সরাইখানা কী?
যে সকল ঐতিহ্যগত সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান বহুদিন যাবৎ দুর্গত মানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
আসছে সেগুলোর মধ্যে সরাইখানা অন্যতম। সরাইখানা আধুনিককালের মুসাফিরখানারই প্রতিরূপ। সরাইখানার ইংরেজী
প্রতিশব্দ হলো æওহহ”। সাধারণভাবে সরাইখানাকে বিশ্রামাগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মধ্যযুগে বর্তমানের ন্যায় উন্নত
রাস্তাঘাট ও যানবাহন ছিল না। তখন মানুষকে পায়ে হেঁটে অথবা ঘোড়ায় চড়ে দূরের রাস্তা পাড়ি দিতে হতো। ফলে
পথিমধ্যে বিশ্রাম ও রাত্রিযাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতো। এমন প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে প্রজাহিতৈষী শাসক, উদার
সম্পদশালী ব্যক্তি, ফকির, দরবেশ প্রমুখ ব্যক্তিগণ পথিকের জন্য বিনামূল্যে বিশ্রাম, খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ এবং রাত্রি
যাপনের জন্যে বড় বড় রাস্তার পাশে বিশ্রামাগার স্থাপন করতেন। এমন বিশ্রামাগারই সরাইখানা নামে পরিচিত। ক্লান্ত-শ্রান্ত
পথিকদের বিনাপয়সায় খাওয়াদাওয়া ও বিশ্রামের ব্যবস্থা এবং অসুস্থদের সেবা করার লক্ষ্যেই সরাইখানা নির্মাণ করা
হতো। যার মূলভিত্তি মানবসেবা। মূলত ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে গৃহতুল্য বিশ্রামাগার নির্মাণ করা
হতো। সম্রাট শের শাহ সোনারগাঁ থেকে সিন্ধুনদ পর্যন্ত যে বিখ্যাত গ্রান্ডট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ করেন, তার পাশে অসংখ্য
সরাইখানা নির্মাণ করেন। বর্তমানে সরাইখানার আদলে বড় বড় হোষ্টেল, হোটেল, মোটেল, পর্যটন কেন্দ্র, বোর্ডিং, সার্কিট
হাউজ, ডাক বাংলো, রেস্টহাউজ প্রভৃতি গড়ে উঠেছে। এখানে অত্যাধুনিক সকল সুবিধাই বিদ্যমান তবে এসব সেবাদান
ব্যবস্থা মূলত বাণিজ্যিক এবং টাকার বিনিময়ে সেবা দেয়া হয়।
৫.৫.২ সরাইখানার গুরুত্ব
ঐতিহ্যগত সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরাইখানার গুরুত্ব অপরিসীম। মধ্যযুগের ফকির, দরবেশ, ধর্মপ্রচারক এবং
প্রজা দরদী শাসকগণ পথিক ও ভক্তদের সুবিধার্থে সরাইখানা স্থাপন করতেন। এগুলো Ðজরাখানা ও মুসাফিরখানা নামেও
পরিচিত ছিল। এসব সরাইখানায় বিনাখরচে খাওয়াদাওয়া, বিশ্রাম ও অসুস্থদের সেবাদানের ব্যবস্থা করা হতো। ইসলাম
ধর্মের প্রচারকগণ তাদের খানকার পাশে সরাইখানা নির্মাণ করে নব্যমুসলিমদের আশ্রয়দানের ব্যবস্থা করতেন। বর্তমানে
যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আনুসঙ্গিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এতই অগ্রগতি সাধিত হয়েছে যে, সরাইখানার প্রয়োজনীয়তা একেবারেই
ফুরিয়ে গেছে। অবশ্য যেসব দেশ ও এলাকায় এখনো যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উন্নয়ন ঘটেনি সেসব স্থানে এর
প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আধুনিক সংস্করণ হিসেবে সার্কিট হাউজ, রেষ্ট হাউজ, ডাক বাংলো প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান সরাইখানার
পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে । এছাড়াও সরাইখানা মানবকল্যাণে যেসকল অবদান রাখতে সক্ষম হয় তা হলো :
১. এখানে পথিক, পর্যটক ও মুসাফির গোষ্ঠী বিনাখরচে থাকা-খাওয়ার সুযোগ পায়।
২. এখানে আশ্রিতরা চোর-ডাকাত-খুনিদের হাত থেকে নিরাপত্তা লাভ করে।
৩. অসুস্থ ব্যক্তিবর্গের সুচিকিৎসার পদক্ষেপ নেয়া হয়।
সারসংক্ষেপ
যদিও আধুনিক বিশ্বে সরাইখানার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে, তথাপিও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত সমাজকল্যাণ
প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরাইখানা অন্যতম। অতিথিসেবা ও মানবকল্যাণের অন্যতম পথনির্দেশক এই ঐতিহ্যগত প্রতিষ্ঠানটি
অনেকাংশে সমাজকর্মের দর্শন ও মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। কোনটি ঐতিহ্যগত সমাজকল্যাণের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ?
ক) লঙ্গরখানা খ) সরাইখানা গ) ধর্মগোলা ঘ) দেবোত্তর
২। সরাইখানার মূল চালিকা শক্তি কী?
ক) সহযোগিতা খ) বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি গ) নৈতিকতা ঘ) মানবপ্রেম
৩। কে গ্রান্ডট্র্যাঙ্ক রোডের পাসে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হিন্দু-মুসলমানদের জন্যে পৃথক সরাইখানা ব্যবস্থা করেছিলেন?
ক) ফিরোজ শাহ খ) সম্রাট অশোক গ) শের শাহ ঘ) সিরাজ শাহ
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র