বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে মাদকাসক্তি অন্যতম। মাদকের মরণছোবলে দেশের তরুণ ও
যুবশক্তি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য ১৯৮৬ সালে গঠন করা হয়
“মাদকদ্রব্য বিরোধী জাতীয় কমিটি”। ২৮ ফেব্রæয়ারি ১৯৮৭ সালে মাদকদ্রব্যবিরোধী জাতীয় কমিটির প্রথম সভার
মাদকদ্রব্য সম্পর্কিত প্রচলিত আইনসমূহ সংস্কার ও নতুন আইন প্রণয়নের জন্য কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ১৯৮৯
সালের ২০ জানুয়ারি “জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড” গঠিত হয় এবং মাদক নিয়ন্ত্রন অধ্যাদেশ, ১৯৮৯ জারি করা হয়।
মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৯৯০ সালের ২ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ
বলবৎ করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের বিধান মোতাবেক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো:
১। মাদকদ্রব্য: মত্ততাজনক বা নেশাগ্রস্ত দ্রব্য যা গ্রহণ বা সেবনে মানুষ অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যেতে পারে বা হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে।
‘ক’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য: অপিয়াম, পপি, আফিম উদ্ভূত মাদকদ্রব্য যেমনÑ মরফিন, কোডিন, থিবাইন, নোজকাপাইন,
নারকোটিন ইত্যাদি। আফিম সমধর্মী মাদকদ্রব্য যেমনÑ পেথিডিন, মেথাডন, আলফা প্রোডাইন, বেটাপ্রোডাইন
ইত্যাদি। কোকেন বা কোকা উদ্ভূত যেকোনো পদার্থ, ক্যানাবিস, চরশ, হাশিশ, হেরোইন, মরফিন ইত্যাদি।
‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য: গাঁজা, ভাং, তামাকদ্রব্য, অ্যালকোহলো, সকল প্রকার মদ, মিথাইল ইত্যাদি।
‘গ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য: তাড়ি, পঁচুই, স্পিরিট, অক্সাজিপাম, লোরাজিপাম, টেমাজিপাম ইত্যাদি।
২। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য “জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ
বোর্ড” নামক ১৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি নীতিনির্ধারণী সংস্থা গঠন করা হয়। সরকার মনোনীত একজন সদস্য এ বোর্ডের
চেয়ারম্যান। এছাড়া সরকারের এগারো জন মন্ত্রী ও একজন সচিব বোর্ডের অন্যতম সদস্য।
বোর্ডের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
ক. মাদকসৃষ্ট সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া রোধের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ;
খ. মাদকদ্রব্য উৎপাদন, সরবরাহ, ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন;
গ. মাদকসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য যেকোনো ধরনের গবেষণা ও জরিপ পরিচালনা;
ঘ. মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
ঙ. মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রচারমূলক কার্যক্রম
গ্রহণ; এবং
চ. মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সাথে যোগাযোগ স্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজের
সমন্বয় সাধন।
৩। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর: এ আইনের বিধানমতে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের যাবতীয় সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম
পরিচালনার জন্য “জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর” প্রতিষ্ঠা করা হয়। একজন মহাপরিচালক এ অধিদপ্তরের
যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।
৪। মাদকদ্রব্য উৎপাদন ও ব্যবহার: এ আইন অনুসারেÑ
ক. অ্যালকোহলো ব্যতীত সকল প্রকার মাদকদ্রব্য এবং মাদক উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এমন সব উপকরণের চাষাবাদ,
উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত, পরিবহন, আমদানি, রপ্তানি, সরবরাহ, ক্রয়বিক্রয়, ধারণ, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন ও
ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
খ. শর্তসাপেক্ষে অ্যালকোহলো উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হবে। প্রধান প্রধান
শর্তগুলো হলো:
১। এ আইনের অধীনে প্রদত্ত অনুমতি ব্যতীত অ্যালকোহলো উৎপাদনের জন্য কারখানা স্থাপন করা যাবে না;
২। কোনো ওষুধ তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার;
