মুসলিম পরিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১

সমাজে বসবাস করতে গিয়ে মানুষকে সমাজের বিভিন্ন বিধিবিধান মেনে চলতে হয়। সমাজের এ সকল
বিধিবিধান সমাজের মানুষের রক্ষাকবচ স্বরুপ। সময়ের প্রেক্ষাপটে সমাজের মানুষের স্বার্থে সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন
সামাজিক আইন প্রণয়ন করেছেন। এমনই কিছু সামাজিক আইন হলোÑ মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১; শিশু
আইন, ১৯৭৪; যৌতুক আইন, ১৯৮০; নারী নির্যাতন আইন, ১৯৮৩; মাদক নিরোধ অধ্যাদেশ, ১৯৮৯; নারী ও শিশু
নির্যাতনরোধ আইন, ২০০৩; হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আইন, ২০১২; পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন; ২০১০ ইত্যাদি। পরবর্তী পাঠে উল্লিখিত আইনগুলো এবং আইনগুলোর বিভিন্ন ধারা আলোচনা করা হয়েছে। প্রথমে
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ আলোচনা করা হলো:
বর্তমান বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের অধিকার সকল ক্ষেত্রে সমান। কিন্তু একসময় এ অবস্থা ছিল না। সকল ক্ষেত্রে নারীরা
ছিল বঞ্চিত। বিশেষ করে বিবাহ, দেনমোহর, উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে নারীদের কোনো অধিকার ছিল না। এজন্য
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার (বর্তমান বাংলাদেশ) নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ,
১৯৬১ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করে। ১৯৬১ সালের ১৫ জুলাই হতে এ অধ্যাদেশটি বাংলাদেশের সকল মুসলিম
নাগরিকের জন্য কার্যকর হয়। এ আইনের উল্লেখযোগ্য বিধানগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
১। বিবাহের বয়স: এ আইন অনুসারে বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলেদের বয়স ন্যূনতম ২১ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম
১৮ বছর হতে হবে।
২। মেয়ের মতামতের প্রাধান্য: এ অধ্যাদেশ-এ পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রে মেয়েদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা
হয়েছে।
৩। বিবাহ রেজিস্ট্রেশন: এ আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে হবে। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা
এক বা একাধিক ব্যক্তিকে লাইসেন্স প্রদান করে এবং এ ব্যক্তি নিকাহ রেজিস্টার বলে গণ্য হন।
৪। দ্বিতীয় বিবাহ: এ আইন অনুসারে প্রথম স্ত্রী বেঁচে থাকতে দ্বিতীয় বিবাহ করা যাবে না। তবে প্রথম স্ত্রীর বন্ধ্যান্ত, স্থায়ী
শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্বামী ও স্ত্রীর
মনোনীত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত সালিশি পরিষদের অনুমতিক্রমে দ্বিতীয় বিবাহ করা যাবে।
৫। দেনমোহর: এ আইন অনুসারে স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ বাধ্যতামূলক। স্বামী দেনমোহর প্রদানে ব্যর্থ হয়ে অভিযুক্ত
হলে এক বছর কারাদন্ড অথবা এক হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
৬। তালাক: এ আইনের বিধান মোতাবেক স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দিতে চায় তাহলে তালাক ঘোষণার পর (মৌখিক
অথবা লিখিত) যথাশীঘ্রই সালিশি পরিষদের চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ প্রদান করতে হবে এবং এর
এক কপি স্ত্রীকে প্রদান করতে হবে। এ বিধান ভঙ্গ করলে স্বামীকে সর্বাধিক এক বছর কারাদন্ড অথবা পাঁচ হাজার
টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড ভোগ করতে হবে। নোটিশ প্রাপ্তির পর চেয়ারনম্যান সালিশি পরিষদের মাধ্যমে ৯০
দিনের মধ্যে উভয়ের মিলনের চেষ্টা করবেন এবং ৯০ দিন পর চেষ্টা ব্যর্থ হলো তালাক কার্যকর হবে। তবে তালাকের
সময় স্ত্রী গর্ভবতী হলো গর্ভকাল অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। এ আইন অনুযায়ী স্ত্রী চাইলেও স্বামীকে তালাক দিতে পারবে।
৭। ভরণপোষণ: এ আইন অনুযায়ী স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণপোষণে অক্ষম হন বা একাধিক স্ত্রী রাখেন এবং তাদের
সমানভাবে প্রতিপালন করতে ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে স্ত্রী বা স্ত্রীগণ লিখিতভাবে সালিশি পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট
অভিযোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সালিশি পরিষদ স্বামীকে স্ত্রীর ভরণপোষণের জন্য টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে
নির্দেশ দিতে পারেন।
৮। উত্তরাধিকার: এ আইন অনুসারে কোনো পরিবারে দাদা জীবিত থাকা অবস্থা বাবা মারা গেলে দাদার সম্পত্তি থেকে
নাতি-নাতনীদের বঞ্চিত করা যাবে না। তারা দাদার সম্পত্তির ন্যায্য অংশ পাওয়ার অধিকারী।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ নারীকল্যাণমূলক একটি সামাজিক আইন। নারীর স্বার্থ সংরক্ষণ এবং
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণের লক্ষ্যে এ আইনটি প্রণীত হয়। এ আইনের মাধ্যমে মুসলিম সমাজের
বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়া এ আইনের মাধ্যমে নারীর স্বাধীনতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সারসংক্ষেপ
বর্তমান বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের অধিকার সকল ক্ষেত্রে সমান। কিন্তু একসময় এ অবস্থা ছিল না। সকল ক্ষেত্রে
নারীরা ছিল বঞ্চিত। বিশেষ করে বিবাহ, দেনমোহর, উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে নারীদের কোনো অধিকার ছিল না।
এজন্য তৎকালীন পাকিস্তান সরকার (বর্তমান বাংলাদেশ) বিবাহের ক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুসলিম
পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ জারি করে। ১৯৬১ সালের ১৫ জুলাই হতে এ আইনটি বাংলাদেশের সকল মুসলিম
নাগরিকের জন্য কার্যকর হয়। এ আইনে বিশেষ করে ছেলেমেয়েদের বিবাহের বয়স নির্ধারণ, বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েদের
মতামতের প্রাধান্য দান, বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন, দ্বিতীয় বিবাহ, দেনমোহর, ভরণপোষন, তালাক, সম্পত্তির উত্তরাধিকারসহ নানা বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ের বয়স কত?
ক) ২১ ও ১৮ বছর খ) ২২ ও ২০ বছর
গ) ২৫ ও ২১ বছর ঘ) ২৬ ও ২২ বছর
২। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে যেসকল বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে তা হলোÑ
র. স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ
রর. বহুবিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদকে নিরুৎসাহিত করা
ররর. বাল্যবিবাহকে উৎসাহিত করা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর <

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]