সমষ্টি প্রত্যয়টি ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
সমষ্টির প্রকৃতি

সমষ্টির ধারণা
মানুষ স্বভাবতই দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ একে অপরের সাথে
নানা সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। আর এভাবেই গড়ে ওঠে জনসমষ্টি। সাধারণভাবে সমষ্টি বলতে কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক
এলাকায় বসবাসরত একদল মানুষকে বুঝায়, যারা কতিপয় মৌলিক ও অভিন্ন স্বার্থ রক্ষায় পরস্পর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায়
লিপ্ত হয় এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমজাতীয় ধ্যান ধারণা পোষণ করে।
সমষ্টির সংজ্ঞায় ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, যখন কোনো ক্ষুদ্র বা বৃহৎ গোষ্ঠীর অন্তুর্ভুক্ত সদস্যরা এমনভাবে বসবাস
করে যে, তারা বিশেষ কোনো স্বার্থের অংশীদার না হয়ে স্বাভাবিক জীবনের মৌলিক বিষয়সমূহে অংশগ্রহণ করে তখন
আমরা ঐ গোষ্ঠীকে সমষ্টি বলে থাকি।
গফুর ও মান্নান এর মতে, জনসমষ্টি হলো একদল লোকের সমষ্টি, যারা একই ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাস করে এবং
তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও গ্রহণযোগ্যতা বিদ্যমান এবং কতিপয় বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে তারা অন্য
প্রতিবেশি গোষ্ঠী থেকে আলাদা।
সুতরাং সমষ্টি বলতে নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসরত এমন একদল মানুষকে বোঝায়, যারা সাধারণ স্বার্থকে
কেন্দ্র করে একত্রিত হয়ে বসবাস করে এবং যারা সমষ্টির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কতিপয় সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে
তোলে, যা তাদের মধ্যে সাধারণ বন্ধন সৃষ্টি করে এবং ‘আমরা বোধ’ জাগিয়ে তোলে।
৮.৭.২ সমষ্টির প্রকৃতি
প্রত্যকটি সমষ্টির নিজস্ব কিছু রীতিনীতি, মূল্যবোধ, আদর্শ ও সংস্কৃতি থাকে, যা ঐ সমষ্টির সকল সদস্য মেনে চলে।
এসব আদর্শ ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে স্বজাত্যবোধ। সমষ্টির মূল্য বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি হলো দুটি।
যথাÑ ১। নির্দিষ্ট অঞ্চল ও ২। স্বজাত্যবোধ।
১। নির্দিষ্ট অঞ্চল : প্রত্যেকটি সম্প্রদায় বা সমষ্টি একটি সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাস করে। এক্ষেত্রে
বসবাসকারী প্রত্যেকটি সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিত ও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এরা বিভিন্ন প্রয়োজনে একে
অন্যের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত ও দ্রব্যাদি আদানপ্রদান করে থাকে। নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে তারা ঐ
এলাকায় নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে পারস্পরিক আন্তক্রিয়া সম্পাদন করে থাকে।
২। স্বজাত্যবোধ : নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে সমষ্টি নির্দিষ্ট কিছু আদর্শ ও মূল্যবোধ অনুশীলন করে থাকে।
আর এই অনুশীলনের প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে স্বজাত্যবোধ। সমষ্টির প্রতিটি সদস্য এই স্বজাত্যবোধের
কারণে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে পারস্পরিক বন্ধন
আরও সুদৃঢ় হয়। সমষ্টির এই স্বজাত্যবোধ তিনটি আলাদা অনুভূতির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠে। যথা:
ক) আমরাবোধ : স্বজাত্যবোধ থেকে সমষ্টির সদস্যদের মধ্যে ‘আমরাবোধ’ বা বি ভববষরহম তৈরি হয়, যা সদস্যদের
মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করে সমষ্টির উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথ সুগম করে দেয়।
খ) ভূমিকা পালন মনোভাব : স্বজাত্যবোধ ও আমরাবোধের কারণে সমষ্টির সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ
সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হয়। আর এ কারণে সমষ্টির প্রতিটি সদস্য তার যথাযথ ভূমিকা পালনে সক্রিয় হয়। ফলে
সমষ্টির সদস্যদের মধ্যে ঘনিষ্ট আত্মিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
গ) নির্ভরতা মনোভাব : সমষ্টির সদস্যদের পারস্পরিক পরিচিতি, সহযোগিতা, স্বজাত্যবোধ ও আমরা বোধ সৃষ্টির
কারণে পরস্পরের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণে এক অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতার
প্রেক্ষিতে একে অন্যের প্রয়োজনসমূহ পূরণে এগিয়ে আসে।
সারসংক্ষেপ
দলবদ্ধ জীবনযাপন করা মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। দলবদ্ধ জীবনযাপনের মধ্য দিয়েই মূলত সমষ্টির উদ্ভব হয়।
সমষ্টি হলো এমন একটি জনসম্প্রদায় যারা একই রীতিনীতি, একই ধরনের আচার ব্যবহার, একই ঐতিহ্য, একই
সামাজিক আদর্শ ও স্বার্থে উদ্বুদ্ধ এবং একই সামাজিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক
এলাকায় একত্রে বসবাস করে এবং জীবনযাপনের সাধারণ উদ্দেশ্যসমূহ পূরণ করে। প্রতিটি সম্প্রদায়ের কিছু
নির্দিষ্ট রীতিনীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ রয়েছে, যা সম্প্রদায়ের সদস্যরা মেনে চলে। আর এসব মূল্যবোধ ও
আদর্শের উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে স্বজাত্যবোধ।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। কারা অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাস করে?
ক) সামাজিক দল খ) জনসমষ্টি
গ) সামাজিক প্রতিষ্ঠান ঘ) সামাজিক সংগঠন
২। সমষ্টির সদস্যদের মধ্যে ‘আমরা বোধ’ সৃষ্টি হয় কীভাবে?
ক) স্বজাত্যবোধ থেকে খ) পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে
গ) পারস্পরিক বন্ধন থেকে ঘ) গোষ্ঠীগত মনোভাব থেকে
৩। সমষ্টির মধ্যে গড়ে ওঠা স্বজাত্যবোধ তৈরি হয় যে সকল অনুভূতির সংমিশ্রনেÑ
র. আমরাবোধ রর. ভূমিকা পালন মনোভাব ররর. নির্ভরতার মনোভাব
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
পাঠ-৮.৮ সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন (ঈড়সসঁহরঃু ঙৎমধহরুধঃরড়হ ধহফ ঈড়সসঁহরঃু
উবাবষড়ঢ়সবহঃ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৮.৮.১ সমষ্টি সংগঠন বলতে কী বুঝায় ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
৮.৮.২ সমষ্টি উন্নয়ন বলতে কী বুঝায় তা বর্ণনা করতে পারবেন।
৮.৮.১ সমষ্টি সংগঠন
পেশাদার সমাজকর্মের তৃতীয় মৌলিক পদ্ধতি হলো সমষ্টি সংগঠন। তবে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের
সমষ্টিগত সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে সমষ্টি উন্নয়ন প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে বর্তমান গ্রন্থে সমাজকর্মের
তৃতীয় মৌলিক পদ্ধতিকে সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে ।
সাধারণভাবে সুপরিকল্পিত ও সুচিন্তিতভাবে কোনো নির্দিষ্ট জনসমষ্টির সমাজকল্যাণমূলক চাহিদা ও সম্পদের মধ্যে সামঞ্জস্য
বিধানের প্রক্রিয়াকে সমষ্টি সংগঠন বলা হয়। অর্থাৎ সমষ্টির সম্পদের মাধ্যমে কীভাবে সমষ্টির চাহিদা পূরণ করা যায়, তার
সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নই হলো সমষ্টি সংগঠন।
ম্যারি জি. রস বলেন, সমষ্টি সংগঠন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যা সমষ্টির চাহিদা বা উদ্দেশ্যসমূহ চিহ্নিত করে, চাহিদা বা
উদ্দেশ্যসমূহকে অগ্রাধিকার প্রদান করে এবং এসব চাহিদা বা উদ্দেশ্য অর্জনে কাজ করার আগ্রহ ও বিশ্বাস সৃষ্টি করে এবং
সম্ভাব্য সম্পদ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা গ্রহণ করে এবং এসব কার্য সম্পাদন করতে গিয়ে সমষ্টিতে সমবায়িক ও
সহযোগিতামূলক মনোভাব ও প্রথার বিকাশ ঘটায় এবং সম্প্রসারণ করে।
ডবিøউ. এ. ফ্রিডল্যান্ডারের মতে, সমষ্টি সংগঠন এমন একটি সমাজকর্ম প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো ভৌগোলিক এলাকার
সমাজকল্যাণমূলক প্রয়োজন ও সম্পদের মধ্যে ফলপ্রসূ সামঞ্জস্যবিধান করা হয়।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় সমাজকর্ম প্রথম পত্র
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৪০
সূতরাং বলা যায় যে, সমষ্টি সংগঠন এমন একটি সমাজকর্ম প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সমষ্টির জনগণের বিভিন্ন
কল্যাণমূলক চাহিদাসমূহ চিহ্নিত করে সমষ্টির সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে চাহিদা পূরণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ
গ্রহণ করা হয়।
৮.৮.২ সমষ্টি উন্নয়ন
সাধারণত অনুন্নত ও স্থবির জনসমষ্টির আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে মূলত এ পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে এ পদ্ধতিটি শুধুমাত্র অনুন্নত দেশগুলোর
উন্নয়নের জন্য প্রয়োগ করা হতো। বর্তমানে পদ্ধতিটি উন্নত দেশের অনুন্নত অঞ্চলসমূহের উন্নয়নেও ব্যাপকভাবে প্রয়োগ
করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের মতে, সমষ্টি উন্নয়ন এমন এক ধরনের পদ্ধতি, যার দ্বারা সমাজের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতি
সাধনের জন্য জনসাধারণের কার্যাবলীকে সরকারি কার্যাবলীর সাথে সংযুক্ত করা হয় এবং বিভিন্ন জনসমষ্টিকে জাতীয়
উন্নয়নের সাথে সংযুক্ত করে তাদেরকে জাতীয় উন্নতিতে ভূমিকা রাখার জন্য সক্ষম করে তোলা হয়।
ভারত সরকারের ওহফরধ ১৯৮২ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, সমষ্টি উন্নয়ন হচ্ছে গ্রামবাসী কর্তৃক পরিকল্পিত ও বাস্তবায়িত
আত্মসাহায্যমূলক কর্মসূচি, যাতে সরকার কেবল কারিগরি নির্দেশনা ও আর্থিক সহায়তা দেন। এর উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে
আত্মনির্ভরতার উন্নয়ন এবং জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। যেমনÑ সমবায় সমিতির মাধ্যমে সমষ্টিগত চিন্তাচেতনা ও যৌথ কার্যক্রমকে
উৎসাহিত করা।
সূতরাং বলা যায়, কোনো সমষ্টির আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারি-বেরসকারি, আর্থিক ও কারিগরি
সাহায্য, সমষ্টির স্থানীয় উদ্যোগ এবং সম্পদ ও সামর্থ্যরে সর্বোত্তম ব্যবহারের প্রক্রিয়াই হলো সমষ্টি উন্নয়ন।

সারসংক্ষেপ
সমষ্টির বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা এবং সমষ্টির সার্বিক উন্নয়নের জন্য পেশাদার সমাজকমের্র যে তৃতীয় মৌলিক পদ্বতি
প্রয়োগ করা হয় সেটি হলো সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন। সমষ্টি সংগঠন হচ্ছে সমাজকর্মের একটি মৌলিক পদ্ধতি ও
সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমষ্টির জনগণের বিভিন্ন চাহিদা ও সম্পদের মাঝে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য সুনির্দিষ্ট
কর্মপন্থার মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। অন্যদিকে সমষ্টি উন্নয়ন হলো,
এমন একটি পদ্ধতি যার দ্বারা সমষ্টির সার্বিক উন্নয়নের জন্য জনসাধারণের কার্যাবলীকে সরকারি কার্যাবলীর সাথে সংযুক্ত
করা হয় এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে জাতীয় উন্নয়নের সাথে সংযুক্ত করে তাদেরকে জাতীয় উন্নতিতে ভূমিকা রাখার জন্য
সক্ষম করে তোলা হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.৮
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সমষ্টির চাহিদা পূরণ ও সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়?
