১ ব্যক্তি সমাজকর্মের নীতিমালা
ব্যক্তি সমাজকর্ম হলো সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের এক গতিশীল সেবাদান প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে
সমাজকর্মী সেবাদানের কতিপয় নির্দেশনামূলক নীতিমালা অনুসরণ করে ব্যক্তি সমাজকর্ম অনুশীলন করে থাকেন। নিচে
ব্যক্তি সমাজকর্মের নীতিসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. গ্রহণ নীতি : ব্যক্তি সমাজকর্মে গ্রহণ নীতি বলতে বোঝায় সাহায্যার্থীকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে তাকে সম্মান প্রদর্শন,
ব্যক্তি মর্যাদার প্রতি গুরুত্ব প্রদান, সমস্যার যথাযথ মূল্যায়ন এবং তার প্রতি সেবাদানের সদিচ্ছা নির্দেশ করে সমাজকর্মী
কর্তৃক তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করা। প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তি সমাজকর্মের সফলতা অনেকাংশেই গ্রহণনীতির উপর নির্ভরশীল।
তাই গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি সমাজকর্মীর মধ্যে আন্তরিকতা, শ্রদ্ধাবোধ, মনোযোগ, আগ্রহ, সততা, অন্যের অনুভূতিকে
ভাগাভাগি করে নেয়ার সদিচ্ছা থাকতে হবে। এটি যেহেতু একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া তাই এক্ষেত্রে সমাজকর্মী ও ব্যক্তি
উভয়েরই প্রতিক্রিয়া আবশ্যক।
২. যোগাযোগ নীতি : সাধারণভাবে যোগাযোগ বলতে তথ্যের আদানপ্রদানকে বোঝানো হয়। সমাজকর্মে যোগাযোগ বলতে
সাহায্যার্থী ও সমাজকর্মীর মধ্যে সমস্যা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি, ধারণা, অনুভূতির আদানপ্রদানকে বোঝায়। ব্যক্তি সমাজকর্মে
যোগাযোগ নীতি অনুসরণের ফলে সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী একে অপরের বক্তব্য, অভিব্যক্তি এবং প্রতীকী আচরণের
অন্তর্নিহিত বিষয় উপলব্ধি করতে পারে।
৩. অংশগ্রহণ নীতি : ব্যক্তি সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তিকে তার সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলা। এক্ষেত্রে
সমাধান প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তি আবশ্যক। ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ এবং হারানো ক্ষমতার পুনরুদ্ধার ও
সুসংহতকরণের মাধ্যমে তার ভূমিকাকে সচল করে তোলার লক্ষ্যে সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। এছাড়া
সাহায্যার্থীর মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করতে সক্রিয় অংশগ্রহণ সহায়তা করে। আবার সমস্যাটি
যেহেতু ব্যক্তির নিজের তাই তা সমাধানের বিষয়টি সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী উভয়েরই সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে হওয়া
বাঞ্ছনীয়।
৪. গোপণীয়তার নীতি : ব্যক্তি সমাজকর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো সাহায্যার্থীর বিভিন্ন তথ্যের গোপনীয়তা বজায়
রাখা। ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সমাজকর্মী ব্যক্তি, তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী বা সহকর্মী বিভিন্ন মাধ্যম
থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যক্তির বিভিন্ন গোপণীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তি তার সমস্যার যথাযথ
সমাধান যেমন প্রত্যাশা করে, তেমনি প্রদেয় তথ্য যাতে গোপণ রাখা হয় সেটিও দৃঢ়ভাবে কামনা করে।
৫. ব্যক্তিস্বাতন্ত্রীকরণ নীতি : সমাজকর্মের দৃষ্টিকোন থেকে প্রত্যেকটি মানুষ একটি স্বতন্ত্র সত্ত¡া। ক্ষমতা, বুদ্ধি, আবেগ,
অনুভূতি, যোগ্যতা, সামর্থ্য ইত্যাদি অনুযায়ী প্রত্যেকটি মানুষ আলাদা আলাদা। যার ফলে ব্যক্তির সক্ষমতা, দুর্বলতা,
উপযোজন ক্ষমতা, সমস্যা সম্পর্কে অনুভূতি ও ধারণা একে অন্যের থেকে ভিন্ন প্রকৃতির। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি সমস্যাগ্রস্ত
ব্যক্তিকে আলাদা ও স্বতন্ত্র বিবেচনায় এনে সমস্যা সমাধানে ব্যক্তি সমাজকর্ম সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
৬. আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি : ব্যক্তি সমাজকর্মের এই নীতিটি সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দ-
অপছন্দ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতাকে নির্দেশ করে। সমাজকর্ম যেহেতু একটি অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম সেহেতু ব্যক্তির
সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এক্ষেত্রে সাহায্যার্থী তার সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে
নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ, চিন্তা-চেতনা, সমাধান ব্যবস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তার মতামত প্রদান করে থাকে এবং তার মতামতকে
যথেষ্ট অগ্রাধিকার দিয়ে যথাযথ মূল্যায়নও করা হয়। ব্যক্তি সমাজকর্মী এক্ষেত্রে সাহায্যর্থীকে যথাযথভাবে সহায়তা ও দিক
নির্দেশনা প্রদান করে থাকে।
৭. আত্মসচেতনতার নীতি : সমাজকর্মের এই নীতিটি শুধুমাত্র ব্যক্তি সমাজকর্মীর জন্য প্রযোজ্য। এই নীতিটি মূলত
সমাজকর্মীর নিজস্ব সফলতা ও দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন হওয়াকে নির্দেশ করে। একজন মানুষ হিসেবে সমাজকর্মীর মধ্যে
আবেগ, হিংসা, দ্বেষ, পক্ষপাতিত্ব, পছন্দ ও অপছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে
সমাজকর্মীকে সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে ব্রতী হতে এ নীতি সহায়তা করে। একজন সমাজকর্মীকে কতগুলোা বিষয়ে
সচেতন হতে হয়। যেমনÑ ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা; চেহারা, পোশাক-পরিচ্ছদের প্রতি যতœবান
হওয়া; সাহায্যার্থীর মর্যাদাহানির আচরণ থেকে বিরত থাকা এবং ব্যক্তিগত বদ অভ্যাস ও কাজের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন
হওয়া।
সারসংক্ষেপ
ব্যক্তি সমাজকর্ম সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধান পদ্ধতি। এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে ব্যক্তির সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে
সমাজকর্মীকে কতগুলো নীতি মেনে চলতে হয়, যা ব্যক্তি সমাজকর্মের নীতিমালা হিসেবে বিবেচিত। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী
সাতটি নীতিমালা অনুসরণ করে সমাজকর্ম অনুশীলন করে থাকে। যথাÑ ক) গ্রহণ নীতি, খ) যোগাযোগ নীতি, গ)
অংশগ্রহণ নীতি, ঘ) গোপণীয়তার নীতি, ঙ) ব্যক্তিস্বাতন্ত্রীকরণ নীতি, চ) আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি এবং ছ)
আত্মসচেতনতার নীতি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগে কয়টি নীতি অনুসরণ করা হয়?
ক) ৫টি খ) ৭টি
গ) ৮টি ঘ) ৯টি
২। ব্যক্তি সমাজকর্মের কোন নীতিটি শুধুমাত্র সমাজকর্মীর জন্য প্রযোজ্য?
ক) যোগাযোগ নীতি খ) আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি
গ) ব্যক্তিস্বাতন্ত্রীকরণ নীতি ঘ) আত্মসচেতনতার নীতি
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র