বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে গৃহীত পদক্ষেপ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত ১৫ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলো পরিকল্পিত
অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদন শক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ়
উন্নতি সাধন; যাতে নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং যুক্তিসংগত বিনোদন ও অবকাশের অধিকার
নিশ্চিত হয়। সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে সকল নাগরিকের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে সরকারি এবং বেসরকারি
পর্যায়ে কতগুলো সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবসম্মত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
১. খাদ্য (ঋড়ড়ফ): বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সার্বিক কৃষি ও পল্লি উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান
করা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০), জাতীয় কৃষিনীতি ও সহ¯্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে
কৃষিখাতের উন্নয়নের সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি উপকরণে
ভর্তূকি বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা, কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি এবং প্রাপ্তি সহজীকরণ করা হয়েছে। মাটির গুণাগুণ
বজায় রাখা ও অধিক ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুষম সার ও জৈব সারের ব্যবহার কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কার্যক্রম
গ্রহণ করা হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য
চাহিদা মেটাতে দেশজ খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষিখাতের সার্বিক উন্নয়নকে সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে।
কৃষিখাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্রসেচ সম্প্রসারণ, জলাবদ্ধতা নিরসন, নিবিড় চাষ, উন্নতমানের ও উচ্চফলনশীল বীজ
উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ, জমির ব্যবহার বহুধাকরণ, পতিত জমি পুনরুদ্ধার, লবণাক্ত সহিষ্ণু ও স্বল্প সময়ের শস্যের
জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ প্রভৃতি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
কৃষকের চাহিদা ও বাজার চাহিদাভিত্তিক সিস্টেম বেইজড এবং সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় কীটপতঙ্গ/রোগবালাইমুক্ত,
খরা/লবণাক্ততা সহিষ্ণু, আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী এবং স্বল্প সময়ে ফসল পাওয়া যায় এরূপ শস্যের জাত ও প্রযুক্তি
উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণসহ সার্বিক কৃষি ব্যবস্থাপনাকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের জাত
উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল উপকূলীয় এলাকা ধান চাষের আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের (ফেব্রæয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত) ৮.৬৯ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং
১৯.৭৪ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছে। খাদ্য চাহিদা পূরণে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অধিক হারে
মানসম্মত বীজ উৎপাদন ও কৃষকদের নিকট সরবরাহের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন
সারাদেশে ২৩টি দানা শস্যবীজ উৎপাদন খামার, ২টি আলু উৎপাদন খামার, ৩টি ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন খামার, ২টি
সবজিবীজ উৎপাদন খামার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের জনসাধারণের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে
কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন খাত ও উপখাত, যেমনÑ কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম, কৃষি সম্প্রসারণ ও প্রশিক্ষণ, খাদ্যদ্রব্যের
বিপণন, কৃষি সহায়তা ও পুনর্বাসন, কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন, বীজ উৎপাদন, সেচ কার্যক্রম, শস্য সংরক্ষণসহ
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাÐ পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ৪টি হাইব্রিডসহ মোট ৬১টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন
করেছেন। এর মধ্যে লবণাক্ততা সহিষ্ণু, জলমগ্নতা সহিষ্ণু, খরাসহিষ্ণু উচ্চফলনশীল ধান রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা
ইনস্টিটিউট গম, আলু, সরিষা, শাকসবজি, ফল, মসলাসহ বিভিন্ন ফসলের ৬০টি উচ্চফলনশীল জাত এবং ৭৫টি উন্নত ফসল ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবন করেছে।
চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে অনাহার থেকে বাঁচানোর জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), বিনা মূল্যে প্রদত্ত
খাদ্য (এজ), টেস্ট রিলিফ, ভিজিএফ , ভিজিডিসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও দুস্থ দরিদ্রদের খাদ্য সুবিধা দানের লক্ষ্যে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি, অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা, বিধবা ও স্বামী
পরিত্যক্ত দুস্থ মহিলা ভাতা কার্যক্রম এবং বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। খাদ্যখাতে সরকার
