মৌলিক মানবিক চাহিদার ধারণা ও সংজ্ঞা পর্যালোচনা করলে এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা
যায়। মৌলিক মানবিক চাহিদার বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে আলোচনা করা হলো−
প্রথমত: স্বভাবজাত প্রবৃত্তি ও প্রকৃতি হতে মৌলিক মানবিক চাহিদার উদ্ভব। মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা, আত্মপ্রতিষ্ঠা, দৈহিক
বিকাশ ও সামাজিকতা বজায় রাখার জন্য মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের কোনো বিকল্প নেই। এমনকি স্বাভাবিক পন্থায়
এসব চাহিদা পূরণে অসমর্থ হলে অবৈধভাবে মানুষ এসব প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে বাধ্য হয়। যেমনÑমানুষ ভিক্ষাবৃত্তি,
পতিতাবৃত্তি, চৌর্যবৃত্তি প্রভৃতি উপায় অবলম্বন করে অথবা অখাদ্য গ্রহণে ক্ষুধা নিবৃত্তি করে এবং গাছের চাল-বাকল, লতাপাতা এমনকি পশুর চামড়া দ্বারা বস্ত্রের অভাব দূর করে থাকে।
দ্বিতীয়ত: মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন ধরনের হলেও সকল স্থানে, সকল সময়ে, সকল মানুষের জন্য
মৌলিক চাহিদা পূরণ সর্বজনীন ও চিরন্তন। অর্থাৎ এসব চাহিদা পূরণ অভিন্ন এবং জাতি, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সবার জন্য
প্রযোজ্য। কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত, শিক্ষিত, অশিক্ষিত ও অজ্ঞ সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে
পার্থক্য থাকার কারণে চাহিদা মেটানোর প্রক্রিয়াতে কিছুটা তারতম্য ঘটে থাকে।
তৃতীয়ত: যুগপৎভাবে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ বাঞ্ছনীয়। যেমনÑ খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থানের প্রয়োজন পূরণের সাথে
সাথে অন্যান্য সামাজিক প্রয়োজনগুলো পূরণ জরুরি। কারণ কোনো মানুষই স্বয়ংস্পূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে না, যতক্ষণ
না তার মৌলিক ও মানবিক প্রয়োজন গুলো একত্রে পূরণ করা হয়।
চতুর্থত: মানবীয় চাহিদা অনন্য। কেননা মানবীয় চাহিদাগুলো মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে তেমন দেখা যায় না।
প্রকৃতপক্ষে মানবীয় চাহিদাগুলো মানুষকে প্রাণীজগতে এক আলাদা অস্তিত্ব দান করেছে।
পঞ্চমত: সমাজ ও সভ্যতা বিকাশে মৌলিক মানবিক চাহিদা অপরিহার্য। কেননা শিক্ষা, বস্ত্র, আবাসন ইত্যাদি ব্যতীত
সভ্যতা কল্পনা করা যায় না।
ষষ্ঠত: মৌলিক মানবিক চাহিদার পরিপূরণের সুযোগ সমাজে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা আনয়ন করে। অন্যদিকে, এর
অপূরণজনিত কারণে সমাজে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
সপ্তমত: আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র দেশের সকল মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। কেননা প্রতিটি দেশে
উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পর্যালোচনা করলে বলা যায়, মানবজীবনে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের গুরুত্ব অপরিসীম।
১.২.২ মৌলিক মানবিক চাহিদার ধরন
মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী (১৯৬৫) তাঁর গ্রন্থে মানুষের ছয়টি অপরিহার্য
মৌলিক মানবিক চাহিদার উল্লেখ করছেন− ১। খাদ্য (ভড়ড়ফ); ২। বস্ত্র (পষড়ঃয); ৩। আশ্রয় বা আবাসন; ৪।
শিক্ষা ( ৫। স্বাস্থ্য ; ও ৬। চিত্তবিনোদন
বর্তমানে সমাজ বিজ্ঞানিগণ ‘নিরাপত্তা’ কেও অপরিহার্য প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এখন বিশ্বব্যাপী খাদ্য,
বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিত্তবিনোদন, ও নিরাপত্তা - এ সাতটিকে মৌলিক মানবিক চাহিদা হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হয়।
এছাড়া কিছু গৌণ চাহিদা রয়েছে যেগুলো সমাজভেদে অনেক মানুষের পক্ষে পূরণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
