যে কোনো দেশের সামাজিক সমস্যা উদ্ভবের অন্যতম কারণ হলো মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা।
মৌলিক মানবিক চাহিদার যথাযথ পরিপূরণ না হলে যেমন সমস্যার সৃষ্টি হয়, তেমনি স্বাভাবিক উপায়ে মৌলিক চাহিদা
পূরণে ব্যর্থ হয়ে অস্বাভাবিক বা অবৈধ উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে এগুলো পূরণের প্রচেষ্টা থেকেও বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি
হয়। এজন্য সমাজবিজ্ঞানীরা মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতাকে সামাজিক সমস্যার প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত
করে থাকেন। মৌলিক মানবিক চাহিদা অপূরণজনিত কারণে বাংলাদেশে সৃষ্ট সমস্যাবলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা
হলো:
১. পুষ্টিহীনতা (গধষহঁঃৎরঃরড়হ): মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে সৃষ্ট সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো
পুষ্টিহীনতা। সাধারণত খাদ্যে পুষ্টি উপাদানের অভাব, পরিমাণগত স্বল্পতা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কারণে সৃষ্ট অবস্থাই হচ্ছে
পুষ্টিহীনতা। খাবারের ছয়টি উপাদানের যে কোনো একটি খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে বা অনুপস্থিত থাকলে
পুষ্টি-প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে দেহে সে উপাদানের ঘাটতিজনিত রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এরূপ অবস্থাকে পুষ্টিহীনতা
বলে। পুষ্টিহীনতা বলতে কেবল দুর্বল স্বাস্থ্যকেই বোঝায় না। এটি একটি দৈহিক আপেক্ষিক অবস্থা। পুষ্টিহীনতা বলতে
নি¤িœলিখত অবস্থাকে বোঝায়:
ক. কাজ করার সামর্থ্যে ব্যাঘাত ঘটা;
খ. দৈহিক গাঠনিক সম্পূর্ণতার অভাব এবং
গ. দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহের মাঝে গরমিল।
বাংলাদেশে পুষ্টিহীনতার বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। ইইঝ পরিচালিত জরিপ ও জাতীয় পুষ্টি জরিপ অনুসারে এদেশের
শতকরা ৫০ জন শিশু পুষ্টিহীন। প্রতিবছর এ কারণে প্রায় ২ লাখ শিশু মারা যায়। শতকরা ১৫ জন শিশু ভিটামিন এ-এর
অভাবে অন্ধত্ব ও রাতকানা রোগে আক্রান্ত হয়। পুষ্টিহীনতার জন্য ৬০ ভাগ মহিলো রক্তস্বল্পতায় ভোগে এবং অন্য বহু
লোক রিকেট, স্কার্ভি, গলগন্ড, বিকলাঙ্গতা, চর্মরোগ, কম বুদ্ধি, খাটো হওয়া প্রভৃতিতে ভোগে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান
ব্যুরো পরিচালিত বিভিন্ন শিশু পুষ্টি জরিপের তথ্য থেকে পুষ্টিহীনতার চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিচের সারনিতে বাংলাদেশে
পুষ্টিহীনতার ব্যাপকতা দেখানো হলো:
সারণি ১.৪.১: বছরের কম বয়সী শিশুদের পুষ্টিমান (কম উচ্চতা)
শহর গ্রাম জাতীয়
পুষ্টিমান ছেলে মেয়ে ছেলে মেয়ে ছেলে মেয়ে
চরম (৩য় ডিগ্রি) ১৪.৫ ১৪.৪ ১৭.৬ ১৭.৮ ১৬.৭ ১৬.৮
মাঝারি (২য় ডিগ্রি) ২২.২ ২১.৮ ২৪ ২৪.২ ২৩.৫ ২৩.৪
ক্ষীণ (১ম ডিগ্রি) ১.৪ ১.৫ ১.৬ ১.৬ ১.৫ ১.৫
স্বাভাবিক ৬৩.৩ ৬৩.৮ ৫৮.৪ ৫৮.১ ৫৯.৮ ৫৯.৮
সারণি ১.৪.২: ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের পুষ্টিমান (কম ওজন)
কহর গ্রাম জাতীয়
পুষ্টিমান ছেলে মেয়ে ছেলে মেয়ে ছেলে মেয়ে
চরম অপুষ্টি (৩য় ডিগ্রি) ১৫.৮ ১৫ ১৫.১ ১৮.৪ ১৫.৩ ১৭.৩
মাঝারি অপুষ্টি (২য় ডিগ্রি) ২৭ ২৭.৬ ২৯.৯ ২৭.৪ ২৯.১ ২৭.৫
ক্ষীণ অপুষ্টি (১ম ডিগ্রি) ১.৬ ১.৭ ১.৬ ১.৮ ১.৬ ১.৭
স্বাভাবিক ৫৭.১ ৫৭.৪ ৫৫ ৫৪.২ ৫৫.৬ ৫৫.২
(উৎস: ঘঁঃৎরঃরড়হ, ঐবধষঃয ধহফ উবসড়মৎধঢ়যরপ ঝঁৎাবু রহ ইধহমষধফবংয-২০১১)
পুষ্টিহীনতার এই ভয়াবহ অবস্থার মূলে অন্যান্য কারণ থাকলেও অপূরিত মৌলিক মানবিক চাহিদার প্রভাবই সবচেয়ে বেশি
দায়ী। খাদ্যঘাটতিই পুষ্টিহীনতার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী। বাসস্থানের সংকটের কারণে নোংরা, অস্বাস্থ্যকর গৃহ
