আর্থ-সামাজিক জীবনে শিল্পবিপ্লবের ইতিবাচক প্রভাব
শিল্পবিপ্লবের সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যমান। শিল্পবিপ্লব এবং এর
ফলশ্রæতি হিসেবে মানব আবিষ্কার ও বিভিন্ন প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে করেছে সহজতর, আরামপ্রদ, জীবনযাত্রার প্রণালীতে
এনেছে ভিন্নতা, জীবনকে করেছে সমৃদ্ধ। যদিও শিল্পবিপ্লব অবিমিশ্র আশীর্বাদ নয়; এটি ইতিবাচক ধারায় সমাজস্থ মানুষের
জীবনকে প্রভাবিত করে মানবকল্যাণের নব দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। নিচে মানবজীবনে শিল্পবিপ্লবের ইতিবাচক প্রভাব
তুলে ধরা হলো :
১. প্রাক-শিল্প যুগে অর্থনীতি ছিল গৃহকেন্দ্রিক, হস্তশিল্প নির্ভর, উৎপাদন ছিল মূলত নিজেদের চাহিদাকেন্দ্রিক, অর্থনীতি
ছিল বদ্ধ, আর শিল্পবিপ্লব বদ্ধ অর্থনীতিকে উন্মুক্ত বাণিজ্যিক রূপে পরিবর্তিত করে। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, বৃদ্ধি
পায় বাণিজ্য।
২. প্রাক-শিল্প যুগে ছিল বিনিময় প্রথা বিদ্যমান ছিল। অর্থনীতি গতিশীল ছিল না। বৈদেশিক বাণিজ্যের ধারণা ছিল
অস্পষ্ট। শিল্পবিপ্লবের ফলে অর্থনীতির বিশ্বায়ন ঘটেছে। এক দেশের সাথে অন্য দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে।
৩. শিল্পবিপ্লবের ফলে ব্যবসায়ী পুঁজিপতিদের আর্থিক পুঁজিগঠন ও বিনিয়োগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রেখেছে।
৪. শিল্পবিপ্লবের ফলে নতুন নতুন আবিষ্কার, উৎপাদন বৃদ্ধি ও দ্রব্যের গুণগত মানের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৫. শ্রমের বিশেষায়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং শ্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৬. ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত হয়েছে।
৭. শিক্ষা ও জ্ঞানের বিকাশ সাধিত হয়েছে।
৮. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৯. সমাজ ও মানুষের সম্পর্কে নতুন চিন্তা চেতনার উদ্ভব ঘটেছে। সংকীর্ণ জাতিগত বা ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে
মানবতাবাদ, গণতন্ত্র, সাম্য, ধর্মনিরেপক্ষতা ইত্যাদি ইতিবাচক সামাজিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়েছে।
১০. আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন ঘটেছে।
১১. সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এসেছে।
১২. শিল্পায়ন ও নগরায়ন অবিচ্ছিন্ন ধারা, শিল্পবিপ্লবের প্রত্যক্ষ ফল শিল্পায়ন, আর শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শহর।
১৩. সামাজিক নিরাপত্তা ধারণার উদ্ভব ও বিকাশ।
২.৭.২ আর্থ-সামাজিক জীবনে শিল্পবিপ্লবের নেতিবাচক প্রভাব
আগেই বলা হয়েছে, শিল্পবিপ্লব অবিমিশ্র আশীর্বাদ নয়। শিল্পবিপ্লবের ফলে আর্থ-সামাজিক জীবনে আমূল ইতিবাচক
পরিবর্তনের পাশাপাশি সামাজিক, মনস্তাত্তি¡ক, নৈতিক এবং রাজনৈতিক জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাবও পরিলক্ষিত
হয়। তাই বলা হয়, শিল্পবিপ্লব শুধু আশীর্বাদই নয়, অভিশাপও বটে। নিম্নে নেতিবাচক প্রভাবসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. শ্রেণি বৈষম্য সৃষ্টি : শিল্পবিপ্লবের ফলে সামন্ত প্রভুদের স্থান দখল করে নেয় পুঁজিপতি ও শিল্পপতিগণ; ফলে মালিকশ্রমিক সম্পর্কের সৃষ্টি হয় এবং এ সম্পর্কে নানামুখী দ্ব›দ্ব দেখা দেয়। সৃষ্টি হয় শ্রেণি বৈষম্যের।
