নৃ-বিজ্ঞান কী?
শাব্দিক অর্থে নৃ-বিজ্ঞান বলতে মানুষের বিজ্ঞানকে বোঝায়। অহঃযৎড়ঢ়ড় অর্থ মানুষ এবং খড়মু অর্থ বিজ্ঞান।
এ বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষের অতীত কাল হতে অদ্যাবধি বিবর্তনের ধারা পর্যালোচনা করা হয়। এজন্য নৃ-বিজ্ঞানকে
মানুষের বিজ্ঞান বলা হয়। অতীতকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানুষের জন্ম পরিচয়, জন্ম ইতিহাস, সংস্কৃতি, পরিবার,
রাষ্ট্র, ধর্ম প্রভৃতি প্রথা প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়েই সাধারণত নৃ-বিজ্ঞানের পথচলা। নৃ-বিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কি
এর মতে, নৃ-বিজ্ঞান হলো মানুষ ও তার সংস্কৃতির বৈজ্ঞানিক পাঠ বা আলোচনা।
মুহম্মদ হাবিবুর রহমানের মতে, প্রাণী হিসেবে মানুষ এবং সামাজিক জীব হিসেবে তার সংস্কৃতির পর্যালোচনাই নৃ-বিজ্ঞানের
উদ্দেশ্য। বস্তুত নৃ-বিজ্ঞান মানুষের উৎপত্তি, প্রাণিরাজ্যে তার স্থান তথা এর বিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। নৃ-
বিজ্ঞানের সংজ্ঞায় ই. এ হোবেল বলেন, “নৃ-বিজ্ঞান হলো মানুষ ও তার সংস্কৃতির বিজ্ঞান।”
সুতরাং বলা যায় যে, নৃ-বিজ্ঞান হলো এমন এক শাস্ত্র বা পাঠ, যা মানুষের উৎপত্তি, পরিচয়, ক্রমবিকাশ, আর্থ-সামাজিক ও
সাংস্কৃতিক বিষয়াদি সম্পর্কে বস্তুনিষ্ট ও বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ করে। নৃ-বিজ্ঞান জৈবিক নৃ-বিজ্ঞান ও সাংস্কতিক নৃ-বিজ্ঞান এ
দু’ভাগে বিভক্ত।
৬.২.২ সমাজকর্ম ও নৃ-বিজ্ঞানের সম্পর্ক
সমাজকর্ম ও নৃ-বিজ্ঞান উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্গত বিষয়। সমাজকর্ম সমাজের মানুষের বিভিন্ন সমস্যা এবং
সমস্যা সমাধানমূলক কার্যাবলী আলোচনা করে। সমাজকর্মীদের তাই মানব কল্যাণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য
সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ইতিহাস এবং দৈনন্দিন জীবনযাপন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন। আর
তাই এই দুইয়ের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ট। দু’টি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্কগুলো হলো :
১। সমাজকর্ম একটি সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া। বহুমুখী জটিল সমস্যার সমাধানে সমাজকর্ম সর্বদা প্রয়াসী, আর এজন্য
সমাজকর্মীদের ব্যক্তির দৈহিক গতি, আকৃতি, প্রকৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। তাই দৈহিক নৃ-বিজ্ঞান ব্যক্তি,
দল, সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
২। সমাজকর্ম অনুশীলনের অন্যতম নীতি হলো ব্যক্তির মূল্যবোধ ও সামাজিক মূল্যবোধের স্বীকৃতি। অর্থাৎ সমস্যাগ্রস্ত
ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধ পরিপন্থী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে
সাংস্কৃতিক নৃ-বিজ্ঞানের জ্ঞান গ্রহণ করতে হবে।
৩। দ্রæত নগরায়ন আধুনিক সময়ের উন্নয়নের এক সূচক বলে বিবেচিত হলেও নগরায়ন সৃষ্টি করছে নানা মনো-সামাজিক
সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মীকে নগর নৃ-বিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হবে। এক্ষেত্রেও সমাজকর্ম ও নৃ-বিজ্ঞান সম্পর্কিত।
৪। সমাজকর্ম আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে। আর বিভিন্ন আচার-আচরণ, বিশ্বাস এবং সামাজিক ও
সাংস্কৃতিক বাধা এই উন্নয়নকে ব্যাহত করে। ফলিত নৃ-বিজ্ঞান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বাধা সৃষ্টিকারী এ সকল বিষয়
