বাংলাদেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাবলী চিহ্নিত কর

বাংলাদেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাবলী চিহ্নিত করে তা বর্ণনা
করতে পারবেন।
১০.১৪.১ বাংলাদেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা
সরকারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাÐের মূল চালিকাশক্তি হলো পরিকল্পনা। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এ
যাবত ৬টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ১টি দ্বিবর্ষিক পরিকল্পনা ও ১টি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা শেষ হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক
হলেও সত্য যে, প্রণীত পরিকল্পনাগুলোর কোনোটিই সামাজিক খাতসহ অন্যান্য খাতের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম
হয়নি। নিম্নের ছকের মাধ্যমে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলো :
পরিকল্পনাসমূহ
মোট বরাদ্ধ প্রকৃত ব্যয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত প্রবৃদ্ধি
(কোটি টাকা) (কোটি টাকা) %) (%) মেয়াদাকাল
১ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ৪৪,৫৫০ ২০,৭৪০ ৫.৫০ ৪.৪০ ১৯৭৩-১৯৭৮
দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনা ৩৮,৬১০ ৩৩,৫৯০ ৫.৬০ ৩.৫০ ১৯৭৮-১৯৮০
২য় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১,৭২,০০০ ১,৫২,৯৭০ ৫.৪০ ৩.৮০ ১৯৮০-১৯৮৫
৩য় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ৩,৮৬,০০০ ২,৭০,১১০ ৫.৪০ ৩.৮০ ১৯৮৫-১৯৯০
৪র্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ৬,২০,০০০ ৫,৯৮,৪৮০ ৫.০০ ৪.১৫ ১৯৯০-১৯৯৫
৫ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১,৯৫,৯৫২১ ১৩,৭৩,৬৩০ ৭.০০ ৫.২১ ১৯৯৭-২০০২
৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ১৩,৪৭,০০০ -- ৮.০০ ৬.৪০ ২০১১-২০১৫
ছক : ১০.১৪.১.১ দেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা
উপর্যুক্ত ছকে দেখা যায় যে, প্রণীত পরিকল্পনার কোনোটিতেই ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে
পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো নিচে আলোচনা করা হলো :
১. পরিকল্পনার অপূর্ণাঙ্গতা : আমাদের দেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অন্যতম সমস্যা হলো
পরিকল্পনার অপূর্ণাঙ্গতা। বিশেষ করে পরিকল্পনার উচ্চাভিলাষী উদ্দেশ্য, অবাস্তব বিশেষায়িত সমষ্টি মডেল নির্ভরতা, নির্দিষ্ট
নীতি ও কর্মসূচির অপর্যাপ্ততা অর্থনৈতিক বা সামাজিক, সাংস্কৃতিক দিকগুলোর উপেক্ষা, এসকল কারণে সামাজিক
পরিকল্পনা যথাযথ পূর্ণাঙ্গতা পায়না।
২. সম্পদের অপর্যাপ্ততা : বাংলাদেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অপ্রতুল সম্পদ এবং সম্পদ
প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা একটি বড় বাধা। অভ্যন্তরীণ উৎস হতে প্রাপ্ত সম্পদের দ্বারা যেমন পরিকল্পনার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার করা
সম্ভব নয়, তেমনি বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য শর্তারোপ এবং দাতা গোষ্ঠীর সরবরাহকৃত
বিশেষজ্ঞর পেছনে প্রদত্ত অর্থের সিংহভাগ খরচ হয়ে যাওয়ায় যথাযথভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়না।
৩. অভিজ্ঞ ও দক্ষ পরিকল্পনা প্রণয়নকারীর অভাব : বাংলাদেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অন্যতম
সমস্যা হলো বিশেষজ্ঞের অভাব। যথাযথ বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ অর্থনীতিবীদ, সমাজবিজ্ঞানী, পরিকল্পনা প্রণয়নকারী,
মানবসম্পদের স্বল্পতার কারণে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়না। অনেক সময় অতীত ব্যর্থতা
মূল্যায়ন না করেই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। ফলে পরিকল্পনা কার্যকর সফল হয়না।
৪. প্রতিশ্রæতির অভাব : আমাদের দেশে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যথেষ্ঠ কমিটমেন্ট বা প্রতিশ্রæতির অভাব
পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, সাধারণ জনগণের মধ্যে কঠোর পরিশ্রম করার
মানসিকতার অভাব ইত্যাদি কারণে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দেয়া।
৫. জনগণের সম্পৃক্ততার অভাব : পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততার অভাব একটি
বড় প্রতিবন্ধকতা। সাধারণত আমাদের দেশে যে সমস্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাতে সাধারণ জনগণের আশা আকাঙ্খার
প্রতিফলন ঘটেনা। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা সম্পর্কে তাদের মধ্যে একটি অনীহার ভাব সৃষ্টি হয়। এজন্য সাধারণ জনগনের
স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকেনা।
৬. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের অভাব : আমাদের দেশে প্রণীত সামাজিক পরিকল্পনাগুলোতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের অভাব
পরিলক্ষিত হয়। এখানে গতানুগতিক ধারায় অনেকগুলো লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এগুলোর মধ্যে কোনোটির