ক) ব্যক্তি সমাজকর্ম খ) দল সমাজকর্ম
গ) সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন ঘ) সামাজিক কার্যক্রম
২। সমষ্টি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমষ্টির নিজস্ব উদ্যোগের সাথে সরকার যে ধরনের সাহায্য প্রদান করেÑ
র. আর্থিক সাহায্য
রর. কারিগরি নির্দেশনা
ররর. বিশেষজ্ঞ প্রেরণ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৪১
পাঠ-৮.৯ সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের উপাদান (ঊষবসবঃহং ড়ভ ঈড়সসঁহরঃু
ঙৎমধহরুধঃরড়হ ধহফ ঈড়সসঁহরঃু উবাবষড়ঢ়সবহঃ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৮.৯.১ সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের উপাদানগুলো বর্ণনা করতে পারবেন।
৮.৯.১ সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের উপাদান
সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বিশ্লেষণ করলে এর পাঁচটি উপাদান পাওয়া যায়।
যথাÑ ক) জনসমষ্টি, খ) জনসমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন, গ) প্রতিষ্ঠান, ঘ) পেশাদার প্রতিনিধি এবং ঙ) প্রক্রিয়া। নিচে
এগুলো আলোচনা করা হলো :
ক) সমষ্টি : সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের মৌল উপাদান হলো জনসমষ্টি। একদল লোক যখন সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক
এলাকায় সাধারণ স্বার্থ রক্ষায় পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে আন্তক্রিয়ায় লিপ্ত হয় তখন ঐ দলকে বলা হয় জনসমষ্টি।
জনসমষ্টির সুনির্দিষ্ট কিছু একক স্বার্থ, আদর্শ, মূল্যবোধ বিদ্যমান থাকে যা ঐ সমষ্টির সকল সদস্য যথাযথভাবে পালনের
চেষ্টা করে। এ প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধন সৃষ্টি হয়। সমষ্টির মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়
তা হলোÑ সাধারণ স্বার্থ ও সাদৃশ্যপূর্ণ জীবনধারা, সামাজিক বন্ধন, আত্মীয়তা ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ইত্যাদি।
খ) সমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন : সমষ্টির প্রয়োজন ও চাহিদাকে কেন্দ্র করে সমষ্টি সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন আবর্তিত
হয়। সমষ্টির অভাব, অক্ষমতা ও ব্যর্থতা থেকেই তাদের চাহিদা ও প্রয়োজন উদ্ভব হয়। সমষ্টির জনগণের অনুভূত চাহিদা
ও প্রয়োজন মূলত সমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন। তবে এই চাহিদা ও প্রয়োজন অবশ্যই সমষ্টির সকলের জন্য কল্যাণকর
হতে হবে। সমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন বহুমুখী ও বিচিত্র হয়ে থাকে। এ চাহিদা ও প্রয়োজন অনেক সময় সমষ্টির
সদস্যদের ব্যক্তিগত ও দলীয় চাহিদার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়।
গ) প্রতিষ্ঠান : সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের অপরিহার্য উপাদান হলো প্রতিষ্ঠান। সমষ্টির সমস্যার সমাধান, উন্নয়ন
প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের হয়ে
থাকে। সেবাকর্মের প্রকৃতি অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানগুলো একমুখী ও বহুমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেবা প্রদান করে থাকে। তবে
প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের গতিময়তার উপর। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের ধরন, প্রকৃতি, কার্যাবলী, পারিপার্শ্বিক
পরিবেশ প্রভৃতির উপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে।
ঘ) পেশাদার প্রতিনিধি : পেশাদার সমাজকর্মী সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের একটি অপরিহার্য উপাদান। সমষ্টি সংগঠন
ও সমষ্টি উন্নয়নে পেশাদার প্রতিনিধি বা সমাজকর্মী সাধারণত সমষ্টি সংগঠক বা উন্নয়নকর্মী হিসেবে সমধিক পরিচিত।
সেবা প্রতিষ্ঠান ও সমষ্টির চাহিদা ও সমস্যার প্রেক্ষিতে একজন সমাজকর্মী কখনো সমন্বয়কারী, কখনো সক্ষমকারী, কখনো
উপদেষ্টা, কখনো সাহায্যকারী, কখনো প্রশিক্ষক আবার কখনো সংগঠকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। তবে একজন
সমাজকর্মীর সেবাপ্রক্রিয়ার সফলতা নির্ভর করে তার যোগ্যতা ও দক্ষতার উপর। একজন পেশাদার সমাজকর্মীর মধ্যে যে
সকল বিষয়ে দক্ষতা থাকা দরকার তা হলোÑ সমষ্টির বিভিন্ন দল ও ব্যক্তির সাথে ইতিবাচক যোগাযোগ স্থাপন, সমষ্টির
চাহিদা ও প্রয়োজনের গঠনমূলক অনুধ্যান ও বিশ্লেষণ, সমষ্টির সম্পদ চিহ্নিতকরণ ও তার ব্যবহার, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও
কর্মসূচি গ্রহণ, সমষ্টির কর্মকাÐে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষমতা ইত্যাদি।
ঙ) প্রক্রিয়া : সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সমাজকর্ম প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়া বলতে
সমষ্টির সমস্যার সমাধান বা উন্নয়নে ব্যবহৃত প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে। সমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন সম্পর্কে যথাযথ
অনুধ্যান বা অনুসন্ধানের মাধ্যমে যথাযথ প্রয়োজন নিরূপণ করে বাস্তবমুখী সেবাদানের মাধ্যমে সমষ্টির উন্নয়নের ধারা
অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা চালানো হয়। এক্ষেত্রে সমষ্টির উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যথাযথ কার্যকর কি না বা কতটুকু
সফলতা পাওয়া গেল তা নিরূপণের জন্য মূল্যায়ন জরুরি। মূলত সমষ্টির চাহিদা সম্পর্কিত অনুধ্যান, তথ্য সংগ্রহ, সমস্যা
নির্ণয়, সমাধান পরিকল্পনা, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন এগুলোর সমন্বিত রূপ হলো সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন প্রক্রিয়া।
সারসংক্ষেপ
একদল পেশাদার সমাজকর্মী দ্বারা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় একটি নির্দিষ্ট সমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণের
লক্ষ্যে সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন পরিচালিত হয়। সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন মূলত পাঁচটি উপাদানের সমষ্টি।
উপাদানগুলো হলোÑ ক) সমষ্টি, খ) সমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন, গ) প্রতিষ্ঠান, ঘ) পেশাদার প্রতিনিধি এবং ঙ) প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় সমাজকর্ম প্রথম পত্র
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৪২
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.৯
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের উপাদান কয়টি?
ক) ৩টি খ) ৪টি
গ) ৫টি ঘ) ৬টি
২। সমষ্টি সমাজকর্মের মৌল উপাদান কোনটি?
ক) সমষ্টি খ) প্রতিষ্ঠান
গ) পেশাদার প্রতিনিধি ঘ) প্রক্রিয়া
৩। একজন পেশাদার সমাজকর্মীর মধ্যে সমষ্টি সম্পর্কিত যে সকল বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা দরকারÑ
র. বিভিন্ন দল ও ব্যক্তির সাথে ইতিবাচক যোগাযোগ স্থাপন
রর. সম্পদ চিহ্নিতকরণ ও তার যথাযথ ব্যবহার
ররর. পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কর্মসূচি গ্রহণ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
পাঠ-৮.১০ সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের নীতিমালা (চৎরহপরঢ়ষবং ড়ভ ঈড়সসঁহরঃু
ঙৎমধহরুধঃরড়হ ধহফ ঈড়সসঁহরঃু উবাবষড়ঢ়সবহঃ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৮.১০.১ সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের নীতিমালা বর্ণনা করতে পারবেন।
৮.১০.১ সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের উপাদান নীতিমালা
সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের সমন্বিত নীতিমালা সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো :
১. সমষ্টি স্বাতন্ত্রীকরণ নীতি : প্রতিটি সমষ্টি তাদের সম্পদ, সামর্থ্য, দলীয় সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক, আদর্শ,
মূল্যবোধের ভিত্তিতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাদের চাহিদা ও সমস্যাবলী ভিন্নতর হয়। এক্ষেত্রে সমষ্টির চাহিদাপূরণ
ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সমষ্টিকে স্বতন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে সমাধান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
২. আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি : এই নীতির আওতায় সমষ্টির সমস্যার সমাধান ও চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সমষ্টির উপর
কোনো রূপ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করে নিজেদের সম্পদ ও সামর্থ্যরে সর্বোত্তম ব্যবহারের
মাধ্যমে সমষ্টিকে সক্ষম ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলা হয়।
৩. অগ্রাধিকারভিত্তিক অনুভূত প্রয়োজন নীতি : এ নীতির আলোকে সমষ্টির অনুভূত চাহিদা ও প্রয়োজনসমূহকে শ্রেণিবিন্যাস
করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজন পূরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়। অর্থাৎ একাধিক সমস্যার মধ্যে সমষ্টির কল্যাণে সর্বপ্রথম
জরুরি সমস্যার সমাধান করা হয়।
৪. নমনীয় সাংগঠনিক কাঠামো নীতি : সমষ্টির চাহিদা ও সমস্যা পরিবর্তনশীল । তাই সমষ্টির সমস্যার প্রকৃতি অনুযায়ী
সমাধান ব্যবস্থা প্রদানে প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো পরির্বতনশীল হতে হবে।
৫. সমান সুযোগের নীতি : এ নীতির আওতায় একদিকে সমষ্টির প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে সমষ্টির প্রতিটি সদস্যের স্বার্থ
সমানভাবে নিশ্চিত করা হয়। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি সমষ্টি যেন সমান সুযোগ পায় তা
নিশ্চিত করা হয়।
৬. কর্মসূচির সমন্বয় সাধন নীতি : এই নীতিটির আলোকে সমষ্টির চাহিদা পূরণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমষ্টির সম্পদ, কর্মসূচি
এবং সমষ্টির অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয়।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৪৩
৭. যোগাযোগ নীতি : যোগাযোগ নীতি অনুযায়ী সমষ্টির মধ্যকার সকল দল ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন
করা হয়। এক্ষেত্রে যোগাযোগের দ্বিমুখী নীতি অনুসৃত হয়। অর্থাৎ সমাজকর্মীর পক্ষ থেকে দল ও প্রতিষ্ঠানের সাথে আবার
দল ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সমাজকর্মীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।
৮. মর্যাদার স্বীকৃতিদান নীতি : এ নীতির আওতায় সমাজকর্মী সমষ্টি ও সমষ্টির সকল সদস্যের মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি
প্রদান করে। এ ধরনের স্বীকৃতি সমষ্টি ও সমষ্টির সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ ঘটিয়ে সমষ্টির সামগ্রিক উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণ
নিশ্চিত করে।
৯. সকলের অংশগ্রহণ নীতি : সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো সমষ্টির সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়ায়
সকলের সমান অংশগ্রহণ। এ নীতির আওতায় সমষ্টির অনুভূত চাহিদাপূরণ, সমস্যার সমাধান ব্যবস্থা এবং সমষ্টির সামগ্রিক
উন্নয়নে সমষ্টির সকল সদস্যের স্বতঃর্স্ফুত ও পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিতের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
১০. সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন নীতি : এ নীতির আলোকে সমষ্টির অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল দিকের সুসম
উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বরোপ করা হয়। অর্থাৎ সমষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সকল বিষয়ের সমান উন্নয়নে গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
১১. সমাজকর্মীর পেশাগত দায়িত্ব সচেতনতার নীতি : সমষ্টির ক্ষেত্রে সমাজকর্মী একাধারে একজন সংগঠক, সমন্বয়কারী,
সক্ষমকারী, প্রশিক্ষক, পরামর্শকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে তার পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা,
অভিজ্ঞতা, কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে মূল্যবোধ নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে সচেতনতার সাথে কাজ করতে হয়।
১২. সামাজিক ঐক্য ও সহযোগিতার নীতি : এ নীতির আলোকে সমষ্টির সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমষ্টির সদস্যের মধ্যে
ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেয়া হয়। কেননা পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্কের ভিত্তিতে
সমষ্টির সদস্যরা তাদের স্ব স্ব ভূমিকা ও দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হয়, যা সমষ্টির সামগ্রিক উন্নয়নে একান্ত প্রয়োজন।
সারসংক্ষেপ
সমষ্টির বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা এবং সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের উদ্ভব হয়েছে।
সমষ্টির জনগণের সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ, তাদের মধ্যে স্বাবলম্বী মনোভাব গঠন ও অভ্যন্তরীণ সামর্থ্যরে পরিপূর্ণ বিকাশ
সাধন করে তাদের আত্মনির্ভরশীল জনগোষ্ঠীতে পরিণত করাই সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে
সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। সেগুলো হলোÑ ১) সমষ্টির
স্বাতন্ত্রীকরণ নীতি, ২) আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি, ৩) অগ্রাধিকার ভিত্তিক অনুভূত প্রয়োজন নীতি, ৪) নমনীয় সাংগঠনিক
কাঠামো নীতি, ৫) সমান সুযোগের নীতি, ৬) কর্মসূচির সমন্বয় সাধন নীতি, ৭) যোগাযোগ নীতি, ৮) মর্যাদার
স্বীকৃতিদান নীতি, ৯) সকলের সমান অংশগ্রহণ নীতি, ১০) সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন নীতি, ১১) সমাজকর্মীর পেশাগত
দায়িত্ব সচেতনতার নীতি এবং ১২) সামাজিক ঐক্য ও সহযোগিতা নীতি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.১০
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। কোন নীতির আলোকে সমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে সমষ্টির প্রতিটি সদস্যের স্বার্থ সমানভাবে রক্ষিত
হয়?
