ইংল্যান্ডের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থায় সৃষ্ট দারিদ্র্য সমস্যার পাশাপাশি বেকারত্ব সমস্যা বিভিন্ন সময়ে ত্রাণসাহায্য
কার্যক্রমকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। এ সময় ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশের উন্নত প্রযুক্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থা
ও ইংল্যান্ডের অধিকাংশ জনপ্রিয় কয়লার খনিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিশাল সংখ্যক শ্রমিক বেকারত্বের শিকার হয়ে
পরিবার পরিজনসহ সাহায্যের জন্য আবেদন জানায়। এমতাবস্থায় শ্রমাগার ও বেসরকারি দান সংগঠনগুলোতে
অনির্দিষ্টকালীন আশ্রয় ও সাহায্যদানের অপর্যাপ্ততা পরিলক্ষিত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় জরুরি তহবিল
গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
বেকারত্বের এমন জটিল পরিস্থিতিতে তখনকার ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী দরিদ্র আইন
সংস্কার ও বেকারদের সহায়তাদানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। ফলশ্রæতিতে ১৯০৫ সালে লর্ড জর্জ হ্যামিল্টনকে সভাপতি করে ১৮
সদস্য বিশিষ্ট জড়ুধষ ঈড়সসরংংরড়হ ড়ভ ঃযব চড়ড়ৎ খধংি ধহফ জবষরবভ ড়ভ উরংঃৎবংং গঠন করেন। কমিশন নিচের
সুপারিশমালা সরকারের নিকট পেশ করেন।
১. দরিদ্র আইন ইউনিয়ন ও অভিভাবক বোর্ডের কাউণ্টি পরিষদ গঠন এবং স্থানীয় ত্রাণ সাহায্য প্রশাসনের সংখ্যা কমিয়ে
তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা।
২. প্রচলিত শাস্তিমূলক দরিদ্র সাহায্য কর্মসূচির বিলোপ সাধন করে মানবীয় সরকারি সাহায্য কর্মসূচির প্রবর্তন করা।
৩. মিশ্র দরিদ্রাগারের বিলোপ সাধন করে মানসিক প্রতিবন্ধী ও মানসিক অসুস্থদের হাসপাতালে চিকিৎসা করা এবং
শিশুদের দত্তক পরিবার অথবা আবাসিক স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করা।
৫. প্রবীণদের জন্য জাতীয়ভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থা, দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে হাসপাতাল সুবিধা, বেকার ও অক্ষমদের জন্য
সামাজিক বীমা কর্মসূচি ও বিনামূল্যে সরকারি কর্মসংস্থান সেবা সুবিধা প্রবর্তন করা।
১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশনের উপর্যুক্ত বাস্তবমুখী সুপারিশমালা ইংল্যান্ডের সমাজসেবার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য
পরিবর্তন আনে। দরিদ্রদের সাহায্যদানের চেয়ে নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন
কমিশনের সুপারিশমালার পরিপ্রেক্ষিতে ইংল্যান্ডে ১৯০৫ সালের খাদ্য আইন, ১৯০৭ সালের শিক্ষা আইন, ১৯০৮ সালের
বৃদ্ধকালীন পেনশন আইন, ১৯০৯ সালের শ্রমিক বিনিময় আইন, ১৯১১ সালের জাতীয় বীমা আইন, ১৯২৫ সালের বিধবা,
এতিম ও বৃদ্ধ পেনশন আইন ও ১৯৩১ সালের জাতীয় অর্থনীতি আইনসমূহ গৃহীত হয় যা দরিদ্রদের আর্থ-সামাজিক
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হয়।
২.২.৫ বিভারিজ রিপোর্ট
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইংল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।
ফলে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক সমস্যাসমূহ একদিকে যেমন জটিলরূপ ধারণ করে। অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার
মতো নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়। আর এটা প্রতিরোধের জন্য প্রচলিত সেবামূলক কর্মসূচির পরিকল্পিত ও গঠনমূলক
সংস্কার সাধন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। প্রচলিত সমাজসেবার সংস্কার সাধনের মাধ্যমে একটি বাস্তবমুখী নতুন ধারা
প্রবর্তনে ও ফলপ্রসূ সামাজিক নিরাপত্তা পদ্ধতির উদ্ভাবনে বিভারিজ রিপোর্ট ইংল্যান্ডের ইতিহাসে অনন্য সাধারণ ঘটনা
হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ১৯৪১ সালে ইংল্যান্ডে তৎকালীন লেবার পার্টির পুনর্গঠন মন্ত্রী আর্থার গ্রীনউড পার্লামেণ্টের
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্যার উলিয়াম হেনরী বিভারিজ এর নেতৃত্বে সামাজিক বীমা ও সংশ্লিষ্ট সেবা সম্পর্কিত আন্তঃবিভাগীয়
কমিটি গঠন করেন। উক্ত কমিটির উপর ব্রিটিশ সমাজসেবা পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ পেশের দায়িত্ব
অর্পন করা হয়। স্যার উলিয়াম বিভারিজের নামানুসারে এটি বিভারিজ কমিটি নামে খ্যাত। বিভারিজ কমিটি ১৯৪২ সালের
নভেম্বর মাসে রিপোর্ট পেশ করেন যা সমাজসেবার ইতিহাসে বিভারিজ রিপোর্ট হিসেবে পরিচিত। বিভারিজ রিপোর্টের
সুপারিশের মূল লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের সমাজজীবনকে অভাবমুক্ত করা এবং কল্যাণের পথে প্রতিবদ্ধকসমূহ অপসারণের