যেমনÑ ধর্ম, স্বাধীনতা প্রভৃতি। যদিও সমাজভেদে যৌনচাহিদা, ¯েœহ ও প্রেম-ভালোবাসা ইত্যাদি চাহিদা পূরণের ধরনে
তারতম্য দেখা দিতে পারে, এগুলো সকল মানুষের চিরন্তন মনোদৈহিক চাহিদা। তবে সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে
মৌলিক মানবিক প্রয়োজনসমূহের পরিসর ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের
১৫ (ক, খ ও ঘ) ধারা অনুযায়ী- অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন এবং সামাজিক নিরাপত্তাকে মৌলিক
মানবিক চাহিদা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নিচে মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো বর্ণনা করা হলো−
১। খাদ্য: মৌলিক মানবিক চাহিদার মধ্যে প্রথম এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হলো খাদ্য। মৌলিক মানবিক চাহিদা
হিসেবে খাদ্য বলতে মানবোপযোগী অর্থাৎ মানুষের খাওয়ার উপযোগী
খাদ্যদ্রব্যকে বুঝানো হয়। মানবদেহের গঠন, ক্ষয়পূরণ এবং রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খাদ্য অপরিহার্য। মৌলিক চাহিদা হিসেবে
খাদ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো প্রাক-জন্মাবস্থা হতে মৃত্যু পর্যন্ত খাদ্যের
প্রয়োজন হয়। মানুষ স্বাভাবিক উপায়ে (সামাজিক রীতি ও বিধিনিষেধ অনুযায়ী) খাদ্যের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে অস্বাভাবিক উপায়ে
(সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বা সামাজিক রীতি-নীতি পরিপন্থি
উপায়ে) তা পূরণের চেষ্টা করে। মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা এবং মানবিক
ও দৈহিক বিকাশের জন্য খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্য বলতে সুষম
খাদ্যকে বোঝানো হয়। অন্যদিকে মানবোপযোগী খাদ্য বলতে মানুষের
ধর্ম, বর্ণ, সমাজ, সংস্কৃতি, সামাজিক রীতিনীতি অনুমোদিত সুষম খাদ্যকে (নধষধহপব ফরবঃ) বুঝানো হয়ে থাকে। কারণ
এক সমাজের, ধর্মের বা বর্ণের লোকদের জন্য যা মানবোপযোগী খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত, অন্যকোনো সমাজে, ধর্মে বা
বর্ণে তা নিষিদ্ধ খাদ্য হিসেবে গণ্য হতে পারে।
খাদ্যের উপাদান অনুসারে সমগ্র খাদ্যকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়Ñ আমিষ, শর্করা, ¯েœহ, ভিটামিন লবণ ও পানি।
মানব দেহের রাসায়নিক গঠনের মধ্যেও এ উপাদানগুলো রয়েছে। নানাবিধ খাদ্য হতে দেহ এসব উপাদান পেয়ে
থাকে। যে খাদ্যে শরীরের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি, বিকাশ ও পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান উপযুক্ত পরিমাণে থাকে
এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালরি দেয় তাকে সুষম খাদ্য বলা হয়। সুষম খাদ্যের অভাবে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যহীনতা
দেখা দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যকে আবার তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়− (ক) শরীর বৃদ্ধিকারক ও ক্ষয়পূরক
খাবার যেমনÑ দুধ, ডিম ইত্যাদি; (খ) শক্তিদায়ক খাবার যেমনÑ ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি এবং (গ) রোগ
প্রতিরোধক খাবার যেমনÑ শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি । এছাড়া খাদ্যের উপাদান এবং খাদ্যের কার্যকারিতার উপর
ভিত্তি করে খাদ্যসমূহকে চারটি মৌলিক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমনÑ ১। ¯েœহজাতীয় খাবার, ২। প্রোটিন বা
আমিষজাতীয় খাবার, ৩। শস্যজাতীয় খাবার, ৪। শাক-সবজি ও ফলজাতীয় খাবার।
২। বস্ত্র: মানব সভ্যতার ধারক ও বাহক হিসেবে বস্ত্র হলো দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ
মৌলিক মানবিক চাহিদা। তাছাড়া প্রাকৃতিক প্রতিকূল অবস্থা হতে নিজেদের
রক্ষা করার জন্য মানবজীবনে বস্ত্রের প্রয়োজন। এজন্য খাদ্যের সঙ্গে সামাজিক
