পশ্চিমের উন্নত সমাজে সামাজিক সমস্যা হিসেবে মাদকাসক্তির উৎপত্তি ঘটলেও দ্রæত ভয়াবহ এই সমস্যাটি
পৃথিবীর অন্যান্য উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে ছড়িয়ে পড়ে যার আওতা হতে বাদ যায়নি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের
সাম্প্রতিক সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে মাদকাসক্তি অন্যতম যা সমাজজীবনে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
পৃথিবীর প্রায় সকল সমাজেই সাম্প্রতিক সময়ে মাদকাসক্তি এক বিশেষ ও ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
অতীতে সাধারণ ও ঐতিহ্যগত নেশাদ্রব্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ছিল কিন্তু আশির দশকের শুরু থেকে মাদকাসক্তি প্রকট
আকার ধারণ করে এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা, সামাজিক অস্থিতিশীলতা এবং নানাবিধ সামাজিক অনাচারের সাথে সমস্যাটির
সংশ্লিষ্টতা পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত মাদকাসক্তি হলো মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি। মাদকদ্রব্যের প্রতি কোনো ব্যক্তির
ক্রমাগত নির্ভরশীলতাকেই মাদকাসক্তি বলে ধরা হয়। মাদকাসক্তি মূলত এক
ধরনের অবস্থা যেখানে ব্যবহৃত মাদকের প্রতি ব্যবহারকারী শারীরিক ও
মানসিক উভয় দিক থেকে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, মাদকের প্রতি সে তীব্র
আকর্ষণ অনুভব করে এবং এরই সাথে মাদক গ্রহণের মাত্রা বা পরিমাণ দিনে
দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত মাদকাসক্তির সংজ্ঞায় বলা হয়েছেÑ “নেশা বা
মাদকাসক্তি হচ্ছে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর এমন একটি মানসিক বা
শারীরিক প্রতিক্রিয়া যা জীবিত প্রাণী ও মাদকের মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি
হয়।” অর্থাৎ মাদকাসক্তি হলো মাদক গ্রহণের শারীরিক ও মানসিক
বাধ্যতামূলক তীব্র আকাঙ্খা যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অস্বাভাবিক দৈহিক ও
মানসিক অনুভ‚তি প্রাপ্ত হয় এবং তা পাবার ইচ্ছার জন্য মাদকদ্রব্যের প্রতি
নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
৩.১৩.২ মাদকাসক্তির কারণ
মাদকাসক্তির ক্ষেত্রে কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের জন্য কোনো একক কারণ দায়ী না। বাংলাদেশের মাদকাসক্তি ও
মাদকদ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহার ও এর প্রভাব প্রকট হওয়ার পশ্চাতে বহুবিধ কারণ বিদ্যমান। সামাজিক, অর্থনৈতিক,
মানসিক, নৈতিক বহুবিধ কারণেই ব্যক্তি মাদকাসক্ত হতে পারে। মাদকাসক্তির কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
১. ভৌগোলিক অবস্থান ও মাদকের সহজলভ্যতা: এদেশের ভৌগোলিক অবস্থানকে বর্তমান সময়ে ভয়াবহ মাদক সমস্যার
অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের পাশর্^বর্তী দেশসমূহে ব্যাপক ভিত্তিতে মাদক উৎপন্ন হয়
এবং খুব সহজেই সীমানা পেরিয়ে তা এদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশ মাদক চোরাচালানের রুট হিসেবেও ব্যবহৃত
হয়। মাদকাসক্ত ও যে কোনো সাধারণ ব্যক্তির কাছে মাদক এক সহজলভ্য পণ্য।
২. দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও হতাশা: তৃতীয় বিশে^র দেশ হিসেবে এদেশের বহু মানুষ আর্থিক দৈন্য ও বেকারত্বের শিকার।
দারিদ্র্য ও বেকারত্ব মানুষের জীবনে সৃষ্টি করছে হতাশা ও নৈরাশ্য। এই হতাশা ও নৈরাশ্য ভুলে থাকার অভিপ্রায়ে
অনেকেই মাদকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
৩. ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ: বিশৃঙ্খল সামাজিক পরিবেশে মানুষের ধর্মীয় ও
সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে এদেশে অন্যের সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতির সংমিশ্রণ
হচ্ছে। ফলে মূল্যবোধগত দ্ব›দ্ব তৈরি হচ্ছে যা মাদকাসক্তির ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করছে।
