বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী কিন্তু নারীর প্রতি সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রথাগত মূল্যবোধ ও
সংস্কার এবং কালের আবর্তে চলে আসা রীতি বর্তমান প্রেক্ষাপটেও নারীকল্যাণ ও নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করে চলছে। প্রথাগত সামাজিক কিছু সংস্কার, রীতি-নীতি ও অনুশাসনের বেড়াজালে নারী নানামুখী সমস্যার আবর্তে
জড়িত। যৌতুক হচ্ছে এদেশের নারীসমাজের জন্য এক ভয়াবহ ও নির্মম প্রথা যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। অতীতে একে
পণপ্রথা বলা হত এবং বর্তমানে পরিবর্তিত রুপে যৌতুকপ্রথা হিসেবে পরিচিত। যৌতুকপ্রথার পটভূমি বিশ্লেষণ করলে
দেখা যায়, হিন্দুসমাজ থেকে এর উৎপত্তি। হিন্দু আইনে পৈত্রিক সম্পত্তিতে কন্যার উত্তরাধিকার স্বীকৃতি না থাকায় কন্যা
পাত্রস্থ করার সময় নগদ অর্থ ও দ্রব্যসামগ্রী দেয়ার প্রথা হিন্দুসমাজে ঐতিহ্যগতভাবে চলে এসেছে। সময়ের আবর্তে তা
পুরো সমাজব্যবস্থায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং সর্বনাশা রূপ ধারণ করেছে। মূলত যৌতুক একটি সামাজিক কুপ্রথা, যাতে কণ্যা
পাত্রস্থ করার সময় কনে ও বরপক্ষের মধ্যে দরকষাকষির মাধ্যমে বরপক্ষকে নগদ অর্থ, দ্রব্যসামগ্রী, অলঙ্কার বা অন্যকোনো
আর্থিক সুবিধাদানে কন্যাপক্ষকে বাধ্য করা হয়। সাধারণ কথায়, বিয়ের সময় কন্যাপক্ষ বরপক্ষকে বা বরপক্ষ কন্যাপক্ষকে
ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে যে উপঢৌকন দিয়ে থাকে তাকে যৌতুক বলে। অনেকেই যৌতুককে ডিমান্ড বা দাবী বলে উল্লেখ
করেন। ১৯৮০ সালের অনুসারে যৌতুক বলতে “বিবাহে এক পক্ষ কর্তৃক অপর পক্ষকে অথবা
বিবাহের কোনো এক পক্ষের পিতামাতা কর্তৃক বা অন্য যে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অপর পক্ষকে বা অপর কোনো ব্যক্তিকে,
বিবাহকালে বা বিবাহের পূর্বে বা পরে যে কোনো কালে উক্ত পক্ষগণের বিবাহের পণ হিসেবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রদত্ত
বা প্রদান করতে সম্মত যে কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে বুঝায়।”
৩.৯.২ যৌতুকের কারণ
১. পিতৃতান্ত্রিক ভাবাদর্শ: এদেশের সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। পুরুষশাসিত এই সমাজব্যবস্থায় পুরুষ পরিবারের প্রধান
হিসেবে নারীর উপর আধিপত্য কায়েম করে। সমাজব্যবস্থায় পুরুষ অধিক মর্যাদাসম্পন্ন এবং নারী নি¤œ মর্যাদার গৌণ
সত্ত¡া বিশেষ। পিতৃতান্ত্রিক ভাবাদর্শে বিয়েই নারীর জীবনের মর্যাদার উত্তরণ ও সবচেয়ে সুনিশ্চিত বিবেচিত হয় এবং
কন্যার বাবা-মা সুপাত্র লাভের আশায় যৌতুক প্রদানের মনোভাব পোষণ করে এবং যৌতুক দিয়ে থাকে।
২. ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা: অতীতকাল হতেই সমাজে যৌতুকের প্রচলন রয়েছে, সামাজিক অনুমোদন রয়েছে এবং
সামাজিক অনুশাসনের একটি অংশ হওয়ায় বিয়েতে যৌতুককে সঙ্গত মনে করা হয়। নারীর প্রতি অবজ্ঞা, অবহেলা,
পৈত্রিক উত্তরাধিকার স্বীকৃত না হওয়া এবং স্বামীর উপর জীবনব্যাপী নির্ভরশীল থাকবে বিধায় নারীকে পাত্রস্ত করাতে
যৌতুক প্রথার প্রচলন হয় ।
৩. দারিদ্র্য: দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা যৌতুকের অন্যতম কারণ। অর্থনৈতিক দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় দরিদ্র
পরিবারের ছেলেদের বিয়ে দিয়ে আর্থিক দুর্দশা লাঘবের প্রবণতা লক্ষণীয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বেকার যুবক অর্থ
প্রাপ্তির প্রত্যাশায় যৌতুকের জন্য বিয়ে করে থাকে।