ক) মর্যাাদার স্বীকৃতি দান নীতি খ) সমান সুযোগের নীতি
গ) সমষ্টির স্বাতন্ত্রীকরণ নীতি ঘ) আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার নীতি
২। সমষ্টি সমাজকর্মের নীতি হলোÑ
র. অগ্রাধিকার ভিত্তিক অনুভূত প্রয়োজন নীতি
রর. কর্মসূচির সমন্বয় নীতি
ররর. সামাজিক ঐক্য ও সহযোগিতার নীতি
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় সমাজকর্ম প্রথম পত্র
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৪৪
পাঠ-৮.১১ সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন প্রক্রিয়া (চৎড়পবংং ড়ভ ঈড়সসঁহরঃু
ঙৎমধহরুধঃরড়হ ধহফ ঈড়সসঁহরঃু উবাবষড়ঢ়সবহঃ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৮.১১.১ সমষ্টি সংগঠন প্রক্রিয়া বর্ণনা করতে পারবেন।
৮.১১.২ সমষ্টি উন্নয়ন প্রক্রিয়া বর্ণনা করতে পারবেন।
৮.১১.১ সমষ্টি সংগঠন প্রক্রিয়া
সমষ্টি সংগঠন পদ্ধতি প্রয়োগে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়ে থাকে। মারি জি. রসের মতে, সমষ্টি সংগঠন
প্রক্রিয়াসমূহ হলোÑ ১. শোষণমুখী প্রক্রিয়া, ২. সংস্কারমুখী প্রক্রিয়া, ৩. পরিকল্পনামুখী প্রক্রিয়া, ৪. উদ্ভাবনামূলক প্রক্রিয়া
এবং ৫. চিকিৎসামুখী প্রক্রিয়া। সমষ্টি সংগঠন প্রক্রিয়াসমূহ সংক্ষেপ বর্ণনা করা হলো :
১. শোষণমুখী প্রক্রিয়া : মূলত চরম পশ্চাদমুখী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। বর্তমান
সমাজব্যবস্থায় এ ধরনের সমষ্টির অস্তিত্ব না থাকায় এ প্রক্রিয়ার অনুশীলন হয় না।
২. সংস্কারমুখী প্রক্রিয়া : নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য এ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ প্রচেষ্টা চালাতে
পারে। এজন্য কর্মসূচি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানো হয়। এ প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে বিধায়
দ্রæত জনমত গঠন ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় এবং চাহিদা পূরণ বা সমস্যার দ্রæত ও সহজতর সমাধান সম্ভব
হয়। এটি একটি জনপ্রিয় প্রক্রিয়া বিধায় সহজেই সাফল্য লাভ করা সম্ভব হয়। তবে এ প্রক্রিয়ায় বহুমুখী সমস্যার সমাধান
সম্ভব হয় না। সুসম উন্নয়নের পক্ষে এ প্রক্রিয়া তেমন কার্যকর নয় এবং কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে একক চিন্তার ফলে
কার্যক্রমে গতিশীলতা বা নতুনত্ব পাওয়া যায় না।
৩. পরিকল্পনামুখী প্রক্রিয়া : এ প্রক্রিয়ায় দলীয়ভাবে প্রচেষ্টা চালানো হয় এবং সমষ্টির বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় সাধন
করা হয়। এক্ষেত্রে সকল কর্মসূচি সমানভাবে গুরুত্ব পায়। সকলের জন্য সমষ্টিগত ও বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ
প্রক্রিয়ায় সমষ্টির সম্পদ ও সামর্থ্য ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। সমষ্টির সার্বিক দিক বিবেচনা করে
পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয় এবং বাস্তবসম্মত উত্তম পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে
একই সাথে অনেকগুলো কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন সম্ভব হয়।
৪. উদ্ভাবনমূলক প্রক্রিয়া : এ প্রক্রিয়ায় সমষ্টির সদস্যদেরকে সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলার ব্যবস্থা করা হয়। অনেক
সময় সমষ্টিতে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে সমষ্টির সদস্যদের নিজস্ব ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয়।
সমষ্টির সম্পদ, সামর্থ্য ব্যবহার করে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালানো হয়।
৫. চিকিৎসামুখী প্রক্রিয়া : অতি অগ্রবর্তী জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি কার্যকর। থেরাপি বা চিকিৎসামূলক সেবা প্রদানের
মাধ্যমে এ সমষ্টির সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালানো হয়। তবে বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এ ধরনের জনসমষ্টির অস্তিত্ব না
থাকায় এর ব্যবহার হয় না বললেই চলে।
সমষ্টি সংগঠনের উপরিউক্ত প্রক্রিয়াসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কতগুলোা স্তর বা পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। যেমন:
ক) তথ্য অনুসন্ধান : সরাসরি জরিপ বা ঘটনা অনুধ্যানের মাধ্যমে সমষ্টির বিদ্যমান সমস্যা বা চাহিদা, সম্পদ ও সামর্থ্য
সম্পর্কিত তথ্য অনুসন্ধান করা হয়।
খ) বিশ্লেষণ বা সমস্যা নির্ণয় : অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যাবলী বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমষ্টির সমস্যার গতি-প্রকৃতি ও কারণ
সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়।
গ) পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন : সমষ্টির সমস্যা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করে সমস্যা বা চাহিদার গতি-প্রকৃতি
অনুযায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় এবং যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
ঘ) মূল্যায়ন : কর্মসূচি বাস্তবায়নের পর কর্মসূচি স্বার্থকতা বিচার করার জন্য মূল্যায়ন করা হয়। মূলত পরিকল্পনা পর্যায়
থেকে শুরু করে শেষ অবধি এ মূল্যায়ন কার্যক্রম চলতে থাকে।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৪৫
৮.১১.২ সমষ্টি উন্নয়ন প্রক্রিয়া
সমষ্টির বৈশিষ্ট্য, আদর্শ, মূল্যবোধ এবং সমষ্টির জনগণের অভ্যাস, রুচি, কার্যপ্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে সমষ্টি
বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজনসমূহ বিচিত্র হয়। চাহিদা ও প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতি রেখে
প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়। মারি জি. রসের মতে সমষ্টি উন্নয়নের প্রক্রিয়া তিনটি। যথাÑ ১. একক কার্যপ্রক্রিয়া ২. বহুমুখী
কার্যপ্রক্রিয়া এবং ৩. আন্তসম্পদ প্রক্রিয়া। নিচে এগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হলো:
১. একক কার্যপ্রক্রিয়া : সমষ্টির উন্নয়নে একক কার্যপ্রক্রিয়ায় সমষ্টির বাইরে থেকে আগত বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব সমষ্টির সমস্যা
নির্ণয় এবং তার সমাধানে পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে থাকেন। এক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিকল্পনায় সমষ্টির
জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করে সদস্যদের মাঝে
সচেতনতাবোধ জাগিয়ে তোলা হয়। সমষ্টির জনগণ যাতে উন্নয়নের সকল সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে তার ব্যবস্থা করেন।
সমষ্টি উন্নয়নের এ প্রক্রিয়ায় অতি দ্রæত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। কেননা এখানে বিশেষজ্ঞের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ
থাকে। ফলে এ প্রক্রিয়ায় সময় কম লাগে, অর্থের সাশ্রয় হয় এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ থাকে না।
তবে এ প্রক্রিয়ায় সমষ্টির একটি মাত্র সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় বিধায় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাওয়া
যায় না। এটি সম্পূর্ণভাবে বিশেষজ্ঞের যোগ্যতা ও দক্ষতার উপর নির্ভরশীল হওয়ায় অনেক সময় বিশেষজ্ঞের দক্ষতার
অভাবে এ প্রক্রিয়া সফল হয়না। সমষ্টির সদস্যগণ এ সম্পর্কে তেমন অবগত না থাকায় এ প্রক্রিয়ার ফলাফল বেশিদিন
স্থায়ী হয় না। তবে সহজ ও দ্রæত উপায়ে সমষ্টির উন্নয়নে এ প্রক্রিয়া অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ।
২. বহুমুখী কার্যপ্রক্রিয়া : এ প্রক্রিয়ায় সমষ্টির জনগণের বহুমুখী প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে একাধিক বিশেষজ্ঞ নিয়োজিত
থাকার পাশাপাশি সমষ্টির জনগণের অন্তর্ভুক্তি থাকে। এ প্রক্রিয়ার লক্ষ্য হলো সমষ্টির জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন
এবং প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করে সমষ্টিকে উন্নত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা। এ প্রক্রিয়ায় জনগণের অন্তর্ভুক্তি থাকে
বিধায় তারা সক্রিয় ভূমিকা পালনে আগ্রহী হয়। একই সঙ্গে একাধিক সমস্যার সমান্তরাল সমাধানের মাধ্যমে দ্রæত কার্যকর
উন্নয়ন সম্ভব হয়। তবে এ প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হওয়াতে বাজেট ঘাটতির সম্ভাবনা থাকে। একাধিক বিশেষজ্ঞ
থাকায় মত পার্থক্য দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রক্রিয়াটি বহুমুখী হওয়ায় অনেক সময় সমস্যার সকল দিকে সমানভাবে
গুরুত্ব দেয়া সম্ভব হয় না। তবে প্রক্রিয়াটি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা আনয়নে অত্যন্ত কার্যকর।
৩. আন্তসম্পদ প্রক্রিয়া : আন্তসম্পদ প্রক্রিয়ায় সমষ্টির সদস্যরা নিজেরা তাদের সমস্যাবলী চিহ্নিত করে সমস্যা
মোকাবিলায় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সমষ্টির সম্পদ ব্যবহার করা হয়ে
থাকে। এ প্রক্রিয়ায় সমষ্টির সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়। সমষ্টির জনগণের যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি
পায়। জনগণের সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ ঘটে এবং সমষ্টির জনগণের মধ্যে স্বাবলম্বী মনোভাব জাগ্রত হয়। তবে এক্ষেত্রে
বিশেষজ্ঞের সরাসরি হস্তক্ষেপ না থাকায় কর্মসূচি পরিচালনায় ত্রæটি দেখা দিতে পারে। আবার সদস্যদের পারস্পরিক
সম্পর্ক সুদৃঢ় না হলে কার্যক্রমের গতি ঝিমিয়ে পড়তে পারে। তবে সমষ্টির সদস্যদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা সৃষ্টিতে এ
প্রক্রিয়া অত্যন্ত কার্যকর। সমষ্টি উন্নয়নের এ প্রক্রিয়াসমূহ সম্পাদনের ক্ষেত্রে কতগুলো ধাপ অনুসরণ করতে হয়। যেমন:
ক) সমষ্টি জরিপ : সমষ্টির গঠন, চাহিদা, প্রয়োজন, সমস্যা, সম্পদ, সামর্থ্য প্রভৃতি সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সংগ্রহের জন্য
জরিপ কার্য চালানো হয়। এটি উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ।
খ) সমস্যা নির্ণয় : এ পর্যায়ে সমস্যা নির্ণয় করা হয়। জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমষ্টির সমস্যার
স্বরূপ, কারণ, প্রকৃতি ইত্যাদি নির্ণয় করা হয়।
গ) পরিকল্পনা প্রণয়ন : এ পর্যায়ে সমষ্টির সমস্যা নির্ণয়ের প্রেক্ষিতে সমষ্টির সম্পদ ও সামর্থ্যরে উপর ভিত্তি করে যথাযথ
কার্যকর ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়। এক্ষেত্রে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া সমষ্টির
জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
ঘ) মূল্যায়ন : প্রণীত কর্মসূচির বাস্তবায়ন এবং সফলতা ও ব্যর্থতা নিরূপণের জন্য মূল্যায়ন করা হয়। কর্মসূচি প্রণয়নের
শুরু থেকে শেষ অবধি এ মূল্যায়ন চলতে থাকে।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় সমাজকর্ম প্রথম পত্র
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৪৬
সারসংক্ষেপ
প্রতিটি সমষ্টির গঠন, প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, আদর্শ, মূল্যবোধ এবং সমষ্টির জনগণের অভ্যাস, রুচি ও কর্মপ্রক্রিয়ার প্রেক্ষিতে
বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সমষ্টির প্রকৃতি অনুযায়ী চাহিদা, প্রয়োজন বা সমস্যা আলাদা ও বিচিত্রমুখী হয়। এই ভিন্ন ও
বিচিত্রমুখী চাহিদা বা প্রয়োজন পূরণ এবং সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। সমষ্টি উন্নয়নের
সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়াসমূহ হলোÑ ১) একক কার্যপ্রক্রিয়া, ২) বহুমুখী কার্যপ্রক্রিয়া ও ৩) আন্তঃসম্পদ প্রক্রিয়া।
অন্যদিকে সমষ্টি সংগঠনের ক্ষেত্রে যেসব প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয় সেগুলো হলোÑ ১) শোষণমুখী প্রক্রিয়া, ২)
সংস্কারমূলক প্রক্রিয়া, ৩) পরিকল্পনামুখী প্রক্রিয়া, ৪) উদ্ভাবনমূলক প্রক্রিয়া ও ৫) চিকিৎসামূলক প্রক্রিয়া।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.১১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সমষ্টি উন্নয়নের কোন প্রক্রিয়ায় বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি এসে সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে?
ক) একক কার্যপ্রক্রিয়া খ) বহুমুখী কার্যপ্রক্রিয়া
গ) আন্তঃসম্পদ প্রক্রিয়া ঘ) চিকিৎসামূলক প্রক্রিয়া
২। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য সমষ্টি সংগঠনের কোন প্রক্রিয়া কার্যকর?
ক) শোষণমুখী প্রক্রিয়া খ) সংস্কারমুখী প্রক্রিয়া
গ) উদ্ভাবনমূলক প্রক্রিয়া ঘ) চিকিৎসামূলক প্রক্রিয়া
৩। সমষ্টির সদস্যদের সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলার জন্য সমষ্টি সংগঠনে কোন প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়?