ও বস্তিতে বসবাসের ফলে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। চিকিৎসার অভাবে এবং নিরক্ষরতার কারণে অজ্ঞতা, কুসংস্কার,
অসচেতনতা প্রভৃতি অপুষ্টিতে প্রভাব ফেলে। স্বাস্থ্যসম্মত বস্ত্র ও নির্মল চিত্তবিনোদনের অভাবেও পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়।
২. স্বাস্থ্যহীনতা (ওষষ-যবধষঃয): শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ঘাটতি বা অভাবজনিত অবস্থাকে স্বাস্থ্যহীনতা বলে।
বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে সৃষ্ট অন্যতম সমস্যা হলো স্বাস্থ্যহীনতা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান,
শিক্ষা, চিত্তবিনোদন ইত্যাদি মৌলিক মানবিক চাহিদা এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর
খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্যের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এসব কারণে এ দেশের
অনেক মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ফলে স্বাস্থ্যহীনতার শিকার হয়। প্রয়োজনীয় ও স্বাস্থ্যসম্মত বস্ত্রের
সংকটের কারণে বহু লোকের স্বাস্থ্যহানি ঘটে। শিক্ষার অভাবও স্বাস্থ্যহীনতার জন্য বহুলাংশে দায়ী। শিক্ষার অভাবে মানুষ
কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অজ্ঞ হয়। রোগব্যাধির কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের ব্যাপারে তারা অজ্ঞ থাকে। ফলে তারা
স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, খোলামেলা ও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু পর্যাপ্ত
ও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান সংকটের কারণে স্বাস্থ্যহানি ঘটে। নির্মল ও গঠনমূলক চিত্তবিনোদনের অভাবে বাংলাদেশের মানুষের
পক্ষে শারীরিক ও মানসিক অবসাদ, হতাশা, চাপ প্রভৃতি দূর করা সম্ভব হয় না। এজন্য তারা সহজেই বিভিন্ন রোগে
আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে। সুতরাং দেখা যায়, বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো প্রত্যাশিত মান অনুযায়ী
পূরণ না হওয়ায় স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩. গৃহ ও বস্তি সমস্যা (ঐড়ঁংরহম ধহফ ঝষঁস চৎড়নষবস): গৃহ হচ্ছে মানুষের আশ্রয়স্থল। জনসংখ্যার তুলনায় গৃহের
সংখ্যা কম। ফলে শহর এলাকায় অনেকেই বস্তিতে আশ্রয় গ্রহণ করে। বস্তি বলতে এমন এক অবহেলিত জনবসতি
এলাকাকে বোঝায়, যেখানে জীবনধারণের ন্যূনতম সুযোগটুকুও থাকে না। অত্যন্ত নি¤œ জীবনমান, পয়ঃনিষ্কাশনের অভাব,
পানীয় জল ও আলো-বাতাসের অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপরাধ প্রভৃতি বস্তি এলাকার নিত্য সঙ্গী যা সমাজকে করে
কলুষিত। এ কারণেই বস্তিকে সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের ১০ লাখ লোক
গৃহহীন। এরা শহর, নগর, বন্দর এবং গ্রাম এলাকায় অস্থায়ী বাসস্থান স্থাপন করে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শিল্প ও
শহরাঞ্চলের পাশে নি¤œ আয়ের লোকেরা গড়ে তোলে ছোট খুপরি ঘর যা বস্তি নামে পরিচিত। বাংলাদেশের শহরগুলোতে
বস্তিসমস্যা অত্যন্ত প্রকট। শুধু ঢাকা শহরে ৩৫ শতাংশ লোক বস্তিতে বাস করে। ২০১১ সালের সরকারি তথ্য অনুযায়ী
এদেশে বস্তির সংখ্যা ছয় হাজার এবং বস্তির লোকসংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ। বস্তির নোংরা ঘিঞ্জি পরিবেশ স্বাস্থ্যহীনতা,
সামাজিক সমস্যা ও অনাচারের সূতিকাগার। গৃহের স্বল্পতা ও বস্তির বিস্তারের ফলে স্বাস্থ্যহীনতা, অপুষ্টি, নিরক্ষরতা,
অপরাধ, মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস, পতিতাবৃত্তিসহ নানা জটিল সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। গৃহ ও বস্তি সমস্যা দেশের অন্ন-বস্ত্রের
