গণমাধ্যমের ধারণা, ধরন ও সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা

গণমাধ্যমের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘গধংং গবফরধ’। ইংরেজি ‘গধংং’ শব্দের অর্থ গণ বা বৃহৎ জনগোষ্ঠী
এবং ‘গবফরধ’ শব্দের অর্থ মাধ্যম বা বাহন। অতএব, শব্দগত অর্থে গধংং গবফরধ হচ্ছে যে মাধ্যমে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর
সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হয় অথবা সংবাদ পৌঁছায় বা সম্পর্কের উন্নতি হয়।
সাধারণ অর্থে গণমাধ্যম বলতে জনগণের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমকে বুঝায়। অন্যভাবে বলা যায়, গণমাধ্যম হচ্ছে এমন
একটি উপায় যার মাধ্যমে সমাজের ব্যাপক সংখ্যক মানুষের সাথে আন্তঃযোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। গণমাধ্যমের ভিত্তি হচ্ছে
ভাষা। ভাষা ছাড়া যোগাযোগ অসম্ভব। যেমনÑ বইপুস্তক, সাময়িকী, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। সুতরাং,
ভাষাভিত্তিক যে যোগাযোগের মাধ্যমে সমাজের অসংখ্য মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তথ্যের আদানপ্রদান হয় তাই
গণমাধ্যম।
গণমাধ্যমের ধারণায় সমাজবিজ্ঞানী (১৯৮৯) বলেন, “গণমাধ্যম প্রত্যয়টি যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত যে
কোনো উপায়কে বোঝায়, যার মাধ্যমে কোনো তথ্য ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে ধারণা দিতে গিয়ে বলেন, “গণমাধ্যম হচ্ছে জনগণের মধ্যে কোনো কিছুর অর্থ সম্পর্কে অনুভূতি সঞ্চার করা এবং ভাব বা ধারণার প্রেরণ প্রক্রিয়া।”
উ.ঝ গবযঃধ বলেন, “একই সময়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নিকট সংবাদ, ধ্যানধারণা, বিনোদন প্রভৃতি পরিবেশন করাকে গণমাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।”
উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণের আলোকে বলা যায়, গণমাধ্যম হচ্ছে যোগাযোগের এমন একটি উপায় যার মাধ্যমে
সমাজের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে একটি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং তথ্যের আদানপ্রদান করা হয়। গণযোগাযোগের কাজে
ব্যবহারের জন্য যে মাধ্যম তা হলো গণমাধ্যম। অগণিত পত্র-পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রের সমন্বয়ই গণমাধ্যম।
৪.৭.২ গণমাধ্যমের ধরন
আধুনিক সমাজে তিন ধরনের গণমাধ্যম রয়েছে। যথাÑ
১। মুদ্রিত গণমাধ্যম; যেমনÑ সংবাদপত্র, বই, জার্নাল, ম্যাগাজিন, লিফলেট ইত্যাদি।
২। ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম; যেমনÑ চলচ্চিত্র, রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদি।
৩। অপ্রত্যক্ষ গণমাধ্যম; যেমনÑ সংবাদ সংস্থাসমূহ, সাংবাদিক সংঘ, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি।
নিচে বর্তমান যুগে প্রচলিত গণমাধ্যমসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো:
৪.৭.২.১ পত্র-পত্রিকা আধুনিক গণমাধ্যমের সর্বাধিক প্রভাবশালী উপাদান হচ্ছে পত্র-পত্রিকা। এর
চাহিদা, উপযোগিতা, গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। জানা যায় চীনারা সর্বপ্রথম সংবাদপত্র ব্যবহার করতো। উপমহাদেশের প্রথম বাংলা সংবাদপত্রের নাম ‘সমাচার দর্পণ’ ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়। পত্র-পত্রিকা হচ্ছে
সমাজের দর্পণ। প্রতিদিন সমাজে যা কিছু ঘটে তাই পত্রিকার পাতায় সাজানো থাকে। তথ্য সরবরাহ, জনমত গঠন,
মানুষের মতামত প্রকাশ, সত্য উপস্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পত্র পত্রিকা অপ্রতিদ্ব›দ্বী ভূমিকা পালন করে। পত্র-পত্রিকা সামাজিক
ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। বলা যেতে পারে, একটি পূর্ণাঙ্গ পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালে সমগ্র সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে
অতি সহজেই ধারণা লাভ করা যায়। তাই পত্র-পত্রিকাকে ‘সমাজের দর্পণ’ বলে উল্লেখ করা যেতে পারে।
৪.৭.২.২ বেতার গণমাধ্যমের আরো একটি শক্তিশালী উপাদান হচ্ছে রেডিও। ইলেকট্রনিক এই সামগ্রীর সাথে
পরিচিত নয় এমন মানুষ বিরল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে রেডিওর প্রচলন হয়। ডরশরঢ়বফরধ, “ঞযব ঋৎবব
এর তথ্যানুযায়ী, ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বেতার স্থাপন করা হয়। বর্তমানে এটি
চিত্তবিনোদন, সংবাদ পরিবেশন, সচেতনতা সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিবিষয়ক অসংখ্য অনুষ্ঠান প্রচার করছে। মানুষের মধ্যে
রেডিওর প্রভাব অপরিসীম। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চ্যানেলে পরিবেশিত অনুষ্ঠানমালা এবং পরিবেশিত সংবাদ ও তথ্যপ্রবাহ গণমাধ্যমের শক্তিশালী উপাদান হিসেবে কাজ করে। সম্প্রতি এফ.এম. রেডিও এক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে।
৪.৭.২.৩ টেলিভিশন (ঞবষবারংরড়হ): গণমাধ্যমের অন্যতম শক্তিশালী
বাহন হচ্ছে টেলিভিশন। বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে এটি যাত্রা করে
আজ সমগ্র বিশ্বের জনপ্রিয় গণমাধ্যম হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ডরশরঢ়বফরধ, “ঞযব ঋৎবব ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ” এর তথ্যানুযায়ী, ১৯৬৪
সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশন স্থাপিত হয় এবং ১৯৮০ সালে
দেশে রঙিন টেলিভিশন চালু হয়। স্যাটেলাইটের এ যুগে টেলিভিশনের
আবেদন ও উপযোগিতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ খুব সহজেই বিশ্বকে
দেখতে পায় তার ড্রয়িং রুমে বসে। শিক্ষা, সচেতনতা, জনমত গঠন
ইত্যাদি ক্ষেত্রে টেলিভিশন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। টেলিভিশন হচ্ছে
একটি প্রতিষ্ঠান। সমাজস্থ মানুষের খুব কাছের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সাথে মানুষের সখ্যতা রয়েছে। তাই সমাজে
এর প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা অতুলনীয়।
৪.৭.২.৪ চলচ্চিত্র গণমাধ্যমের অন্যতম আধুনিক উপাদান হচ্ছে চলচ্চিত্র। ডরশরঢ়বফরধ, এর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয় ১৮৯০ সালে। ১৯২৭-২৮ সালে ঢাকার নওয়াব
পরিবারের কয়েকজন তরুণ মিলে সুকুমারী নামক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৫৬ সালে মুখ ও মুখোশ নামক পূর্ণদৈর্ঘ্য
সবাক চলচ্চিত্র নির্মান করেন আবদুল জব্বার খান। সুনির্দিষ্ট গল্প-কাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্র কিংবা প্রামাণ্যচিত্র মানবসমাজে
গভীরভাবে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এখানে সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি চমৎকারভাবে পরিবেশন
করা হয়। অন্য যে কোনো মাধ্যম অপেক্ষা চলচ্চিত্র মানুষকে অধিকতর প্রভাবিত করে।
৪.৭.২.৫ ইন্টারনেট গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক ও সর্বাধুনিক বাহন হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের মাধ্যমে
তথ্যপ্রবাহে নবযুগের সূচনা ঘটেছে। ইন্টারনেটের বিস্ময়কর যাদুর স্পর্শে আমরা আজ ঘরে বসেই সারা বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ
শোনা, দেখা ও তথ্যের আদানপ্রদান করতে পারছি। আবার ইন্টারনেটে বিখ্যাত লাইব্রেরির বইপুস্তক, গবেষণাগ্রন্থ, পত্রপত্রিকা ইত্যাদি পড়ার চমৎকার সুযোগ রয়েছে। ডরশরঢ়বফরধ, “ঞযব ঋৎবব ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ” এর তথ্যানুযায়ী,
ইন্টারনেটের আবিষ্কার ১৯৬০ সালের শেষের দিকে এবং বাংলাদেশে ১৯৯৫ সালে অফলাইন ই-মেইল এর মাধ্যমে সীমিত আকারে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়। বিশ্বের অগণিত মানুষ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে ইন্টারনেটের কল্যাণে,
