বাল্যবিবাহ ধারণাটি সম্পর্কে লিখ বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের কারণসমূহ ব্যাখ্যা কর বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের পরিস্থিতি বর্ণনা কর

ঐতিহাসিকভাবে পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও পুরুষশাসিত সামাজিক অনুশাসনের মাধ্যমে নারী সমাজে নিগৃহীত ও
অবহেলিত হয়ে আসছে। নারীর প্রতি সমাজের হীন দৃষ্টিভঙ্গি নারী-পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠা ও নারীকল্যাণের পথে অন্তরায়।
সামাজিক কিছু কু-প্রথা, প্রচলন, রীতিনীতি, অভ্যাস নারী নির্যাতনের পথ
প্রশস্ত করে এবং নারী উন্নয়ন ও নারী-পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠায় বিঘিœত করে।
এদেশে প্রচলিত বাল্যবিবাহ নারীর জন্য এমনই এক অভিশাপ। শারীরিক ও
মানসিকভাবে বিয়ের জন্য উপযুক্ত হবার পূর্বেই জোরপূর্বক নারীকে বিয়ে দেয়া
হয়। ফলশ্রæতিতে নারীর শরীরতাত্তি¡ক জটিলতা সৃষ্টি হতে থাকে এবং
মানসিকভাবেও সে নতুন পরিবেশে নতুন জীবনে নিজেকে পুরোপুরি মানিয়ে
নিতে পারে না। মূলত শরীরতাত্তি¡ক ও মনস্তাত্তি¡কভাবে উপযুক্ত হবার পূর্বেই
অল্প বয়সে কোনো নারীকে বিয়ে দেওয়ার যে সামাজিক প্রচলন রয়েছে তাকেই
বলা হয় বাল্যবিবাহ। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে ১৮ বছরের নিচে কোনো
নারীকে বিয়ে দেওয়া হলে তাকে বাল্যবিবাহ বলে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে
নারী বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হলেই পারিবারিকভাবে বিয়ে দেওয়ার জোর প্রচলন রয়েছে যদিও সেই সময় সে বিয়ে ও দাম্পত্যজীবনের জন্য অপ্রস্তুত থাকে।
৩.১১.২ বাল্যবিবাহের কারণ
এদেশের প্রচলিত সামাজিক কিছু রীতিনীতি বাল্যবিবাহকে উসকে দেয়। বাল্যবিবাহের সাথে প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্নভাবে বেশ কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে। বাল্যবিবাহের কারণসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো:
১. দারিদ্র্য: দারিদ্র্যকে বাংলাদেশের বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ বলা যেতে পারে। দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসরত পরিবারসমূহে জীবন নির্বাহ অত্যন্ত দুরুহ ব্যাপার। কিশোরী মেয়ে পরিবারের নির্ভরশীল সদস্য হওয়ায় তার ভরণ পোষণ পরিবারের জন্য বোঝাস্বরুপ। ফলে অতিদ্রæত বিয়ের মাধ্যমে নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টা করা হয়।
২. সামাজিক রেওয়াজ: আবহমানকাল ধরে এদেশের নারীর বয়স কৈশোরে পদার্পণের সাথে সাথে বিয়ের প্রচলন চলে আসছে। সামাজিক বিশ^াস যাতে নারী রজঃস্বীলা হওয়ার সাথে সাথে তার বিয়ে দেওয়া উত্তম। সুতরাং সামাজিক রেওয়াজের বশবর্তী হয়ে বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়।
৩. নিরাপত্তা: এদেশের অপরাধপ্রবণ সামাজিক পরিবেশে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি পরিবারের কাছে অত্যন্ত উদ্বিগ্নের।
মেয়ের বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাবা-মার মধ্যে তার নিরাপত্তাজনিত দুঃশ্চিন্তা বাড়তে থাকে এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে তারা বাল্যবিবাহকেই বেছে নেয়।
৪. ভাল বর পাওয়া: এদেশের অনেক অভিভাবকরা বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান পেলে মেয়েকে বিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে মেয়ের বয়সও তারা বিবেচনায় নেয় না। উপযুক্ত পাত্র হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে বাল্যবিবাহ প্রদান করে।
