে একান্ত অপরিহার্য। এর ফলে
সামাজিক জীবনযাত্রার পটপরিবর্তন হচ্ছে এবং সমাজ জীবনের কার্যধারাতেও আসছে গতিশীল পরিবর্তন। একবিংশ
শতাব্দীতে প্রকৌশল বিষয়ে শিক্ষাক্রম অনেক বদলে যাবে। প্রকৌশল শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলোÑ সমাজে বৈজ্ঞানিক
দৃষ্টিসম্পন্ন, বাস্তবধর্মী, দক্ষ প্রকৌশলী ও কারিগরি জনশক্তি গড়ে তোলা যাতে তারা দেশের উন্নয়নে, প্রাকৃতিক সম্পদ
আহরণে, দারিদ্র্য দূরীকরণে এবং সমাজ ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখতে পারেন। সর্বক্ষেত্রে
তথ্যপ্রযুক্তির উপর জোর দেওয়া যাতে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ায় প্রকৌশলীরা উল্লেখযোগ্য অবদান
রাখতে পারেন।
চিকিৎসা, সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা
একটি সুস্থ সবল জনগোষ্ঠীই শুধু দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এজন্যে প্রয়োজন স্বাস্থ্য সচেতনতা,
রোগ প্রতিরোধমূলক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং যথাযথ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা। সেলক্ষ্যে যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে এদেশে
প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, সেবক-সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মী এবং বিশেষজ্ঞ গড়ে তুলতে হবে। একদিকে শিক্ষার্থীরা যেন তাদের
পেশাগত দক্ষতা অর্জন করে অন্যদিকে তারা যেন সংবেদনশীল বিবেকবান মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। চিকিৎসা, সেবা ও
স্বাস্থ্য শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিম্নরূপ :
১. আপামর জনগণের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সুস্থ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে
প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্তমানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সাধারণ চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, চিকিৎসা সহকারী, সেবক-
সেবিকা, স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদ, স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্য জনশক্তি গড়ে তোলা।
২. প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সরকারিভাবে সকলের জন্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জনবল তৈরি করা।
৩. চিকিৎসা পেশা অন্যান্য পেশার তুলনায় স্পর্শকাতর এবং শারীরিক ও মানসিক কষ্ট/অসুস্থতা তথা জীবন-মৃত্যুর
সমস্যার সঙ্গে জড়িত হওয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সাধারণ চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, চিকিৎসা সহকারী, সেবক-
সেবিকা, স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদ, স্বাস্থ্যকর্মী যেন সংবেদনশীল, সামাজিক দায়বদ্ধতা বোধসম্পন্ন বিবেকবান মানুষ হিসেবে
মানুষের সেবায় নিয়োজিত হন সে লক্ষ্যে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা।
৪. চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল উন্নতির সুফল দেশের জনগণের, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছে
দেয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সাধারণ চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, চিকিৎসা সহকারী, সেবক-সেবিকা, স্বাস্থ্য
প্রযুক্তিবিদ, স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা স¤প্রসারণের ব্যবস্থা করা এবং এঁদের সবাইকে সমাজের ও
মানব সেবায় অনুপ্রাণিত করা।
৫. দেশবাসীর ব্যাধি ও চিকিৎসা সমস্যাবলীর মোকাবিলায় উপযুক্ত চিকিৎসা শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞ তৈরির লক্ষ্যে
উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৬. চিকিৎসা বিষয়ে গবেষণা করে এ দেশের স্থানীয় রোগ ব্যাধির চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা।
বিজ্ঞান শিক্ষা
বিজ্ঞানের মূল কাজ হচ্ছে প্রকৃতিকে অনুধাবন করা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং গাণিতিক যুক্তি প্রয়োগের মধ্য দিয়ে
প্রকৃতির রহস্যকে বিজ্ঞান উন্মোচন করে যাচ্ছে। এটি একদিকে মানবজাতির অজানাকে জানার কৌতূহলকে পূরণ করে,
অন্যদিকে বিজ্ঞানের লব্ধ জ্ঞান প্রতিনিয়তই নানা ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহারের ভেতর দিয়ে মানব সভ্যতাকে সামনের দিকে
এগিয়ে নিয়ে যায়। শুধুমাত্র যথাযথ বিজ্ঞান শিক্ষাই একটা জাতিকে দ্রæত তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। বিজ্ঞান
শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিম্নরূপ :
১. শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রস্তুত করা যেন প্রতিভা বিকাশ, জ্ঞান সাধনা এবং সৃজনশীলতায় তারা আন্তর্জাতিক মান অর্জন
করতে পারে।
২. বিজ্ঞান শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি শিক্ষা এবং মানবিক শিক্ষার যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এবং তাদের একটি যে অন্যটির
পরিপূরক এই বিষয়টি মাথায় রেখে একটা সমন্বিত শিক্ষার অংশ হিসেবে বিজ্ঞান শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে
ধরা।
তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা
তথ্যপ্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার করে সর্বক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা এনে দুর্নীতির
মূলোৎপাটন করার ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তি অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। তাছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি
সরবরাহসহ সম্ভাবনাময় রপ্তানিখাত হিসেবে সফটওয়্যার, ডাটা প্রসেসিং বা কলসেন্টার জাতীয় বিকাশে
আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিম্নরূপ :
১. উপর্যুক্ত কর্মযজ্ঞের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও গুণসম্পন্ন শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির প্রচেষ্টা
চালানো।
২. তথ্যপ্রযুক্তিকে শুধুমাত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানের মাঝে সীমিত না রেখে মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, নেটওয়ার্কিং
কিংবা সকল তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ।
ব্যবসায় শিক্ষা
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্প, বাণিজ্য ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের অবদান অপরিসীম। শিল্প, বাণিজ্য ও সেবামূলক
প্রতিষ্ঠানসমূহের যাবতীয় কর্মকাÐ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানের শাখাসমূহের সমন্বিত ব্যবস্থাকে ব্যবসায় শিক্ষা বলে
এই নীতিমালায় অভিহিত করা হচ্ছে। এ শাখায় শিক্ষা যথার্থভাবে আয়ত্ত করতে পারলে চাকরি এবং চাকরির বিকল্প
হিসেবে ব্যবসায়কে আত্মকর্মসংস্থান ভিত্তিক জীবিকার উপায় হিসেবে গ্রহণ করা যায়। বর্তমান বিশ্বে বাজার অর্থনীতির
প্রচলন, বিশ্ববিস্তৃত পণ্যের বাজার এবং তীব্র প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও তার সহায়ক কার্যাবলি
প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে পরিগণিত। তাই বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল দেশেই ব্যবসায়
শিক্ষার গুরুত্ব ও চাহিদা অতি উঁচু পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিভিন্ন স্তরে ব্যবসায় শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিম্নরূপ :
১. ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করা।
২. ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করা।
৩. একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনের পথ সুগম করা।
৪. আর্থিক, ব্যবসায়িক ও কর্মী-ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভে সহায়তা করা এবং কর্মী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর্মীর
সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য দক্ষ ব্যবস্থাপক সৃষ্টি করা।
৫. শিক্ষাজীবনের কোনো স্তরে ঝরে পড়লে অর্জিত শিক্ষা দ্বারা আত্মকর্মসংস্থানের পথ সুগম করা।
৬. ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, বীমা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক ও
পেশাগত ডিগ্রি অর্জনের পথ সুগম করা।
কৃষিশিক্ষা
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। তাই উন্নয়ন এবং আর্থ-সামাজিক জীবনযাত্রার
মানোন্নয়ন কৃষি উন্নয়ন ও বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন কৃষিশিক্ষা, গবেষণা ও
স¤প্রসারণ ব্যবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। কৃষি একটি ফলিত বিজ্ঞান। কৃষি উন্নয়ন বলতে বোঝায় দেশের শস্য,
পশুসম্পদ, মৎস্যসম্পদ ও বনসম্পদের পরিকল্পিত উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা। উচ্চতর কৃষিশিক্ষা বলতে পরিকল্পিত উন্নয়ন ও
ব্যবস্থাপনা, কৃষি, ভেটেরিনারি, পশুপালন, কৃষি প্রকৌশল, কৃষি অর্থনীতি ও মৎস্য বিজ্ঞানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডক্টরাল