ইন্টারনেট বিশ্বকে অনেক ছোট ও গতিশীল করে তুলেছে। ইন্টারনেট বহুবিধ সুবিধা প্রদান করে বদলে দিয়েছে আমাদের জীবনযাত্রাকে।
৪.৭.৩ সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা
আধুনিক সমাজের একটি প্রভাবশালী এবং বহুল ব্যবহৃত প্রত্যয় হচ্ছে গণমাধ্যম। গণমাধ্যম মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জনগণ তথা সমাজের সাথে এর অধিক সম্পৃক্ততার কারণে সমাজদেহে সৃষ্ট বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা
প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। নি¤েœ সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা আলোচনা করা হলো:
ক) সামাজিক আচরণে পরিবর্তন আনয়ন: বর্তমান যুগ হলো গণমাধ্যমের যুগ। বিভিন্ন গণমাধ্যম যেমনÑ সংবাদপত্র,
রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি মানুষের সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মাধ্যমে সামাজিক আদর্শ,
মূল্যবোধ, বিভিন্ন রকম সংস্কার ও বিশ্বাস মানুষের আচরণে স্থায়িত্ব লাভ করে, যা মানুষকে নৈতিক পথে ধাবিত করে এবং
সামাজিক সমস্যা ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং আদর্শ মানুষের অনুসরণে সমস্যামুক্ত জীবনযাপনে সক্ষম করে তোলে।
খ) জনমত গঠন: গণমাধ্যম জনমত গঠনের শক্তিশালী বাহন। সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে অন্যায়,
অপরাধ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন ইত্যাদি সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে এবং
প্রতিরোধে প্রবল জনমত গড়ে তুলতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, কিছুদিন পূর্বে
ইভটিজিং নামক সামাজিক ব্যাধি সমাজে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। এর বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে
গণমাধ্যম কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। যার ফলে এর মাত্রা অনেক কমে এসেছে।
গ) সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রীতি স্থাপন: সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা, ঐক্য ও সংহতি স্থাপনে গণমাধমের ভূমিকা ও গুরুত্ব
অপরিসীম। মূলত গণমাধ্যম মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, মূল্যবোধ, আচরণ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও
শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে
গণমাধ্যম। যা সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে।
ঘ) জনসংখ্যা বিষ্ফোরন রোধ: গণমাধ্যম পরিকল্পিত পরিবার গঠনে জনগণকে অনুপ্রাণিত করে জনসংখ্যা সমস্যা প্রতিরোধে
ভূমিকা পালন করে।
ঙ) দুর্যোগ মোকাবিলা: জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অগ্রগণ্য। বর্তমানে দুর্যোগের আগাম বার্তা প্রচারের
মাধ্যমে গণমাধ্যম দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন
করে।
চ) চিত্তবিনোদনের মাধ্যম: চিত্তবিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও গণমাধ্যম ব্যবহৃত হয় যা ক্লান্তি, হতাশা ও অশান্তি দূর করে
দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
ছ) জনসচেতনতা সৃষ্টি: গণমাধ্যম মানুষের বিভিন্নমুখী শিক্ষা প্রদান করে তাদের সচেতন ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে
যেমনÑ গণশিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা প্রভৃতি সম্প্রসারনের মাধ্যমে সাহায্য করে। মাদকদ্রবের
অপব্যবহার প্রতিরোধে গণমাধ্যম ভূমিকা পালন করে। বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা সমাধানে গণমাধ্যম বিভিন্ন প্রচারণার
মাধ্যমে ভূমিকা রাখে। অপরাধ ও কিশোর অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে গণমাধ্যম। স্বাস্থ্যহীনতা একটি মারাত্মক
সামাজিক সমস্যা। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধ করে সুস্থ
সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অগ্রগণ্য।
জ) অপরাধ দূরীকরণে আইন প্রণয়ন ও আইনের বাস্তবায়ন: মাদকাসক্তি প্রতিরোধে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করতে পারে। বিভিন্ন গণমাধ্যম যেমনÑ পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি মাদকাসক্তের কুফল সম্পর্কে
প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারে। মাদকাসক্তি দূরীকরণে দেশের বিদ্যমান আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন
এবং প্রয়োজনবোধে নতুন আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের ওপর গণমাধ্যম চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্ন গণমাধ্যম
যেমনÑ পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি মাদকাসক্তের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে সচেতন
করে তুলতে পারে।
ঝ) যৌতুক নিরোধ: যৌতুক একটি জঘন্যতম ও ঘৃণ্যতম প্রথা। যৌতুকের অভিশাপ থেকে সমাজকে সুরক্ষায় গণমাধ্যম
কার্যকর অবদান রাখতে পারে। যৌতুক বিরোধী সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, যৌতুক বিরোধী অইনের যথাযথ প্রয়োগ ও
বাস্তবায়ন, যৌতুক দাবীকারীদের সামাজিকভাবে বয়কট করার প্রবণতা সৃষ্টি করে গণমাধ্যম যৌতুক সমস্যা প্রতিরোধে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।
ঞ) নারী ও শিশু পাচার রোধ: নারী ও শিশু পাচার রোধেও গণমাধ্যম শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। যেখানে
প্রতিকারহীন শক্তির অপরাধে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে, সেখানেই গণমাধ্যমের নির্ভীক উচ্চারণ ধ্বনিত হয়। দেশের
নারীদের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, নারীশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে নারীমুক্তিতে
গণমাধ্যম তার বলিষ্ঠ অবদান রাখে।
এছাড়া গণমাধ্যম নাগরিক স্বার্থ সংরক্ষণ, জাতিগত সমস্যা নিরসন, মানসিক ও সামাজিক প্রয়োজন পূরণ, মানবাধিকার ও
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সারসংক্ষেপ
গণমাধ্যম বলতে জনগণের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমকে বুঝায়। অন্যভাবে বলা যায়, গণমাধ্যম হচ্ছে এমন একটি
উপায় যার মাধ্যমে সমাজের ব্যাপকসংখ্যক মানুষের সাথে একটি আন্তঃযোগাযোগ প্রতিষ্টিত হয়। গণমাধ্যমের ভিত্তি
হচ্ছে ভাষা। ভাষা ছাড়া যোগাযোগ অসম্ভব। সুতরাং ভাষাভিত্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমাজের অসংখ্য মানুষের মধ্যে
যে সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তথ্যের আদানপ্রদান হয় তাই গণমাধ্যম। আধুনিক সমাজে তিন ধরনের গণমাধ্যম রয়েছে।
যথাÑ ক) মুদ্রিত গণমাধ্যম, যেমনÑ সংবাদপত্র, বই, জার্নাল, ম্যাগাজিন, লিফলেট ইত্যাদি, খ) ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম,
যেমনÑ চলচ্চিত্র, রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদি গ) অপ্রত্যক্ষ গণমাধ্যম, যেমনÑ সংবাদ সংস্থাসমূহ,
সাংবাদিক সংঘ, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। আধুনিক সমাজের একটি প্রভাবশালী এবং বহুল ব্যবহৃত প্রত্যয় হচ্ছে গণমাধ্যম।
গণমাধ্যম মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জনগণ তথা সমাজের সাথে এর অধিক সম্পৃক্ততার কারণে
সমাজদেহে সৃষ্ট বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
গণমাধ্যম নাগরিক স্বার্থ সংরক্ষণ, জাতিগত সমস্যা নিরসন, মানসিক ও সামাজিক প্রয়োজন পূরণ, মানবাধিকার ও
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.৭
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার মাধ্যম কোনটি?
ক) গণমাধ্যম খ) সামজিক কার্যক্রম
গ) সামজিক আন্দোলন ঘ) ধর্ম
২। বাংলাদেশে রঙিন টেলিভিশন চালু হয় কত সালে?
ক) ১৯৭০ সালে খ) ১৯৭৫ সালে
গ) ১৯৮০ সালে ঘ) ১৯৮৫ সালে

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]