জনসংখ্যা ও পরিবেশ

শহরের জনসংখ্যা দ্রæত বৃদ্ধির ফলে আবাসন স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন সুযোগ এবং বায়ু দূষণ
প্রতিনিয়ত পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে। এসব সমস্যা সমাধানে নিম্নবর্ণিত কার্যক্রম গ্রহণ করা :
(ক) গ্রাম ও শহরাঞ্চলে কৃষিজমি নষ্ট করে আবাসন ও শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা নিরুৎসাহিত করে পরিকল্পিত আবাসন
ও শিল্প-কারখানা স্থাপন করা;
(খ) গ্রামে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি শক্তিশালী করা এবং শহর ও নগরে দূষণমুক্ত
পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
(গ) সকল নাগরিকের জন্য আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং আর্সেনিকমুক্ত পানির বিকল্প
উৎস চিহ্নিত করা;
(ঘ) যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে যানবাহনসৃষ্ট দূষণ কমিয়ে আনা;
(ঙ) সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বস্তি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা;
(চ) পৌরসভা/সিটি করপোরেশন কিংবা অন্যান্য পৌর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শহর, নগর ও হাট-বাজার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার
নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা;
(ছ) গ্রাম এলাকায় খাল ও পুকুর খননের কার্যক্রমকে সহায়তা এবং ভূমিক্ষয় ও নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা এবং
নদী ও জলাশয় ভরাট করে আবাসন ও শিল্পস্থাপন নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ
নিশ্চিত করা;
(জ) জনসংখ্যা ও পরিবেশকে সর্বদাই সামাজিক নিরাপত্তার দৃষ্টিতে বিবেচনায় রেখে কর্মকৌশল গ্রহণ করা।
১২. নগরমুখিতা নিরুৎসাহিত করা ও পরিকল্পিত নগরায়ন
গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে গ্রাম ও শহরের নাগরিক সুবিধাসমূহের ব্যবধান কমিয়ে আনা ও গ্রামে
নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। পরিকল্পিত নগরায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়
নিশ্চিত করা।
১৩. সমন্বিত তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার
আদমশুমারি, জনমিতিক জরিপ ও বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল জনসংখ্যা তথ্যের মূল উৎস। দেশে নিয়মিত আদমশুমারি,
জরিপ ও গবেষণা পরিচালিত হলেও প্রাপ্ত তথ্যের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না। এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের ধারাবাহিকতা
বজায় রাখা এবং এর পর্যাপ্ত ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের
কর্মকৌশলের মাধ্যমে নিম্নবর্ণিত সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা :
(ক) জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে নিয়মিত জরিপ ও গবেষণা পরিচালনা করা;
(খ) জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি গবেষক, নীতি-নির্ধারক, পরিকল্পনাবিদ, ব্যবস্থাপক এবং স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে নিয়মিত
যোগাযোগ ও গবেষণালব্ধ তথ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করা;
(গ) লিঙ্গভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও ব্যবহারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন এবং জনসংখ্যানীতির
কার্যকর বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করার জন্য সূচক নির্ধারণ করা;
(ঘ) সমন্বিত তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারে আধুনিক ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করা এবং ওয়েবসাইটসহ
বিভিন্ন মাধ্যমে সকল প্রকার তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা।
১৪. প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ
মানসম্মত পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রশাসনিক ও আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের
ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং সকল কার্যক্রমে জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ
অত্যাবশ্যক। এ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য নিম্নবর্ণিত কৌশলসমূহ গ্রহণ করা :
(ক) প্রশাসনিক ও আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনসংখ্যা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য কার্যক্রমে জনগণের
অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে অধিকতর ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা;
(খ) চাহিদাভিত্তিক প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্থানীয় সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করে তার আলোকে স্থানীয়
গণ্যমান্য ব্যক্তি, স্টেকহোল্ডার ও সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মহিলা প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে
কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা;
(গ) প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহ/গঠন ও এর যথাযথ ব্যবহার করার জন্য
স্থানীয় পর্যায়ের (উপজেলা ও ইউনিয়ন) কমিটিসমূহকে কার্যকর করাসহ ক্ষমতা প্রদান করা;
(ঘ) স্বচ্ছ প্রশাসন ও জনগণের অংশগ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকারের ভূমিকা শক্তিশালী করা এবং কৃষক, শ্রমিক এবং
মহিলা প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা;
(ঙ) ইউনিয়ন ও মাঠ পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার আওতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে
মাতৃমঙ্গল ক্লাব ও এ ধরনের সংগঠনকে সম্পৃক্ত করা।
১৫. পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর উৎপাদন ও সরবরাহ
পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী আমদানি
করে থাকে। দেশে পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ-প্রণোদনা প্রদান এবং সকল
পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার (ঈড়হঃৎধপবঢ়ঃরাব ংপপঁৎরঃু) জন্য প্রয়োজনীয়
পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশেষ করে, শ্রমঘন (খধনড়ঁৎ রহঃবহংরাব) এলাকায় এ কাজে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে
পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় উপকরণাদির সরবরাহ নিশ্চিত করা।
১৬. বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয়
সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে এ নীতি বাস্তবায়নের কর্মকৌশল প্রণয়ন করা।
জনসংখ্যা কার্যক্রমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা
ক) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয় জনসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণ কার্যক্রমে নেতৃত্বদানকারী মন্ত্রণালয়
হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। জেলা পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায়ে অবস্থিত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যেমনÑ হাসপাতাল ও
অন্যান্য সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কার্যক্রম তত্ত¡াবধান
করবে। এ মন্ত্রণালয় জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের নীতি প্রণয়ন ও সমন্বয় সাধনের দায়িত্বও পালন করবে
এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের সহায়তায় জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়ন করবে।
অধিকন্তু, জাতীয় জনসংখ্যা পরিষদের সচিবালয় হিসেবে এ মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালন করবে এবং পরিষদের নীতিগত সিদ্ধান্ত
বাস্তবায়ন, অগ্রগতি এবং জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্টেকহোল্ডার কমিটিসমূহের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ
করবে।
খ) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় : জাতীয় প্রশিক্ষণ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ এ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান
যথাÑ বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং বিসিএস প্রশাসন একাডেমির
শিক্ষাক্রমে অধিক জনসংখ্যার প্রভাব ও পরিকল্পিত পরিবার গঠনে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
এ মন্ত্রণালয় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য কার্যক্রম
বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
গ) অর্থ মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয় দেশের পরিকল্পিত জনসংখ্যা ও এর উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব আরোপ করে পরিবার
পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্য কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তথা পরিবার
পরিকল্পনা অধিদপ্তরের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করবে। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা, মা ও
শিশুস্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্য কার্যক্রম বাস্তবায়নেও প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করবে।
ঘ) শিক্ষা মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয় জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী উন্নত মান বজায় রেখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে
পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শিক্ষাক্রম ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং
শিক্ষাক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা উৎসাহিত করার কার্যক্রম জোরদার করবে। এছাড়া বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক ও অপরাপর শিক্ষা
উপকরণে অধিক জনসংখ্যা ও এর ভয়াবহতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবন-দক্ষতা শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ সময়োপযোগী
করে অন্তর্ভুক্ত করবে। একইভাবে জনমিতি এবং জনসংখ্যা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোর্সের উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
গবেষণা কার্যক্রমসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
ঙ) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয় জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী উন্নত মান বজায় রেখে প্রাথমিক পর্যায়ে
পরিকল্পিত পরিবার, মা ও শিশুস্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শিক্ষাক্রম ও শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং
শিক্ষাক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা উৎসাহিত করার কার্যক্রম জোরদার করবে। এছাড়া বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক ও অপরাপর শিক্ষা
উপকরণে জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবন-দক্ষতা শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ সময়োপযোগী করে অন্তর্ভুক্ত করবে। এ
মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন শিক্ষক-প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাক্রমে অধিক জনসংখ্যার প্রভাব ও পরিকল্পিত পরিবার গঠনে
সমাজের সকল স্তরে উদ্বুদ্ধকরণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করবে।