৪. হীনমন্যতা ও মনস্তাত্তি¡ক সংকট: জটিল আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধানজনিত কারণে ব্যক্তির
মাঝে হীনমন্যতা ও মনস্তাত্তি¡ক সংকট তৈরি হচ্ছে। ফলে ব্যক্তি নিজেকে অতি হীন মনে করছে এবং তা থেকে পরিত্রাণ
পেতে চাইছে। আর তাই মাদকে আশ্রয় নিয়ে ব্যক্তি পরিস্থিতি থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাইছে। তবে এর ফলাফল যে
মারাত্মক ক্ষতিকর যে তা বুঝতে পারে না।
৫. সঙ্গদোষ ও কৌতূহল: মাদকাসক্তের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গ এবং এর সাথে মনে
স্বাভাবিক কৌতূহলের কারণে অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গদোষ ও নতুন অভিজ্ঞতা প্রাপ্তির ঝোঁক মাদকের
ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে আসক্ত করে তোলে।
৬. পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণহীনতা: যেসকল পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় থাকে না এবং
পারিবারিক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে এবং পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না সে পরিবারের সদস্যদের মাদকাসক্ত হওয়ার
আশংকা থাকে। পারিবারিক ¯েœহ ও ভালবাসার অভাব থেকে ব্যক্তির মধ্যে হতাশা তৈরি হয় যা ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত
করতে পারে।
৭. সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা মাদকাসক্তির প্রকোপ বৃদ্ধির পিছনে
গুরুত্বপূর্ণ এক কারণ হিসেবে বিবেচিত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা জনিত পারিপাশির্^ক অবস্থা সমাজজীবনের নানামুখী
অন্যায়, বৈষম্য, বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য প্রভৃতির কারণে সৃষ্ট হতাশা থেকেও মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
৮. প্রশাসনিক দুর্বলতা ও দুর্নীতি: মাদকদ্রব্য সহজলভ্য এবং অবাধ বেচাকেনা হলেও এক্ষেত্রে প্রশাসনিক দুর্বলতা
লক্ষণীয়। চোরাকারবারীদের সাথে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের যোগ সাজোশ থাকায় মাদকের অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ
করা সম্ভব হচ্ছে না এবং মাদকাসক্তি বেড়ে চলেছে।
৩.১৩.৩ বাংলাদেশে মাদকাসক্তির পরিস্থিতি
মাদকাসক্তি যেমন নীরবে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় তেমনি মাদকদ্রব্যের চোরাচালান একটি দেশের সামগ্রিক
অর্থনৈতিক কাঠামোকে পঙ্গু করে দেয়। বর্তমানে এদেশের প্রায় ৪৬ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। এদের মধ্যে ৪০ ভাগ
হেরোইনসেবী। দেশে মোট যে অপরাধ হয় তার ৩০ শতাংশ মাদক সংশ্লিষ্ট। মাদকদ্রব্যের খরচ যোগাতে গিয়ে মাদকাসক্ত
ব্যক্তিরা মাদকদ্রব্য পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক মাদকাসক্তদের নেশা বাবদ বার্ষিক দু’হাজার কোটি
টাকা অপচয় হয়।
সারসংক্ষেপ
মাদক গ্রহণের তীব্র ইচ্ছা থেকে মাদকদ্রব্যের উপর কোনো ব্যক্তির ক্রমাগত নির্ভরশীলতা ও ক্রমাগত মাদক গ্রহণের হার
বৃদ্ধিকে মাদকাসক্তি বলা হয়। বর্তমানে মাদকাসক্তি বাংলাদেশের এক বড় সমস্যা। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে বিপুল পরিমাণে
মাদক উৎপাদন ও মাদক চোরাচালানের রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার এদেশে মাদককে অত্যন্ত সহজলভ্য করে
তুলেছে এবং বহুবিধ কারণে মাদকাসক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.১৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। মাদকাসক্তি হচ্ছে:
ক) ক্রমাগত মাদকের উপর নির্ভরশীলতা খ) কোনো একদিন মাদক গ্রহণ করা
গ) মাদক স্পর্শ করা ঘ) মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকা
২। কোন দ্রব্যের ব্যাপক চোরাচালানের রুট হিসেবে বাংলাদেশ ব্যবহৃত হয়?
ক) পরমাণু অস্ত্র খ) মাদক
গ) ইলেকট্রিক সরঞ্জামাদি ঘ) খাদ্য দ্রব্য
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র