ঘোষিত ভিশনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ২০২১ সালের মধ্যে দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষের মানসম্পন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণ
এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ২,১২২ কিলো ক্যালরির ঊর্ধ্বে খাদ্যশক্তি নিশ্চিত করা। নিচে ২০১৪-১৫
অর্থবছরে সাহায্য কর্মসূচির আওতায় চলমান বিভিন্ন কর্মসূচির সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হলো:
সারণি ১.৬.১ : বাংলাদেশ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি
কর্মসূচির নাম মোট বরাদ্দ বয়স্ক ভাতা ১৩০৬.৮০ কোটি টাকা
অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ২৪০ কোটি টাকা
বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা ভাতা ৪৮৫.৭৬ কোটি টাকা দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা ১৩২ লাখ টাকা কাজের বিনিময়ে খাদ্য ১,৩১৭.৭৪ কোটি টাকা ভিজিডি ৮৮৬.৯২ কোটি টাকা
ভিজিএফ এবং গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টেস্ট রিলিফ-টিআর) ২৮৩.৮৪ কোটি টাকা
এছাড়া অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, ন্যাশনাল সার্ভিস, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র,
ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
২. বস্ত্র (ঈষড়ঃযরহম): বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৩ সালের মধ্যে বস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং বস্ত্র রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারণ করে দেশের প্রথম বস্ত্রনীতি ঘোষণা করে। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) বস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা
অর্জনের লক্ষ্যে ২০০৫ সালের মধ্যে বার্ষিক মাথাপিছু ১৭ মিটার বস্ত্র প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়।
বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ বস্ত্রের চাহিদা দেশীয় শিল্প থেকে আসে। বস্ত্র ও তৈরি
পোশাক শিল্পে বর্তমানে ৫০ লক্ষাধিক জনবল নিয়োজিত রয়েছে। বর্তমানে বন্ধ মিলগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করার ব্যবস্থা
নেওয়া হয়েছে। বস্ত্রখাতের উন্নয়নে বস্ত্র প্রযুক্তিবিদ ও বস্ত্রবিষয়ক দক্ষ জনশক্তির চাহিদা পূরণে বস্ত্র দপ্তর ৫টি টেক্সটাইল
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ৬টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং ৪০টি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ
রেশম বোর্ড, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, বাংলাদেশ সিল্ক ফাউন্ডেশন, পাট অধিদফতর প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান বস্ত্রখাতের
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সমাজের দুস্থ ও দরিদ্র শ্রেণির বস্ত্রের চাহিদা পূরণের
লক্ষ্যে সরকার পুরাতন কাপড় আমদানিসহ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বস্ত্রখাতের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের অধীন ৫টি মিলকে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনে
বিক্রয়ের জন্য ন্যস্ত করা হয়েছে। বস্ত্রশিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সংগতি রেখে প্রয়োজনীয় কারিগরি জনবল সৃষ্টির
উদ্দেশ্যে বস্ত্র দপ্তর প্রযুক্তিগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। রেশমচাষিদের রেশম চাষের বিভিন্ন কলাকৌশলের উপর
প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য করা হচ্ছে। পাটজাত পণ্যকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করে
পাটনীতি-২০১১ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশি ও তোষা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে পাটবস্ত্রের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি
হয়েছে। বর্তমানে মোট ৮টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি বস্ত্র উৎপাদিত হচ্ছে।
দেশের একমাত্র টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ৪টি টেক্সটাইল ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটকে
আপগ্রেড করে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে উন্নীত করা হয়েছে এবং ৪০টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন
করা হয়েছে।
৩. বাসস্থান (ঐড়ঁংরহম): দরিদ্র জনগোষ্ঠীর গৃহায়ণের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক ১৯৯৭-৯৮ সালে গৃহায়ণ তহবিল গঠন করা
হয়। এ তহবিল দ্বারা এ পর্যন্ত ৩.৫৫ লক্ষ জন উপকৃত হয়েছে। গৃহনির্মাণ কর্মসূচির আওতায় ফেব্রæয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত
৬১,০৯২টি গৃহনির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সারা দেশে মোট ৫১৩টি এনজিও ৬৪টি জেলার ৪৫০টি উপজেলায় গৃহায়ন ঋণ
কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। শহরাঞ্চলের ভাসমান জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কয়েকটি পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করা
হয়েছে। ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে গ্রহণ করা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প।
