সামাজিক নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া
সামাজিক নীতি সামাজিক উন্নয়ন ও কল্যাণের একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। সামাজিক নীতি একটি দেশের দর্পণ
বিশেষ, যার মাধ্যমে উক্ত দেশ বা সমাজের উন্নয়নের বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে। সামাজিক নীতিতে সমাজের সর্বস্তরের
মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে। সামাজিক নীতি যেহেতু সামাজিক উন্নয়নের পথনির্দেশক সেহেতু এখানে
জনসমর্থন ও সহায়ক নেতৃত্বের উপর সর্বাধিক জোর দেয়া হয়। সামাজিক নীতি একটি বহুমুখী জটিল প্রক্রিয়া। কারণ এতে
যেমন বিভিন্ন ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট থাকে তেমনি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিষয়ের উপাদানও সক্রিয়
থাকে। তাই সামগ্রিকভাবে প্রাসঙ্গিক সকল দিক বিবেচনায় এনে জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশার সাথে সঙ্গতি রেখে সামাজিক
নীতি প্রণয়নে কতগুলোা সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। সামাজিক নীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়াসমূহ হলো :
১. নীতির অনুভূত প্রয়োজন নির্ধারণ : কোনো বিষয়ে নীতি প্রণয়ন প্রয়োজন তা নির্ধারণের মাধ্যমেই নীতি প্রণয়ন
প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ শুরু হয়। নীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে থাকে জনগণের সচেতন অংশ এবং জনগণের
স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন দল ও সংস্থা। সাধারণত সরকার নিজ থেকে কোনো বিষয়ে নীতি প্রণয়নের প্রয়োজন অনুভব
করে না; বরং এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় জনমতের চাপ ও প্রত্যাশার মাত্রা সরকারকে নীতি প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ করে।
২. যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ : এটি নীতি প্রণয়নের দ্বিতীয় ধাপ। জনগণের আগ্রহ ও সামাজিক প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে
সামাজিক নীতি নির্ধারণের জন্য যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যথাযথ ও ব্যাপক জরিপ এবং গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের
ওপর ভিত্তি করেই নীতি প্রণয়নের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব।
৩. কমিটি গঠন : এ পর্যায়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে নীতি প্রণয়নের জন্য একটি কার্যকর কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি
সাধারণত দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত হয়। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, অর্থ ও পরিকল্পনা
বিভাগের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠীর সদস্য প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এছাড়াও সাংবাদিক,
সমাজকর্মী, সমাজচিন্তাবিদগণ অন্তর্ভুক্ত থাকেন।
৪. নীতি বিশ্লেষণ : নীতি প্রণয়নের কার্যপ্রণালী স্থির করার পর সে অনুযায়ী গঠিত কমিটি নীতি প্রণয়নের জন্য নীতির
আবশ্যকতা, সামাজিক বাস্তবতা, নীতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, বাস্তবায়ন সম্ভাব্যতা ও সমস্যা, বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপনার নানাবিধ
বিষয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণপূর্বক মতামত প্রদান করেন। পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করেই খসড়া নীতি প্রণয়ন করা হয়।
৫. খসড়া নীতি প্রণয়ন : এ পর্যায়ে কমিটির মতামতের উপর ভিত্তি করে পরীক্ষামূলক খসড়া নীতি প্রণয়ন করা হয়।
এক্ষেত্রে নীতির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য, নীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সম্পদের উৎস্য, কত সময়ে নীতি
বাস্তবায়িত হবে, প্রণীত নীতি জনগণের জন্য কতটুকু কল্যাণ বয়ে আনবে, জনগণ প্রণীত নীতি গ্রহণ করবে কি না তা
নির্দিষ্ট করতে হয়। প্রণীত খসড়া নীতি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করতে হয়।
৬. খসড়া নীতি চূড়ান্ত প্রণয়ন : সামাজিক নীতি প্রণয়নের এ পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরিত খসড়া নীতির
ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, মূল্যায়ন, সংশোধন, সংযোজন ও পর্যালোচনা করে খসড়া নীতি চূড়ান্তভাবে প্রণয়ন করা হয়ে থাকে।
৭. জনসমর্থন আদায়ে আনুসঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ : প্রণীত খসড়া নীতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার জন্য এ পর্যায়ে
ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম যেমনÑ রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সেমিনার, নাটক, বিভিন্ন বøগ ও
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ প্রচারকার্য চালানো হয়ে থাকে। এছাড়া সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের এর মাধ্যমেও প্রচারকার্য
চালানো হয়। এক্ষেত্রে প্রণীত খসড়া নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং ইতিবাচক দিক সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হয়।
৮. নীতির পরীক্ষামূলক অনুশীলন : এ পর্যায়ে খসড়া নীতি পরীক্ষামূলকভাবে অনুশীলন করা হয়। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের
মাধ্যমে নীতি বাস্তবায়নের ফলাফল ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করে এর ত্রæটি-বিচ্যুতি সংশোধনের ব্যবস্থা করা হয়। নীতি
বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখা দিলে তা দূর করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষে নিকট প্রেরণ
করা হয়।
৯. নীতির চূড়ান্ত অনুমোদন : খসড়া নীতিতে যেসকল ত্রæটি বা সীমাবদ্ধতা থাকে তা দূর করে সরকার দেশের সামগ্রিক
উন্নয়নের লক্ষ্যে নীতির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে থাকে।
সারসংক্ষেপ
সামাজিক নীতি সামাজিক উন্নয়ন ও কল্যাণের একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। সামাজিক নীতি একটি দেশের দর্পণ বিশেষ, যার
মাধ্যমে উক্ত দেশ বা সমাজের উন্নয়নের বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে। সামাজিক নীতিতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের আশাআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে। সামাজিক নীতি যেহেতু সামাজিক উন্নয়নের পথনির্দেশক সেহেতু এখানে জনসমর্থন ও
সহায়ক নেতৃত্বের উপর সর্বাধিক জোর দেয়া হয়। সামাজিক নীতি একটি বহুমুখী জটিল প্রক্রিয়া। কারণ এতে যেমন
বিভিন্ন ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট থাকে তেমনি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিষয়ের উপাদানও সক্রিয়
থাকে। সামাজিক নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় কতগুলো সুনির্দিষ্ট পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। পর্যায়গুলো হলোÑ ১) নীতির
অনুভূত প্রয়োজন নির্ধারণ, ২) যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ৩) নীতি প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন, ৪) নীতি বিশ্লেষণ, ৫)
খসড়া নীতি প্রণয়ন, ৬) খসড়া নীতির চূড়ান্ত প্রণয়ন, ৭) জনসমর্থন আদায়ে আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ গ্রহণ, ৮) নীতির
পরীক্ষামূলক অনুশীলন এবং ৯) নীতির চূড়ান্ত অনুমোদন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। সামাজিক নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ কোনটি?
ক) নীতির অনুভূত প্রয়োজন নির্ধারণ খ) যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ
গ) খসড়া নীতি প্রণয়ন ঘ) নীতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ
২। সামাজিক নীতি প্রণয়নে গঠিত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত থাকেনÑ
র. সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা
রর. অর্থ ও পরিকল্পনা বিভাগের প্রতিনিধি
ররর. লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠীর সদস্য
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র