পর্যায়ে অধ্যয়ন ও উচ্চতর গবেষণা বোঝায়। কৃষি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিম্নরূপ :
১. দেশের মাটি, পানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং দেশের পরিবেশগত শক্তি ও সম্ভাবনার বিকাশ
সাধন।
২. জাতীয় উন্নয়নে কৃষিনির্ভর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন।
৩. প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে দেশের স্থলজ ও জলজ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি।
৪. জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ব্যাপক অভিঘাত মোকাবিলা করে কৃষি উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য জোরদার গবেষণা
কার্যক্রম গ্রহণ। কৃষিকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে উপলব্ধি করার জন্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
ও সচেতনতা সৃষ্টি।
৫. কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতা সৃষ্টি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, অপুষ্টি দূরীকরণ ও
দারিদ্র্য বিমোচন।
আইনশিক্ষা
আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভের অধিকার বাংলাদেশের সকল নাগরিকের এবং বাংলাদেশে
অবস্থানকারী সকল ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার। সংবিধান অনুযায়ী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা ও দায়িত্বশীল নাগরিক
সৃষ্টির জন্য আইনশিক্ষার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। দেশে ন্যায়বিচার, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের জন্যও সঠিক ও
যুগোপযোগী আইনশিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। আইনশিক্ষার দুটি দিক রয়েছে তা হলোÑ পেশাগত ও ব্যবহারিক। দেশের
প্রচলিত আইনশিক্ষায় এ দুটি দিকের কোনোটারই সুষ্ঠু বিকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আইনশিক্ষার মান যেমন নানা কারণে
নিম্নমুখী হচ্ছে তেমনি ব্যবহারিক ক্ষেত্রেও এর কল্যাণকর ফলাফল সব সময় লক্ষিত হচ্ছে না। তাই আইন শিক্ষার সার্বিক
পুনর্বিন্যাস ও আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আইন শিক্ষার্থীরা যাতে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে এবং দেশের অভ্যন্তরে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখতে
পারে সে লক্ষ্যে আইনশিক্ষাকে অধিকতর বিশ্লেষণধর্মী ও প্রয়োগমুখী করা হবে।
নারীশিক্ষা
দেশ ও সমাজ উন্নয়নের মূল ভিত্তি শিক্ষা। সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক নানা কারণে এ দেশের সর্বস্তরে ব্যাপক সংখ্যক
নারী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। নারীশিক্ষাকে শুধু পরিবারের মঙ্গল, শিশুযতœ ও ঘরকন্নার
কাজে সীমাবদ্ধ রেখে জাতীয় উন্নয়নে নারীকে নিস্ক্রিয় রাখার বিরাজমান প্রবণতা দূর করা হবে। সার্বিক উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন
ও সুষম সামাজিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারীশিক্ষার উপর জোর দেওয়া হবে। নারীশিক্ষার মূল
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিম্নরূপ :
১. নারীকে সচেতন ও প্রত্যয়ী করা এবং সম-অধিকারের অনুকূলে নারীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রখর করা।
২. সকল পর্যায়ে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণে নারীকে উদ্বুদ্ধ করা ও দেশের আর্থÑসামাজিক উন্নয়নে ও দারিদ্র্য বিমোচনে
নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৩. বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে কাজে নিয়োজিত হয়ে এবং আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সাধনে ভূমিকা
পালন করা।
৪. যৌতুক ও নারী নির্যাতন নিরসন এবং নারীর অধস্তন অবস্থার পরিবর্তন ও তার সম-অধিকার নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ায়
নারী যাতে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে পারেন তার উপযোগী করে নারীকে গড়ে তোলা।
কারুকলা ও সুকুমারবৃত্তি শিক্ষা
একটি সংস্কৃতিবান, সুরুচিসম্পন্ন, ঐতিহ্য সচেতন সুশৃঙ্খল জাতি ও নাগরিকগোষ্ঠী সৃষ্টির জন্য কারুকলা ও সুকুমারবৃত্তি
শিক্ষাদান অত্যন্ত জরুরি। এ শিক্ষার অন্তর্গত সংগীত, চিত্রকলা, কারুশিল্প ও হস্তশিল্প, আবৃত্তি, অভিনয়, নৃত্য বা
অঙ্গবিক্ষেপ ইত্যাদি বিষয় শিক্ষার্থীর মন ও মননকে বিকশিত করে এবং তার চিত্তবৃত্তিকে সমৃদ্ধ করে। দেশের চিত্রকলা,
ভাস্কর্য, সংগীত, নাটক, যাত্রা ও থিয়েটার ইত্যাদি সম্পর্কে যেমন এর মাধ্যমে ধারণা লাভ করা যায়, তেমনি বিভিন্ন দেশের
শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কেও জ্ঞানলাভ করা যায়। এ শিক্ষার ফলে শিক্ষার্থীদের একদিকে চিত্তোৎকর্ষ সাধন করা যায়, অন্যদিকে
এই বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে।
বিশেষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা, স্কাউট ও গার্ল গাইড এবং ব্রতচারী
ক. প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা : বিভিন্নভাবে সীমাবদ্ধতায় আক্রান্ত শিশুদের আওতায় পড়ে দৃষ্টি, শ্রবণ, শরীরিক ও মানসিক
প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধিত্বের মাত্রানুসারে এদের মৃদু প্রতিবন্ধী, মাঝারি প্রতিবন্ধী ও গুরুতর প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত করা
হয়। প্রতিবন্ধিত্বের ধরন ও মাত্রার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা
কার্যক্রমের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করা হবে, তবে প্রতিবন্ধিত্বের গুরুতর মাত্রার কারণে যাদেরকে এভাবে সম্পৃক্ত করা
সম্ভবপর হবে না তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
খ. স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা : বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রের একটি অবহেলিত অংশ স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা। শিক্ষিত
জাতিগঠনে সাধারণ শিক্ষার মতো স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এ দুটোকে বাদ দিলে সাধারণ
শিক্ষাকে পূর্ণাঙ্গ বলা যাবে না। শিশুকাল থেকে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার
উদ্যোগ নেওয়া হলে তারা শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্থ থাকার দিকে মনোযোগী হবে, তারা নিয়মানুবর্তিতা ও
শৃঙ্খলা শিখতে সমর্থ হবে। সময়ানুবর্তিতা শারীরিক শিক্ষার অন্যতম পাঠ। শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের ক্রীড়া
প্রতিভার বিকাশ ঘটবে। এ উপায়ে তাদের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে পারে বরেণ্য ক্রীড়াবিদ/খেলোয়াড়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি শরীরচর্চা ও খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকে তাহলে বয়ঃসন্ধিক্ষণে ছেলেমেয়েদের
বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে। খেলাধুলার উপযুক্ত পরিবেশ পেলে মাদকদ্রব্যের মতো ভয়াল অভিশাপ
শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারবে না।
গ. স্কাউট, গার্লস গাইড ও বিএনসিসি : এ শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো দেশের শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণতরুণীদের
যথাক্রমে স্কাউট ও গার্লস গাইড প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, আত্মনির্ভরশীল, সৎ, চরিত্রবান, কর্মোদ্যোগী,
সেবাপরায়ণ, স্বাস্থ্য সচেতন, সর্বোপরি আদর্শ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অবদান রাখা। স্কাউট ও গার্লস গাইড
কর্মসূচি অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তিসত্তার উন্মেষ ঘটিয়ে তরুণ-তরুণীদের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে
দায়িত্বশীল, আত্মসচেতন ও পরোপকারী হিসেবে গড়ে ওঠার গুণাবলী অর্জনে সহায়তা দান করা।
ঘ. ব্রতচারী : অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যের বিবেচনায় ব্রতচারী কার্যক্রম অনেকটা স্কাউটিং ও গার্লস গাইডিংয়ের অনুরুপ, তবে
এটি এই দেশের সংস্কৃতির ভেতর থেকে উঠে এসেছে। এটি গীত ও নৃত্যÑভিত্তিক সুশৃঙ্খল একটি কার্যক্রম, যা
বিদ্যালয়ে বিনোদন চর্চার বিষয় হিসেবেও বিবেচনা করা যায়। ব্রতচারীর উদ্দেশ্যসমূহকে উপজীব্য করে ছড়া ও গীত
এর সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। যাঁরা তা পরিবেশন করেন এবং যাঁরা শোনেন-দেখেন সবাইকে এই কার্যক্রম
ব্রতচারীর উদ্দেশ্যসমূহের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে সহজেই। ব্রতচারী কার্যক্রম সিলেট, ঢাকা, খুলনা, টাঙ্গাইল,
ময়মনসিংহ এবং জয়পুরহাটের অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রচলিত আছে। নীতিগতভাবে ব্রতচারী
কার্যক্রমের স্বীকৃতি দেয়া হবে ও অন্যান্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এটি চালু করার জন্য উৎসাহ দেয়া হবে।
ক্রীড়াশিক্ষা
ছাত্র-ছাত্রীসহ তরুণ-তরুণীদের পূর্ণবিকাশে শরীরচর্চা ও ক্রীড়ার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, উৎপাদনশীলতা,
