ব্যক্তি সমাজকর্মের প্রয়োগক্ষেত্র

ব্যক্তি সমাজকর্মের প্রয়োগক্ষেত্র
সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গতিশীল ও অর্থবহ পদ্ধতি হলো ব্যক্তি সমাজকর্ম।
সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে ব্যক্তিকে তার সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধার করাই ব্যক্তি
সমাজকর্মের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পদ ও উদ্দেশ্যের আলোকে সাহায্যার্থীর সমস্যার ধরন ও গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী সেবা দিয়ে থাকে। নিচে ব্যক্তি সমাজকর্মের প্রয়োগক্ষেত্রসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :
১. চিকিৎসা সমাজকর্ম : বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্যক্তি সমাজকর্মের বাস্তব প্রয়োগের সূচনা হয় চিকিৎসা সমাজকর্মের
মাধ্যমে ১৯৫৮ সালে। বর্তমানে যা হাসপাতাল সমাজসেবা নামে পরিচিত। হাসপাতালে আগত রোগীদের মানসিক যন্ত্রণা
লাঘব, রোগ মুক্তির পর পূনর্বাসন প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা ও
কুসংস্কার দূর করে যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদান, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সুযোগ বৃদ্ধি এ পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভবপর হয়ে ওঠে।
২. বিদ্যালয় সমাজকর্ম : ব্যক্তি সমাজকর্মের দর্শন, কৌশল ও নীতিমালা প্রয়োগ করে শিশুদের অকারণ ভয়-ভীতি দূর করে
লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলা হয়। তাছাড়া যারা বিদ্যালয়ের পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করতে পারেনা
তাদের সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তা করা হয়।
৩. পরিবার ও শিশুকল্যাণ : পারিবারিক ভাঙ্গন, বিশৃঙ্খলা, দ্ব›দ্ব, সহিংসতা ইত্যাদি রোধে ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা হয়।
একটি সুশৃঙ্খল পারিবারিক পরিবেশ শিশুর একান্ত কাম্য। এক্ষেত্রে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা
অপরিসীম। সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশ নিশ্চিত করে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে ব্যক্তি সমাজকর্ম অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
৪. পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যাস্ফীতি রোধ : জনসংখ্যাস্ফীতি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির
কুফল, পরিকল্পিত উপায়ে ছোট পরিবার গঠনের উপকারিতা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টির উন্নয়ন এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে
ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৫. সংশোধনমূলক কার্যক্রম : সংশোধনমূলক কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো অপরাধীকে শারীরিক শাস্তি প্রদান না করে সংশোধন
ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে অপরাধীর আচরণে পরিবর্তন আনয়ন। অপরাধীদের আচরণ পরিবর্তনে ব্যক্তি সমাজকর্ম
প্রয়োগ করা হয়। বাংলাদেশে শিশু ও কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের জন্য প্রবেশন, জাতীয় কিশোর ও কিশোরী উন্নয়ন
প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের আচরণে পরিবর্তন আনয়নের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
৬. যুব অসন্তোষ দূরীকরণ : বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যুব অসন্তোষ একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। কেননা বেকারত্ব,
পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ও দ্ব›দ্ব, মাদকাসক্তি, হতাশা, প্রেমে ব্যর্থতা, রাজনৈতিক কলহ ইত্যাদি কারণে যুবসমাজ হতাশাগ্রস্ত
হয়ে নানাবিধ অনৈতিক, অসামাজিক ও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। আর এসকল সমস্যা থেকে যুব সমাজকে দূরে
রাখতে ও মোকাবিলায় ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৭. মানসিক রোগীদের চিকিৎসা : দ্রæত পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেকেই মানসিক
ভারসাম্য হারিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তির মানসিক
ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে সামাজিক সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম করে তোলা সম্ভব।
৮. প্রবীণকল্যাণ : বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রবীণদের সংখ্যা ও তাদের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যক্তি সমাজকর্ম
প্রয়োগের মাধ্যমে প্রবীণদের শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, অবসরকালীন নানা সমস্যার সমাধান করে পরিবার ও সমাজে
তাদের যথাযথ পুনর্বাসন করা যেতে পারে।
৯. মাদকাসক্তি নিরাময় : বাংলাদেশের সবচেয়ে উদ্যমী ও সম্ভাবনাময় যুবসমাজ দিন দিন মাদকের শিকারে পরিণত হয়ে
তাদের কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলছে। যুক্ত হচ্ছে অনৈতিক, অসামাজিক, অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকাÐের সঙ্গে। ব্যক্তি
সমাজকর্ম প্রয়োগের মাধ্যমে এ শ্রেণিকে মাদকের কবল থেকে রক্ষা করে সমাজে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক ভূমিকা পালনে সক্ষম
করে তোলা সম্ভব।
