বাংলাদেশের শিশুদের মানবীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাসহ শিশুদের সার্বিক কল্যাণ
সাধনের জন্য শিশু আইন ১৯৭৪ প্রণীত হয়। ১৯৭৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এবং ১৯৮০ সালের ১ জুন বাংলাদেশের
সর্বত্র এ আইটি কার্যকর হয়। আইনটিতে ১০টি ভাগে মোট ৭৮টি ধারা রয়েছে। এ আইনের উল্লেখযোগ্য ধারাগুলো নিচে
আলোচনা করা হলোধারা: ১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম: এ আইন শিশু আইন, ১৯৭৪ নামে অভিহিত হবে।
ধারা ২। সংজ্ঞাসমূহ: বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কিছু না থাকলে এ আইনেÑ
ক. প্রাপ্ত বয়স্ক: এরুপ ব্যক্তি যিনি শিশু নন।
খ. শিশু: ১৬ বছরের কম বয়স্ক কোনো ছেলে বা মেয়ে।
গ. অভিভাবক: এরুপ ব্যক্তি যিনি শিশু বা কিশোর অপরাধী সম্পর্কে গৃহীত কার্যধারা মেনে নিয়ে তার দায়িত্ব বা নিয়ন্ত্রণ
ভার গ্রহণ করেন।
ধারা-৪। শিশু আদালতের এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতসমূহ: এ আইনে শিশু আদালতের ওপর অর্পিত ক্ষমতাসমূহ হাইকোর্ট
বিভাগ, দায়রা আদালত, অতিরিক্ত দায়রা জজ ও সহকারী দায়রা জজের আদালত, মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রথম শ্রেণির
ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োগ করতে পারবেন।
ধারা-৯। শিশু আদালতে যারা উপস্থিত থাকতে পারবে: আদালতের সদস্যগণ ও কর্মকর্তা, মামলার সংশ্লিষ্ট পক্ষ, পুলিশ,
শিশুর পিতামাতা বা অভিভাবক এবং আদালত কর্তৃক বিশেষভাবে অনুমোদিত ব্যক্তিগণ।
ধারা-১১। শিশুর হাজিরা মওকুফ: মামলার শুনানিতে আদালত শিশুর উপস্থিতি অনাবশ্যক মনে করলে তার হাজিরা মওকুফ
করতে পারে।
ধারা-১৪। রোগাক্রান্ত শিশুকে অনুমোদিত স্থানে প্রেরণ: এ আইন অনুসারে বিচারাধীন কোনো শিশু যদি শারীরিক ও
মানসিকভাবে অসুস্থ হয়, সেক্ষেত্রে আদালত শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বা অনুমোদিত যে কোনো স্থানে যতদিন
আবশ্যক মনে করেন ততদিনের জন্য প্রেরণ করবেন।
ধারা-১৫। আদালতের আদেশ প্রদানে বিবেচ্য বিষয় সমূহ: এ আইনের অধীনে কোনো শিশুর মামলার আদেশ প্রদানের
জন্য শিশুর চরিত্র ও বয়স, শিশুর জীবনধারণের পরিবেশ, শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা কর্তৃক প্রণীত রিপোর্ট ইত্যাদি বিষয়
বিবেচনা করবেন।
ধারা-১৭। মামলায় জড়িত শিশুর পরিচয় প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা: বিচারাধীন কোনো শিশুর ছবি বা পরিচয় প্রকাশ করে
এমন কোনো সংবাদ কোনো সংবাদপত্র বা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না। তবে আদালত যদি মনে করেন সংবাদ
প্রকাশ শিশুর স্বার্থে কল্যাণকর, তখনই কেবল সংবাদ প্রকাশ করা যাবে।
ধারা-৩১। শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা নিয়োগ: সরকার প্রত্যেক জেলায় একজন শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারেন।
তিনি শিশুর আচরণ সম্পর্কে আদালতে রিপোর্ট দেবেন, শিশুকে উপদেশ দেবেন, সহায়তা করবেন এমনকি প্রয়োজনবোধে
শিশুর উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।
ধারা-৩২ ও ৩৩। অবহেলিত শিশুদের তত্ত¡াবধান ও পালনের কর্মপন্থা: দুস্থ ও অবহেলিত শিশুর (যেমনÑ গৃহহীন,
পিতৃমাতৃহীন, ভবঘুরে, নিষ্ঠুর আচরণের শিকার ইত্যাদি) তত্ত¡াবধান ও পালনের জন্য শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা বা কমপক্ষে
সাব-ইন্সপেক্টরের পদমর্যাদা সম্পন্ন পুলিশ কর্মকর্তা বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে
আদালত উক্ত শিশু/শিশুদের সর্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কিশোর হাজত, সংশোধনী কেন্দ্র বা আত্মীয়-স্বজনের বাসায়
রাখতে পারেন।
ধারা-৩৪। শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতার দন্ড: কারো হেফাজতে থাকা অবস্থায় যদি কোনো শিশুকে আক্রমণ, উৎপীড়ন,
অবহেলোা, বর্জন ও অরক্ষিত অবস্থায় ত্যাগ করে যার ফলে শিশুটির স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, তার দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে
যায় বা মানসিক বিকৃতি ঘটে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি দুই বছর মেয়াদের কারাদন্ড বা এক হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে
দন্ডিত হবেন।
ধারা-৩৫। শিশুকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগের দন্ড: কোনো ব্যক্তি যদি শিশুর দ্বারা ভিক্ষা করান বা ভিক্ষার উদ্দেশ্যে
নিয়োগদানে অজ্ঞতার ভান করেন, কিংবা উৎসাহ দেন অথবা শিশুকে আলামত হিসেবে ব্যবহার করেন, তবে উক্ত ব্যক্তি
এক বছর মেয়াদি কারাদন্ড বা তিনশত টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
ধারা-৩৭। শিশুকে নেশাগ্রস্তকারী সুরা বা বিপজ্জনক ওষুধ প্রদানের দন্ড: কোনো শিশুকে তার অসুস্থতা বা অন্য কোনো
জরুরি কারণে যোগ্যতা সম্পন্ন ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কেউ যদি কোনো নেশাগ্রস্তকারী সুরা বা বিপজ্জনক ওষুধ প্রদান
করেন তবে ওই ব্যক্তি এক বছর মেয়াদের কারাদন্ড বা পাঁচশত টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
ধারা-৪১। শিশুকে পতিতালয়ে রাখার অনুমতিদানের দন্ড: যদি কোনো ব্যক্তি চার বছর বা তদূর্ধ্ব কোনো শিশুকে
পতিতালয়ে বাস করতে কিংবা প্রায়শ যাতায়াত করতে সুযোগ বা অনুমতি দেয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত
মেয়াদের কারাদন্ড অথবা এক হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
ধারা-৪২। অসৎ পথে পরিচালনা করানোর দন্ড: ১৬ বছরের কম বয়স্ক কোনো মেয়ের হেফাজতকারী যদি তাকে
বেশ্যাবৃত্তিতে প্রবৃত্ত করায় বা উৎসাহ দেয় অথবা স্বামী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিকে তার সাথে যৌনসঙ্গম করায় বা উৎসাহ
দেয়, তবে ওই ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদন্ড বা এক হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
ধারা-৪৪। শিশু কর্মচারীকে শোষণের দন্ড: যদি কোনো শিশুকে কেউ ঘরের কাজে, কারখানায় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে
শ্রমিকের কাজের আড়ালে শিশুটিকে নিজ স্বার্থে শোষণ করে, আটকিয়ে রাখে বা তার উপার্জন ভোগ করে, তবে তিনি এক
হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। একইভাবে যদি শিশুকে সমকাম, বেশ্যাবৃত্তি বা অন্যান্য নীতিগর্হিত কাজে লিপ্ত
হতে বাধ্য বা উৎসাহিত করে তবে দুই বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা এক হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
ধারা- ৪৬। শিশু সম্পর্কিত রিপোর্ট বা ছবি প্রকাশের দন্ড: বিচারাধীন শিশু সম্পর্কিত কোনো রিপোর্ট বা ছবি আদালতের
অনুমতি ব্যতীত প্রকাশ করলে দুই মাস মেয়াদের কারাদন্ড বা দু’শ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের ব্যবস্থা রয়েছে।
ধারা-৫১। শিশুর শাস্তি বিধানে বাধানিষেধ: কোনো শিশুকে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা কারাদন্ড দেয়া যাবে না।
তবে শিশুটির অপরাধ যতি এতই গুরুতর হয় যে কারাদন্ড ছাড়া মামলাটি সুরাহা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে আদালত শিশুটিকে