২. কুটির শিল্পের বিলুপ্তি : শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে বৃহদায়ন শিল্পের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কুটির
শিল্পের বিলুপ্তি ঘটে।
৩. বেকারত্ব সৃষ্টি : যন্ত্রের আবিষ্কার হস্তনির্ভর কর্মীকে সম্পূর্ণ বেকার করে দেয়। যে কাজ দীর্ঘসময় ধরে কয়েকজন শ্রমিক
করত সেটি যন্ত্রের সাহায্যে স্বল্প সময়ে একজন শ্রমিক করতে পারে। ফলে ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক বেকারত্ব বরণ করে
নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে।
৪. বস্তির উদ্ভব : শিল্পবিপ্লবের ফল হলো শহরায়ন বা নগরায়ন। আর নগরায়নের সৃষ্টি হলো বস্তি। আবাসিক সংকটের
ফলে বস্তির উদ্ভব হয়।
৫. পরিবেশ দূষণ : শিল্প কলকারখানার বর্জ্য, কালো ধোঁয়া ও ময়লা-আবর্জনা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি ও পরিবেশ দূষণ করে।
৬. পারিবারিক বিশৃঙ্খলা : যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার গঠন, চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন ইত্যাদির ফলে দেখা দেয়
পারিবারিক বিশৃঙ্খলা।
৭. সাংস্কৃতিক শূন্যতা : বস্তুগত সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধনে শিল্পবিপ্লবে সহায়তা করলেও সংশ্লিষ্ট অবস্তুগত সংস্কৃতি
অবহেলিত হয়ে পড়ে। ফলে সাংস্কৃতিক শূন্যতা দেখা দেয়, যা সমাজজীবনে দ্বন্দ¦ ও সংঘাত সৃষ্টি করে।
৮. পেশাগত দুর্ঘটনা : কলকারখানায় যন্ত্র ও শক্তির প্রয়োগ হওয়ায় পেশাগত দুর্ঘটনার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৯. মনস্তাত্তি¡ক সমস্যা : শিল্প দুর্ঘটনা, নিরাপত্তাহীনতা ও বেকারত্বের ফলে মনস্তাত্তি¡ক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।
বিভিন্ন সামাজিক চাপ এবং সমস্যার সৃষ্টি হয়। অসহায়ত্ব ও একাকীত্বের যন্ত্রনা ভোগ করে মানুষ।
১০. সামাজিকীকরণের অভাব : শিল্প সমাজব্যবস্থায় পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সকল সদস্য ঘরের বাইরে কাজে নিয়োজিত হয়,
বিধায় শিশু-সন্তানরা স্নেহ-যতœ বঞ্চিত হয়ে পড়ে এবং এর ফলে তাদের সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ ব্যাহত হয়।
১১. নৈতিক অধঃপতন : সম্পর্কের চেয়ে সম্পত্তি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় মূল্যবোধের অবক্ষয়জনিত কারণে
শিল্পসমাজ ব্যবস্থার প্রাথমিক স্তরে প্রায় সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা তথা নৈতিক অধঃপতন পরিলক্ষিত হয়।
সারসংক্ষেপ
শিল্পবিপ্লবের প্রভাব সুদূরপ্রসারিত যা মানবজীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। শিল্পবিপ্লব যেমন
মানুষকে উন্নত জীবন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত করেছে তেমনি সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে আধুনিক রূপ দান করেছে। তাই
আমরা শিল্পবিপ্লবের ইতিবাচক ও নেতিবাচক রূপ লক্ষ্য করে থাকি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.৭
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। কোন দেশে শিল্পবিপ্লবের সূচনা হয়?
ক) ইংল্যান্ডে খ) ইতালিতে
গ) জার্মানিতে ঘ) ফ্রান্সে
২। শিল্পবিপ্লব কোন শিল্পকে ধ্বংস করেছে?
ক) কুটির শিল্পকে খ) মাঝারি শিল্পকে
গ) বৃহৎ শিল্পকে ঘ) আধুনিক শিল্পকে
৩। শিল্পবিপ্লব কোন অর্থনীতির বিকাশ ঘটায়?
ক) মৌলিক অর্থনীতি খ) পুঁজিবাদী অর্থনীতির
গ) বিকাশমান অর্থনীতির ঘ) সহায়ক অর্থনীতি
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র