জীব হিসেবে মানুষের সামাজিকতা রক্ষার জন্য বস্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রাচীন মানুষের লজ্জা নিবারণে ব্যবহৃত পাতার আবরণের আধুনিক রূপান্তর
হলো বস্ত্র। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ অনাহারে থাকতে পারে, কিন্তু বস্ত্রহীন অবস্থায়
সমাজে একমুহূর্ত বসবাস করতে পারে না। বস্ত্রের ব্যবহারই মানুষকে অন্যান্য
প্রাণী হতে সভ্যতার মর্যাদা দান করেছে। মানুষের সামাজিক সম্পর্ক বজায়
রেখে স্বাভাবিক ও সভ্য জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে বস্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
বস্ত্রের চাহিদা অপূরিত থাকলে মানুষ সামাজিকতা রক্ষা করতে পারে না।
অন্যদিকে, বস্ত্র ব্যতীত মানুষ প্রাকৃতিক প্রতিকূল অবস্থা যেমনÑ বর্ষা ইত্যাদি
হতে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। ফলে বস্ত্রের অভাবে যেমন মানুষের সামাজিকতা রক্ষা তথা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা
ব্যাহত হয়, তেমনি জনস্বাস্থ্যের প্রতিও হুমকির সৃষ্টি হয়। প্রাণিজগতে একমাত্র মানুষের বেলায়ই বস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা
দেখা দেয়। দৈহিক ও সামাজিক প্রয়োজন ছাড়াও বস্ত্রের ধর্মীয় ও নৈতিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই বস্ত্র কেবল
শারিরীক কষ্টই লাঘব করে না বরং ধর্মীয় ও সামাজিক নৈতিকতাও বজায় রাখে। শুধু জীবিত অবস্থাতেই নয়, মৃত্যুর
পরও পৃথিবীর প্রায় সব সমাজে মানুষ বস্ত্র দিয়ে মৃতদেহকে আচ্ছাদনের পর তার সৎকার করে থাকে।
৩। বাসস্থান: বাসস্থান বলতে মানুষের বসবাসের জন্য ঘর-বাড়িসহ কোনো
স্থানকে বুঝানো হয়। মানুষের আদি ও অকৃত্রিম মৌলক প্রয়োজন হলো
বাসস্থান। শুধু মানুষের জন্যই নয়, পশু-পাখিরও আশ্রয় প্রয়োজন।
তাই মৌলিক চাহিদা হিসেবে বাসস্থানের গুরুত্ব ব্যাপক ও বহুমুখী।
প্রথমত, রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, শীত-তাপ প্রভৃতি প্রাকৃতিক পীড়ন ও জীবজানোয়ারের উৎপাত থেকে বাঁচার জন্য বাসস্থানের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, নিরাপদে বিশ্রাম, নিদ্রা ও পারিবারিক জীবন যাপনের জন্য
উপযুক্ত স্থায়ী ও নির্দিষ্ট বাসস্থান আবশ্যক। তৃতীয়ত, মানুষ সামাজিক
জীব, নির্দিষ্ট বাসস্থান ব্যতীত সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। সেজন্য
বাসস্থানকে সমাজের বুনিয়াদ বলা হয়। অনুরূপভাবে নির্দিষ্ট স্থায়ী
বাসস্থান মানুষকে স্থিতিশীল করে মানব সভ্যতার ভিত্তি রচনা করেছে।
চতুর্থত, সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ এবং দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দিষ্ট বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
পঞ্চমত, স্থায়ী বাসস্থান সামাজিক সংহতি ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ধারক ও বাহক। বাসস্থানহীন ভাসমান মানুষ
সামাজিক বন্ধন ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে বলে তারা নানা অপরাধ ও অনাচারের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । ষষ্ঠত, স্বাস্থ্য
রক্ষার জন্য বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। উপযুক্ত ও নিরাপদ বাসস্থানের অভাবে পুষ্টিকর খাবার খেয়েও মানুষ
নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সপ্তমত, ভবিষ্যৎ বংশধরদের সামাজিকীকরণ ও চরিত্র গঠনের জন্যও উপযুক্ত
বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সর্বোপরি, সমাজের মৌল প্রতিষ্ঠান পরিবার, বাসস্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে
উঠেছে। সুতরাং বলা যায়, স্থায়ী আবাস সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি।