৪. আভিজাত্য ও সামাজিক মর্যাদা: অনেক ধনী পরিবার বিয়ের ক্ষেত্রে বংশমর্যাদা ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে
বিয়েতে যৌতুক দেয়া-নেয়া করে থাকে। তাদের ধারণা বিয়েতে পর্যাপ্ত উপঢৌকন দেয়া-নেয়া সম্মান ও আভিজাত্যের
প্রতীক।
৫. কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতার মানসিকতা: এদেশে একশ্রেণির কন্যা দায়গ্রস্ত পিতামাতার মধ্যে বিয়েতে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ ও
উপঢৌকন প্রদান করে বর ক্রয়ের মানসিকতা পরিলক্ষিত হয়। ভাল বর প্রাপ্তি কিংবা মেয়ে অধিক বয়সী বা অসুন্দরী
হলে মেয়ের বাবা-মার মধ্যে এ ধরনের মানসিকতা লক্ষণীয়।
৬. সামাজিক রেওয়াজ: যৌতুক এখন সামাজিক রেওয়াজ এ পরিণত হয়েছে। যৌতুক আদান-প্রদান ব্যতীত কোনো বিয়ে
হতে পারে অনেকে তা ভাবতেই পারেন না। সামাজিক কু-প্রথা হিসেবে যৌতুক সমাজের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে।
৭. দুর্নীতি ও কালেটাকার প্রভাব: সমাজে ভয়াবহ দুর্নীতি ও কালোটাকার প্রভাবে এক শ্রেণি অঢেল সম্পত্তির মালিক যারা
যৌতুককে দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ ব্যয়ের একটি খাত মনে করে। বিয়েতে যৌতুক হিসেবে বিপুল অর্থ ব্যয়
করে আভিজাত্য জাহির করে।
৮. হিন্দুধর্মেয় প্রভাব: হিন্দুধর্মের কিছু শাস্ত্রীয় গ্রন্থে যৌতুক প্রদানের কথা বলা আছে। হিন্দু মেয়েদের পিতার সম্পত্তির
উত্তরাধিকার না থাকায় বিয়ের সময় তাদের নগদ অর্থ প্রদানের কথা বলা হয়েছে। হিন্দুশাস্ত্রের প্রভাব মুসলিম
সমাজকে প্রভাবিত করেছে।
৯. যৌতুক বিরোধী সামাজিক আইন বাস্তবায়নে ব্যর্থতা: বিয়েতে যৌতুক বন্ধে ১৯৮০ সালে যৌতুক নিরোধ আইন প্রণয়ন
করা হয়। এই আইন প্রণয়ন করা হলেও এর বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। এই আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও আইন
মেনে চলার অভ্যাস না থাকায় যৌতুক নিরোধ সম্ভব হচ্ছে না।
৩.৯.৩ যৌতুক পরিস্থিতি
যৌতুকের দাবিকে কেন্দ্র করে বিয়ের পরে দাম্পত্য কলহ, স্ত্রী নির্যাতন, স্ত্রী হত্যা, বিবাহবিচ্ছেদ প্রভৃতি ঘটনা প্রায়শই
ঘটছে। পরিবারে শান্তি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিগত
বছর ১৮৭৬ টি যৌতুক সংক্রান্ত নারী নির্যাতনমূলক ঘটনা ঘটেছে। কন্যাদায়গ্রস্ত দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পিতামাতা যৌতুকের
দাবি মেটাতে গিয়ে যথাসর্বস্ব বিক্রি করে দুঃস্থ ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। যৌতুকের লোভে গ্রামীণ সমাজে বাল্যবিবাহ সংঘটিত
হচ্ছে এবং অসম্পূর্ণ মাতৃত্ব ও পিতৃত্ব লাভের হার বাড়ছে।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশে যৌতুক এক সামাজিক কুপ্রথা যেখানে বিয়ের সময় বিয়ের উপঢৌকন হিসেবে কন্যাপক্ষ বরপক্ষকে নগদ
অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র প্রভৃতি দিতে বাধ্য হয়। মূলত প্রাচীন ভারতীয় হিন্দুসমাজ থেকে এই প্রথার উৎপত্তি এবং
বর্তমানে তা পুরো সমাজ জুড়ে বিস্তৃত। যৌতুককে কেন্দ্র করে নিত্য পারিবারিক কলহ, স্ত্রী নির্যাতন ও বিবাহবিচ্ছেদের
ঘটনা ঘটছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.৯
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। যৌতুককে কী বলা হয়?
ক) সামাজিক কু-প্রথা খ) সামাজিক মূল্যবোধ
গ) সামাজিক নিয়ম ঘ) সামাজিক আইন
২। কোথা থেকে যৌতুকের উৎপত্তি হয়েছে?
ক) পাশ্চাত্য দর্শন থেকে খ) প্রাচীন ভারতীয় হিন্দু সমাজ থেকে
গ) মুসলিম বিবাহ রীতিতে ঘ) বহু যুগ পূর্বে
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র