ক) শোষণমুখী প্রক্রিয়া খ) সংস্কারমুখী প্রক্রিয়া
গ) পরিকল্পনামুখী প্রক্রিয়া ঘ) উদ্ভাবনমুখী প্রক্রিয়া
পাঠ-৮.১২ সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়নের প্রয়োগক্ষেত্র (ঋরবষফং ড়ভ ঈড়সসঁহরঃু
ঙৎমধহরুধঃরড়হ ধহফ ঈড়সসঁহরঃু উবাবষড়ঢ়সবহঃ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৮.১২.১ সমষ্টি সংগঠন প্রয়োগক্ষেত্রসমূহ বর্ণনা করতে পারবেন।
৮.১২.২ সমষ্টি উন্নয়নের প্রয়োগক্ষেত্রসমূহ বর্ণনা করতে পারবেন।
৮.১২.৩ বাংলাদেশে কোন কোন ক্ষেত্রে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় তা বর্ণনা করতে পারবেন।
৮.১২.১ সমষ্টি সংগঠনের প্রয়োগক্ষেত্র
সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি হিসেবে সমষ্টি সংগঠন বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সমষ্টির কল্যাণে প্রয়োগ করা হয়।
তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের শহরাঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন চাহিদা পূরণ ও সমস্যা সমাধানে এ
পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে শহরাঞ্চলের সমষ্টি সংগঠনের
প্রয়োগক্ষেত্রসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. সমষ্টির সমস্যা নির্ণয় : বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ন্যায় শহরাঞ্চলেও নানাবিধ জটিল ও বহুমুখী সমস্যা বিদ্যমান।
দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট এ সমস্যাবলী চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সমষ্টি সংগঠন প্রয়োগ করা
যেতে পারে। চিহ্নিত সমস্যাসমূহের ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমষ্টি সংগঠন পদ্ধতি প্রয়োগ করে
সমস্যাগুলোর কারণ, ধরন, প্রকৃতি ও প্রভাব নির্ণয় করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৪৭
২. স্থানীয় সম্পদ চিহ্নিতকরণ : শহরাঞ্চলে বিদ্যমান সমস্যাবলী নির্ণয়ের মাধ্যমে সমাধান প্রদানের ক্ষেত্রে সম্পদ একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্থানীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ছাড়া সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য অনুসন্ধানের ম্যাধমে
স্থানীয় সম্পদ চিহ্নিত করে তা যথাযথ ব্যবহারে সমষ্টি সংগঠন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৩. সংস্থার কার্যাবলীর সমন্বয় সাধন : শহর সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহের কার্যাবলীর মধ্যে
সমন্বয় সাধন অতীব জরুরি। শুধু তাই নয়, সরকারি ও বেসরকারি কার্যক্রমের সাথে স্থানীয় সমষ্টির কার্যক্রমও সমন্বয় করা
প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের সমষ্টি সংগঠন পদ্ধতির প্রয়োগ অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
৪. দ্ব›দ্ব দূরীকরণ : সমষ্টির সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একাধারে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে অনুদান গ্রহণ করা হয়।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে বিরাজমান দ্ব›দ্ব সংঘাত দূর করে প্রতিষ্ঠানের সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সমষ্টি
সংগঠনের প্রয়োগ অতীব জরুরি।
৫. জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ : সমষ্টির সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে
সমষ্টির সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি আবশ্যক। এক্ষেত্রে সমষ্টির সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব ও
কর্তব্য সচেতন করে তোলা প্রয়োজন। দায়িত্ব-কর্তব্য সচেতন সদস্যরা তাদের যথাযথ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে উন্নয়ন
কার্যক্রমে যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে সমষ্টি সংগঠন পদ্ধতি প্রয়োগ করে সমষ্টির সদস্যদের মধ্যে
সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা যায়।
৬. সম্পদের সদ্ব্যবহার : সম্পদের সদ্ব্যবহার সমষ্টি সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমষ্টির জনগোষ্ঠীর
বিনোদনমূলক কাজের জন্য পার্ক, খেলার মাঠ, শিশুদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টিসহ এলাকায় বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস
সরবরাহ নিশ্চিত করা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিজস্ব সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান
করে সমষ্টির উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে সমষ্টি সংগঠন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৮.১২.২ সমষ্টি উন্নয়নের প্রয়োগক্ষেত্র
পেশাদার সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি সমষ্টি উন্নয়ন সাধারণত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের সমষ্টির উন্নয়ন এবং
উন্নত বিশ্বের অনুন্নত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক চাহিদা বা প্রয়োজন পূরণের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন সাধনের ক্ষেত্রে
ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সমষ্টির জনগণকে তাদের নিজস্ব সমস্যা সমাধানে সচেতন
করে তোলা হয় যাতে তারা নিজেদের প্রয়োজন পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে আগ্রহী হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যে
সকল ক্ষেত্রে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় সেগুলো হলো :
১. পল্লী উন্নয়ন : বাংলাদেশের অধিকাংশই লোক গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে। পল্লীর এই বিশাল জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই
অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে অনগ্রসর। এই অনগ্রসরতা কাটাতে তাদের পর্যাপ্ত সম্পদ ও সামর্থ্য
নেই। এক্ষেত্রে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে উন্নতমানের বীজ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ, সমবায়ভিত্তিক কৃষি খামার
প্রতিষ্ঠা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা
যায়।
২. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন : সমষ্টির সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম নির্দেশক হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। গ্রামীণ
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নতুন নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ, পুরাতন রাস্তাঘাটের সংস্কার, পুল
ও কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
৩. কার্যকর স্বাস্থ্য কর্মসূচি প্রবর্তন : গ্রামীণ ও শহরের অনুন্নত জনগোষ্ঠীর মধ্যে কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের
অভাব পরিলক্ষিত হয়। সমষ্টি উন্নয়নের মাধ্যমে এ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে খাদ্য, পুষ্টি, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কে
সচেতনা সৃষ্টি, বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে
তাদেরকে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী কর্মকাÐের সাথে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় সমাজকর্ম প্রথম পত্র
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৪৮
৪. আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি : বাংলাদেশে শ্রমশক্তির বৃদ্ধির তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় বেকারত্ব
ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত কাঁচামালনির্ভর কুটিরশিল্প স্থাপন, হাঁস-মুরগী ও পশুপালন,
মৎস্য খামার, সবজি উৎপাদনসহ বিভিন্ন উৎপাদনমুখী প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি বিশেষভাবে উপযোগী।
৫. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো অধিকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। পরিবার
পরিকল্পনা কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে সচেতন করে তুলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে
বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণে উদ্যোগী করে তোলা যেতে পারে। এছাড়া পারিবারিক পরিবেশের মধ্যে সহযোগিতা, সহানুভূতি ও
সহমর্মিতার সম্পর্ক সৃষ্টি করে পরিবার ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল করে তুলতে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৬. শিক্ষা সম্প্রসারণ : বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ নিরক্ষর। এই জনগোষ্ঠীকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে
মুক্ত করতে শিক্ষার প্রচলন একান্ত আবশ্যক। এজন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বয়ষ্ক শিক্ষা, নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন ও
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রচলনে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৭. গৃহায়ন : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অন্যতম সমস্যা গৃহহীনতা। স্বল্প ব্যয়ে গৃহ নির্মাণ প্রকল্প ও
সমবায়ভিত্তিক গৃহনির্মাণ কার্যক্রমের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন ও
প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতিতে সেবা প্রদানের মাধ্যমে জনগণের দুর্দশা লাঘব এবং পরিস্থিতি
মোকাবিলায় সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
৮. স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ : স্থানীয় পর্যায়ে যথাযথ নেতৃত্ব সৃষ্টি ও নেতৃত্বের বিকাশের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণকে উদ্বৃদ্ধ
করে সমষ্টির সম্পদ ও সামর্থ্যরে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং সমষ্টির নিজস্ব চাহিদা পূরণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন
ও তা যথাযথ পরিচালনা ও যুগোপযোগী কর্মসূচি প্রণয়নে সমষ্টি উন্নয়ন প্রয়োগ করা যায়।
৯. সম্পদের সদ্ব্যবহার ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন : গ্রামীণ জনসমষ্টির বস্তুগত ও অবস্তুগত অনেক সম্পদ থাকে যা
অব্যবহৃত থেকে যায়। সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সমষ্টির এ সম্পদসমূহ যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সমষ্টিকে
স্বাবলম্বী করে তোলা যায়। এছাড়া গ্রামীণ এলাকার জনগণের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সৃষ্টির ক্ষেত্রে পারস্পরিক
পরিচিতি ও বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে সমষ্টি উন্নয়ন প্রয়োগ করা যায়।
১০. স্বাস্থ্য ও পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ : মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি সম্পর্কে যথাযথ ধারণা ও শিক্ষাদান, রোগ প্রতিরোধে
কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, মাতৃত্বকল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন প্রভৃতির মাধ্যমে সমষ্টির জনগণের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিহীনতা দূর করতে সমষ্টি
উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
এছাড়াও সমষ্টির জনগণের বিভিন্ন চিত্তবিনোদনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সামাজিক শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা, সামাজিক
কুসংস্কার ও অজ্ঞতা দূরীকরণে সচেতনতা সৃষ্টি, সমন্বিত উপায়ে সমস্যার সমাধান, প্রচলিত প্রথা, রীতিনীতির সংস্কার সাধন
প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সারসংক্ষেপ
সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি হিসেবে সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণ এবং সমস্যার কার্যকর
সমাধানের মাধ্যমে সমষ্টির সামগ্রিক উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখতে অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি পদ্ধতি। সমষ্টি সংগঠন ও
সমষ্টি উন্নয়ন আবার সমষ্টির অবস্থানের প্রেক্ষিতে প্রয়োগের দিক থেকে দু’ধরনের। যথাÑ সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি
উন্নয়ন। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল বিশ্ব এবং উন্নত বিশ্বের অনুন্নত এলাকায় সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। আবার
উন্নত বিশ্ব এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের শহরাঞ্চলে সাধারনত সমষ্টি সংগঠন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে
সমষ্টি উন্নয়নের প্রয়োগক্ষেত্র হলোÑ ১) পল্লী উন্নয়ন, ২) যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ৩) কার্যকর স্বাস্থ্য কর্মসূচি প্রবর্তন,
৪) আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, ৫) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ৬) শিক্ষা সম্প্রসারণ, ৭) গৃহায়ন, ৮) স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ, ৯)
স্বাবলম্বন, ১০) স্বাস্থ্য ও পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ ইত্যাদি। অন্যদিকে বাংলাদেশের শহর সমষ্টিতে সমষ্টি সংগঠনের প্রয়োগ
ক্ষেত্রসমূহ হলোÑ ১) সমষ্টির সমস্যা নির্ণয়, ২) স্থানীয় সম্পদ চিহ্নিতকরণ, ৩) সংস্থার কার্যাবলীর মধ্যে সমন্বয় সাধান,
৪) সংস্থার দ্ব›দ্ব দূরীকরণ, ৫) জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ৬) সমষ্টির সম্পদের যথাযথ ব্যবহার।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৪৯
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.১২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সাধারণত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সমষ্টির সার্বিক উন্নয়নে সমাজকর্মের কোন মৌলিক পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা হয়?
ক) ব্যক্তি সমাজকর্ম খ) দল সমাজকর্ম
গ) সমষ্টি উন্নয়ন ঘ) সমষ্টি সংগঠন
২। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যে সকল ক্ষেত্রে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারেÑ
র. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ
রর. আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি
ররর. চিত্তবিনোদন মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
৩। শহর সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাবলীর মধ্যে সমন্বয় সাধনে সমাজকর্মের কোন
পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়?