৪। শিক্ষা: সুশিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। তাই খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের পরে শিক্ষাকে সারাবিশ্বে অন্যতম মৌলিক মানবিক
চাহিদা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। শিক্ষাই মানুষকে মেধা ও যোগ্যতায় শ্রেষ্ঠত্ব দান করে। বস্তুত, স্কুল-কলেজের
মাধ্যমে তথা আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো বিষয় সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠভাবে জানা বা জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াকে
শিক্ষা বলে। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক উন্নতির সাথে জাগতিক সমস্যা সমাধানে
যে কলাকৌশল মানুষকে সাহায্য করে তাই শিক্ষা। মনীষী ফ্রেডারিক হাবার্টের মতে, শিক্ষা হচ্ছে মানুষের বহুমুখী
প্রতিভা এবং অনুরাগের সুষম প্রকাশ। জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণায় শিক্ষাকে মৌলিক চাহিদার মর্যাদা দিয়ে বলা
হয়েছে, “শিক্ষা মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য
করে- যা তাকে আধুনিক ও উৎপাদনক্ষম করে তুলে এবং
আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মাধ্যমে অন্ন, বস্ত্র, পুষ্টি ও আশ্রয়ের মতো
অপরিহার্য মৌলিক চাহিদাগুলো অর্জনে পারঙ্গম হতে এবং সক্রিয়
ভূমিকা পালনে সহায়তা করে।” পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক ও
পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধানে মানুষকে সক্ষম করার প্রধান
উপায় হলো শিক্ষা। শিক্ষা অন্যান্য মৌলিক চাহিদা হতে ব্যতিক্রম।
কেননা অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে শিক্ষা।
শিক্ষা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং মানব সভ্যতার বিকাশের প্রধান
উপকরণ। মানবসম্পদ উন্নয়নের সর্বোত্তম বিনিয়োগ খাত হলো শিক্ষা।
শিক্ষার্জনের মাধ্যমে মানুষ নিজের প্রতিভা ও ক্ষমতা বিকাশের সুযোগ
লাভ করে। শিক্ষা মানুষকে নিজের ও সমাজের উন্নয়নে অর্থবহ ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তুলে। শিক্ষার অভাবে
অজ্ঞতা, কুসংস্কার প্রভৃতি মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, যার প্রভাবে মানুষ নিজের অধিকার এবং কর্তব্য সম্পর্কে
সচেতন হতে পারে না। তাই বলা যায়, মানুষের সহজাত মানবীয় প্রতিভা ও অন্তনির্হিত সম্ভাবনা বিকাশের মাধ্যম
হলো শিক্ষা।
৫। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল। মানব সমাজ
গঠনে শিক্ষার পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে
কাজ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (১৯৪৮) এর সংজ্ঞানুযায়ী,
“স্বাস্থ্য হলো দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক দিক হতে পরিপূর্ণ
কল্যাণকর অবস্থা। শুধু রোগমুক্ত অবস্থাকে স্বাস্থ্য বলা যায়
না।” তাই স্বাস্থ্য রক্ষা মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম।
মানুষের ব্যক্তিগত ও সামজিক উন্নয়নের প্রধান সহায়ক হচ্ছে
স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্যহীনতার প্রভাবে যেমন মানুষের কর্মক্ষমতা লোপ
পায়, তেমনি মাথাপিছু আয় ও জাতীয় উৎপাদন হ্রাস পায়।
এজন্য স্বাস্থ্যকে ব্যক্তিগত ও জাতীয় সম্পদ হিসেবে আখ্যায়িত
করা হয়। স্বাস্থ্য রক্ষা অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণের
অপরিহার্য পূর্বশর্ত। দেশের আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক উন্নয়নের প্রধান সহায়ক হচ্ছে সুস্থ, সবল ও কর্ম-
নৈপুণ্যসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি। স্বাস্থ্যহীনতার দরুন জনগণের গুণগত মান ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। স্বাস্থ্যহীনতার ফলে
পরনির্ভরশীলতা, ভিক্ষাবৃত্তি, অপরাধ প্রবণতা, শ্রমিকের উৎপাদন ক্ষমতা হাস, আয়ুষ্কাল হ্রাস, দরিদ্রতার প্রসার, শ্রম