১৯৯৭-২০০২ পর্যন্ত সময়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ হাজার পরিবারকে এ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন করা হয়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় জুলাই ২০০২-ডিসেম্বর ২০১০ মেয়াদে আশ্রয়ণ প্রকল্প (ফেজ-২) গ্রহণ করা হয় এবং
ডিসেম্বর ২০১০ প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৮,৭০৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৫০ হাজার
ভূমিহীন, গৃহহীনও ছিন্নমূল দরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে জুলাই, ২০১০ থেকে জুন, ২০১৭ মেয়াদে ১,১৬৯.১৭
কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকায় বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপনকারী ছিন্নমূল অসহায় মানুষদের নিজ এলাকায় স্বস্তিকর পরিবেশে বাসগৃহে
প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ঘরে ফেরা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এর আওতায়
৬৫৬টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছর ঘরে ফেরা কর্মসূচির আওতায় ৩০০টি বস্তিবাসী
পরিবারের মধ্যে ১.৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়।
‘সকলের জন্য আবাসন’ কর্মসূচির আওতায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয়
শহর এবং বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৪১,৫৮১টি প্লট উন্নয়ন ও ৩১,৫৩৩টি ফ্ল্যাট
নির্মাণের জন্য ৪৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গুচ্ছগ্রাম পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ৪৯টি জেলার ১০২টি
উপজেলায় ১৬৩টি গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করে ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমিহীন ৭,১৭২টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করেছে।
৪. শিক্ষা (ঊফঁপধঃরড়হ): সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার প্রতিপালনে ‘সকলের জন্য শিক্ষা’ নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে সরকার একটি নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান এবং
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকার যুগোপযোগী ও কর্মমুখী
শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন করেছে। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে শিক্ষকদের
প্রশিক্ষণ, নতুন কারিক্যুলাম প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনহ নানাবিধ উন্নয়ন ও সংস্কারধর্মী কার্যক্রম হাতে নেওয়া
হয়েছে।
বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০৮,৫৩৭টি। প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির সংখ্যা ও হার
ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি এবং বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১,৫০০টি প্রাথমিক
বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের ২৬,১৯৩টি রেজিস্টার্ড বেসরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে মার্চ ২০১৩ পর্যন্ত সময়ে ৫৫৫টি সরকারি এবং ৭৭টি
রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার করা হয়েছে। সরকার বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করছে।
দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের ¯œাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
পশ্চাৎপদ স্কুলসমূহকে তথ্য প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করার লক্ষ্যে আইটি বেইজড মোবাইল ভ্যান চালু করা হয়েছে।
এছাড়া ২০,৫০০টি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ কম্পিউটার বিতরণ করা হয়েছে।
দেশের যুবশক্তিকে উৎপাদনশীল ও দক্ষ নাগরিকে পরিণত করার লক্ষ্যে দেশে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারের
জন্য মাদ্রাসাসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভোকেশনাল কোর্স চালু করা হয়েছে। দেশের বিপুলসংখ্যক
জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১ অনুমোদন করা হয়েছে।
উচ্চশিক্ষা প্রসারের জন্য সরকারি অর্থায়নে ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি
অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও আর্থ-সামাজিক কর্মকাÐে নারীদের
অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাধ্যমিক থেকে ¯œাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত ছাত্রী উপবৃত্তি প্রদান, বেতন মওকুফ সুবিধা প্রদান,
বই ক্রয়ের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদান ও পাবলিক পরীক্ষায় অংশগহণের জন্য পরীক্ষার ফি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকার শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। বাজেটে শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ১৩,৫০৪.৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং শিক্ষার প্রসারে
বেসরকারি সংস্থাগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম এনজিওর
মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং ছেলেমেয়েদের
বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য পিতা-মাতাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষার চাহিদা পরিপূরণে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, ই-বুক
ব্যবহারে পাঠদান, কারিক্যুলাম সংস্কার, সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু,
মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন, শিক্ষাখাতে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার প্রভৃতি যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করার লক্ষ্যে উপবৃত্তি প্রকল্প, দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, শহরের কর্মজীবী
শিশুদের মৌলিক শিক্ষা প্রকল্প, রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রকল্পসহ আরও বেশকিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত মান উন্নয়ন, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণ, শিক্ষাক্ষেত্রে
আইসিটি কার্যক্রমের ব্যবহার এবং সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ব্যাপক সহায়তা প্রদানের ফলে দেশে
শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবিলায় ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
পাশাপাশি ৬৯টি বেসরকার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে (অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৩)।
৫. স্বাস্থ্য (ঐবধষঃয): সরকারের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা হলো সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের
প্রধান পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা (চৎরসধৎু ঐবধষঃয ঈধৎব)-র উপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক
স্বাস্থ্য পরিচর্যায় শিশুদের মারাত্মক ছয়টি রোগ:ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, পোলিও, হুপিং কফ, য²া ও হাম প্রতিরোধের
জন্য ১৯৭৯ সাল থেকে টিকাদান কর্মসূচি চালু রয়েছে। দেশকে পোলিওমুক্ত করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী জাতীয় টিকাদান
দিবস পালিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি-২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। মাঠকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে
ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, য²াও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ এবং ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত অন্ধত্ব দূরীকরণ, কৃমিনাশক
ঔষুধ বিতরণ ও টিকাদান ইত্যাদি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, পরিবারকল্যাণ, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচিকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১১-১৬ মেয়াদে ৫৬,৯৩৩.৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন
করেছে। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের জন্য এ পর্যন্ত ৩,৮৮১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও
পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, ১২৮১৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ৪২১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহকে সচল রেখে
স্বাস্থ্য, পরিবারকল্যাণ ও পুষ্টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া তিন স্তরবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার
লক্ষ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং উপজেলা
পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহকে শক্তিশালী করা হয়েছে।
১৩২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি প্রসূতি সেবা চালু করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার কমানোর লক্ষ্যে
তৃণমূল পর্যায়ে কর্মরত পরিবারকল্যাণ সহকারী ও মহিলা স্বাস্থ্য সহকারীদের ধাত্রীবিদ্যায় ৬ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া
হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিচের পদক্ষেপগুলো
গ্রহণ করা হয়েছে:
জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ও জাতীয় জনসংখ্যা নীতির অনুমোদন;
সামর্থ্যহীনদের জরুরি চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে প্রদান;
শহরাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যবস্থা করা;
দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, দ্বীপ, সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা
প্রদান;
ক্রমান্বয়ে সকল জেলা ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ওঈট/ঈঈট চালু করা;
কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ঊ-যবধষঃয সার্ভিস চালু করা;
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিয়মিত কার্যক্রমের মাধ্যমে সারাদেশে পুষ্টি কার্যক্রম
সম্প্রসারণ করা;
৫টি নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজ চালু এবং আরো ৩টি স্থাপন করা;
স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিভিন্ন এনজিওর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে নগরে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা
সম্প্রসারিত ও জোরদার করা;
১২,২০৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু এবং এগুলো থেকে প্রায় ১২ কোটি গ্রহীতাকে সেবা প্রদান; এবং
৪৮২টি হাসপাতালে মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবা এবং ৮টি হাসপাতালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে
টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান।
সরকার স্বাস্থ্যখাতকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার জন্য স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা ও ঊ-যবধষঃয কর্মসূচি, পুষ্টিসেবা, চিকিৎসা
শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, নার্সিং সেবা ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়া সামর্থ্যহীনদের বিনামূল্যে জরুরি
চিকিৎসাসেবা প্রদান, ২০১১ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি এবং ২০১৩ সালের মধ্যে প্রতি বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত
স্যানিটেশনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য ২০১১-১৬ মেয়াদে সমন্বিত
স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উন্নয়ন সেক্টর (ঐচঘঝউচ) কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব ব্যবস্থা গ্রহণের
ফলে স্বাস্থ্যখাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে।
৬. চিত্তবিনোদন (জবপৎবধঃরড়হ): বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, সংস্কার, প্রসার ও সম্প্রসারণেল লক্ষ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক
মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৭টি দপ্তর/সংস্থা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং এর মাধ্যমে সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা,
নাটক, চলচ্চিত্র ও সুকুমার শিল্পের উৎকর্ষ সাধনে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি চারুকলা, নাট্যকলা, সংগীত ইত্যাদির মাধ্যমে চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করছে। জনগণের
চিত্তবিনোদনে বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিশুপার্ক, উদ্যান, লেক, পার্ক, গার্ডেন, ইকোপার্ক, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি
পরিচালিত হচ্ছে। দেশজ সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে ২২টি কর্মসূচির অনুকূলে ২৬.৮ কোটি টাকা প্রদান
করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পরিচালিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশন জনগণের চিত্তবিনোদনের
জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান, যেমনÑ গান, নাটক, সিমেনা, সংবাদ, খেলাধুলা বিষয়ক অনুষ্ঠান ইত্যাদি সম্প্রচার করছে। বিগত
১৯৯৩ সাল থেকে আকাশ সংস্কৃতি উন্মুক্ত করায় স্যাটেলাইট সংযোগের (ডিশ অ্যান্টেনা) বদৌলতে সারা বিশ্বের টিভি
অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
ধর্মীয়, পেশাগত এবং রাষ্ট্রীয় কারণে এদেশে নানারকম সামাজিক উৎসবের আয়োজন করা হয়। যেমনÑ হালখাতা, বৈশাখী
মেলা, পৌষ মেলা, নবান্ন উৎসব, বিয়ে, পৌষ-পার্বন, জন্মদিন, মনীষীদের স্মরণ উৎসব, বইমেলা, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা
দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ উৎসব, জাতীয় ঋতুভিত্তিক উৎসব, শারদীয় দুর্গোৎসব, বাণিজ্যমেলা ইত্যাদি। এসব সামাজিক
উৎসব আমাদের চিত্তবিনোদনের অনন্য মাধ্যম।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন মানুষের বিনোদনের জন্য পর্যটন শিল্পকে ব্যাপক ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ইতিমধ্যে
নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা খেলাধুলা,
ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও নানাবিধ অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা করছে; ক্রীড়া পরিদপ্তর
কর্তৃক বার্ষিক ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, হ্যান্ডবল, দাবা, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন, অ্যাথলেটিক্স এবং গ্রামীণ খেলাধুলার
মাধ্যমে ক্রীড়া উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়া জেলা পাবলিক লাইব্রেরির উন্নয়ন, জাতীয় চিত্রশালা নির্মাণ, হাছনরাজা
একাডেমি নির্মাণ, পল্লিকবি জসীমউদ্দীন সংগ্রহশালা নির্মাণ, লালবাগ কেল্লা, সাউন্ড অ্যান্ড লাইট শো, বাংলা একাডেমির
নতুন ভবন নির্মাণ, জাতীয় আর্কাইভে মূল্যবান নথিপত্র বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের
চিত্তবিনোদনের সুযোগ ও ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে।
মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের উপর্যুক্ত কার্যক্রমের বাইরে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে স্বনির্ভর
বাংলাদেশ, পল্লি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ ব্যাংক,
বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম, গ্রামীণ সমাজসেবা প্রকল্প, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়
সতর্কীকরণ ব্যবস্থা জোরদার, উপকূলীয় অঞ্চলে আপৎকালীন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রভৃতি পদক্ষেপ অন্যতম।
সারসংক্ষেপ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত ১৫ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলো পরিকল্পিত
অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদন শক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত
মানের দৃঢ় উন্নতি সাধন, যাতে নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং যুক্তিসংগত অবকাশের অধিকার
অর্জন নিশ্চিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে সরকার কতগুলো বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ
করেছে। গৃহীত পদক্ষেপগুলোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের
সূচনা হবে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.৬
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। বিশ্বে বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান কততম?