ক) সমষ্টি উন্নয়ন খ) সমষ্টি সংগঠন
গ) সমাজকর্ম প্রশাসন ঘ) সামাজিক কার্যক্রম
পাঠ-৮.১৩ সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলোর আন্তসম্পর্ক (ওহঃবৎৎবষধঃরড়হংযরঢ় ধসড়হম ঃযব
ইধংরপ গবঃযড়ফং ড়ভ ঝড়পরধষ ডড়ৎশ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৮.১৩.১ সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যকার আন্তসম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
৮.১৩.১ সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আন্তসম্পর্ক
সমাজকর্ম একটি বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতানির্ভর পেশা। সমাজকর্ম হলো ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সামাজিক ভূমিকা
পালন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে সাহায্য করার এবং এই লক্ষ্যার্জনে অনুকূল সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির একটি প্রক্রিয়া।
সমাজকর্মের সাহায্য প্রক্রিয়ার মৌলিক পদ্ধতি তিনটি। যথাÑ ব্যক্তি সমাজকর্ম, দল সমাজকর্ম এবং সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি
সমাজকর্ম । সঙ্গত কারণে এই তিনটি পদ্ধতির মৌল একক হলো ব্যক্তি। এজন্য সমাজকর্মের এই মৌলিক পদ্ধতি তিনটির
মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। ব্যক্তি কখনো একক, কখনো দলের সদস্য আবার কখনো সে সমষ্টির অংশীদার। একারণে
ব্যক্তিকে সেবা দিতে গিয়ে দল ও সমষ্টিকে সেবা দিতে হয়। অন্যদিকে দলকে সেবা দিতে গিয়ে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে এবং
সমষ্টিকে সেবা দিতে গিয়ে ব্যক্তি ও দলকে সেবাপ্রদান করতে হয়। অর্থাৎ সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিসমূহের প্রয়োগের
ক্ষেত্রে সবসময়ই কেন্দ্রে অবস্থান করে ব্যক্তি। সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যকার আন্তসম্পর্ক আলোচনা করা
হলো :
প্রথমত : ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে প্রয়োগ করা হয় ব্যক্তি সমাজকর্ম। কিন্তু ব্যক্তি যেহেতু দল ও সমষ্টির একক, সেহেতু
ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগের সাথে সাথে ব্যক্তির সমস্যার যথাযথ সমাধানে দল সমাজকর্ম ও সমষ্টি সমাজকর্মের প্রয়োগের
প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় সমাজকর্ম প্রথম পত্র
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৫০
দ্বিতীয়ত : ব্যক্তি সমাজকর্মের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিকে তার সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার
লক্ষ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা। এক্ষেত্রে ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের সাথে সাথে দল ও সমষ্টিতে ব্যক্তি যাতে তার
যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে সেক্ষেত্রেও তাকে সক্ষম করে তোলা হয়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেবা ব্যবস্থাই
যথেষ্ট নয়, দল ও সমষ্টিকেন্দ্রিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তিকে তার যথাযথ সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে
সহায়তা করা হয়।
তৃতীয়ত : দল সমাজকর্ম সাধারণত দলকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। গঠনমূলক দলীয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দলের
সদস্যদের সামাজিক ভূমিকা পালনে সহায়তা করা দল সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য। কিন্তু দল গঠিত হয় কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে।
আবার দল হলো সমষ্টির একক। সূতরাং দলের উদ্দেশ্য অর্জন করতে গিয়ে ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিতে হয়। আবার দল
যেহেতু সমষ্টির একক সেহেতু সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সমষ্টির দিকটিও যথাযথ বিবেচনায় আনতে হবে।
চতুর্থত : সমষ্টি সমাজকর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে সমষ্টির জনগণের
আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। সমষ্টি হলো কতিপয় দল ও অনেকগুলো ব্যক্তির সমষ্টি। সুতরাং
সমষ্টির পূর্ণাঙ্গ কল্যাণ সাধন দল ও ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়।
পঞ্চমত : সমাজকর্মের কতগুলো সাধারণ নীতিমালা রয়েছে। যেমনÑ ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার,
সকলের জন্য সমান সুযোগ, স্বাতন্ত্রীকরণ, সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, সম্পদের সদ্ব্যবহার ইত্যাদি। সমাজকর্মের এই নীতিসমূহ
সকল মৌলিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োগ করা হয়।
ষষ্ঠত : ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমস্যা যেমন একক কোনো কারণে সৃষ্টি হয় না, তেমনি সমস্যার সমাধানও একক পদ্ধতি প্রয়োগের
মাধ্যমে সম্ভব নয়। ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের জন্য যেমন সমষ্টির সম্পদ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। তেমনি দলের অন্যান্য
সদস্যদের সাহায্যও প্রয়োজন হয়। সুতরাং বলা যায়, ব্যক্তি সমাজকর্ম, দল সমাজকর্ম এবং সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন
অনুশীলন ও প্রয়োগ একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিচের চিত্রের সাহায্যে সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলোর
পারস্পরিক সম্পর্ক দেখানো হলো :
চিত্র : ৮.১৩.১.১ সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতির পারস্পরিক আন্তসম্পর্ক
ব্যক্তি হলো সমাজকর্ম অনুশীলনের মৌলিক একক। তাই সমষ্টি কেন্দ্রিক হোক কিংবা দলকেন্দ্রিক সমাজকর্ম অনুশীলন
করতে যাওয়া হোক না কেন ব্যক্তি সমাজকর্ম ব্যতীত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ব্যক্তি হলো সমাজকর্ম
অনুশীলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু। ব্যক্তি সমাজকর্ম অনুশীলন করতে গেলে ব্যক্তির সর্বোচ্চ ক্ষমতার বিকাশ ও নিজস্ব সম্পদের
সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে দল ও সমষ্টির প্রয়োজন অপরিহার্য। আবার দল সমাজকর্ম অনুশীলন করতে গিয়ে দলীয়
পরিবেশে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেবা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে প্রয়োজন দেখা দেয় সমষ্টির সম্পদেরও। সুতরাং দেখা
যাচ্ছে, সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলো পরস্পর ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত।
সারসংক্ষেপ
বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও পদ্ধতিনির্ভর পেশা হলো সমাজকর্ম। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে
তাদের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে সাহায্য করা এবং এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনুকূল পরিবেশ
সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি
উন্নয়ন
ব্যক্তি সমাজকর্ম
দল সমাজকর্ম
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৫১
সৃষ্টির প্রক্রিয়া হলো সমাজকর্ম। সমাজকর্মের কার্যক্রম ত্রিমাত্রিক। যথাÑ ব্যক্তিকেন্দ্রিক, দলকেন্দ্রিক ও সমষ্টিকেন্দ্রিক।
সঙ্গত কারণে সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি তিনটি যথাÑ ব্যক্তি সমাজকর্ম, দল সমাজকর্ম এবং সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি
উন্নয়ন। সমাজকর্মের এই তিনটি পদ্ধতির মধ্যেকার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ব্যক্তি কখনো একক, কখনো দলের সদস্য
আবার কখনো সমষ্টির অংশীদার। একারণে ব্যক্তিকে সেবা দিতে গিয়ে দল ও সমষ্টিকে সেবা দিতে হয়। অন্যদিকে
দলকে সেবা দিতে গিয়ে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে এবং সমষ্টিকে সেবা দিতে গিয়ে ব্যক্তি ও দলকে সেবা দিতে হয়। সুতরাং
দেখা যায় যে, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিটি পদ্ধতি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.১৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলোর মৌল একক কোনটি?
ক) ব্যক্তি খ) দল
গ) সমষ্টি ঘ) প্রতিষ্ঠান
২। সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে বিদ্যমানÑ
র. ঘনিষ্ট সম্পর্ক
রর. প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক
ররর. আন্তসম্পর্ক
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
চূড়ান্ত মূল্যায়ন
ক. বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
১। আমরা অনুভূতি কোন দলের বৈশিষ্ট্য?
ক) অন্তঃদল খ) বহিঃদল
গ) গৌণ দল ঘ) আনুষ্ঠানিক দল
২। দলের লক্ষ্য অর্জনে সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত দলীয় প্রক্রিয়াকে কী বলে?
ক) দলীয় প্রক্রিয়া খ) দল সমাজকর্ম প্রক্রিয়া
গ) সমষ্টি উন্নয়ন প্রক্রিয়া ঘ) সমষ্টি সংগঠন প্রক্রিয়া
৩। অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে কী বলা হয়?
ক) দল খ) সমষ্টি
গ) সংঘ ঘ) প্রতিষ্ঠান
৪। যে কোন সমস্যার মূলকেন্দ্র বিন্দুতে থাকেÑ
ক) ব্যক্তি খ) দল
গ) সমষ্টি ঘ) প্রতিষ্ঠান
৫। যে দলের সদস্যদের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং পরিচিতি বিদ্যমান থাকে তাকে বলেÑ
ক) প্রাথমিক দল খ) গৌণ দল
গ) অন্তঃদল ঘ) বহিঃদল
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় সমাজকর্ম প্রথম পত্র
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৫২
৬। সমষ্টির সুষম উন্নয়নের জন্য সমষ্টি উন্নয়নের কোন প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয়?
ক) একক কার্যপ্রক্রিয়া খ) বহুমুখী কার্যপ্রক্রিয়া
গ) আন্তসম্পদ প্রক্রিয়া ঘ) উদ্ভাবনমূলক প্রক্রিয়া
৭। সমষ্টি সংগঠন কোন ধরনের এলাকায় ব্যবহৃত হয়?
ক) উন্নত এলাকায় খ) অনুন্নত এলাকায়
গ) গ্রামীণ এলাকায় ঘ) বস্তি এলাকায়
৮। দলের পর্যায়ভুক্ত নয়Ñ
র. উদ্দেশ্যহীন সমাবেশ
রর. সম্পর্কহীন সমাবেশ
ররর. রাজনৈতিক সমাবেশ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
৯। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হলোÑ
র. সম্পদের অপর্যাপ্ততা
রর. পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব
ররর. কারিগরি শিক্ষার অভাব
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ১০ ও ১১ নং প্রশ্নের উত্তর দিন :
মেহেদী গ্রামে বসবাস করে। সেখানকার অধিকাংশ লোকই কৃষিজীবী। সনাতন পদ্ধতিতে তারা চাষাবাদ করে।
নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা, কুসংস্কারসহ নানাবিধ সমস্যা তার এলাকার উন্নয়নের পথে বড় বাধা বলে সে মনে করে।
১০। মেহেদীর এলাকার উন্নয়নে সমাজকর্মের কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে?
ক) ব্যক্তি সমাজকর্ম খ) দল সমাজকর্ম
গ) সমষ্টি উন্নয়ন ঘ) সমষ্টি সংগঠন
১১। মেহেদীর এলাকার বিদ্যমান সমস্যাবলী দূর করে সার্বিক উন্নয়ন সাধন করতে সমষ্টি উন্নয়নের কোন প্রক্রিয়াটি
অধিকতর কার্যকরী?
ক) একক কার্যপ্রক্রিয়া খ) বহুমুখী কার্যপ্রক্রিয়া
গ) আন্তসম্পদ প্রক্রিয়া ঘ) উদ্ভাবনমূলক প্রক্রিয়া
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট আট পৃষ্ঠা ১৫৩
খ. সৃজনশীল প্রশ্ন
১। জাহিদ সাহেব তার দুই ছেলেমেয়ে, মা-বাবা, ছোটবোন ও বৃদ্ধা দাদীকে নিয়ে একত্রে বসবাস করেন। তাদের মধ্যে
পারস্পরিক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বিদ্যমান। তারা প্রত্যেকেই একে অপরের সুখে যেমন আনন্দিত হন তেমনি বিপদে আপদে
একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
ক) দল সমাজকর্মের উপাদান কয়টি? ১
খ) সমষ্টি উন্নয়ন ধারণাটি ব্যাখ্যা করুন। ২
গ) উদ্দীপকের জাহিদ সাহেবের পরিবার কোন ধরনের সামাজিক দল?Ñ ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ) উদ্দীপকে উল্লেখিত “সামাজিক দল সবচেয়ে বেশি স্থায়ী”Ñ উক্তিটি বিশ্লেষণ করুন। ৪
২। মিজান একজন পেশাদার সমাজকর্মী। মিজানকে তার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এমন একটি এলাকার সমস্যা সমাধানের
জন্য প্রেরণ করে যেখানে নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা, স্বাস্থ্যহীনতা, দারিদ্র্য নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান। মিজান তার নিয়োজিত
এলাকার সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকেন।
ক. সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি কয়টি ? ১
খ. উদ্ভাবনমূলক প্রক্রিয়া বলতে কী বোঝেন? ২
গ. উদ্দীপকে মিজানের নিযুক্ত এলাকার সমস্যার সমাধানে মিজান সমাজকর্মের কোন পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে থাকেন?Ñ
ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ. উদ্দীপকে মিজানের প্রয়োগকৃত পদ্ধতির আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছেÑ উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় করুন। ৪
উত্তরমালা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.১ : ১। ক ২। গ ৩। ঘ ৪। খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.২ : ১। খ ২। ক ৩। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.৩ : ১। গ ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.৪ : ১। ক ২। খ ৩। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.৫ : ১। ক ২। খ ৩। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.৬ : ১। ক ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.৭ : ১। খ ২। ক ৩। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.৮ : ১। গ ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.৯ : ১। গ ২। ক ৩। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.১০ : ১। খ ২। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.১১ : ১। ক ২। খ ৩। ঘ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.১২ : ১। গ ২। ঘ ৩। খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ৮.১৩ : ১। ক ২। খ
চূড়ান্ত মূল্যায়ন- ৮ : ১। ক ২। খ ৩। খ ৪। ক ৫। ক ৬। গ ৭। ক ৮। ক ৯। ঘ
১০। গ ১১। গ
ইউনিট

সমাজকর্ম পদ্ধতি : সমাজকল্যাণ প্রশাসন, সামাজিক কার্যক্রম ও
সমাজকর্ম গবেষণা (ঝড়পরধষ ডড়ৎশ গবঃযড়ফং : ঝড়পরধষ ডবষভধৎব
অফসরহরংঃৎধঃরড়হ, ঝড়পরধষ অপঃরড়হ ধহফ ঝড়পরধষ ডড়ৎশ জবংবধৎপয)
ভূমিকা
আধুনিক জটিল সমাজব্যবস্থায় নানাবিধ মনো-সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পেশাদার
প্রক্রিয়া হলো সমাজকর্ম। ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে তাদের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও
পুনরুদ্ধারে সরাসরি প্রয়োগ করা হয় সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি ব্যক্তি সমাজকর্ম, দল সমাজকর্ম এবং সমষ্টি সংগঠন ও
সমষ্টি উন্নয়ন। ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলো সরাসরি প্রয়োগ করা হলেও