চিহ্নিত করে থাকে এবং সমাজকর্মীকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
৫। সমাজকর্ম অনুশীলনে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সামাজিক
নৃ-বিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মের জন্য সহায়ক। কেননা সামাজিক নৃ-বিজ্ঞানের ভিত্তিই হলো মানুষের পারস্পরিক ও
সামাজিক সম্পর্ক।
৬। চিকিৎসা সমাজকর্মের জন্যও নৃ-বিজ্ঞান এর জ্ঞান কার্যকরী হতে পারে। কেননা নৃ-বিজ্ঞানের অন্যতম একটি শাখা হলো
চিকিৎসা নৃ-বিজ্ঞান। এটি সমাজে বসবাসরত মানুষের রোগ, চিকিৎসা ও আচার-আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, নৃ-বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রের সাথেই সমাজকর্মের ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। সুতরাং দুটিই একে
অপরের সহযোগী বলা যায়। গভীর সম্পর্ক থাকা সত্তে¡ও দুটি বিজ্ঞানের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্যগুলো নি¤œরূপ :
১। নৃ-বিজ্ঞান মূলত তাত্তি¡ক বিজ্ঞান, সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক বা ফলিত বিজ্ঞান।
২। নৃ-বিজ্ঞানে মূলত গবেষণা কার্যে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, পক্ষান্তরে সমাজকর্মে পর্যবেক্ষণের
পাশাপাশি সাক্ষাৎকার, ফোকাস গ্রæপ আলোচনা পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দেয়া হয় এবং তথ্য সংগ্রহে পরিসংখ্যান ও প্রশ্নমালার
সাহায্য নেয়া হয়।
৩। নৃ-বিজ্ঞানে কখনও মানুষের জৈবিক বৈশিষ্ট্য কখনও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে বড় করে দেখা হয়। কিন্তু
সমাজকর্মে সবসময়ই মানুষের সামষ্টিক বৈশিষ্ট্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
৪। নৃ-বিজ্ঞানের বহু শাখা-প্রশাখা রয়েছে, যা সমাজের প্রায় প্রতিটি দিকেই বিস্তৃত। কিন্তু সমাজকর্মের তেমন কোনো শাখাপ্রশাখা নেই। অর্থাৎ নৃ-বিজ্ঞানের পরিধি সমাজকর্মের তুলনায় ব্যাপক।
৫। নৃ-বিজ্ঞান অতীত নিয়েই বেশি পর্যালোচনা করে, কিন্তু সমাজকর্মের বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতি আগ্রহ বেশি।
অতএব বলা যায় যে, কিছু মৌলিক পার্থক্য থাকা সত্তে¡ও এই দুইয়ের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। একে অন্যের পরিপূরক
হিসেবে সমস্যা সমাধান ও উন্নয়নে সদা সচেষ্ট থাকে।
সারসংক্ষেপ
সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও পদ্ধতিনির্ভর সেবা ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। পক্ষান্তরে মানুষের উৎপত্তি, বিকাশ, সংস্কৃতি,
গঠন প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে নৃ-বিজ্ঞান। তাই আপাতদৃষ্টিতে উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হিসেবে
সমস্যার সমাধান ও ব্যাপক সামাজিক সম্পর্কের উন্নয়নের গতিকে তরান্বিত করতে সাহায্য করে থাকে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। মানুষের উৎপত্তি, বিকাশ, সভ্যতা ও সমাজ নিয়ে আলোচনা করে কোনটি?
ক) জনবিজ্ঞান খ) সমাজকর্ম
গ) সমাজবিজ্ঞান ঘ) নৃ-বিজ্ঞান
২। সমাজকর্মে সমস্যা সমাধানের জন্য নৃ-তাত্তি¡ক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয় কেন?
ক) মানুষের কার্যকলাপ বিশ্লেষণের জন্য খ) নগরায়ণের সমস্যা সমাধানের জন্য
গ) সমস্যা সমাধানে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহের জন্য ঘ) সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য
৩। নৃ-বিজ্ঞান মানুষকে যেভাবে পর্যালোচনা করেÑ
র. প্রাণী হিসেবে রর. সামাজিক জীব হিসেবে ররর. রাজনৈতিক জীব হিসেবে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র