আপেক্ষিক গুরুত্ব কতখানি বা কোনোটি মূল লক্ষ্য তা নির্ধারণ করা হয়না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গৃহীত পরিকল্পনা ব্যর্থতায়
পর্যবসিত হয়।
৭. প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা : বাংলাদেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো প্রতিষ্ঠানিক
দুর্বলতা। সরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেমন সমন্বয়ের অভাব দেখা যায় তেমনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে
নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া বাস্তবমুখী কার্যক্রম গ্রহণে
সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সাংগঠনিক দুর্বলতাও অন্যতম প্রধান সমস্যা।
৮. প্রশাসনিক ব্যর্থতা : পরিকল্পনা প্রণয়নে অতিমাত্রায় আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্ভরতা, বাস্তবতার আলোকে নতুন কিছু
উদ্ভাবন ও গ্রহণে অনীহা, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্ব›দ্ব, ব্যক্তিগত পর্যায়ে
প্রতিদ্ব›িদ্বতা, ঈর্ষাপরায়ণতা, অর্থনৈতিক বিষয়ে জ্ঞানের স্বল্পতা প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও
বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃিষ্ট হয়।
৯. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অন্যতম সমস্যা হলো
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। এখানে দ্রæত সরকার পরিবর্তিত হয়। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথেই নীতিরও পরিবর্তন
হয়, যা সামাজিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
এছাড়া আরো যেসকল কারণে বাংলাদেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো :
ক. যোগ্য ও দক্ষ পরিকল্পনাকর্মী ও সমাজ গবেষকের অভাবে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত ও যথাযথ তথ্যের অভাব;
খ. প্রেক্ষিত বা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অভাব;
গ. সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা;
ঘ. প্রকল্প নকশা তৈরি ও প্রক্রিয়াজাতকরণে দীর্ঘসূত্রিতা;
ঙ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা ও অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা;
চ. প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত অর্থনৈতিক বিপর্যয়;
ছ. পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দাতাগোষ্ঠীর অধিক হস্তক্ষেপ;
জ. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানের দ্রæত পরিবর্তনশীলতা;
ঝ. পরিকল্পনা প্রণয়নে মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংশোধনের সুযোগ না থাকা;
ঞ. সরকারের অস্থিতিশীলতা এবং সঠিক জনকল্যাণমূলক অর্থনৈতিক সামাজিক ও রাজনৈতিক দিকদর্শনের অভাব
ইত্যাদি।
সারসংক্ষেপ
একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাÐের মূল চালিকাশক্তি হলো সামাজিক পরিকল্পনা। পূর্ণাঙ্গ, বাস্তবমুখী ও
যুগোপযোগী সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক ও সুষম উন্নয়ন সম্ভব।
কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটলে অর্থাৎ পরিকল্পনা যদি পূর্ণাঙ্গ, বাস্তবমুখী ও যুগোপযোগী না হয়, তাহলে পরিকল্পনার ধার্যকৃত
লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয় না। ফলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ছয়টি
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা একটি দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনা, একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা শেষ হয়েছে। এছাড়া একটি পঞ্চবার্ষিক
পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন এবং একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা চলমান রয়েছে। কিন্তু এযাবত বাস্তবায়িত
পরিকল্পনাগুলোর কোনোটিই ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এজন্য দেশের আর্থ-সামাজিক
প্রেক্ষাপটে কিছু সমস্যা দায়ী। যেমনÑ ১) পরিকল্পনার অপূর্ণাঙ্গতা, ২) সম্পদের অপ্রতুলতা ও সম্পদ প্রাপ্তিতে
অনিশ্চয়তা, ৩) বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্বের স্বল্পতা, ৪) পরিকল্পনা প্রণয়নে যথাযথ প্রতিশ্রæতির অভাব, ৫) পরিকল্পনা প্রণয়ন ও
বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনগণের সম্পৃক্ততার অভাব, ৬) সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অনুপস্থিতি, ৭) প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা,
৮) প্রশাসনিক ব্যর্থতা, ৯) রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল কত?
ক) ৬% খ) ৭%
গ) ৮% ঘ) ৯%
২। বাংলাদেশে এ যাবৎ কয়টি পঞ্চবার্ষিক ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে?
ক) ৫টি ও ১টি খ) ৬টি ও ২টি
গ) ৭টি ও ১টি ঘ) ৭টি ও ২টি
৩। বাংলাদেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সমস্যা হলোÑ
র. সম্পদের অপ্রতুলতা ও সম্পদ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা
রর. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্যের অভাব
ররর. প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত অর্থনৈতিক বিপর্যয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]