এগুলোর কার্যকারিতা ও সফল বাস্তবায়নে কতিপয় পদ্ধতি পরোক্ষভাবে প্রয়োগ করা হয়। এগুলো সমাজকর্মের সহায়ক
পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি তিনটি। যথাÑ সমাজকল্যাণ প্রশাসন, সামাজিক কার্যক্রম এবং
সমাজকর্ম গবেষণা।
শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজব্যবস্থায় পুঁজি ও যন্ত্রের দ্রæত বিকাশের ফলে ব্যাপক সামাজিক পরিবর্তন সাধিত হয়। এরই প্রেক্ষাপটে
রাষ্ট্রের সমাজকল্যাণমূলক কার্যসম্পাদনের প্রেক্ষিতে উদ্ভব হয় সমাজকল্যাণ প্রশাসন। এটি সময়ের চাহিদা প্রেক্ষিতে
সামাজিক নীতি ও আইনের আলোকে জনগণের কল্যাণ সাধনে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে
থাকে। অন্যদিকে সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন অনভিপ্রেত ও অবাঞ্ছিত অবস্থার সুপরিকল্পিত সংশোধন বা পরিবর্তন, মানুষের
জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গৃহীত সম্মিলিত প্রচেষ্টা হলো সামাজিক
কার্যক্রম। আবার সমাজকর্ম পেশার সাহায্যদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন, উদ্ভাবিত পদ্ধতিগুলোর যথাযথ
প্রয়োগ ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা নির্ণয় ও দূরীকরণ, সফলতা নির্ণয়, প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদ্ধতি ও কৌশল
উদ্ভাবনের আগ্রহ ও উৎসুকতা থেকে সমাজকর্ম গবেষণা উদ্ভব হয়েছে । সমাজকর্মের এই সহায়ক পদ্ধতিগুলো মৌলিক
পদ্ধতিসমূহের কার্যকর প্রয়োগ ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনতে সহায়তা করে।
এই ইউনিটের পাঠসমূহ
পাঠ-৯.১ : প্রশাসন ও সমাজকল্যাণ প্রশাসনের ধারণা
পাঠ-৯.২ : সমাজকল্যাণ প্রশাসনের উপাদান
পাঠ-৯.৩ : সমাজকল্যাণ প্রশাসনের গুরুত্ব
পাঠ-৯.৪ : সামাজিক কার্যক্রমের ধারণা
পাঠ-৯.৫ : সামাজিক কার্যক্রমের উপাদান
পাঠ-৯.৬ : সামাজিক কার্যক্রম প্রক্রিয়া
পাঠ-৯.৭ : সামাজিক কার্যক্রমের গুরুত্ব
পাঠ-৯.৮ : গবেষণা, সামাজিক গবেষণা ও সমাজকর্ম গবেষণার ধারণা
পাঠ-৯.৯ : সমাজকর্ম গবেষণার ধাপ
পাঠ-৯.১০ : গবেষণা প্রস্তাবনা
পাঠ-৯.১১ : সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব
পাঠ-৯.১২ : সমাজকর্মের মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট নয় পৃষ্ঠা ১৫৫
পাঠ-৯.১ প্রশাসন ও সমাজকল্যাণ প্রশাসনের ধারণা (ঈড়হপবঢ়ঃ ড়ভ অফসরহরংঃৎধঃরড়হ ধহফ
ঝড়পরধষ ডবষভধৎব অফসরহরংঃৎধঃরড়হ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৯.১.১ প্রশাসন ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
৯.১.২ সমাজকল্যাণ প্রশাসনের সংজ্ঞা প্রদান করতে পারবেন।
৯.১.১ প্রশাসন
প্রাচীন যুগ থেকে মানুষ দলবদ্ধভাবে জীবনযাপন করে আসছে। আর এই দলবদ্ধ জীবনে কোনো না কোনো
নেতা বা গোত্রপ্রধানের নেতৃত্বে কতিপয় নিয়মনীতি অনুসরণ করে চলতে হতো। সময়ের বিবর্তনে রাষ্ট্র ধারণা উদ্ভবের ফলে
রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি ও আইনসমূহকে বাস্তব রুপদানের ক্ষেত্রে প্রশাসন ধারণাটি উদ্ভব হয়েছে। সাধারণভাবে প্রশাসন বলতে
এমন একটি প্রক্রিয়াকে বুঝায় যা কোনো ব্যক্তি, দল বা প্রতিষ্ঠানকে তার লক্ষ্যার্জনে কার্য সম্পাদনে নির্দেশনা দান, নিয়ন্ত্রণ
এবং সমন্বয় করে থাকে।
এইচ. বি ট্রেকার বলেন, প্রশাসন হচ্ছে চিন্তা, পরিকল্পনা এবং কার্যক্রমের এমন এক সৃজনশীল প্রক্রিয়া, যা কোনো
প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যাবলীর সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। এই প্রক্রিয়ায় জনগণের সাথে কাজ করার জন্য লক্ষ্য
নির্ধারণ, দায়িত্ব বন্টন, সাংগঠিক সম্পর্ক স্থাপন, কর্মসূচি পরিচালনা এবং সম্পাদিত কার্যাবলীর মূল্যায়ন করা হয়।
এল. ডি হোয়াইটের মতে, প্রশাসন হচ্ছে এমন একটি কলা, যার মাধ্যমে কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যার্জনের নিমিত্তে মানুষের
কার্যাবলীকে নির্দেশনা প্রদান, নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করা হয়।
সূতরাং প্রশাসন হলো এমন একটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ
গ্রহণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে।
৯.১.২ সমাজকল্যাণ প্রশাসন
সমাজকল্যাণ প্রশাসন পেশাদার সমাজকর্মের একটি সহায়ক পদ্ধতি। সমাজকল্যাণ অনুশীলনের মৌলিক পদ্ধতিগুলো
বাস্তবায়নে নিয়োজিত এজেন্সি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য পরিচালিত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিকে
সমাজকল্যাণ প্রশাসন হিসেবে নির্দেশ করা হয়ে থকে যা প্রত্যক্ষভাবে সমাজকল্যাণ বা সমাজসেবামূলক কার্যাবলীর সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার যথাযথ সমাধান, জনকল্যাণমূলক সেবার প্রবর্তন এবং সামাজিক
নীতিকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা, নীতি ও মূল্যবোধের আলোকে পরিচালিত প্রশাসন ব্যবস্থা হলো
সমাজকল্যাণ প্রশাসন।
ডি. পাল চৌধুরী সমাজকল্যাণ প্রশাসনের সংজ্ঞায় বলেন, সমাজকল্যাণ প্রশাসন বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়,
যেখানে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কার্যাবলী বাস্তবায়নের পেশাগত
যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। সামাজিক নীতি সমাজসেবায় রূপান্তরের প্রক্রিয়া হিসেবেও একে আখ্যায়িত করা যায়।
রাসেল এইচ. কার্জ এর মতে, সমাজকল্যাণ প্রশাসন সামাজিক নীতিকে সমাজসেবায় রূপান্তরের এমন এক বাস্তব
অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সেবা, যার দ্বারা নীতি বা পদ্ধতি সংশোধিত হয়।
সুতরাং বলা যায় যে, জনগণের সার্বিক কল্যাণের নিমিত্তে সামাজিক নীতির আলোকে গৃহীত কার্যাবলী ও দায়িত্বের সুসংহত
বণ্টন এবং কার্যসম্পাদন প্রক্রিয়াই হলো সমাজকর্ম প্রশাসন। আর এ কার্যসম্পাদনের সকল স্তরে যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ,
পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নে সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা, কৌশল, নীতি ও মূল্যবোধ অনুশীলিত হয়।
সারসংক্ষেপ
প্রশাসন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও নীতিমালা নির্ধারণ এবং লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য
পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন করা হয়। অন্যদিকে সমাজকল্যাণ প্রশাসন হলো সামাজিক নীতিকে
সমাজসেবায় রূপান্তর করে তার মূল্যায়ন ও সংশোধন করার সুচিন্তিত এবং সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া। সমাজকর্মের সহায়ক
পদ্ধতি হিসেবে সমাজকল্যাণ প্রশাসন সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিসমূহের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের কার্যকর
সহায়তা করে থাকে।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় সমাজকর্ম প্রথম পত্র
ইউনিট নয় পৃষ্ঠা ১৫৬
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সামাজিক নীতিকে সমাজসেবায় রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে কী বলা হয়?
ক) সামাজিক প্রশাসন খ) সমাজকল্যাণ প্রশাসন
গ) সমষ্টি উন্নয়ন প্রক্রিয়া ঘ) সমষ্টি সংগঠন প্রক্রিয়া
২। কোন উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে মানুষের কার্যাবলীকে প্রশাসনÑ
র. নির্দেশনা প্রদান করে রর. নিয়ন্ত্রণ করে ররর. সমন্বয় সাধন করে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
পাঠ-৯.২ সমাজকল্যাণ প্রশাসনের উপাদান (ঊষবসবহঃং ড়ভ ঝড়পরধষ ডবষভধৎব অফসরহরংঃৎধঃরড়হ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৯.২.১ সমাজকল্যাণ প্রশাসনের উপাদানগুলো কী তা জানতে পারবেন এবং বর্ণনা করতে পারবেন।
৯.২.১ সমাজকল্যাণ প্রশাসনের উপাদান
সমাজকল্যাণ প্রশাসনের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো সামাজিক নীতিকে সমাজসেবায় রূপান্তর করা। আর এ প্রক্রিয়া
সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যম হলো সমাজকল্যাণ প্রশাসনের উপাদান। এসব উপাদান একে অপরের সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত
হয়ে সমাজকল্যাণ প্রশাসনকে কার্যকর ও গতিশীল করে তোলে। নি¤েœ সমাজকল্যাণ প্রশাসনের উপাদানসমূহ আলোচনা
করা হলো :
১) কর্মসূচি : সমাজকল্যাণ প্রশাসনের অন্যতম উপাদান হলো প্রোগ্রাম বা কর্মসূচি। সমাজকল্যাণ প্রশাসনের সামাজিক
নীতিকে সমাজসেবায় পরিণত করার লক্ষ্যে নানারকম কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। মূলত এজেন্সির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের
উপর ভিত্তি করে প্রণীত কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের উপর প্রশাসনের সফলতা নির্ভর করে।
২) অর্থ ও বাজেট : যেকোনো প্রশাসনের জন্য অর্থ অপরিহার্য উপাদান। অর্থ ব্যতীত প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেমন
সম্ভব নয়, তেমনি অর্থের যথাযথ ব্যবহার ছাড়া প্রশাসন চালানোও অসম্ভব। বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে অর্থের যোগান,
আয়-ব্যয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। বিধায় অর্থ ও বাজেট সমাজকল্যাণ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
৩) কর্মী : প্রশাসনের অপরিহার্য উপাদান হলো কর্মী। দক্ষ ও সক্রিয় কর্মীবাহিনী ছাড়া প্রশাসন ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ে।
প্রশাসনে পেশাদার ও অপেশাদারকর্মী নিয়োজিত থাকেন। প্রশাসনের উদ্দেশ্য অর্জন, কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ প্রশাসন
প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দক্ষ কর্মীবাহিনী
একান্ত আবশ্যক।
৪) কার্যকর সাংগঠনিক কাঠামো : সুষ্ঠু ও কার্যকর সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় উপযুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা
সম্ভব। এই সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় প্রশাসনের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সকল পর্যায়ে যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে
কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব।
৫) জনসংযোগ : সমাজকর্মের সেবা কর্মসূচি জনগণের কল্যাণে নিবেদিত। এ কর্মসূচি সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট
যথাযথভাবে পৌঁছানোর জন্য জনসংযোগ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সেবা কর্মসূিচর যথাযথ ব্যবহার ও কর্মসূচি সম্পর্কে
জনগণকে অবহিতকরণ, জনসমর্থন যাচাই, আগ্রহ সৃষ্টি ও সমধর্মী প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনের
ক্ষেত্রে জনসংযোগ সমাজকল্যাণ প্রশাসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট নয় পৃষ্ঠা ১৫৭
৬) ভৌত অবকাঠামো : ভৌত অবকাঠামো সমাজকল্যাণ প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভৌত অবকাঠামো
ব্যতীত প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে বিভিন্ন কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ ও সম্পন্ন করতে পারেনা। ভৌত অবকাঠামোর মধ্যে অফিস
কক্ষ/ভবন, আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় উপকরণাদি, যোগাযোগের জন্য ফোন বা মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট
সংযোগ, ফটোকপি মেশিন, টেলিভিশন প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
৭) পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া : প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য সমাজকল্যাণ প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া
রয়েছে। এসকল পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রশাসনের কার্যাবলী যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হয়।
৮) গবেষণা ও মূল্যায়ন : সমাজকল্যাণ প্রশাসন প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো গবেষণা ও মূল্যায়ন। বিভিন্ন
অবস্থার প্রেক্ষিতে সমস্যা নির্ণয়, সমস্যা সমাধানে নতুন নতুন কৌশল ও পদ্ধতি উদ্ভাবন, এজেন্সির কর্মসূচির লক্ষ্য ও
উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্য জানার জন্য গবেষণা ও মূল্যায়ন
অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের সেবার মান ও কর্মীবাহিনীর দক্ষতা যাচাই এবং এজেন্সির কর্মসূচির সফলতা ও
ব্যর্থতা নিরূপনের জন্য গবেষণা ও মূল্যায়ন অত্যাবশ্যক।
সারসংক্ষেপ
সমাজকল্যাণ একটি সক্ষমকারী পেশা। সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি হিসেবে সমাজকল্যাণ প্রশাসন সামাজিক নীতিকে
সমাজসেবায় রূপান্তর করে থাকে। এক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ প্রশাসনকে সার্বিকভাবে সহায়তায় এর উপাদানসমূহ
সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে। সমাজকল্যাণ প্রশাসনের উপাদানগুলো হলোÑ ১) কর্মসূচি, ২) অর্থসংস্থান ও
বাজেট, ৩) কর্মীবাহিনী, ৪) কার্যকর সাংগঠনিক কাঠামো, ৫) গণসংযোগ, ৬) পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া, ৭) ভৌত কাঠামো
এবং ৮) গবেষণা ও মূল্যায়ন। সমাজকল্যাণ প্রশাসনের উপাদানসমূহ একে অপরের সাথে অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত হয়ে
সমাজকর্ম প্রশাসনকে কার্যকর ও গতিশীল করে তুলতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে থাকে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সমধর্মী প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সমাজকল্যাণ প্রশাসনের কোন উপাদানটি কার্যকর?
ক) কর্মসূচি খ) কার্যকর সাংগঠনিক কাঠামো
গ) জনসংযোগ ঘ) গবেষণা ও মূল্যায়ন
২। সমাজকল্যাণ প্রশাসনের সম্পদ হলোÑ
র. বস্তুগত ও অবস্তুগত রর. আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ররর. মানবীয় ও অমানবীয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
পাঠ-৯.৩ সমাজকল্যাণ প্রশাসনের গুরুত্ব (ওসঢ়ড়ৎঃধহপব ড়ভ ঝড়পরধষ ডবষভধৎব অফসরহরংঃৎধঃরড়হ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৯.৩.১ সমাজকল্যাণ প্রশাসনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
৯.৩.১ সমাজকল্যাণ প্রশাসনের গুরুত্ব
সমাজকর্ম একটি সক্ষমকারী পেশা যা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, মানবিক সম্পর্ক এবং ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের উপর
ভিত্তি করে ব্যক্তিকে সামাজিক ও সমষ্টিগত সন্তুষ্টি এবং স্বাধীনতা লাভে একক বা দলগতভাবে সহায়তা করে থাকে।
এক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ প্রশাসন বহুমুখী কার্যসম্পাদন করে থাকে। সমাজকল্যাণ প্রশাসন সুষ্ঠু ও সুনিয়ন্ত্রিত উপায়ে বিভিন্ন
কার্য সম্পাদন করে প্রতিষ্ঠানের সেবার মানোন্নয়নে সচেষ্ট হয়। এটি একটি সহযোগিতামূলক সেবাকর্ম যা বিভিন্ন কর্মসূচির
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় সমাজকর্ম প্রথম পত্র
ইউনিট নয় পৃষ্ঠা ১৫৮
যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানবকল্যাণে ব্রতী হয়। সমাজকল্যাণ প্রশাসনের কার্যক্রম সম্পকে এম. এন. হুসাইন ও এম.