১০. নারী উন্নয়ন : বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। কিন্তু বিশাল এ জনসংখ্যা পরিবার ও সমাজে তাদের
স্বাভাবিক ভূমিকা পালন করতে পারেনা। পারিবারিক ও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা ও নিগৃহের কারণে তারা অর্থনৈতিক,
সামাজিক, মানসিক নানাদিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছে। সুতরাং মানুষ হিসেবে নারীর পূর্ণ ক্ষমতায়নসহ দেশের সার্বিক
উন্নয়নে নারীর যথাযথ অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্যকর সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তুলতে ব্যক্তি সমাজকর্মের
প্রয়োগ অত্যাবশ্যক।
সারসংক্ষেপ
সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অর্থবহ পদ্ধতি হলো ব্যক্তি সমাজকর্ম। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির
সমস্যা নির্ণয়ের মাধ্যমে সমাধান ব্যবস্থা নির্দেশ করে ব্যক্তিকে তার সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধারই ব্যক্তি
সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যে সকল ক্ষেত্রে ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা হয়ে থাকে
সেগুলো হলোÑ ১) চিকিৎসা সমাজকর্ম ২) বিদ্যালয় সমাজকর্ম, ৩) শিশু ও পরিবারকল্যাণ, ৪) পরিবার পরিকল্পনা ও
জনসংখ্যাস্ফীতি রোধ, ৫) সংশোধনমূলক কার্যক্রম, ৬) যুব অসন্তোষ দূরীকরণ, ৭) মানসিক রোগীদের চিকিৎসা, ৮)
প্রবীণকল্যাণ, ৯) মাদকাসক্তি নিরাময়, ১০) নারী উন্নয়ন ইত্যাদি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.৮
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ব্যক্তি সমাজকর্মের প্রয়োগ শুরু হয় কবে?
ক) ১৯৫৮ সালে খ) ১৯৫৯ সালে
গ) ১৯৬০ সালে ঘ) ১৯৬১ সালে
২। বাংলাদেশে যে সকল ক্ষেত্রে ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা হয়র. হাসপাতাল সমাজসেবা
রর. জাতীয় কিশোর উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান
ররর. নারী উন্নয়ন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
ক. বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
১। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও পদ্ধতিনির্ভর পেশা কোনটি?
ক) অর্থনীতি খ) সমাজকর্ম গ) মনোবিজ্ঞান ঘ) সমাজবিজ্ঞান
২। ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদান কয়টি?
ক) চারটি খ) পাঁচটি গ) ছয়টি ঘ) সাতটি
৩। ব্যক্তি সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার প্রথম স্তর কোনটি?
ক) মনো-সামাজিক অনুধ্যান খ) সমস্যা নির্ণয় গ) মূল্যায়ন ঘ) সমাধান ব্যবস্থা
৪। কোন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে মাদকাসক্তি যুব অসন্তোষ, কিশোর অপরাধ ইত্যাদি দূর করা সম্ভব?
ক) ব্যক্তি সমাজকর্ম খ) দল সমাজকর্ম গ) সমষ্টি সংগঠন ঘ) সমষ্টি উন্নয়ন
৫। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি ও সমাজকর্মীর মধ্যে কিরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান?
ক) ব্যবসায়িক খ) পারিবারিক গ) পেশাগত ঘ) সামাজিক
৬। সাবা বিশ্বাস করে যে, শক্তি-সামর্থ্য-বুদ্ধি-যোগ্যতা অনুসারে প্রত্যেকটি ব্যক্তি আলাদা আলাদা। সাবার বিশ্বাসের সাথে
কোনটির মিল রয়েছে?
ক) প্রভেদক নীতির খ) আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতির গ) আত্মসচেতনতার নীতির ঘ) ব্যক্তিস্বাতন্ত্রীকরণ নীতির
৭। সমাজকর্মে পেশাগত সম্পর্ক বা র‌্যাপোর উদ্দেশ্য হলোÑ
র. সাহায্যার্থীর সমস্যার স্বরূপ নির্ণয়
রর. সাহায্যার্থীকে মানসিক চাপমূলক অবস্থা থেকে মুক্তি দান
ররর. সাহায্যার্থীর সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধার
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
৮। বাংলাদেশে যে সকল ক্ষেত্রে ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা যায়Ñ
র. হাসপাতাল সমাজসেবা
রর. প্রবীণ নিবাস
ররর. জাতীয় কিশোরী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৯ হতে ১১ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :
রিফাত একটি যন্ত্রাণাদায়ক অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এ জন্য সে সমাজে তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে
পারছে না। উক্ত অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
৯। উদ্দীপকে রিফাত যে অবস্থার মধ্যে রয়েছে তার ক্ষেত্রে নিচের কোনটি প্রযোজ্য?
ক) ভূমিকা পালনে সমস্যা খ) অবসাদ গ) হতাশা ঘ) বিচ্যুতি
১০। উদ্দীপকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা উক্ত অবস্থার সাথে কীভাবে প্রযোজ্য?
ক) অভ্যন্তরীণ উৎস খ) বাহ্যিক উৎস
গ) অভ্যন্তরীণ অবস্থা ঘ) বাহ্যিক অবস্থা
১১। সামাজিক বিচ্ছিন্নতার জন্য দায়ী বিষয়গুলো হলোর. সামাজিক ভারসাম্যহীনতা
রর. আন্তঃব্যক্তিক দ্ব›দ্ব
ররর. আন্তঃপারিবারিক দ্ব›দ্ব
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর

খ. সৃজনশীল প্রশ্ন
১।
ক) ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদান কয়টি? ১
খ) র‌্যাপো বলতে কী বোঝেন? ২
গ) উদ্দীপকে ‘?’ চিহ্নিত স্থানে সমাজকর্মের যে ধরনের পদ্ধতির ইঙ্গিত করা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ) “উক্ত পদ্ধতিগুলোর সমন্বিত প্রয়োগে সামাজিক সমস্যা দূর করা সম্ভব”Ñ উক্তিটি বিশ্লেষণ করুন। ৪

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]