৫. সামাজিক ভ্রান্ত ধারণা: এদেশের গ্রামাঞ্চলে তীব্রভাবে কথিত আছে মেয়েরা ‘কুড়িতেই বুড়ি’। বয়স হলে তার জন্য
আর উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যাবে না। সুতরাং উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান পেলে বাল্যকালেই বিয়ে দেওয়া শ্রেয় মনে করে।
৬. প্রথাগত নারীত্ব ধারণা: পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় প্রথাগতভাবে মনে করা হয় নারীর স্থান গৃহে এবং নারীর মূল কাজ সাংসারিক কর্ম সাধন করা। নারীর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থনৈতিক উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত
হওয়া নারীসুলভ নয়। নারীর নৈপুণ্যের ক্ষেত্র তার সংসার। সুতরাং যত দ্রæত তার বিয়ের ব্যবস্থা করে সংসারী করা যায় ততই মঙ্গল।
৭. শিক্ষায় অনগ্রসরতা: শিক্ষাক্ষেত্রে নারী অনগ্রসর। পরিবার থেকে ছেলেদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করা হয়।
মেয়েদের ঘরকন্নার কাজ শিখতে বলা হয়। পরিবারের ছেলে সন্তানেরা নিজেদের লেখাপড়ায় ব্যস্ত বা আর্থিক খাতে
ব্যস্ত থাকলেও মেয়েদের এরূপ সুযোগ সীমিত। তাই ভালপাত্রের সন্ধান পেলেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।
৮. বাবা-মার অজ্ঞতা: বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বাবা-মার অজ্ঞতা ও প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা অন্যতম কারণ। বাবা-মা বর্তমান জেন্ডার ভ‚মিকা বিষয়ক অজ্ঞ হলে এবং প্রচলিত ভ্রান্তধারণার বশবর্তী হয়ে থাকলে বাল্যবিবাহ প্রদান করে থাকে।
৩.১১.৩ বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি
স্বাধীনতার পর থেকে নব্বইর দশক পর্যন্ত এদেশে বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ছিল। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি
পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা, জনমত গঠন ও পরিবর্তিত যুগের প্রেক্ষাপটে জনসাধারণের মধ্যে তুলনামূলক সচেতনতা সৃষ্টি
হয়েছে এবং বাল্যবিবাহের হার কমে আসছে। কিন্তু এখনো প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বাল্যবিবাহ সংঘটিত হচ্ছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে উপযুক্ত হবার পূর্বেই কিশোরী-তরুনী মেয়েরা বিয়ের পিড়িতে বসতে বাধ্য হচ্ছে এবং দাম্পত্য পীড়নের শিকার হচ্ছে।
সারসংক্ষেপ
১৮ বছর বয়সের নিচে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিয়ের জন্য উপযুক্ত হবার পূর্বেই নারীকে বিয়ে দেয়া হলে তাকে
বাল্যবিবাহ হিসেবে অভিহিত করা হয়। বাল্যবিবাহের ফলস্বরূপ নারীরা শারীরিকভাবে পীড়নের শিকার হয় এবং মনস্তাত্তি¡কভাবে নতুন জীবনে সহজে খাপ-খাওয়াতে পারে না। বাল্যবিবাহের শিকার নারীর জীবন ক্রমশ দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.১১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। কত বছরের নিচে কোনো মেয়ের বিয়ে হলে তা বাল্যবিবাহ হিসেবে বিবেচিত হবে?
ক) ১৬ বছর খ) ১৮ বছর
গ) ২০ বছর ঘ) ২২ বছর
২। বাল্যবিবাহের ফলে কী ঘটতে পারে?
ক) নারী শারীরিক জটিলতা খ) পারিবারিক সমৃদ্ধি
গ) পারলৌকিক মঙ্গল ঘ) সামাজিক সম্মান প্রাপ্তি

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]