সমস্যার সাথে জড়িত। বাংলাদেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থায় অন্ন-বস্ত্রের চাহিদা মোকাবিলা করার পর বাসস্থানের
চাহিদা পূরণের সংগতি অনেকের থাকে না। গৃহ ও বস্তি সমস্যার অপর দিক স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের অভাব। এজন্য
জনগণের শিক্ষার অভাব অনেকাংশে দায়ী। নিরক্ষর ও অজ্ঞ জনগণ ঝোপঝাড়ে ঘেরা, আলো-বাতাসহীন ঘর যে স্বাস্থ্যের
জন্য ক্ষতিকর তা জানে না বলে ঘরকে ঝুপড়িতে পরিণত করে রাখে।
৪. নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতা : নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতা মৌলিক মানবিক চাহিদা অপূরণজনিত
একটি মারাত্মক সমস্যা। নিরক্ষরতা বলতে অক্ষরজ্ঞানহীন অবস্থা এবং অজ্ঞতা বলতে জ্ঞানের অভাবকে বোঝায়। দৈনন্দিন
জীবনের ক্ষুদ্র ও সাধারণ বক্তব্যকে উপলদ্ধি সহকারে লিখতে এবং পড়তে অক্ষম ব্যক্তির অবস্থাকে নিরক্ষরতা বলে।
বাংলাদেশের শতকরা ৩৮ জন লোক নিরক্ষর। নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতার মূলে অন্যান্য উপাদান থাকলেও অপূরিত মৌলিক
মানবিক চাহিদার প্রভাব অত্যন্ত শক্তিশালী। কারণ, শিক্ষার অভাব থেকেই সমাজে নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতা দেখা দেয়।
একমাত্র শিক্ষাই মানুষকে নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ খাদ্যের
চাহিদা পূরণ করতে পারছে না বলে তারা শিক্ষার প্রতি নজর দিতে পারে না। ফলে তারা নিরক্ষর ও অজ্ঞ থাকে। স্বল্প
আয়ের লোকেরা বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, চিত্তবিনোদন প্রভৃতি পূরণ করতে পারছে না বলে স্বভাবতই শিক্ষার প্রতি তাদের
আগ্রহ থাকে না। ফলে তারা নিরক্ষর ও অজ্ঞ থেকে যায়।
৫. অপরাধপ্রবণতা : সমাজের প্রচলিত আইনকানুন, রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থী
কার্যকলাপকে অপরাধ বলে। অপূরিত মৌলিক মানবিক চাহিদার একটি অপরিহার্য পরিণতি হচ্ছে অপরাধপ্রবণতা। সমাজে
বৈধ উপায়ে মানুষ যখন মৌলিক মানবিক চাহিদার একটি অপরিহার্য পরিণতি হচ্ছে অপরাধপ্রবণতা। সমাজে বৈধ উপায়ে
মানুষ যখন মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়, তখন অবৈধ বা অসামাজিক উপায়ে এগুলো পূরণের চেষ্টা করে। ফলে
মানুষের মাঝে স্বভাবতই অপরাধপ্রবণতা দেখা দেয়। অপরাধপ্রবণতার পেছনে বহু কারণ থাকতে পারে। তবে অপূরিত
মৌলিক মানবিক চাহিদা সমাজে অপরাধ প্রবণতা সৃষ্টির একটি শক্তিশালী কারণ।
বাংলাদেশে বেশির ভাগ অপরাধই খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার জন্য সংঘটিত হয়। বৈধ উপায়ে খাদ্যের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ
হলে ক্ষুধার্ত মানুষ চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, লুটতরাজ ইত্যাদি অপরাধের মাধ্যমে খাদ্য জোগাড়ের চেষ্টা করে। আবার
শিক্ষার চাহিদা অপূরিত থাকলে মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা দেখা দিতে পারে। অপরাধীদের মধ্যে নিরক্ষরের সংখ্যাই
বেশি। নিরক্ষর মানুষ ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, দায়িত্বজ্ঞানের অভাব এবং কুসংস্কারের বশে নানারকম সমাজবিরোধী কাজ
করে। এতে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়। বাসস্থানের অভাব এবং বস্তি সমস্যা বিভিন্নভাবে ব্যক্তিকে অপরাধের দিকে
ঠেলে দেয়। চিত্তবিনোদনের অভাবে জীবন একঘেয়ে ও বিস্বাদ হয়ে ওঠে, সৃষ্টি হয় নিরাশা, হতাশা আর বঞ্চনার যা
মানুষকে অনেক সময় অপরাধের দিকে ধাবিত করে।
৬. বেকারত্ব (টহবসঢ়ষড়ুসবহঃ): বেকারত্ব হলো এমন কর্মহীন অবস্থা, যে অবস্থায় কর্মহীনতার প্রভাবে কর্মক্ষম ব্যক্তি