আলাউদ্দিন বলেন, এটি এমন একটি কার্যক্রম যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি বিভিন্নভাবে দায়িত্ব ভাগ করে নেয়। এটি
সহযোগিতামূলক ও পরিব্যাপক কাজ যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করে এবং প্রত্যেকেই এর দ্বারা প্রভাবিত হয়।
প্রতিষ্ঠানের গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনকল্যাণে মাজকল্যাণ প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে
কতগুলো শিরোনামে এর গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. অনুকুল পরিবেশ তৈরি : সমাজকল্যাণ প্রশাসনের সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রশাসনের অনুকূলে পরিবেশ সৃষ্টি
করা। প্রশাসনের অভ্যন্তরে জটিলতা সৃষ্টি হলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন ব্যাহত হয়। এজন্য প্রশাসন যোগাযোগ,
সমন্বয়, তত্ত¡াবধায়ন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে অনুকূল কর্মপরিবেশ তৈরি করে।
২. এজেন্সির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ : সমাজকল্যাণ প্রশাসন এজেন্সির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে সমস্যা
সমাধানে প্রচলিত সেবাকার্যক্রম বিশ্লেষণ করে এজেন্সির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচি
বাস্তবায়নে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
৩. জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ : সমাজকল্যাণ প্রশাসন লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠীর সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে
পরস্পরের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ভিত্তিতে সক্রিয় অংশগ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে। কেননা লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠীর
সকলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সমষ্টির নিজস্ব সম্পদের সর্বোত্তম
ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সচেষ্ট হয়।
৪. সমন্বয় সাধন : সমাজকল্যাণ প্রশাসন সর্বদা সামাজিক নীতিকে সমাজসেবায় রূপান্তরে সচেষ্ট থাকে। সামাজিক নীতি
বাস্তবায়নের প্রধান উপায় হলো পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। এক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ প্রশাসন এজেন্সির
বিভিন্ন কার্যক্রম ও উপবিভাগ এবং সমষ্টিতে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে থাকে।
৫. দ্ব›দ্ব নিরসন ও সামঞ্জস্য বিধান : সমাজকল্যাণ প্রশাসন এজেন্সিতে কর্মরত কর্মীদের মধ্যকার দ্ব›দ্ব নিরসনে কার্যকর
ভূমিকা পালন করে থাকে। এজেন্সিতে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় কর্মীদের মধ্যে দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয় যা এজেন্সির লক্ষ্য
অর্জনের পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। এছাড়া অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতির সঙ্গে অনেকেই খাপ খাওয়াতে
ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ প্রশাসন এজেন্সির নিয়মনীতি ও কার্যাবলীর সাথে কর্মীদের সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তা করে
থাকে।
৬. নিয়ন্ত্রণ ও উদ্বুদ্ধকরণ : প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সর্বস্তরের কর্মীদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সমাজকল্যাণ প্রশাসনের
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের অভাবে কর্মীদের মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা দেখা দেয়, ফলে সেবার মান ক্ষুন্ন
হয় এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জন ব্যর্থ হয়। এ কারণে প্রয়োজনে কর্মীদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়ে।
আবার অনেক সময় সমাজকল্যাণ প্রশাসন সহকর্মীদের মধ্যে বাস্তবজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এজেন্সির
কার্যাবলীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনুপ্রাণিত করতে প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি, অবসরভাতা, বিনোদনভাতা, বেতন বৃদ্ধিসহ
নানাধরনের প্রেষণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।
৭. পরামর্শ ও তত্ত¡াবধান : সমাজকল্যাণ প্রশাসন জনগণের কল্যাণধর্মী সেবায় নিয়োজিত একটি কর্মপ্রক্রিয়া। সমাজকল্যাণ
প্রশাসন তাই প্রয়োজনে জনগণকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। আবার অনেক সময় সমধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলোকে
প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে থাকে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও কার্যক্রমের যথাযথ তত্ত¡াবধানে সমাজকর্ম প্রশাসনের
গুরুত্ব অপরিসীম। তত্ত¡াবধানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী পরিকল্পনা প্রণীত হচ্ছে কিনা, গৃহীত কর্মসূচি
যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, কর্মীবাহিনী তাদের দায়-দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে কি না তা নিরূপন করা হয়।
৮. বাজেট প্রণয়ন : প্রতিষ্ঠানের বাজেট প্রণয়নে সমাজকল্যাণ প্রশাসনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। একটি নির্দিষ্ট সময়ে
প্রতিষ্ঠানের সেবাদানের যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাই হলো বাজেট। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগ প্রথমে
আলাদা আলদা খসড়া বাজেট তৈরি করে। খসড়া বাজেটের আলোকে বাজেট কমিটি চূড়ান্ত বাজেট প্রণয়ন করে। মূলত
বাজেটের আলোকেই প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ের (সাধারণত এক বছর) জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে।
৯. নথিপত্র সংরক্ষণ : প্রতিষ্ঠানের গঠণতন্ত্র, আয়-ব্যয়ের হিসাব, বার্ষিক রিপোর্ট, কর্মীদের পরিচিতি, দায়িত্ব ও কর্তব্য
পালনের বিবরণীসহ বিভিন্ন নথিপত্র সংরক্ষণে সমাজকল্যাণ প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ধরনের নথি
সংরক্ষণ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে ।
১০. গবেষণা ও মূল্যায়ন : প্রতিষ্ঠানের গৃহীত কর্মসূচি লক্ষ্যদলের চাহিদার পূরণ ও সমাধান কতটা কার্যকর, কর্মসূচির সঠিক
বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে কি না; যদি সম্ভব না হয় তাহলে এর কারণ কী এসব বিষয় যাচাইয়ের জন্য সমাজকল্যাণ প্রশাসন
গবেষণা পরিচালনা করে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কোনো কর্মসূচি পুনরায় গ্রহণ হবে কি না ? কর্মসূচির পরিমার্জন
ও পরিবর্ধন হবে কি না তা মূল্যায়ন করা হয় ।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট নয় পৃষ্ঠা ১৫৯
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা
সমাধানে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে সমাজকল্যাণ প্রশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম।
সারসংক্ষেপ
সমাজকল্যাণ প্রশাসন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানবকল্যাণ সাধনে সচেষ্ট। সমাজকল্যাণ প্রশাসন
বহুমুখী কার্য সম্পাদন করে থাকে। সুষ্ঠু ও সুনিয়ন্ত্রিত উপায়ে বিভিন্ন কর্ম সম্পাদন করে প্রতিষ্ঠানের সেবার মান উন্নয়নে
সামাজিক প্রশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজকল্যাণ প্রশাসনÑ ১) প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিবেশ সৃষ্টি, ২) এজেন্সির
জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, ৩) জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, ৪) সমন্বয় সাধন, ৫) দ্ব›দ্ব নিরসন ও
সামাঞ্জস্য বিধান, ৬) কর্মী নিয়ন্ত্রণ ও অনুপ্রাণিতকরণ, ৭) পরামর্শ ও তত্ত¡াবধান, ৮) বাজেট প্রণয়ন, ৯) নথিপত্র
সংরক্ষণ এবং ১০) গবেষণা ও মূল্যায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সমাজকল্যাণ প্রশাসন সামাজিক নীতিকে রূপান্তর করেÑ
ক) সমাজসেবায় খ) সামাজিক বীমায়
গ) সামাজিক কার্যক্রম ঘ) সামাজিক উন্নয়নে
২। সমাজকর্ম প্রশাসনর. বস্তুগত ও অবস্তুগত রর. পরিব্যাপক কাজ ররর. সকলেই এতে অংশগ্রহণ করে এবং প্রত্যেকেই এর দ্বারা প্রভাবিত হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
পাঠ-৯.৪ সামাজিক কার্যক্রম (ঝড়পরধষ অপঃরড়হ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৯.৪.১ সামাজিক কার্যক্রম ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
৯.৪.১ সামাজিক কার্যক্রমের ধারণা
সামাজিক কার্যক্রম সমাজকর্মের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি সহায়ক পদ্ধতি। সামাজিক কার্যক্রম পরিকল্পিত ও
সুসংগঠিত উপায়ে সমাজ পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া। সমাজে যেসব প্রচলিত অপসংস্কৃতি, কুপ্রথা এবং অব্যবস্থা রয়েছে তা
দূর করে একটি কাঙ্খিত বা বাঞ্ছিত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। শুধু অব্যবস্থা দূর করাই
নয় কীভাবে সমাজকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করা যায় তার জন্য সামাজিক কার্যক্রম বিশেষভাবে পরিচালিত হয়। এ অর্থে
সমাজ উন্নয়ন প্রচেষ্টায় এবং সমাজব্যবস্থাকে গতিশীল করার জন্য সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সাধারণভাবে
সমাজব্যবস্থায় প্রচলিত অনভিপ্রেত অবস্থাকে সচেতন ও সুপরিকল্পিতভাবে পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া হলো সামাজিক
কার্যক্রম।
সমাজকর্ম অভিধানের ভাষায়, সামাজিক কার্যক্রম হলো সামাজিক সমস্যার সমাধান, অন্যায় বা অবিচার সংশোধন,
জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
অৎঃযঁৎ উঁহযঁস এর মতে, “সামাজে বাঞ্ছিত পরিবর্তন আনয়ন অথবা অবাঞ্ছিত পরিবর্তনকে বাধা দেয়ার জন্য গৃহীত
সম্মিলিত প্রচেষ্টাই হলো সামাজিক কার্যক্রম।”
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় সমাজকর্ম প্রথম পত্র
ইউনিট নয় পৃষ্ঠা ১৬০
উপর্যুক্ত সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক কার্যক্রম হলো একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে
সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন অবাঞ্ছিত ও অনাকাঙ্খিত অবস্থার সুপরিকল্পিত পরিবর্তন সাধন করে জনগণের চাহিদার সঙ্গে
সামঞ্জস্য রেখে সামাজিক উন্নয়ন সাধনে প্রচেষ্টা চালানো হয়।
সারসংক্ষেপ
সমাজকর্মের অন্যতম সহায়ক পদ্ধতি হিসেবে সামাজিক কার্যক্রম সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত উপায়ে সামাজিক
পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে। সমাজে প্রচলিত যেসব কুসংস্কার, কুপ্রথা এবং অবাঞ্ছিত অবস্থা রয়েছে তা দূর
করে একটি কাঙ্খিত ও বাঞ্ছিত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে পরিচালিত যৌথ প্রচেষ্টাই হলো সামাজিক কার্যক্রম। মূলত
সামাজিক কার্যক্রম হলো সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত এমন একটি দলীয় প্রচেষ্টা যার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন, সমাজের
প্রয়োজন পূরণ, সামাজিক আইন ও নীতি বাস্তবায়ন, সমাজসংস্কার এবং বাঞ্ছিত পরিবর্তন সাধিত হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সমাজে বিদ্যমান অনভিপ্রেত অবস্থাকে সুপরিকল্পিতভাবে পরিবর্তন করার দলীয় প্রচেষ্টাকে কী বলা হয়?
