সমাজকর্ম পেশার বিকাশে দরিদ্র আইনের ভূমিকাÑ ১৬০১, ১৮৩৪, ১৯০৫, এবং ১৯৪২
সমাজকর্ম পেশার বিকাশে দরিদ্র আইনের ভূমিকা
একটি পরিপূর্ণ পেশা হিসেবে সমাজকর্ম একদিনে বিকশিত হয়নি। পেশাদার সমাজকর্মের যাত্রা শুরু হয়
ইউরোপে আর এর পূর্ণতা ঘটে আমেরিকায়। যদিও পেশাদার সমাজকর্মের কেন্দ্রস্থল আমেরিকা তথাপি সমাজকর্মকে
পেশাদার মর্যাদায় উন্নীত করার পেছনে ইংল্যান্ডের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ইংল্যান্ড দুঃস্থ ও দরিদ্র জনগণের কল্যাণ
সাধন এবং ভিক্ষাবৃত্তি ও দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করার জন্য কতিপয় বিশেষ আইন প্রণয়ন করে। এসব
আইনের মধ্যে ১৫৩৬, ১৫৭২, ১৫৯৮, ১৬০১, ১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইনসমূহের ভূমিকা অন্যতম।
দরিদ্র আইনের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে সমাজকল্যাণ ক্ষেত্রে সরকারি দায়িত্বের স্বীকৃতি ও ভূমিকার সুদৃঢ় ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু সনাতন সমাজকল্যাণ আধুনিক সমাজের বহুমুখী জটিল সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হলে পেশাদার সমাজকর্মের যাত্রা শুরু
হয়। ধর্মীয় প্রথা ও প্রতিষ্ঠানাদির পাশাপাশি যেমন দরিদ্র আইনসমূহের বিকাশ ঘটে এবং দরিদ্রদের সাহায্যকার্যে সরকারের
পরিকল্পিত পদক্ষেপ ও কর্মসূচির ভিত রচনায় উক্ত আইনসমূহ বিশেষ ভূমিকা পালন করে তেমনি বিশেষ স্থান দখল করে
আছে এবং সমাজকর্মের ইতিহাসে এক বিবর্তনস্বরূপ পেশাগত মান অর্জনে সহায়তা করেছে। ইংল্যান্ডের দরিদ্রদের সেবায়
উদ্বুদ্ধ হয়ে আমেরিকানরা তাদের দেশে সমাজসেবা শুরু করে। কালক্রমে এই সেবা পেশাগত আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারি
স্বীকৃতি লাভ করে। যার জন্য আজ সমগ্র বিশ্বব্যাপী এই আইন সমাদৃত।
২.২.২ ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন
ইংল্যান্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথের রাজত্বকালে ক্রমবর্ধমান দরিদ্র সমস্যা সমাধান, ভিক্ষাবৃত্তি, ভবঘুরে ও বেকারত্ব রোধ
এবং দুঃস্থদের সহায়তার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনগুলোর মাধ্যমে দরিদ্রদের সাহায্যার্থে রাষ্ট্রীয়
স্বীকৃতি প্রদান, তহবিল গঠন, শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট কার্যনীতি, স্থানীয় ইউনিট ও ওভারসিয়ার নিয়োগের মাধ্যমে সাহায্যকার্য
পরিচালনা করা হতো। এছাড়া দরিদ্রদের এলাকাভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করে সমাজকল্যাণ বা সেবাদান কার্যক্রম
পরিচালনাসহ সক্ষম ভিক্ষকুদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজে নিয়োগসহ বহুমুখী কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়। ইংল্যান্ডে
১৩৪৯ থেকে ১৫৯৭ সাল পর্যন্ত প্রণীত বিভিন্ন দরিদ্র আইনের পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে একটি কার্যকরী
দরিদ্র আইন ১৬০১ গৃহীত হয়। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে এটিই বিখ্যাত ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন নামে
পরিচিত।
১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের বিধানসমূহ ও সাহায্যদান নীতি
ক. সেইসব দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিকে সাহায্যদানের তালিকাভূক্তি হতে বিরত রাখা যাদের পরিবার বা সম্পদশালী
আত্মীয়স্বজন তাদের দায়িত্ব গ্রহণে সক্ষম।
খ. প্যারিশ শুধুমাত্র সেইসব দুঃস্থ ও দরিদ্র ব্যক্তিদের সাহায্যদানের জন্য তালিকাভুক্ত করবে যারা প্যারিশের বাসিন্দা
অথবা তিনবছর ধরে সংশ্লিষ্ট প্যারিশে বসবাস করছে।
গ. সক্ষম ভিক্ষুক ও স্বচ্ছল আত্মীয় স্বজনসম্পন্ন ভিক্ষুকদের সাহায্য দেয়া ও নেয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
ঘ. ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে দুঃস্থ ও দরিদ্রদেরকে সাহায্য দানের সুবিধার্থে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয় :
