বর্তমান বিশে^ সমগ্র মানবজাতির জীবন, সভ্যতা ও উন্নয়নের পথে একটি বড় ধরনের হুমকি, আতঙ্ক ও
প্রতিবন্ধক হচ্ছে এইডস, যা ঘাতক ব্যাধি হিসেবে বিশ^ব্যাপী মহামারি আকারে ক্রমান্বয়ে বিস্তার লাভ করছে। ক্রমবর্ধমান
বিশ^ জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে এইচআইভি সংক্রমিত/এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই
ব্যাধির কোনো চিকিৎসা বা প্রতিষেধক নেই এবং এর পরিণতি হচ্ছে নিশ্চিত অকাল মৃত্যু। এই অবাঞ্চিত অকাল মৃত্যুকে
প্রতিহত করতে বর্তমান বিশ^বাসীর নিকট একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছেÑ “এইডস মুক্ত সুস্থ সুন্দর জীবন গঠন”। আর এ জন্য
প্রয়োজন সর্বস্তরের জনগণের সচেতনতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও সার্বিক সহযোগিতামূলক মনোভাব। এইডস এর পূর্ণরূপ হলো
যা সংক্ষেপে নামে পরিচিত। অর্থ অর্জিত,
অর্থ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, অর্থ ঘাটতি এবং অর্থ লক্ষণ। অর্থাৎ অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
ঘাটতির লক্ষণ সমষ্টি হলো সংক্ষেপে ঐওঠ নামক ভাইরাস কোনো
ব্যক্তির শরীরে আক্রমণের ফলে যখন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতির লক্ষণ
সমষ্টি পরিলক্ষিত হয় তখন সেই ব্যক্তি অওউঝ আক্রান্ত হিসেবে বিবেচিত
হয়। সর্বপ্রথম ১৯৩০ সালে আফ্রিকাতে ঐওঠ এর উৎপত্তি ঘটে এবং
১৯৮২ সালের দিকে অওউঝ রোগের নামকরণ করা হয়। মানবদেহের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঐওঠ নামক ভাইরাস দ্বারা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে
পড়লে, মানবদেহ নির্দিষ্ট রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে অক্ষম হয়ে
পড়ে, এইরূপ অবস্থাকে অওউঝ বলা হয়। কোনো ব্যক্তির শরীরে ঐওঠ
পাওয়া গেলেই যে তার অওউঝ হয়েছে তা নয়, ঐওঠ যখন ঐ ব্যক্তির
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ বিনষ্ট করবে তখন সে অওউঝ আক্রান্ত
হিসেবে বিবেচিত হবে।
৩.১৯.২ বাংলাদেশে এইডস বিস্তারের কারণ
বাংলাদেশ অওউঝ সংক্রমণের এক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। বহুবিধ কারণে এদেশে অওউঝ সংক্রমণের আশংকা
রয়েছে। নি¤েœ উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ তুলে ধরা হলো:
১. ভৌগোলিক অবস্থান: ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশ ভারত ও মায়ানমারের অতি নিকট প্রতিবেশী। উক্ত
দেশ দুটির বিপুলসংখ্যক মানুষ ঐওঠ বহন করছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে ভারত ও মায়ানমারসহ নেপাল, থাইল্যান্ড,
সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছে। এর সাথে অবাধে ও অনিয়ন্ত্রিত যৌনকর্মে লিপ্ত
হয়ে বয়ে নিয়ে আসছে ঐওঠ জীবাণু।
২. পতিতাবৃত্তি: বাংলাদেশে বর্তমানে দেড় লাখের মত যৌনকর্মী রয়েছে এবং এদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে
যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের ৬% যৌনকর্মী ঐওঠ সংক্রমিত এবং বিভিন্ন জটিল যৌন রোগে আক্রান্ত। বিভিন্ন শ্রেণির
মানুষ প্রতিদিন এসব যৌনকর্মীদের সাথে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হচ্ছে এবং অনিয়ন্ত্রিত যৌন সংসর্গ ঐওঠ বিস্তার ঘটাচ্ছে।
৩. মাদকাসক্তি: সম্প্রতি দেশে মাদকাসক্তির হার অত্যন্ত আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই সাথে ইনজেকশনের
