সমাজকর্ম পেশার বিকাশে দান সংগঠন সমিতির কার্যক্রম ও ভূমিকা

দান সংগঠন সমিতি কী?
আধুনিক সমাজকল্যাণের বিবর্তনে এবং সমাজকর্মকে পেশার পর্যায়ে উপনীত হতে ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার
দান সংগঠন আন্দোলন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সনাতন সমাজকল্যাণের ধারাকে পেশাগত মর্যাদা ও বৈজ্ঞানিক রূপ
প্রদানে দান সংগঠন সমিতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দানশীলতা মানবসেবার সবচেয়ে প্রাচীন ও সনাতন প্রথা। পূর্বে
সমাজসেবা কার্যক্রম অসংগঠিত উপায়ে পরিচালনা করা হতো। পরবর্তীতে আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে
সমাজসেবা কার্যক্রম সংগঠিত ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যেই ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায় উনবিংশ শতাব্দীতে দান
সংগঠন আন্দোলন গড়ে উঠে। এই আন্দোলনের ফলেই গড়ে উঠে নতুন সমাজকল্যাণ সংগঠন ঈযধৎরঃু ঙৎমধহরুধঃরড়হ
ঝড়পরবঃু (ঈঙঝ)। দান সংগঠন সমিতি ১৮৬৯ সালে যেমন ইংল্যান্ডের দুঃস্থ, দরিদ্র ও অসহায়দের সরকারি
পৃষ্ঠপোষকতায় সাহায্য দানে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ ও ভূমিকা পালন করে তেমনি ইংল্যান্ডের অনুকরণে আমেরিকাতেও
১৮৭৭ সালে দান সংগঠন সমিতি গড়ে উঠে।
২.৩.২ সমাজকর্ম পেশার বিকাশে দান সংগঠন সমিতির কার্যক্রম ও ভূমিকা
পেশাগত সংগঠন যে কোনো পেশার বিকাশ ও উন্নয়নে অপরিহার্য। পেশাদার ব্যক্তির আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বার্থ
সংরক্ষণে পেশাগত সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উনবিংশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায় সমাজকর্ম পেশার
বিকাশে যেসব আন্দোলন ও সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সেগুলোর মধ্যে দান সংগঠন সমিতি অন্যতম।
১৮৯৩ সালে এ্যানা এল. ডয়েস শিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সমাজকর্মে প্রশিক্ষণ দানের প্রস্তাব উত্থাপন
করেন। ১৮৯৮ সালে নিউইয়র্ক শহরে সমাজকর্মের উপর প্রথম প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমেই
পেশাগত সমাজকর্মের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে এটি নিউইয়র্ক স্কুল অব সোশ্যাল ওয়ার্ক এ উন্নীত হয়। আর্থ-সামাজিক
সমস্যা সম্পর্কে গভীরভাবে অনুসন্ধানের জন্য দান সংগঠন সমিতির স্বেছাসেবকগণকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দানের প্রয়োজনীয়তা
থেকেই পরবর্তীতে এ্যানা এল. ডয়েস সমাজকর্মে প্রশিক্ষণদানের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এভাবেই সমাজকর্ম পেশার
বিকাশে দান সংগঠন সমিতি প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।
ইংল্যান্ডে দান সংগঠন সমিতি
চার্চভিত্তিক সংগঠন এবং মানবহিতৈষী সমিতিগুলোর মধ্যে মতভেদ ও বিবাদ দূরীকরণ এবং সরকারি বেসরকারি সংস্থার
কার্যাবলীর মধ্যে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে ১৮৬৮ সালে রেভারেন্ড হেনরি সলি একটি বোর্ড গঠনের সুপারিশ করেন। এরই
ফলশ্রæতিতে ১৮৬৯ সালে লন্ডনে “ভিক্ষাবৃত্তি উচ্ছেদ ও ত্রান সংগঠন সমিতি” গঠিত হয়। উক্ত সমিতিকে পরবর্তীতে দান
সংগঠন সমিতি নামে পুনঃনামকরণ করা হয়। মূলত দান সম্পর্কিত বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটানো, ব্যক্তিগত ও সরকারি
ত্রাণব্যবস্থার সমন্বয়ের উন্নয়ন, অনুকূল পরিবেশে দরিদ্রদের সাহায্য করার ব্যক্তিগত প্রবৃত্তি ও সেবার সুযোগ প্রদানের
