মনোবিজ্ঞান কী?
সমাজকর্ম একটি সমন্বিত বিজ্ঞান বিধায় সমাজবিজ্ঞান ও অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের ন্যায় মনোবিজ্ঞানের
সাথেও সমাজকর্মের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। এছাড়া অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের তুলনায় সমাজকর্ম মনোবিজ্ঞানের উপর
বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল। মনোবিজ্ঞান ও এর বিভিন্ন শাখার জ্ঞান সমাজকর্মের লক্ষ্য অর্জনে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
মনোবিজ্ঞান হলো আত্মার বিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো চংুপযড়ষড়মু, যা চংুপযব এবং খড়মড়ং
শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত। চংুপযব এবং খড়মড়ং এর পর্যায়ক্রমিক অর্থ হলো মন বা আত্মা এবং বিজ্ঞান বা জ্ঞান। অর্থাৎ
মনোবিজ্ঞান হলো মন বা আত্মা সম্পর্কিত বিজ্ঞান। এছাড়াও মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান হিসেবে
স্বীকৃত। বিভিন্ন পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বিভিন্ন রূপ, আচরণ ও বিভিন্ন আচরণের কারণ এবং
আচরণ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি হলো মনোবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয়।
মনোবিজ্ঞানী ওয়াইসন এর মতে, মনোবিজ্ঞান হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষ ও প্রাণীর আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।
ক্রাইডার ও অন্যান্য আধুনিক মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মনোবিজ্ঞান হলো আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়াসমূহের বিজ্ঞানসম্মত
পর্যালোচনা। মনোবিজ্ঞানী প্যাভলভ এর মতে, মনোবিজ্ঞান হচ্ছে দৃষ্টিগোচর আচরণের পর্যালোচনা।
সুতরাং বলা যায়, যে বিজ্ঞান মানবিক ও শারীরিক ক্রিয়ার পারস্পারিক সম্পর্ক বিশেষ করে, যা ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে
তার অনুধ্যান করে তাকে মনোবিজ্ঞান বলে।
৬.৩.২ সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক
সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণ ও মানসিক দিক নিয়ে
আলোচনা করে। অন্যদিকে সমাজকর্ম অনাকাক্সিক্ষত বা অবাঞ্ছিত আচরণ ও মানবিক ত্রæটিজনিত কারণে সৃষ্ট মনো-সামাজিক
সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করে। নি¤েœ এই দুইয়ের সম্পর্ক আলোচনা করা হলো :
১। সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধান করে তাকে সঠিক ভূমিকা পালনে সহায়তা করা।
কিন্তু ব্যক্তিভেদে সমস্যার প্রকৃতি ভিন্ন হয়ে থাকে। কারণ প্রত্যেকটি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, তার আবেগ, বুদ্ধি, হতাশা, বিষয়বস্তু
প্রত্যক্ষণ ক্ষমতা প্রভৃতি ভিন্ন হয়ে থাকে। কাজেই এসব বিষয় সম্পর্কে জানতে একজন সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞান সহায়তা
করতে পারে।
২। সমাজকর্মে সমস্যা সমাধানে ব্যক্তির নিজস্ব সামর্থ্য, সুপ্ত ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তার উপর গুরুত্ব প্রদান করে। আর ব্যক্তির
এই সুপ্ত ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের জন্য মনোবিজ্ঞানে বিশেষ কৌশল ও প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। সেক্ষেত্রে সমাজকর্ম ও
মনোবিজ্ঞান পরস্পর সহায়ক।
৩। মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা আবার সমাজকর্মের বিভিন্ন অনুশীলন ক্ষেত্রের সাথে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ
সমাজকর্মের অনুশীলনের ক্ষেত্র যেমন বহুমুখী তেমনি বহুমুখী অনুশীলন ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রয়োগও বহুমুখী।
৪। সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য হলো ব্যক্তিকে সমাজ উপযোগী আচরণ করতে সক্ষম করে তোলা। এক্ষেত্রে শিক্ষণ
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিকে উপযোগী আচরণ শিক্ষা দিতেও মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৫। সমাজকর্মের চিকিৎসা পদ্ধতি বহুলাংশে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞাননির্ভর। বিশেষ করে ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তির সমস্যার
সমাধান ও আচরণ সংশোধনের জন্য প্রয়োগকৃত সবই মনোবিজ্ঞানেরই আলোচ্য বিষয়।
সুতরাং বলা যায় যে, সমাজকর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল।
বিষয়বস্তুগত দিক থেকে উভয়ের অনেক মিল রয়েছে।
সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে যেমন ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। তেমনি উভয়ের মধ্যে কতগুলো মৌলিক পার্থক্যও
পরিলক্ষিত হয়। যেমন :
১। একটি সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সমাজকর্মের কিছু নিজস্ব মূল্যবোধ ও নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু মনোবিজ্ঞানে
সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার তেমন প্রভাব লক্ষ্যণীয় নয়।
২। সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক বা অনুশীলনধর্মী বিজ্ঞান। কিন্তু মনোবিজ্ঞান মৌলিক বিজ্ঞান।
৩। মনোবিজ্ঞান মানুষ ও প্রাণীর আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।পক্ষান্তরে সমাজকর্ম অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের আচরণ
সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করে।
৪। মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের উপর সমাজকর্ম নির্ভরশীল কিন্তু সমাজকর্মের জ্ঞানের উপর মনোবিজ্ঞান ততোটা নির্ভরশীল নয়।
৫। মনোবিজ্ঞানের নিজস্ব তত্ত¡ রয়েছে। সমাজকর্মের সেই অর্থে নিজস্ব কোনো তত্ত¡ নেই, যদিও তত্ত¡ীয় কাঠামো রয়েছে।
উপরিক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের সুনির্দিষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। তবে সমাজকর্মের
অধিকাংশ কার্যক্রম এবং পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মনোবিজ্ঞান শুধু সহায়তাই করেনা, বরং মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান
সমাজকর্মের জন্য অপরিহার্য।
সারসংক্ষেপ
মনোবিজ্ঞানের সাথে সমাজকর্মের সম্পর্ক নিবিড়। সমাজকর্ম ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, আচরণ, আবেগ, অনুভূতি, চাহিদা সম্পর্কে
নিবিড় তথ্য পেতে পারে শুধুমাত্র মনোবিজ্ঞানের সহায়তায়। সমাজকর্ম তার কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় ব্যক্তি ও তার
পরিবেশের উপর আর মনোবিজ্ঞান এক্ষেত্রে মানুষ ও তার পরিবেশের ভারসাম্য স্থাপনে প্রয়োজনীয় জ্ঞান দান করে
সমাজকর্মকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। মানব আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান কোনটি?
ক) সমাজকর্ম খ) নৃ-বিজ্ঞান
গ) মনোবিজ্ঞান ঘ) জনবিজ্ঞান
২। মনোবিজ্ঞানের উদ্ভব হয়েছে কেন?
ক) প্রাণীর আচরণ অনুসন্ধানের জন্য খ) মানুষের মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রনের জন্য
গ) মানুষ ও প্রাণীর আচরণ অনুসন্ধানের জন্য ঘ) মানসিক রোগের থেকে মুক্তি লাভের জন্য
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র