বাংলাদেশের সামাজিক পরিকল্পনাসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা কর

বাংলাদেশের সামাজিক পরিকল্পনা
বাংলাদেশের সামাজিক পরিকল্পনা মূলত উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী পরিকল্পনা। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায়
বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলার মাধ্যমে কাঙ্খিত সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এদেশে বিভিন্ন মেয়াদী ও
খাতওয়ারী পকিল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক পশ্চাদমুখিতা, দারিদ্র্য, বেকারত্বসহ নানাবিধ সমস্যার মধ্যে একটি
সমৃদ্ধ গতিশীল অর্থনীতি গড়ে তুলতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যেখানে বিভিন্ন
সামাজিক খাত অন্তর্ভুক্ত। নিচের ছকে এসব পরিকল্পনা ও সময়কাল উপস্থাপন করা হলোÑ
ক্রমিক নম্বর পরিকল্পনাসমূহ সময়কাল
১ প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৭৩-১৯৭৮
২ দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৭৮-১৯৮০
৩ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৮০-১৯৮৫
৪ তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৮৫-১৯৯০
৫ চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৯০-১৯৯৫
৬ প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ১৯৯৫-২০১০
৭ পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১৯৯৭-২০০২
৮ দারিদ্র্য দূরীকরণ কৌশলপত্র ২০০৩-২০১০
৯ দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১
১০ ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১১-২০১৫
১১ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০
ছক : ১০.১৩.১ বাংলাদেশের প্রণীত পরিকল্পনাসমূহ
বার্ষিক পরিকল্পনা
প্রতিবছর সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন সামাজিক খাতের উন্নয়ন কর্মকাÐের বিপরীতে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাই
বার্ষিক পরিকল্পনা। সাধারণত ১ বছর মেয়াদকালের জন্য প্রণীত হয় বলে একে বার্ষিক পরিকল্পনা বলা হয়। একে এ্যানুয়াল
ডেভেলপমেন্ট প্লান (এডিপি) ও বলা হয়ে থাকে। বার্ষিক পরিকল্পনা বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ,
অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, স্বায়ত্ত¡শাসিত সংস্থাকর্তৃক বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। এসকল প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার প্রতি বছর বাজেট
হতে অর্থের সংস্থান করে থাকে। সরকারের বাজেট হতে বরাদ্দ ছাড়াও প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও
দেশ প্রকল্প সাহায্য দিয়ে তাকে। এ পরিকল্পনায় প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি নির্ণয়ে সাধারণত তিনমাস পরপর মনিটরিং
করা হয়ে থাকে। দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পগুলো বিভিন্ন সামাজিক খাতভিত্তিক হয়ে থাকে। যেমনÑ শিক্ষা, স্বাস্থ্য,
শিশুকল্যাণ, নারীকল্যাণ, প্রবীণকল্যাণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে পাঁচ বছর মেয়াদি যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা।
সাধারণত এ পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনীতির নির্দেশকসমূহকে একটি কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য
লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য এরূপ পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের স্বাধীনতা
পরবর্তী যুদ্ধিবিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন, সামগ্রিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম
১৯৭৩ সালে পাঁচ বছর মেয়াদী (১৯৭৩-১৯৭৮) পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, যা প্রথম পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নামে পরিচিত।
পরবর্তীতে এরই ধারাবাহিকতায় আরোও পাঁচটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং একটি দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়াও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০১৫-১৬ হতে ২০১৯-২০২০ সাল) প্রণয়নের জন্য সরকারের সম্ভাব্য সকল
প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রেক্ষিত পরিকল্পনা
সরকার কর্তৃক গৃহীত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হচ্ছে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। বর্তমানে বিশ্বে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে একটি
জনপ্রিয় কর্মপরিকল্পনা হলো প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া সর্বপ্রথম এই পরিকল্পনা (১৯৬০-১৯৮০)
প্রণয়ন করে। মূলত এই পরিকল্পনার মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য গৃহীত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়। সাধারণত ১০ থেকে ২৫
বছর পর্যন্ত এ পরিকল্পনার মেয়াদ নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রথম প্রেক্ষিত
পরিকল্পনা প্রণীত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় আয় বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং অধিকতর
আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০১০ থেকে ২০২১ সাল
মেয়াদী ‘রূপকল্প ২০২১’ নামক প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। রূপকল্প ২০২১ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলোÑ ক) দারিদ্র্য
হ্রাস, অসমতা ও সামাজিক বঞ্চনা থেকে জনগণকে রক্ষা করা, খ) ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে
পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করা, গ) ২০২১ সাল নাগাদ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ১০% এ উন্নীত করা, ঘ) ২০২১ সালের মধ্যে
খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করা এবং বেকারত্বের হার ১০% ও দারিদ্র্যের হার ১৫% এ নামিয়ে আনা, ঙ) ২০১৫ সালের
মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা, চ) পরিবেশ সংরক্ষণ, আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত
সমস্যা মোকাবিলা করা, ছ) ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও ব্যবহার জোরদার করা, জ) ২০২১
সালের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে ইন্টারনেট
সেবার প্রসার ঘটানো।
সারসংক্ষেপ
অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা, দারিদ্র্য, বেকারত্বসহ নানাবিধ আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকে বাংলাদেশের সামাজিক ও
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে আরও গতিশীল করতে এবং একটি মজবুত অর্থনীতির ভিত গড়ে তুলতে বাংলাদেশে
বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এগুলো হলো বার্ষিক পরিকল্পনা, দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনা, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা
এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে প্রতিবছর বার্ষিক পরিকল্পনা ছাড়াও এযাবত একটি দ্বিবার্ষিক
পরিকল্পনা (১৯৭৮-১৯৮০); ছয়টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৩-১৯৭৮, ১৯৮০-১৯৮৫, ১৯৮৫-১৯৯০, ১৯৯০-
১৯৯৫, ১৯৯৭-২০০২, ২০১১-২০১৫) ও দুটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (১৯৯৫-২০১০ ও ২০১০-২০২১) প্রণীত হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ২০০০ সালে প্রণীত জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণসহ ২০০৩-২০১০ মেয়াদে দারিদ্র্য
দূরীকরণ কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.১৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কবে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়?
ক) ১৯৭২ সালে খ) ১৯৭৩ সালে
গ) ১৯৭৪ সালে ঘ) ১৯৭৫ সালে ২৪১
২। রূপকল্প ২০২১ এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলোÑ
র. ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা
রর. ২০১৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা
ররর. ২০২১ সালের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]