সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবমূল্য এ দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সমাজকর্মের সাথে সম্পর্কিত আরও
একটি গুরুত্বপূর্ণ যে ধারণার উদ্ভব হয়েছে তা হলো সামাজিক নিরাপত্তা। বস্তুত বেশকিছু প্রতিকূল অবস্থা হতে নাগরিকদের
রক্ষা করার জন্য সমাজ বা রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত এক ব্যবস্থার নাম হলো সামাজিক নিরাপত্তা। আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রে সামাজিক
নিরাপত্তা প্রদান করা একদিকে যেমন রাষ্ট্রের কর্তব্য, অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তা লাভ নাগরিকদের মানবিক অধিকার
হিসেবে স্বীকৃত। বেশ কিছু ঘটনা বা বিষয় যেমনÑ বেকারত্ব, রোগ, অসুস্থতা, পঙ্গুত্ব, বার্ধক্য, কর্মকালীন দুর্ঘটনা ইত্যাদি
মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য যেমন প্রতিকূল তেমন ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকিপূর্ণ ও সংকটময় জীবন বা পরিস্থিতি
মানুষের অর্থনৈতিক, শারীরিক এবং নৈতিক ক্ষতিসাধন করে থাকে। এক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে
সমাজ বা রাষ্ট্র তার নাগরিকদেরকে বিশেষ বিপদকালীন সময়ে বিপদ হতে রক্ষার চেষ্টা করে।
সমাজকর্ম অভিধানের সংজ্ঞানুযায়ী, অসুস্থতা, বেকারত্ব, পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যের মৃত্যু, বার্ধক্য ও প্রতিবন্ধকতা,
নির্ভরশীলতা ইত্যাদি সাধারণ জীবন বিপর্যয় হতে সদস্যদের রক্ষাকল্পে সমাজ বা রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থা হলো সামাজিক
নিরাপত্তা।
উইলিয়াম বিভারিজ বলেন, বেকারত্ব, অসুস্থতা বা দুর্ঘটনা, বৃদ্ধবয়সে চাকরি হতে অবসর গ্রহণ, পরিবারের উপার্জনশীল
ব্যক্তির মৃত্যু; বা জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ের সময় অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ব্যয়ের কারণে যখন কোনো পরিবারের আয়ের পথ
বন্ধ হয়ে যায় তখন যে কর্মসূচির মাধ্যমে আয়ের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয় তাকেই সামাজিক নিরাপত্তা বলে।
সুতরাং বলা যায় যে, সামাজিক নিরাপত্তা মূলত বেশ কিছু প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচির সমষ্টি যা সমাজ বা রাষ্ট্র
নাগরিকদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিপদাপদ থেকে রক্ষার জন্য গ্রহণ করে। এটি রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত একটি অর্থনৈতিক কর্মসূচি
শিল্পবিপ্লবের পর যার উন্মেষ ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এ বিষয়ে চিন্তা-চেতনা ও উদ্যোগ ঘনীভূত হয় এবং দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের পর কার্যকরভাবে এর প্রচলন শুরু হয়।
৪.৫.২ সামাজিক নিরাপত্তার প্রকারভেদ
সামাজিক নিরাপত্তার সাধারণ লক্ষ্য হলো সামাজিকভাবে রাষ্ট্রের নাগরিকদেরকে রক্ষা করা। সামাজিক নিরাপত্তার এ লক্ষ্য
অর্জনের দুটি পথ হলোÑ সামাজিক সাহায্য ও সামাজিক বীমা। তবে, এ দুটি পথ ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তার লক্ষ্য
অর্জনের আরও একটি পথ রয়েছে; সেটি হলো সমাজসেবা। অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা তিন প্রকার। যথাÑ ক) সামাজিক
বীমা, খ) সামাজিক সাহায্য ও গ) সমাজসেবা ।
ক) সামাজিক বীমা : সামাজিক বীমা এমন এক সাহায্যদান ব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তির অবদান সাপেক্ষে তাকে তার
বিপদকালীন সময়ে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। সামাজিক সাহায্যে ব্যক্তির অবদান না থাকলেও সে বিপদকালীন সময়ে
সাহায্য লাভ করে থাকে। কিন্তু সামাজিক বীমার আওতায় সাহায্য পেতে হলে অবশ্যই ব্যক্তিকে আর্থিক অবদান রাখতে
হবে এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।