মাধ্যমে সমাজে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা। উক্ত রিপোর্টে বিভারিজ সমাজকল্যাণের প্রতিবন্ধক প্রধান ৫টি সমস্যাকে ‘পঞ্চ
দৈত্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই পঞ্চ দৈত্যসমূহ হলোÑ অভাব, রোগ-ব্যাধি, অজ্ঞতা, মলিনতা এবং অলসতা।
এই পঞ্চ দৈত্যসমূহ মানবসমাজের অগ্রগতিতে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। বিভারিজের মতে এ পাঁচটি দৈত্য
অপসারণের মাধ্যমেই সমাজের সুখ সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা যায়।
ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমের ভিত্তি হিসেবে রিপোর্টে ৫ ধরনের নিরাপত্তা কর্মসূচির কথা উল্লেখ করা হয়।
এগুলো হলো :
১. একটি একীভূত, সমন্বিত ও পর্যাপ্ত সামাজিক বীমা কর্মসূচি প্রবর্তন করা;
২. জাতীয় বীমার সুবিধা বহির্ভূত জনগণের জন্য জাতীয় কর্মসূচিভিত্তিক সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করা;
৩. প্রথম শিশুর পরবর্তী প্রত্যেক শিশুর জন্য সাপ্তাহিক শিক্ষা ভাতা প্রদান করা;
৪. সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য ব্যাপকভাবে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ও পূনর্বাসন সেবা প্রদান করা; এবং
৫. অর্থনৈতিক বিপর্যয়কালে ব্যাপক গণবেকারত্ব প্রতিরোধে সরকারিভাবে পূর্ণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল শুধু বিশেষ শ্রেণির জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধন নয় বরং সমম্বিত নিরাপত্তা
ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের সমগ্র জনগোষ্ঠীকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা। বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশ
মোতাবেক পারিবারিক ভাতা দান, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও জাতীয় সাহায্য এই তিনটি কার্যক্রম প্রবর্তন করা হয়। এই
রিপোর্টের মূল বৈশিষ্ট্য হলো জনসাধারণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির প্রবর্তন ও প্রতিকারমূলক কার্যক্রমের
পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন। সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে
সমাজজীবনকে আর্থ-সামাজিক মুক্তির দারপ্রান্তে পৌঁছানোর একটি কার্যকরী নকশা প্রণয়ন করে বিভারিজ রিপোর্ট।
বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তীতে যেসব সামাজিক আইন প্রণয়ন করা হয় তা হলো :
ক. ১৯৪৫ সালের পারিবারিক ভাতা আইন
খ. ১৯৪৫ সালের জাতীয় বীমা আইন
গ. ১৯৪৬ সালের জাতীয় বীমা (শিল্পদুর্ঘটনা) আইন
ঘ. ১৯৪৬ সালের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা আইন।
ঙ. ১৯৪৮ সালের জাতীয় সাহায্য আইন
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বিভারিজ রিপোর্ট ব্রিটিশ জনগণের অভাব এবং অন্যান্য সামাজিক ক্ষতির বিরুদ্ধে
পরিকল্পিত নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেয় এবং পরবর্তীতে ইংল্যান্ডকে কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তরে সহায়তা করে।
সারসংক্ষেপ
দরিদ্র আইন মূলত ইংল্যান্ডের সমাজজীবনে সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।
সমাজসেবার ক্ষেত্রে এই দরিদ্র আইনসমূহে দেখা যায় যে, প্রাথমিক পর্যায়ে সময়ের দাবিতে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন
হলেও পরবর্তীতে দরিদ্রদের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠ-পোষকতায় বিভিন্ন সময়োপযোগী আইন
প্রণয়নের মাধ্যমে গঠনমূলক সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়। শুধু তাই নয় এসব আইনে দরিদ্র সাহায্যকে সরকারি দায়িত্ব
হিসেবে স্বীকার করে নেয়ায় একদিকে যেমন সরকারি তত্ত¡াবধান ও নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে সমাজসেবার ক্ষেত্রে
নতুনমাত্রা সংযোজিত হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। কোন রাজা প্রথম দরিদ্র আইন প্রণয়ন করেন?
ক) রাজা অষ্টম হেনরি খ) রাজা জুয়ান কার্লেস
গ) পঞ্চম হেরাল্ড ঘ) তৃতীয় এডওয়ার্ভ
২। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে দরিদ্রদের কয়টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়?
ক) ২টি খ) ৩টি
গ) ৪টি ঘ) ৫টি
৩। কত সালে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন সংস্কার করা হয়?
ক) ১৮৩০ সালে খ) ১৮৩২ সালে
গ) ১৮৩৪ সালে ঘ) ১৮৩৬ সালে
৪. বিভারিজ রিপোর্টে কয় ধরনের নিরাপত্তা সুপারিশ পেশ করা হয়?
ক) ৩ ধরনের খ) ৫ ধরনের
গ) ৭ ধরনের ঘ) ৯ ধরনের
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র