নারী ও শিশু নির্যাতনরোধ আইন, ২০০৩-এর ধারাসমূহ বর্ণনা কর

নারী ও শিশু নির্যাতন, নারীর প্রতি অব্যাহত বৈষম্য ও সহিংসতা রোধে ১৯৮৩ ও ১৯৮৫ সালে পৃথক দুটি আইন প্রণয়ন
হলেও তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। তাছাড়া সময়ের পরিবর্তনে নারী ও শিশু নির্যাতনে যে নতুন রুপে প্রকাশ পায়
তারই প্রেক্ষিতে প্রণীত হয় “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০”। কিন্তু আইনটির কিছু অস্পষ্টতা ও দুর্বলতার
কারণে কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। ফলে আইনটির সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে প্রণীত হয়
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন ২০০৩। এ আইনে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’-এর ১২টি
অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা হয়েছে এবং অপরাধের তদন্ত ও বিচার সম্পর্কিত ৬টি নতুন ধারা সংযোজিত হয়েছে। এ আইনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
১। শিশু: এ আইনে শিশু বলতে অনধিক ১৬ বছরের ছেলেমেয়েকে বুঝানো হয়েছে।
২। যৌতুক: এ আইনে যৌতুক বলতে, কোনো বিবাহের বর বা বরের পিতা বা মাতা বা প্রত্যক্ষভাবে বিবাহের সঙ্গে
জড়িত বরপক্ষের অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত বিবাহের সময় বা তার পূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে
বিবাহ স্থির থাকার শর্তে, বিবাহের পণ হিসেবে কনেপক্ষের কাছে দাবিকৃত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ। অথবা,
কোনো বিবাহে কনে কর্তৃক বিবাহের পর বরপক্ষের অন্য কোনো ব্যক্তিকে উক্ত বিবাহের সময় বা তার পূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক থাকাকালে, বিবাহ স্থির থাকার শর্তে বিবাহের পণ হিসেবে প্রদত্ত বা প্রদানে সম্মত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ।
৩। দহনকারী পদার্থ দ্বারা সংঘটিত অপরাধের শাস্তি: যদি কোনো ব্যক্তি দহনকারী বা ক্ষয়কারী পদার্থ দ্বারা নারী বা শিশুর
মৃত্যু ঘটায় বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড বা যাবজ্জীবন
কারাদন্ড এবং অতিরিক্ত অনুর্ধ্ব একলক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। এছাড়া শীরের অন্য কোনো অঙ্গহানি, বিকৃতি বা নষ্ট হলে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
৪। নারী পাচার ও শাস্তি: কোনো ব্যক্তি যদি বে-আইনি বা নীতিগর্হিত কাজে নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে কোনো নারীকে
বিদেশে পাচার বা প্রেরণ অথবা ক্রয়বিক্রয়, ভাড়া বা নির্যাতনের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর বা আটক রাখার জন্য অভিযুক্ত হয়, তবে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
৫। শিশুর প্রতি অবিচার ও শাস্তি: নারী ও শিশু ক্রয়বিক্রয়, আটক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে অপহরণের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন
বা অন্যূন ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ডসহ অতিরিক্ত অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে নারী বা শিশুকে আটক রাখার ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডসহ অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে।
৭। ধর্ষণের শাস্তি: কোনো নারী বা পুরুষকে ধর্ষণ করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
৮। ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুর ভরণপোষণ: এ আইন অনুযায়ী ধর্ষণের ফলশ্রæতিতে জন্মলাভকারী শিশুর
ভরণপোষণের দায়িত্ব সরকার বহন করবে। পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে ২১ বছর এবং কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে বিয়ের পূর্ব
পর্যন্ত ভরণপোষণের যাবতীয় খরচ ধর্ষকের নিকট থেকে সরকার আদায় করবে।
৯। যৌন নিপীড়ন: এ আইনে কোনো পুরুষ অবৈধভাবে তার যৌনাকাঙ্খা পূরণের উদ্দেশ্যে তার শরীরের যে কোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর যৌনাঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করলে তা যৌন নিপীড়ন হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষত্রে অভিযুক্তের শাস্তি হবে ন্যূনতম ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড।
১০। সম্ভ্রমহানি জনিত কারণে আত্মহত্যা: কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তির ইচ্ছাকৃত কোনো কাজের দ্বারা
সম্ভ্রমহানি হওয়ার প্রত্যক্ষ কারণে কোনো নারী আত্মহত্যা করলে বা উক্ত ব্যক্তি নারীকে প্ররোচিত করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনধিক ১০ বছর, ন্যূনতম ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে।
১১। যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি: কোনো নারীর স্বামী, পিতামাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষের অন্য
কোনো ব্যক্তি যদি যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করে, আহত করে তবে যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
১২। তদন্তের সময়সীমা: এ আইনের আওতায় সংঘটিত কোনো অপরাধ হাতেনাতে ধরা পড়লে অপরাধ সংঘটনের ১৫ দিনের মধ্যে বিচার কার্য শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে তদন্তের জন্য সর্বোচ্চ ১০৫ দিন ধার্য করা হয়েছে।
১৩। রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার: সংশোধিত বিধান অনুযায়ী বাদী বা বিবাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার বিচার রুদ্ধদ্বার কক্ষে পরিচালনার সুযোগ রাখা হয়েছে। আইনটি নারী ও শিশুর কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। পূর্বের আইনগুলোর তুলনায় আইনটি যথেষ্ট বাস্তবসম্মত। এ আইনে নারী ও শিশুর সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে অপরাধীদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সারসংক্ষেপ
নারী ও শিশু নির্যাতন, নারীর প্রতি অব্যাহত বৈষম্য ও সহিংসতা রোধে ১৯৮৩ ও ১৯৮৫ সালে পৃথক দুটি আইন প্রণয়ন
হলেও তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। তাছাড়া সময়ের পরিবর্তনে নারী ও শিশু নির্যাতনের যে নতুন রুপ প্রকাশ
পায় তারই প্রেক্ষিতে প্রণীত হয় “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০”। কিন্তু আইনটির কিছু অস্পষ্টতা ও
দুর্বলতার কারণে কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। ফলে আইনটির সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই
প্রেক্ষিতে প্রণীত হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩। এ আইনে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন
আইন ২০০০’-এর ১২টি অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা হয়েছে এবং অপরাধের তদন্ত ও বিচার সম্পর্কিত ৬টি নতুন ধারা
সংযোজিত হয়েছে। আইনটি নারী ও শিশুর কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। পূর্বের আইনগুলোর তুলনায় আইনটি যথেষ্ট বাস্তবসম্মত।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৫.৮
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন :
১। এ আইনের আওতায় সংঘটিত কোনো অপরাধ হাতেনাতে ধরা পড়লে কতদিনের মধ্যে বিচার কার্য শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে?
ক) ১৫ দিন খ) ৩০ দিন
গ) ৪৫ দিন ঘ) ৬০ দিন
২। এ আইন অনুযায়ী বে-আইনি বা নীতিগর্হিত কাজে নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে কোনো নারীকে বিদেশে পাচারের শাস্তিÑ
র. মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড
রর. যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ অতিরিক্ত অর্থদন্ড
ররর. মৃত্যুদন্ড বা ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]