কারাদন্ড প্রদান কিংবা যেরুপ উপযুক্ত মনে করেন, সেরুপ স্থানে শর্তাধীনে আটক রাখার নির্দেশ দিতে পারেন।
ধারা-৫২। শিশুকে প্রত্যয়িত ইনস্টিটিউটে সোপর্দ: কোনো শিশু মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা কারাদন্ডে দন্ডনীয়
অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত তার ক্ষেত্রে সমীচীন বিবেচনা করলে অন্যূন দুই বছর এবং অনধিক দশ বছর মেয়াদে
আটক রাখার জন্য কোনো প্রত্যয়িত ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করতে পারেন।
শিশুকল্যাণমূলক আইনের ক্ষেত্রে ১৯৭৪ সালের শিশু আইন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ আইন কার্যকর করার প্রেক্ষিতে
১৯২২ সালের বেঙ্গল শিশু আইন ও রিফরমেটরি স্কুল অ্যাক্ট রহিত করা হয়। এটি শিশুদের হেফাজত, রক্ষণাবেক্ষণ, তাদের
সাথে ব্যবহার, চিকিৎসা ও কিশোর অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি সম্পর্কিত আইন একীভূত ও সংশোধন করার জন্য একটি
আইন।
শিশু আইন মূলত বাংলাদেশের শিশু ও কিশোরদেরকে অপরাধের পথ থেকে ফিরিয়ে এনে সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপন বা
সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা জন্য এক অনবদ্য পদক্ষেপ। এ আইন শিশু শ্রেণিকে সকল অত্যাচার নিপীড়ন থেকে দূরে
সরিয়ে রেখে ভবিষ্যতে যাতে তারা দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত হতে পারে তার জন্য সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ
করা হয়েছে। একই সাথে শিশুর প্রতি অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে
সচেতন করা হয়েছে। তাই বলা যায়, শিশু আইন, ১৯৭৪ এদেশের শিশুদের কল্যাণে একটি পূর্ণাঙ্গ পদক্ষেপ।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশের শিশুদের মানবীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাসহ শিশুদের সার্বিক কল্যাণ সাধনের
জন্য শিশু আইন, ১৯৭৪ প্রণীত হয়। ১৯৭৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এবং ১৯৮০ সালের ১ জুন বাংলাদেশের সর্বত্র
এ আইটি কার্যকর হয়। আইনটিতে ১০টি ভাগে মোট ৭৮টি ধারা রয়েছে। শিশুকল্যাণমূলক আইনের ক্ষেত্রে ১৯৭৪
সালের শিশু আইন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ আইন কার্যকর করার প্রেক্ষিতে ১৯২২ সালের বেঙ্গল শিশু আইন ও
রিফরমেটরি স্কুল অ্যাক্ট রহিত করা হয়। এটি শিশুদের হেফাজত, রক্ষণাবেক্ষণ, তাদের সাথে ব্যবহার, চিকিৎসা ও
কিশোর অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি সম্পর্কিত আইন একীভূত ও সংশোধন করার একটি অনন্য আইন। শিশু আইন
মূলত বাংলাদেশের শিশু ও কিশোরদেরকে অপরাধের পথ থেকে ফিরিয়ে এনে সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপন বা সুনাগরিক
হিসেবে গড়ে তোলা জন্য এক অনবদ্য পদক্ষেপ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। শিশু আইন, ১৯৭৪ অনুযায়ী শিশু কারা?
ক) ১৫ বছরের কম বয়স্ক কোনো ছেলে বা মেয়ে খ) ১৬ বছরের কম বয়স্ক কোনো ছেলে বা মেয়ে
গ) ১৭ বছরের কম বয়স্ক কোনো ছেলে বা মেয়ে ঘ) ১৮ বছরের কম বয়স্ক কোনো ছেলে বা মেয়ে
২। শিশু আইন, ১৯৭৪-এ শিশুদের যেসকল অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে তা হলো:
র. মামলায় জড়িত শিশুর পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না
রর. কোনো শিশুকে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা কারাদন্ড দেয়া যাবে না
ররর. কোনো শিশুকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করা যাবে না
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র