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট দুই পৃষ্ঠা ২১
১. সক্ষম দরিদ্র : এ আইনে যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, সবল, কর্মক্ষম কিন্তু কাজ না করে ভিক্ষাবৃত্তি করে
তাদেরকে সক্ষম দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এদেরকে ভিক্ষাদানে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং অন্য
প্যারিশ (এলাকা) থেকে আগত দরিদ্রদের নিজ প্যারিশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ ধরনের দরিদ্রদের
সংশোধনের জন্য সংশোধনাগার কিংবা শ্রমাগারে কাজ করতে বাধ্য করা হয় এবং অনিচ্ছা প্রকাশ করলে কারাগারে
প্রেরণ করে শাস্তি দেওয়া হতো।
২. অক্ষম দরিদ্র : যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে কোনো কাজ করতে অক্ষম তাদেরকে অক্ষম দরিদ্র বলা হয়। রুগ্ন, বৃদ্ধ,
অন্ধ, বধির, পঙ্গু, শিশুসন্তানসহ মা এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এদেরকে সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ দিয়ে দরিদ্রাগারে রাখা হতো
এবং ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা হতো। যাদের বাসস্থান ছিলো এবং যদি মনে হতো তাদেরকে স্থানে রেখে ভরণপোষণ
কম ব্যয়বহুল তাহলে তাদেরকে ওভারসিয়ার (সরকার নিযুক্ত সমাজকর্মী) এর তত্ত¡াবধানে বহিঃসাহায্য প্রদানের
বিশেষত খাদ্য, বস্ত্র, জ্বালানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হতো।
৩. নির্ভরশীল বালক-বালিকা : এতিম, পরিত্যক্ত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানÑ যাদের পিতামাতা পলায়ন করেছে বা
ভরণপোষণে অক্ষম এ ধরনের দুঃস্থ বালক-বালিকারাই এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এ আইনের আওতায় এসব বালকবালিকাদের ভরণপোষণের ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েকটি বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়। যেমন :
প্রথমত : কোনো স্বচ্ছল নাগরিক বিনা খরচে নির্ভরশীলদের দায়িত্ব নেয়ার ইচ্ছাপোষণ করলে শর্তহীনভাবে তাদের
নিকট দত্তক দেয়া হতো।
দ্বিতীয়ত : অনুরূপ সম্ভব না হলে সবচেয়ে কম খরচে দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করা হতো।
তৃতীয় : আট বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের বালক-বালিকারা যারা গৃহস্থালি বা অনুরূপ কাজের যোগ্য তাদেরকে
শিক্ষানবীশ হিসেবে কোনো নাগরিকের নিকট চুক্তিবদ্ধ করে দত্তক দেয়া হতো। এই চুক্তি অনুযায়ী ছেলেরা ২৪ বছর
বয়স পর্যন্ত এবং মেয়েরা ২১ বছর বা বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য থাকতো।
১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের তাৎপর্য
ইংল্যান্ড তথা সারাবিশ্বে দরিদ্রদের কল্যাণে গৃহীত প্রথম পরিকল্পিত আইনগত পদক্ষেপ হলো ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয়
দরিদ্র আইন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধনে সরকারি দায়-দায়িত্বের স্বীকৃতি হিসেবে এই আইনটির তাৎপর্য বর্তমানেও
গুরুত্বসহ বিবেচনা করা হয়। সামন্তসমাজ ব্যবস্থায় ভাঙ্গন ও শিল্পবিপ্লবের পূর্বলগ্নে ইংল্যান্ডে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য নিয়ন্ত্রণ,
ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরে নিয়ন্ত্রণ এবং দুঃস্থ অসহায়দের কার্যকরী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম সরকারের প্রত্যক্ষ তত্ত¡াবধানে
১৬০১ সালের দরিদ্র আইন প্রবর্তন করা হয়। সমাজকল্যাণের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কর্মী (ওভারসিয়ার) নিয়োগের
সূচনাও হয় সম্ভবত এই আইনের মাধ্যমে। অনেকেই ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটিকে পেশাদার সমাজকর্মের জন্ম-ভিত্তি
হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র