চ) কৃষি মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহে জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক পাঠ্যক্রম
অন্তর্ভুক্ত করবে। এ মন্ত্রণালয় তার মন্ত্রণালয়াধীন স¤প্রসারণ কর্মীদের মাধ্যমে কৃষিকাজে নিয়োজিত জনগণকে উন্নত কৃষি
প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষক পরিবারের আয়-বৃদ্ধিকরণ ও দুই সন্তানের পরিবার গঠনে উদ্বুদ্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ
গ্রহণ করবে। এছাড়া কাউন্সেলিং দ্বারা শহরমুখী গমন নিরুৎসাহিত করতে এ মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে
পারে।
ছ) তথ্য মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয় সরকারি-বেসরকারি বেতার, টেলিভিশন ও অন্যান্য মাধ্যমে স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরিবার
পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্য, নারী-পুরুষের সমতা, যৌনরোগ ও এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে তথ্য
প্রচারে সময় ও সম্পদ বরাদ্দ করবে। পাশাপাশি এসব বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও
বেসরকারি গণমাধ্যমকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে উৎসাহিত করবে।
জ) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয় জনসংখ্যা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ,
উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করার কর্মসূচি প্রণয়ন করতে পারে।
বিদ্যমান জেলা পরিবার পরিকল্পনা কমিটি, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কমিটি, ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কমিটি এবং
ওয়ার্ড পরিবার পরিকল্পনা কমিটিকে সক্রিয় করে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে গতিময়তা (গড়সবহঃঁস) আনা সম্ভব।
উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যমান নির্দেশনা
অনুযায়ী কমিটিগুলোর সভা আয়োজন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে কার্যক্রম মনিটরিং এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসূচি উন্নয়নে
বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়। বয়স্ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রজনন স্বাস্থ্য ও নারী-পুরুষের সমতার বিষয় অন্তর্ভুক্ত
করতে পারে। এ মন্ত্রণালয় জনসংখ্যা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মহিলা সমবায় সমিতিগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এ
সমিতিগুলো সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ-সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত পরিবার গঠনে সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সম্পর্কে দেশব্যাপী প্রচারণাসহ সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত
করার ক্ষেত্রেও মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালন করতে পারে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকাগুলোতে স্থানীয় সরকার
মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা কার্যক্রমে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরকে সম্পৃক্ত করতে
পারে।
ঝ) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়/পরিকল্পনা কমিশন : সরকারের নীতি-নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে সামগ্রিকভাবে দেশের
জনসংখ্যা প্রাক্কলন, প্রক্ষপণ ও উন্নয়ন গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে সকল উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে এসব বিষয়কে সম্পৃক্ত
করবে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে জনসংখ্যা সমস্যা নিরসন সম্বলিত উপাদানসমূহ অন্তর্ভুক্ত
করবে।
ঞ) সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় : মাতৃকেন্দ্র কর্মসূচির আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে অধিক গ্রামীণ
জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এসব কেন্দ্র থেকে পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহণের জন্য জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করার
ক্ষেত্রে এ মন্ত্রণালয় ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এ মন্ত্রণালয় থেকে অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ ও নিবন্ধনকৃত এনজিওদের জন্য
জনসংখ্যা কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে।
ট) মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় : মহিলাদের দক্ষতা-উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলাদের জন্য ঋণ সহায়তার
ব্যবস্থাকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ এবং মহিলাদের অধিকার ও দায়িত্বের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পরিবার পরিকল্পনা, মা
ও শিশুস্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত মহিলা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয়
পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ঠ) যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় : যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ক বার্তা জনগণের মাঝে
ব্যাপক প্রচারের লক্ষ্যে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকার খেলাধুলা আয়োজন করতে পারে। এ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা
অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় সাধনে এ মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালন করতে পারে।