বিমুখতা ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়।
৬। চিত্তবিনোদন: নির্মল আনন্দ ও আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা হলো চিত্তবিনোদন। চিত্তবিনোদন আধুনিক শিল্পসমাজের
অন্যতম হাতিয়ার, যা মানুষের কর্মস্পৃহাকে পুনঃউজ্জীবিত করে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫ (গ) উপধারায় যুক্তিসঙ্গত
বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সৃজনশীল জীবনধারা, গঠনমূলক চিন্তা ও মনের খোরাক
জোগায় নির্মল আনন্দ ও চিত্তবিনোদন। মনীষী (১৯৫৬)
চিত্তবিনোদনের সংজ্ঞায় " গ্রন্থে বলেছেন, “চিত্তবিনোদন মানে শুধু সময়ের শূন্যতা পূরণ
নয়, সময় কাটানোও নয়, বরং এর লক্ষ্য হচ্ছে সময়কে অর্থবহ ও জীবন্ত করে তোলা। এজন্য জাতীয় শিক্ষানীতি,
২০১০ এ ‘ব্রতচারী’ শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। নির্মল চিত্তবিনোদনের মাধ্যমে সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ, পরিবর্তিত
পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধান, সুপ্ত প্রতিভা ও নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ, সুস্থ্য দেহ এবং মনের বিকাশ সম্ভব।
সর্বোপরি, সুপ্ত প্রতিভা এবং সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশে মানবজীবনে চিত্তবিনোদনের গুরুত্ব অপরিসীম।
৭। নিরাপত্তা: ‘নিরপত্তা’ প্রত্যয়টির আভিধানিক অর্থ নিরাপদ অবস্থা বা বিপদশূন্যতা। নিরাপদ অবস্থা দু’ধরনের যথাÑ
সামাজিক নিরাপত্তা ও শারীরিক নিরাপত্তা। ব্যক্তির উভয় ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
সামাজিক নিরাপত্তা বিশেষভাবে অর্থনৈতিক সুরক্ষা কার্যক্রম। বিপন্ন মানুষের মৌল চাহিদা পূরণের সহায়তাকল্পে
সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ (ঘ) উপধারায় এর উল্লেখ রয়েছে। এটি
সর্বজনীন নয়। কেননা শুধু বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতিতে প্রবীণ, বিধবা, এতিম, বেকার, প্রতিবন্ধী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা
পেশাগত দুর্ঘটনায় নিপতিত অসহায় ও অবলম্বনহীন মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা দেয়া হয়। অপরদিকে শারীরিক
নিরাপত্তা সর্বজনীন প্রয়োজন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল বয়সের সব মানুষের শারীরিক আঘাত তথা ক্ষতি থেকে
বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। আমাদের সংবিধান এবং আইনেও আপামর সকল নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের
স্বীকৃতি রয়েছে। শারীরিক আঘাত বা শারীরের জন্য অন্য কোনো প্রকার ক্ষতিকর কারণে মানুষ পঙ্গু, অক্ষম এমনকি
মৃত্যুবরণ করতে পারে। তাই সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য নিরাপত্তা একটি মৌলিক চাহিদারূপে স্বীকৃত।
সারসংক্ষেপ
সামাজিক জীব হিসেবে জীবন চলার পথে মানুষের চাহিদা অগণিত। কিন্তু কিছু কিছু চাহিদা বিশ্বের সব মানুষের
সবসময়ের। এগুলোকে মৌলিক মানবিক চাহিদা হিসেবে গণ্য করা হয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য,
চিত্তবিনোদন ও সামাজিক নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অগ্রগণ্য। সত্যিকার অর্থে, মানুষ এগুলো
পূরণের কাজেই জীবনভর ব্যতিব্যস্ত থাকে। আহার, আশ্রয় আর চিকিৎসা সকল প্রাণীর মৌলিক চাহিদা হলেও
এগুলোর সাথে শিক্ষা, বস্ত্র ও সামাজিক নিরাপত্তা মানুষের অগ্রাধিকারভিত্তিক মানবীয় চাহিদা।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। সামাজিক নিরাপত্তা মানুষের জন্যে একটিক) জৈবিক চাহিদা খ) সামাজিক চাহিদা
গ) উভয়ই ঘ) কোনটাই নয়
২। বাংলাদেশের সংবিধানের কততম অনুচ্ছেদে মৌলিক মানবিক চাহিদা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে?
ক) ১০ তম খ) ১৫ তম
গ) ১৮ তম ঘ) ২০ তম
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র