মাধ্যমে মাদক ব্যবহারের প্রবণতাও উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাদক গ্রহণকারীদের একই সুঁই ভাগাভাগি
করে নেওয়ার প্রবণতা ঐওঠ বিস্তার ঘটাচ্ছে।
৪. অনিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণ: সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ যৌন সংসর্গ ঐওঠ বিস্তার ঘটায়। বর্তমান অনিয়ন্ত্রিত ও
অবাধ যৌন আচরণ আমাদের দেশে অওউঝ বিস্তারে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করছে।
৫. পেশাদার রক্তদাতার বিস্তৃতি: বর্তমানে রক্তদাতাদের মধ্যে মাদকাসক্ত ও পেশাদার রক্তদাতার সংখ্যা উল্লেখজনক।
অথচ এরাই ঐওঠ আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অপরীক্ষিত রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে ঐওঠ বিস্তার
ঘটতে পারে।
৬. পথশিশুদের অপব্যবহার : দেশের প্রায় ৫ লক্ষ পথশিশু প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে মাদকাসক্ত ও বখাটে সন্ত্রাসীদের দ্বারা
যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। সেই সাথে তাদের ঐওঠ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
৭. সচেতনতার অভাব: বর্তমান সময়েও এদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগোণ্ঠীর মধ্যে এইডস সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা ও
সচেতনতার অভাব রয়েছে। প্রতিনিয়ত এরা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণে লিপ্ত হচ্ছে। অওউঝ বিষয়ক অজ্ঞতা এদেশে
অওউঝ সংক্রমণে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখতে পারে।
৩.১৯.৩ এইডস সংক্রমণের বাহন
এইডস হচ্ছে ) দ্বারা সংক্রমিত একটি রোগ। এই ভাইরাস কোনো ব্যক্তির
শরীরে প্রবেশ করলে ধীরে ধীরে ব্যক্তিটি এইডস আক্রান্ত হয়। তিনটি প্রধান কারণে ঐওঠ বা অওউঝ বিস্তার লাভ করে তা
হলো:
ক. ঐওঠ আছে বা অওউঝ রোগীর সঙ্গে অনিরাপদ যৌন সংসর্গের মাধ্যমে;
খ. ঐওঠ জীবাণু বহনকারী রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে;
গ. অনিরাপদ বা ব্যবহৃত সিরিঞ্জের পুনঃব্যবহার মাধ্যমে; এবং
এছাড়াও এইডস আক্রান্ত মা থেকে যে শিশু জন্মলাভ করে সেও এই রোগ আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি রোগাক্রান্ত মায়ের
দুধ পানের মাধ্যমেও দেহে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত, অঙ্গ, ইন্দ্রিয়, কলা অন্যদেহে
প্রতিস্থাপন করলে ঐওঠ জীবাণু সংক্রমিত হয়।
সারসংক্ষেপ
অওউঝ এর পূর্ণরূপ যার অর্থ অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঘাটতির
লক্ষণ সমষ্টি। এটি ঐওঠ ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত একটি রোগ যা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সম্পূর্ণ
ধ্বংস করে ফেলে এবং এর পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যু। এটি মূলত ঐওঠ পজিটিভ ব্যক্তির সাথে অনিয়ন্ত্রিত যৌন সংসর্গ,
রক্ত গ্রহণ ও তার ব্যবহৃত সিরিঞ্জ পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে ছড়ায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.১৯
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। কোন দেশে সর্বপ্রথম অওউঝ এর উৎপত্তি ঘটে?
ক) আফ্রিকাতে খ) আমেরিকায়
গ) ইউরোপে ঘ) এশিয়ায়
২। কত সালে অওউঝ রোগের নামকরণ করা হয়?
ক) ১৯৮০ সালে খ) ১৯৮২ সালে
গ) ১৯৮৪ সালে ঘ) ১৯৮৬ সালে
<
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র