ড) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় : পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ক বার্তা জনগণের মাঝে ব্যাপক প্রচারের লক্ষ্যে
এ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে। এ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যক্রমের সাথে
সমন্বয় সাধন করতে এ মন্ত্রণালয় কাজ করবে।
ঢ) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয় ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে ধর্মীয় নেতা ও ইমামদের পরিবার পরিকল্পনা, মা ও
শিশুস্বাস্থ্য সেবা এবং যৌনরোগ ও এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম জোরদার করতে
পারে। এ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকাশনায় পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
ণ) ভূমি মন্ত্রণালয় : আদর্শ গ্রাম, ছিন্নমূল ও বস্তি পুনর্বাসনসহ মন্ত্রণালয় পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচিতে পরিবার
পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যতথ্য ও সেবা কার্যক্রম চালু করবে।
ত) শিল্প মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয় সরকারি ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে গার্মেন্টসসহ শ্রমঘন (খধনড়ঁৎ
রহঃবহংরাব) কারখানাগুলোতে কর্মরত নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য পরিবার
পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যতথ্য ও সেবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি তথ্য ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে
অবিবাহিত শ্রমিকদের বিলম্বে বিবাহে উৎসাহিত করা এবং পরিকল্পিত পরিবার গঠনে সহায়তা প্রদান করার দায়িত্ব পালন
করতে পারে। এক্ষেত্রে এ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সাথে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
থ) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থার মাধ্যমে গ্রাম ও শহরে পরিকল্পিত আবাসন ও নগরায়নের
উদ্যোগ গ্রহণ করবে, যাতে বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার জন্য বাসস্থান ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধাদির ব্যবস্থা করা যায়।
দ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা কার্যক্রমে জনসংখ্যা, পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রজনন
স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণা পরিচালনার জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে পারে।
ধ) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয় ই-গভর্নেন্স কর্মসূচির ওয়েব-সাইটে জনসংখ্যা বিষয়ক তথ্য
প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
ন) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় : এ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমান
বাহিনীর সদসগণকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ, স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং
তাদের মাঝে এইচআইভি/এইডসসহ বিভিন্ন প্রকার সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি
কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া এ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ হাসপাতাল ও অন্যান্য সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, পরিবার
পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে পারে।
সারসংক্ষেপ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম অঙ্গীকার হলো সকল নাগরিকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। ১৯৭২ সালে
প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য,
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দেশের মানুষের এসকল সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রয়াসে সরকার
বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে আসছে। বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৮) জনসংখ্যা সমস্যাকে
এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ১৯৭৬ সালে একটি জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে
২০০৪ সালে আরও একটি জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করা হয়। ২০০৪ সালের জনসংখ্যানীতির উদ্দেশ্য ছিল ২০১০
সালের মধ্যে নিট প্রজনন হার-১ অর্জন করা। কিন্তু এ লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় কর্মসূচিতে গতিশীলতা আনার জন্য
জনসংখ্যা নীতিকে হালনাগাদ করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রণীত হয় জাতীয় জনসংখ্যানীতি
২০১২। ২০১১ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ। এই
জনসংখ্যা প্রতিবছর ১৮-২০ লাখ বাড়ছে। ফলে খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, আবাসন, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ
সরবরাহসহ সকল প্রকার সেবা ও অবকাঠামোয় প্রচন্ড চাপ বাড়ছে। তাই দেশের জনসংখ্যাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখার
লক্ষ্যে জনসংখ্যা নীতি ও কৌশলসমূহকে যুগোপযোগী করা অপরিহার্য।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ২০১২ অনুযায়ী কোন সালের মধ্যে নীট প্রজনন হার-১ অর্জন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা
হয়েছে?
ক) ২০১৫ খ) ২০১৭
গ) ২০১৯ ঘ) ২০২১
২। “দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভাল হয়”Ñ এটি কোন নীতির শ্লোগান?
ক) শিক্ষা নীতির খ) জনসংখ্যা নীতির
গ) শিশু নীতির ঘ) নারী উন্নয়ন নীতির

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]