খ) সামাজিক সাহায্য : এটি মূলত সমাজ বা রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত এক ধরনের সাহায্য ব্যবস্থা যেখানে সরকার তার
রাজস্ব আয় বা নিজস্ব তহবিল থেকে এই ধরনের কর্মকাÐে অর্থায়ন করে থাকে।
গ) সমাজসেবা : সামাজিক সাহায্য ও সামাজিক বীমা অপেক্ষা সমাজসেবার পরিধি ব্যাপক। এটি মূলত এমন এক সংগঠিত
সেবাদান ব্যবস্থা যা মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সংরক্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং এটি ব্যক্তি ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যবিধানে
সহায়তা করে।
বাংলাদেশে যেসমস্ত সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি রয়েছে সেগুলো হলো :
ক. মাতৃত্ব সুবিধা;
খ. চিকিৎসা সুবিধা;
গ. শ্রমিক ক্ষতিপূরণ;
ঘ. সামাজিক বীমা: ১. প্রভিডেন্ট ফান্ড, ২. অবসর ভাতা, ৩. গোষ্ঠী বীমা, ৪. গ্রাচুয়িটি, ৫. বেনেভোলেন্ট ফান্ড;
ঙ. সামাজিক সাহায্য এবং
চ. সমাজসেবা।
সার্বিকভাবে বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির মধ্যে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো চলমান কর্মসূচি। এছাড়াও
বয়স্কভাতা ও বিধবাভাতা বর্তমানে বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির আওতাভুক্ত হয়েছে।
৪.৫.৩ সমাজকর্মের সাথে সামাজিক নিরাপত্তার সম্পর্ক
সমাজকর্ম ও সামাজিক নিরাপত্তার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।
প্রথমত : সমাজকর্ম মানুষের প্রয়োজন পূরণ ও সমস্যার সমাধানে সদা সচেষ্ট। অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তা অক্ষম ও
অসহায়দের মৌল প্রয়োজন পূরণ ও জীবনযাত্রার গ্রহণযোগ্য মানের নিশ্চয়তা বিধান করে সুখী সমাজ গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
দ্বিতীয়ত : সমাজকর্ম ও সামাজিক নিরাপত্তা মানুষের কল্যাণে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
সমাজকর্ম মানুষের সুস্থ, স্বাভাবিক ও কাক্সিক্ষত জীবন যাপনের পথে বাধা সৃষ্টিকারী অবস্থা দূর করার লক্ষ্যে সামাজিক
নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।
তৃতীয়ত : সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য হলোÑ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে সৌর্হাদ্যমূলক সামাজিক পরিবেশ
সৃষ্টি করা। প্রকট অর্থনৈতিক বৈষম্য এক্ষেত্রে বিরাট বাধাস্বরূপ। সামাজিক নিরাপত্তা অর্থনৈতিক বৈষম্য কিছুটা কমিয়ে
সমাজকর্মের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।
চতুর্থত : সমাজকর্মের অনন্য বৈশিষ্ট্য সবর্জনীন কল্যাণমুখিতা। সামাজিক নিরাপত্তা বিভিন্নমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে
জনকল্যাণে মূল্যবান ভূমিকা পালন করে।
পঞ্চমত : সমাজকর্মের বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনে সামাজিক নিরাপত্তা সহায়ক ও পরিপূরক ভূমিকা পালন করে থাকে।
সারসংক্ষেপ
সমাজের মানুষের অক্ষমতা, দুঃস্থতা ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে এবং বিপর্যয় মুহূর্তে রাষ্ট্র বা সমাজকর্তৃক গৃহীত
অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা ও সমর্থনদানের ব্যবস্থা হলো সামাজিক নিরাপত্তা। বেসরকারি পর্যায়েও এ ব্যবস্থা প্রচলিত হতে
পারে। সর্বজনীন কল্যাণ নিশ্চিত করা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণসহ নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর
জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সামাজিক নিরাপত্তা কেমন প্রতিষ্ঠান?
ক) আত্মকেন্দ্রিক খ) স্বেচ্ছামূলক
গ) মানবতামূলক ঘ) প্রতিরক্ষামূলক
২। সামাজিক নিরাপত্তা হলো রাষ্ট্রের নাগরিকদের আয় সহায়তা বিধান। এতে প্রকাশ পায়Ñ
র. আর্থিক সহায়তা রর. সামাজিক বিধান ররর. নিরাপত্তা ব্যবস্থা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র