নিজের প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক চাহিদা স্বাধীনভাবে পূরণে অক্ষম হয়। বেকারত্বের ক্ষেত্রে খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা
প্রভৃতি চাহিদা প্রভাবিত করে। যেমনÑ কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন কর্মক্ষমতা, সুস্থতা ও সবল দেহ। কিন্তু বাংলাদেশের
অনেক লোক প্রয়োজনীয় ও পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্য পায় না। ফলে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে, অকালে কর্মক্ষমতা
হারায় এবং বেকার হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে কর্মসংস্থানের একটি অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। কিন্তু এদেশের অনেক লোক অশিক্ষিত ও অদক্ষ থাকায় তারা ঠিকমতো কাজ পায় না। ফলে তারা
কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে বেকার থাকতে বাধ্য হচ্ছে। নিচের সারণিতে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধির
প্রবণতা দেখানো হলো:
সারণি ১.৪.৩: বেকারত্বের হার
জরিপের সন ১৯৯৫-৯৬ ১৯৯৯-২০০০ ২০০২-০৩ ২০০৫-০৬ ২০১০
উভয়লিঙ্গ ৩.৫ ৪.৩ ৪.৩ ৪.৩ ৪.৫
পুরুষ ২.৮ ৩.৪ ৪.২ ৩.৪ ৪.১
মহিলোা ৭.৮ ৭.৮ ৪.৯ ৭.০ ৫.৮
(উৎস: পরিসংখ্যান পকেট বুক ২০০৪ এবং ২০০৮, পৃ-১৪৮ ও ১৪৩ এবং শ্রমশক্তি জরিপ-২০১০)
৭. পারিবারিক ভাঙন, বিচ্ছেদ ও নিরাপত্তাহীনতা (ঋধসরষু ইৎবধশফড়হি, ঝবঢ়ধৎধঃরড়হ ধহফ ওহংবপঁৎরঃু): মৌলিক
মানবিক চাহিদার অপূরণজনিত কারণে সৃষ্ট অনিবার্য সমস্যা হচ্ছে পারিবারিক ভাঙন, বিচ্ছেদ ও নিরাপত্তাহীনতা। এতে
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের মারাত্মক অবনতিসহ সম্পর্ক দুর্বল ও ছিন্ন হয়, পরিবার ভেঙে যায় এবং তারা
নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। পরিবারে মৌলিক মানবিক চাহিদা অপূর্ণ থাকলে তা বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দেয়। যেমনÑ দাম্পত্য
কলহ, বিচ্ছেদ, বিবাহ বিচ্ছেদ, নিরাপত্তাহীনতা, ঝগড়া, মারামারি, নিরুদ্দেশ যাত্রা, আত্মহত্যা, হত্যা, নারী নির্যাতন,
যৌতুক সমস্যা ইত্যাদি। এছাড়া মৌলিক মানবিক চাহিদার অপূরণজনিত কারণে পরিবারের কার্যাবলী ও ভূমিকা
মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়, সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
উপর্যুক্ত সমস্যাগুলো ছাড়াও বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদার অপূরণজনিত কারণে ভিক্ষাবৃত্তি, নৈতিক অধঃপতন,
দারিদ্র্য, প্রতিবন্ধিত্ব, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, হতাশা, ব্যর্থতা, শিশুশ্রম ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। উপরিউক্ত আলোচনার
পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের অভাবে সমাজে পরস্পর সম্পর্কিত বহুমুখী আর্থ-সামাজিক ও
মানবিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যা চক্রাকারে ক্রিয়াশীল থেকে সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করে।
সারসংক্ষেপ
মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ হওয়া মানব জীবনে অত্যন্ত অপরিহার্য। এই অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণ না হলে আর্থ-
সামাজিক ও মনো-দৈহিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া স্বাভাবিক ও সমাজস্বীকৃত উপায়ে এই সমস্ত প্রয়োজন পূরণ না
হলে অস্বাভাবিক ও অবৈধ উপায় অবলম্বনে মানুষ বাধ্য হয়; যা বহুমুখী জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের অন্যতম অন্তরায় হলোÑ
ক) অজ্ঞতা খ) অতিরিক্ত জনসংখ্যা
গ) উৎপাদন স্বল্পতা ঘ) দুর্নীতি
২। বাংলাদেশের সংবিধানে কয়টি মৌলিক মানবিক চাহিদার উল্লেখ করা হয়েছে?
ক) ছয়টি খ) সাতটি
গ) পাঁচটি ঘ) আটটি
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র