মাধ্যমে দরিদ্রদের দরিদ্র দশা থেকে উত্তোরণের জন্য এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যেসব মনীষীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়
এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় তাঁদের মধ্যে স্যার স্টুয়ার্ট লুই, রিচার্ড গ্রীন, ওকটাভিয়া হিল, এডওয়ার্ড ডেনিসন, স্যামুয়েল
বানেট উল্লেখযোগ্য।
দান সংগঠন সমিতির মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন ত্রাণ সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। এছাড়াও এই সমিতির উদ্দেশ্য
হলো :
১. পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য লন্ডনের বিভিন্ন দান সংগঠন সমিতির কার্যাবলির সমন্বয় সাধন;
২. প্রত্যেক সংস্থাকে সংস্কার কাজের সাথে পরিচিত করা;
৩. সকল সাহায্যদানের বিষয়ে একটি রেজিষ্ট্রি ব্যুরো স্থাপন করা;
৪. বস্তুগত সাহায্যদানের পরিবর্তে দরিদ্রদের আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে ব্যক্তিগত সেবা প্রদান; এবং
৫. দারিদ্র্য প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত হওয়া।
আমেরিকার দান সংগঠন সমিতি
১৮৬১ সালে আমেরিকায় সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ মানুষের সামগ্রিক জীবনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। ফলশ্রæতিতে ১৮৭৩
সালে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়। গৃহযুদ্ধের পর ১৮৬৯ সালে মন্দাবস্থা অনেক ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সমষ্টিগত
সমস্যা ও বিশৃঙ্খলা ডেকে আনে। অবস্থার প্রয়োজনে ইংল্যান্ডে ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দান সংগঠন সমিতির অনুকরণে
আমেরিকাতেও দান সংগঠন আন্দোলন শুরু হয়। ১৮৭৭ সালে আর. এইচ. গার্টিন নিউইয়র্কের বাফেলো শহরে সর্বপ্রথম
ঈযধৎরঃু ঙৎমধহরুধঃরড়হ ঝড়পরবঃু (ঈঙঝ) প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রধান তিনটি নীতিমালা অনুসরণ করে এই সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হতো :
১. স্থানীয় দান সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে বোর্ড গঠন করে এগুলোর মধ্যে সহযোগিতা স্থাপন করা;
২. কেন্দ্রীয়ভাবে দরিদ্রদের গোপনীয় তালিকা প্রস্তুত করা এবং
৩. বন্ধুভাবাপন্ন পরিদর্শকের মাধ্যমে সকল সাহায্যার্থীর সামাজিক অবস্থা তদন্ত সাপেক্ষে সাহায্যের ধরন নিরূপণ করা।
সারসংক্ষেপ
ঈঙঝ এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় অবদান হলো ইংল্যান্ডে ও আমেরিকাতে আধুনিক পেশাদার সমাজকর্মের ভিত্তি
স্থাপন ও বিকাশ সাধন। ঈঙঝ এর নীতিমালার আওতায় দরিদ্রদের প্রকৃত অবস্থা তদন্তের স্বার্থে সমাজকর্মের
প্রশিক্ষণের উপর জোর দেয়া হয়। এ্যানা এল. ডয়েস সর্বপ্রথম সমাজকর্মে সেবাদানের জন্য ঈঙঝ কর্মীদের প্রশিক্ষণ
দানের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সুতরাং বলা যায় ঈঙঝ হলো পেশাগত সমাজকর্মের বিকাশের প্রস্তাবক, ধারক ও বাহক।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। ইংল্যান্ডে কত সালে ঈঙঝ বা দান সংগঠন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়?
ক) ১৮৬৯ সালে খ) ১৮৭৩ সালে
গ) ১৮৭৭ সালে ঘ) ১৮৮৩ সালে
২ আমেরিকায় কত সালে ঈঙঝ বা দান সংগঠন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়?
ক) ১৮৫৯ সালে খ) ১৮৭১ সালে
গ) ১৮৭৫ সালে ঘ) ১৮৭৭ সালে

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]