ক) সামাজিক কার্যক্রম খ) সমাজসংস্কার
গ) সামাজিক প্রশাসন ঘ) সামাজিক আইন
২। সামাজিক কার্যক্রমের লক্ষ্য হলোÑ
র. সামাজিক উন্নয়ন রর. সামাজিক আইন ও নীতি বাস্তবায়ন ররর. সমাজ সংস্কার
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
পাঠ-৯.৫ সামাজিক কার্যক্রমের উপাদান (ঊষবসবহঃং ড়ভ ঝড়পরধষ অপঃরড়হ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৯.৫.১ সামাজিক কার্যক্রমের উপাদানগুলো বর্ণনা করতে পারবেন।
৯.৫.১ সামাজিক কার্যক্রমের উপাদান
সামাজিক কার্যক্রম একটি পরিকল্পিত, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত প্রক্রিয়া, যা কোনো সামাজিক বিষয়ের পরিবর্তন
আনয়নে জনগণের সমর্থন অর্জনের মাধ্যমে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছায়। সামাজিক কার্যক্রমে লক্ষ্য অর্জনের প্রক্রিয়া বহুবিধ
উপাদানের সমষ্টি। নাখান ই. কোহেনের মতে, সামাজিক কার্যক্রমের উপাদান পাঁচটি। যথাÑ ১) গবেষণা, ২) পরিকল্পনা,
৩) জনসমর্থন আদায়, ৪) ব্যাখ্যাকরণ ও ৫) বাস্তবায়ন। আবার স্যোশ্যাল ওয়ার্ক ইয়ার বুক : ১৯৫১ অনুযায়ী সামাজিক
কার্যক্রমের উপাদানগুলো হলোÑ ১) গবেষণা, ২) সমস্যা সমাধান পরিকল্পনা, ৩) জনসমর্থন আদায়, ৪) সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব
উপস্থাপনা এবং ৫) কার্যকরকরণ। সার্বিকভাবে সামাজিক কার্যক্রমের উপাদানগুলো নিচে আলোচনা করা হলো :
১) সমস্যা : সামাজিক কার্যক্রমের অন্যতম উপাদান হলো সমস্যা। যে বিষয়কে কেন্দ্র করে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত
হয় তাকে সামাজিক কার্যক্রমের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। যেমনÑ যৌতুক প্রথা, বাল্যবিবাহ, ইভ টিজিং ইত্যাদি।
২) সমাজকর্মী বা সামাজিক আন্দোলন কর্মী : সামাজিক কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সমাজকর্মী বা সামাজিক
আন্দোলন কর্মী। সামাজিক কার্যক্রমে সমাজকর্মীর ভূমিকা নেতৃত্বদানকারী এবং সচেতনতা সৃষ্টিকারী। সমাজকর্মীকে
এজন্য সামাজিক আন্দোলন কর্মী বলা হয়। সমাজকর্মী ব্যতীত সামাজিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট নয় পৃষ্ঠা ১৬১
৩) সামাজিক গবেষণা : গবেষণা সামাজিক কার্যক্রমের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যখন কোনো বিষয় বা সমস্যাকে কেন্দ্র করে
সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তখন উক্ত বিষয় এবং সংশ্লিষ্ট আরও অনেক বিষয় সম্পর্কে তথ্যের প্রয়োজন
দেখা দেয়। এক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য হতে সমস্যা বা নির্দিষ্ট বিষয়ের গভীরতা, ব্যাপকতা ও গুরুত্ব
অনুধাবন করা যায় এবং সে অনুযায়ী লক্ষ্য অর্জনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।
৪) সমাধান পরিকল্পনা : সামাজিক কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো সমাজ হতে অবাঞ্ছিত ও অনাকাঙ্খিত কুপ্রথা, আচার-আচরণ,
অভ্যাস ও মূল্যবোধের পরিবর্তন সাধন। এক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাবলী বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট বিষয়
বা সমস্যা সম্পর্কে যথাযথভাবে জেনে সমাধান পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কারণ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ব্যতীত লক্ষ্য
অর্জন সম্ভব হয় না।
৫) জনসমর্থন আদায় : সামাজিক কার্যক্রম হলো একটি দলীয় প্রচেষ্টা। জনগণের জন্য জনগণের দ্বারা পরিচালিত কর্ম
প্রক্রিয়া হলো সামাজিক কার্যক্রম। এক্ষেত্রে সমাজে বাঞ্ছিত পরিবর্তন আনতে কর্মসূচির প্রতি জনগণের সমর্থন আদায়
অপরিহার্য উপাদান। সমস্যা ও সমস্যার সমাধান ব্যবস্থার খুটিনাটি সকল দিক সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে করে
তাদের সমর্থন আদায় এবং কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৬) প্রস্তাব উপস্থাপন : গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যা নির্দিষ্টকরণ, সমাধান পরিকল্পনা গ্রহণ এবং
সমস্যা সংশ্লিষ্ট সমাধান কর্মসূচির প্রতি জনসমর্থন আদায়ের সাথে সাথে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব উপস্থাপন
করা সামাজিক কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রস্তাবনা মূলত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপস্থাপনাকেই বুঝায়। সামাজিক
কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে কার্যক্রম পরিচালনাকারীগণ কর্তৃপক্ষের নিকট সুর্নিদিষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপণ
করে থাকেন।
৭) কার্যকরকরণ : সামাজিক কার্যক্রমের সর্বশেষ উপাদান হলো কার্যকরকরণ। সামাজিক কোনো বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন,
জনসমর্থন আদায় এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপণার পরও যদি সেগুলো কার্যকর করা না হয় তাহলে কার্যক্রমের লক্ষ্য
অর্জন সম্ভব হয় না। এজন্য অবশ্যই এগুলো যথাযথভাবে কার্যকর বা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হয়। সামাজিক
কার্যক্রম কার্যকরকরণের দুটি উপায় রয়েছে। যথাÑ সামাজিক আইন ও সামাজিক নীতি প্রণয়ন।
সারসংক্ষেপ
সামাজিক কার্যক্রম একটি সুপরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল কর্মপ্রক্রিয়া যা সমাজ হতে বিভিন্ন অবাঞ্ছিত ও অনাকাঙ্খিত অবস্থা
দূর করে সমাজে বাঞ্ছিত পরিবর্তন সাধন ও কাঙ্খিত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে সামাজিক
কার্যক্রমের কতগুলোা সুনির্দিষ্ট উপাদান পরস্পর অবিচ্ছিন্নভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। সামাজিক কার্যক্রমের
এই উপাদানগুলো হলোÑ ১) সুনির্দিষ্ট বিষয় বা সমস্যা, ২) সমাজকর্মী বা সামাজিক আন্দোলন কর্মী, ৩) সামাজিক
গবেষণা, ৪) সমাধান পরিকল্পনা, ৫) জনসমর্থন আদায়, ৬) যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ও ৭) কার্যকরকরণ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের উপায় কোনটি?
ক) সমাজ সংস্কার খ) সামাজিক আইন
গ) সামাজিক উন্নয়ন ঘ) সামাজিক পরিকল্পনা
২। সামাজিক কার্যক্রমের উপাদান হলোÑ
র. সামাজিক গবেষণা রর. জনসমর্থন আদায় ররর. সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপনা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর

বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় সমাজকর্ম প্রথম পত্র
ইউনিট নয় পৃষ্ঠা ১৬২
পাঠ-৯.৬ সামাজিক কার্যক্রম প্রক্রিয়া (চৎড়পবংং ড়ভ ঝড়পরধষ অপঃরড়হ)
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনিÑ
৯.৬.১ সামাজিক কার্যক্রমের প্রক্রিয়াগুলো কী জানতে পারবেন এবং সেগুলো বর্ণনা করতে পারবেন।
৯.৬.১ সামাজিক কার্যক্রম প্রক্রিয়া
সামাজিক কার্যক্রম একটি সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া। এ প্রাক্রিয়াটি ধারাবাহিক ও সুপরিকল্পিতভাবে সামাজিক অনভিপ্রেত
অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে সামাজিক উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে দলীয়ভাবে প্রচেষ্টা চালায়। এক্ষেত্রে সামাজিক
কার্যক্রম সুর্নির্দিষ্ট ও পর্যায়ক্রমিক কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হয়। আরমান্ডো টি. মরেলস ও ব্রাডফোর্ড
ডবিøউ. শেফর সামাজিক কার্যক্রমের ৯টি প্রক্রিয়া উল্লেখ করেছেন। যথাÑ ১) গবেষণা, ২) শিক্ষা, ৩) সমন্বয় সাধন, ৪)
সংগঠন, ৫) মধ্যস্থতা, ৬) সমঝোতা, ৭) মৃদু শক্তি প্রয়োগ, ৮) সামাজিক আইন ভঙ্গ এবং ৯. যৌথ কার্যক্রম। ভারতের
সর্বদায়া আন্দোলনের কর্মীরা সামাজিক কার্যক্রমের যে সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকেন তা হলোÑ ১) প্রচার, ২)
পরিচিতি, ৩) অধ্যয়ন বা অনুধ্যন, ৪) সভা বা সমিতি, ৫) সেবা, ৬) প্রতিকার, ৭) গঠনমূলক কাজ বা সমষ্টি সেবা এবং
৮) পরিবর্তিত পরিস্থিতি উপযোগী পরিবেশ গঠন। সার্বিকভাবে সামাজিক কার্যক্রমের প্রক্রিয়াসমূহ নিচে আলোচান করা
হলো :
১) অনুভূত প্রয়োজন বা সমস্যা চিহ্নিতকরণ : সামাজিক কার্যক্রম সফল করতে হলে প্রথমেই নির্দিষ্ট বিষয় বা সামাজিক
সমস্যা চিহ্নিত করতে হয়। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় বহুমুখী ও পরস্পর নির্ভরশীল সমস্যা বিরাজমান। এ ধরনের
সমস্যার মধ্যে থেকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বা প্রাধান্য বিস্তারকারী সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান ব্যবস্থা গ্রহণ করে
সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সামাজিক কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য। সমস্যা চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে সমস্যা সম্পর্কিত
জনগণের মতামত, যথাযথ তথ্য সংগ্রহ, শিক্ষিত ও বিশেষজ্ঞ শ্রেণির মতামত গ্রহণ, সরকারি-বেসরকারি রেকর্ড
পর্যালোচনা এবং গণমাধ্যমে সমস্যার তীব্রতা সম্পর্কিত রিপোর্ট প্রভৃতি বিবেচনায় আনতে হয়।
২) গবেষণা : সামাজিক কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যা চিহ্নিতকরণের পর সমস্যা সম্পর্কিত
যথাযথ ধারণা লাভের জন্য তথ্য সংগ্রহ প্রয়োজন। গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে সমস্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে
সমস্যার প্রকৃতি, ধরন, কারণ এবং প্রভাব নির্ণয়ের মাধমে সমাধান পরিকল্পনার নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।
৩) সচেতনতা সৃষ্টি : সমস্যার প্রকৃতি, ধরন, কারণ এবং প্রভাব নির্ণয়ের পর সমস্যার ব্যাপকতা ও প্রভাব সম্পর্কে
জনগণকে অবহিত করে সচেতনতা সৃষ্টি সামাজিক কার্যক্রমের অন্যতম প্রক্রিয়া। জনগণকে সচেতন করার ক্ষেত্রে
সভা-সমাবেশ, সেমিনার, চিত্রপ্রদর্শনী, প্রচারপত্র বিলি, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচারসহ বিভিন্ন
পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
৪) সমাধান পরিকল্পনা : সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাজ হতে দূর করতে যথাযত সমাধান ব্যবস্থা গ্রহণ সামাজিক
কার্যক্রমের অন্যতম প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, দল, সমষ্টি ও প্রতিষ্ঠানের মনোভাব ও চাহিদার
প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সমাধান পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
৫) সংশ্লিষ্ট দল ও গোষ্ঠীর সমর্থন আদায় : সমস্যার ব্যাপকতা, প্রভাব প্রভৃতি সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সরবরাহ করে সমস্যা
মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ ও তার যথাযথ কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে সমস্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দল বা
গোষ্ঠীর সমর্থন আদায় এবং সমস্যা মোকাবিলায় তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সামাজিক কার্যক্রমের অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ পদক্ষেপের ফলে সামাজিক কার্যক্রমের লক্ষ্য অর্জন ত্বরান্বিত হয়। এছাড়া দল ও সমষ্টিতে
অবস্থানরত বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব তাদের মূল্যবান মতামত উপস্থাপন করে কার্যক্রমের উদ্দেশ্য অর্জনে
সহায়তা করে থাকেন।
৬) কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব উপস্থাপন : কোনো বিষয় বা সমস্যা সম্পর্কে জনমত আদায়ের পর জনগণের প্রয়োজনীয়
চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জনসমর্থিত বিষয়াবলী যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করা হয়। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বলতে
প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, নীতি নির্ধারক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বুঝানো
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট নয় পৃষ্ঠা ১৬৩
হয়ে থাকে। সামাজিক কার্যক্রম তখনই সফল হবে যখন যথাযথ কর্তৃপক্ষ উপস্থাপিত বিষয়টি যথার্থ গুরুত্বের সাথে
গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
৭) কার্যক্রম পরিচালনা : কর্তৃপক্ষের নিকট জনসমর্থিত প্রস্তাবনা উপস্থাপনার পর তা অনুমোদনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ
গ্রহণ করা হয়। এ পর্যায়ে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমবেত প্রচেষ্টা চালানো হয় যাতে জনমতের প্রতিফলন ঘটে। সমবেত
প্রচেষ্টার ফলে অনেক সময় গণআন্দোলন বা গণবিপ্লব সংঘটিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন সংগঠন, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক,
যুবসমাজ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের যথাযথ ইতিবাচক ভূমিকা এ পর্যায়ের কার্যক্রম পরিচালনায় যথার্থ সহায়তা করে থাকে।
৮) বাস্তবায়ন : যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রস্তাবনা গৃহীত ও অনুমোদিত হওয়ার পর তা বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে বিষয়টি বাস্তবায়নে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং
প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করা হয়।
৯) মূল্যায়ন : সামাজিক কার্যক্রম প্রক্রিয়ার সর্বশেষ পর্যায় হলো মূল্যায়ন। এ পর্যায়ে কার্যক্রমের সার্বিক লক্ষ্য ও
উদ্দেশ্যের আলোকে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ কতটা কার্যকর হলো তা মূল্যায়ন করা হয়। কার্যক্রমের এ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া
সমস্যা চিহ্নিতকরণ পর্যায় থেকে শুরু হয়ে বাস্তবায়ন পর্যায় পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলমান।
সারসংক্ষেপ
সামাজিক কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত দলীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজে বিরাজমান ক্ষতিকর ও
অনভিপ্রেত প্রথা দূরীকরণ, বাঞ্ছিত পরিবর্তন আনয়ন, প্রশাসনকে প্রভাবিত করে আইন প্রণয়ন ও সংশোধনের মাধ্যমে
সামাজিক উন্নয়ন ও জনসমষ্টির সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্য অর্জনে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে
কতগুলোা সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। সামাজিক কার্যক্রমে অনুসৃত প্রক্রিয়াসমূহ হলোÑ ১) সমস্যা
চিহ্নিতকরণ, ২) সামাজিক গবেষণা, ৩) জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, ৪) সমাধান পরিকল্পনা, ৫) জনসমর্থন আদায়,
৬) নির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন, ৭) কার্যক্রম পরিচালনা, ৮) বাস্তবায়ন ও ৯) মূল্যায়ন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৯.৬
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। মরেলস ও শেফরের মতে সামাজিক কার্যক্রমের প্রক্রিয়া কয়টি?
ক) ৩ টি খ) ৫টি
গ) ৭টি ঘ) ৯টি
২। সামাজিক কার্যক্রম প্রক্রিয়ার কোন পর্যায়ে বিপ্লব সংঘটিত হতে পারে?
ক) সচেতনতা সৃষ্টি খ) জনসমর্থন আদায়
গ) কার্যক্রম পরিচালনা ঘ) বাস্তবায়ন
৩। সামাজিক কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ হলোÑ
র. প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ
রর. আইন প্রয়োগকারী সংস্থা
ররর. সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রধান
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]