সৃজনশীলতা এবং আনুষঙ্গিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সুস্থ দেহ ও মনের সমন্বয় মানব উন্নয়নে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
শরীর, মন ও মেধার সমন্বয়ে মানুষের জীবন পূর্ণতা লাভ করে। বাংলাদেশে খেলাধুলা ও শরীরচর্চা দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ
স্থান অধিকার করে থাকলেও দেশে প্রচলিত ক্রীড়া ও শরীর চর্চার মধ্য দিয়ে তা কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা প্রশ্ন সাপেক্ষে।
উল্লেখ, বর্তমানে ক্রীড়াশিক্ষা ও এক্ষেত্রে দক্ষতা ও নৈপুণ্য অর্জনের বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হিসেবে
স্বীকৃতি লাভ করেছে। এদেশে ক্রীড়াশিক্ষা সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গ্রন্থাগার
গ্রন্থাগার সভ্যতার দর্পণ বলে বিবেচিত। সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রন্থাগার যেমন একটি দেশের সার্বিক সাংস্কৃতিক
বিকাশগত মান নির্ধারণের অন্যতম সূচক, তেমনি গ্রন্থাগার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র স্বরূপ। একটি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ ও এর গুণগত মান ঐ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার ব্যবহারের প্রাণস্পন্দনের মাধ্যমেই
প্রকাশ পায়। দেশের নাগরিকদের জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বা জীবনব্যাপী শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ, গবেষণা, নীতি ও পরিকল্পনা
প্রণয়ন ও শিক্ষা গ্রহণে গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে
জ্ঞান ও তথ্য সহজলভ্য করার দায়িত্ব হলো গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্রের। এই প্রত্যয়কে ভিত্তি করে দেশের গ্রন্থাগার ও তথ্য
ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
পরীক্ষা ও মূল্যায়ন
পরীক্ষা ও মূল্যায়ন একটি বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা যার সাহায্যে শিক্ষার সামগ্রিক অর্জনে শিক্ষার্থী কতটা সফল হয়েছে তা নিরূপিত
হয়। শিক্ষার্থীর আচরণের যে দিকগুলো তার সার্বিক ব্যক্তিত্ব বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে শিক্ষাবিদগণ চিহ্নিত করছেন
সেগুলো হলো জ্ঞানার্জন সম্পর্কিত, অনুভূতি সম্পর্কিত ও মনন সম্পর্কিত। এই তিন প্রকার আচরণের মধ্যে আমাদের
দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পথমটি মূল্যায়ন করা হয়। এটি আরো
কার্যকরভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। এছাড়া মূল্যায়নে শিক্ষার্থীর অন্য দুটি দিকও যাচাই করার জন্য যথাযথ নিয়মনীতি
তৈরী করা আবশ্যক। পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষার্থীকল্যাণ ব্যবস্থা ও নির্দেশনা
অনেক সময় বহু সমস্যার আবর্তে অনেক শিক্ষার্থী অত্যাচারিত, বিভ্রান্ত ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, ফলে অনেকের জীবন নষ্ট হয়।
তাই শিক্ষার্থী নির্দেশনা ও পরামর্শদান কর্মসূচি কার্যকরভাবে প্রবর্তন করা হবে। তা করা হলে বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার এবং
শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার পরিবেশ উন্নত করা যাবে এবং শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষার্থী ভর্তি
একজন শিক্ষার্থীকে যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্যে তাকে তার মেধা ও মননের উপযোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির
সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষার্থীর আঞ্চলিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তে তার মেধা ও প্রবণতা যেন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির মাপকাঠি হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। কোনো কোনো স্কুলে ভর্তি করার জন্যে কোমলমতি
শিশুদের নানারকম তথ্য দিয়ে ভারাক্রান্ত করে প্রথম শ্রেণিতেই বিষয়ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত
করা হবে। প্রাথমিকউত্তর সকল পর্যায়ে ভর্তির জন্য নীতিমালা তৈরি করা হবে এবং সেগুলো অনুসরণ করা হবে। প্রসঙ্গত
যে কোনো পর্যায়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর পরিচিতিতে মাতা-পিতা উভয়ের নাম অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম উল্লেখ
করা হবে এবং প্রাথমিক পরীক্ষা পাসের সনদ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এদের নাম থাকবে।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]