৩। অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যতীত কোনো ব্যক্তি অ্যালকোহলো পান করতে পাবে না;
৪। কোনো বিদেশি নাগরিক প্রকাশ্যে নয়, লাইসেন্স প্রাপ্ত বার-এ বসে অ্যালকোহলো পান করতে পারবে; এবং
৫। চিকিৎসার প্রয়োজনে ও সিভিল সার্জন বা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপকের লিখিত ব্যবস্থাপত্র এবং সেই
ব্যবস্থাপত্রের জন্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের লিখিত অনুমোদন ছাড়া কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহলো গ্রহণের
অনুমতি দেওয়া যাবে না।
৫। মাদকের দোকান বন্ধকরণ: কোনো এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ
কমিশনার যে কোনো লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান অনধিক ১৫ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে পাবেন। প্রয়োজনে
বোর্ডের অনুমতিক্রমে এ মেয়াদ ত্রিশ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
৬। দেহ তল্লাশি: মাদকদ্রব্য বহনে সন্দেহভাজন ব্যক্তির সর্বোতভাবে দেহ তল্লশি করা যাবে।
৭। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র: প্রয়োজনে সরকার এক বা একাধিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
৮। মাদকাসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসা: কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বা তার অভিভাবক মাদকাসক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা না
নিলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার মনোনীত প্রতিনিধি মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠাতে নির্দেশ দিতে
পারবেন।
৯। শাস্তির বিধান: এ আইনের বিধান লঙ্ঘন করে মাদকদ্রব্য গ্রহণ, সরবরাহ, বহন, বিপণন, চাষাবাদ ও সংরক্ষণ ইত্যাদি
করলে মাদকদ্রব্যের শ্রেণি, প্রকৃতি, পরিমাণ, প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী সর্বনি¤œ দুই বছর থেকে যাবজ্জীবন, মৃত্যুদন্ড এবং
অর্থদন্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এছাড়া কোনো ব্যক্তি যদি সজ্ঞানে এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনের জন্য তার মালিকানাধীন বা দখলীয়
ঘরবাড়ি, জমি, যানবাহন, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ব্যবহারের অনুমতি দেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং
অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
এ আইনটিতে ১৯৩০ সালের “বিপজ্জনক ড্রাগস অ্যাক্ট”- এ যে সকল বিষয়ে অস্পষ্টতা ও জটিলতা ছিল তা দূর করা
হয়েছে। আইনটি মূলত এদেশের তরুণ ও যুবসমাজকে মাদকের মরণছোবল থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য প্রণয়ন করা
হয়েছে। এ আইনের সবচেয়ে উল্লেযোগ্য বিষয় হলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও
পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে মাদকাসক্তি অন্যতম। মাদকের মরণছোবলে দেশের তরুণ ও যুবশক্তি
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য ১৯৮৬ সালে গঠন করা হয় মাদকদ্রব্য
বিরোধী জাতীয় কমিটি। ২৮ ফেব্রæয়ারি ১৯৮৭ সালে মাদকদ্রব্য বিরোধী জাতীয় কমিটির প্রথম সভার মাদকদ্রব্য
সম্পর্কিত প্রচলিত আইনসমূহ সংস্কার ও নতুন আইন প্রণয়নের জন্য কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ১৯৮৯ সালের ২০
জানুয়ারি “জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড” গঠিত হয়। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের
লক্ষ্যে ১৯৯০ সালের ২ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ বলবৎ করা হয়। এ আইনটিতে ১৯৩০ সালের
“বিপজ্জনক ড্রাগস অ্যাক্ট”- এ যে সকল বিষয়ে অস্পষ্টতা ও জটিলতা ছিল তা দূর করা হয়েছে। আইনটি মূলত
এদেশের তরুণ ও যুবসমাজকে মাদকের মরণছোবল থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.৭
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। বাংলাদেশের জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড-এর সদস্য সংখ্যা কতজন?
ক) ১৯ জন খ) ২১ জন
গ) ২৩ জন ঘ) ২৫ জন
২। মাদক নিরোধ অধ্যাদেশ, ১৯৮৯ অনুযায়ী মাদকদ্রব্য হলোÑ
র. অপিয়াম পপি, মরফিন, নারকোটিন, পেথিডিন, হেরোইন, মরফিন
রর. গাঁজা, ভাং, তামাকদ্রব্য, অ্যালকোহল, সকল প্রকার মদ, মিথাইল
ররর. তাড়ি, পঁচুই, স্পিরিট, অক্সাজিপাম, লোরাজিপাম, টেমাজিপাম
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র