ক) ১০ তম খ) ১২ তম
গ) ১৫ তম ঘ) ১৭ তম
২। ভিজিডি কর্মসূচির জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকার কত কোটি টাকা বরাদ্ধ করে?
ক) ৮৮৯.২০ কোটি খ) ৮৮৬.৯২ কোটি
গ) ৮৯০.২০ কোটি ঘ) ৮৯০.৩০ কোটি
অনুশীলনী (ইউনিটÑ০১)
ক. বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। ‘ঈড়সসড়হ ঐঁসধহ ঘববফং’ গ্রস্থটি কে রচনা করেন?
ক) ডধষঃবৎ অ. ঋৎরবফষধহফবৎ খ) ঈযধৎষড়ঃঃব ঞড়ষিব
গ) খধৎিবহপব ক. ঋৎধহশ ঘ) জড়নবৎঃ খ. ইধৎশবৎ
২. সামাজিকতা রক্ষা ও সভ্য জীবনযাপনের সাথে নিচের কোন চাহিদাটি সম্পৃক্ত?
ক) খাদ্য খ) চিত্তবিনোদন
গ) স্বাস্থ্য ঘ) বস্ত্র
৩. বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এর যথার্থ কারণÑ
ক) কৃষিভূমি হ্রাস খ) জনসংখ্যা বৃদ্ধি
গ) কৃষকের সংখ্যা হ্রাস ঘ) শিল্পপ্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি
৪. বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের প্রধান অন্তরায়Ñ
র. দারিদ্র্য রর. জনসংখ্যাস্ফীতি ররর. বেকারত্ব
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
৫. বাংলাদেশে বাসস্থান সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে যে কারণেÑ
র. নদী ভাঙনে রর. ঝড়-বন্যার কারণে ররর. রাজনৈতিক আদর্শহীনতায়
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র,রর ও ররর
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৬ ও ৭ নং প্রশ্নের উত্তর দিন:
‘ক’ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশটি জনগণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। ফলে দেশিটিতে
স্বাস্থ্যহীনতা ও পুষ্টিহীনতা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করেছে।
৬. উদ্দীপকে বর্ণিত ‘ক’ দেশটি নিচের কোন চাহিদা পূরণে ব্যর্থ?
ক) অর্থনৈতিক চাহিদা খ) সামাজিক চাহিদা
গ) মৌলিক মানবিক চাহিদা ঘ) মানবিক চাহিদা
৭. উক্ত চাহিদার অপূরণজনিত কারণে সৃষ্ট উল্লেখিত সমস্যার ফলে ‘ক’ দেশেÑ
র. উন্নয়ন ব্যবহত হবে রর. অকাল মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাবে ররর. অন্ধত্বের হার হ্রাস পাবে
ক) র ও রর খ) র ও ররর
গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর
খ. সৃজনশীল প্রশ্ন
১। অধ্যাপক শায়লা বেগম সমাজকর্ম ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের মানুষের অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন সম্পর্কে পাঠদান করতে গিয়ে
বলেন, ‘প্রাণী মাত্রই একটি চাহিদা প্রয়োজন অনুভব করে। এটি শরীর গঠন করে, বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটায়।’ অপর একটি
প্রয়োজন সম্পর্কে বলেন, এটি মানুষকে সভ্য সামাজিক মানুষে পরিণত করে। তিনি মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের
কয়েকটি অন্তরায় ও চিহ্নিত করেন। যেমনÑ জনসংখ্যাস্ফীতি, বেকারত্ব, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইত্যাদি।
ক) সমাজবিজ্ঞানী সি টোলের মতে মৌলিক মানবিক চাহিদা কয়টি? ১
খ) মানসিক বিকাশের জন্য মৌল চাহিদা পূরণ প্রয়োজন কেন? ২
গ) উদ্দীপকে বর্ণিত মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত অন্তরায়গুলো ছাড়াও বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের আরও অন্তরায় রয়েছেÑ
বিশ্লেষণ করুন। ৪
২। সমাজকর্মী তৌহিদ সামাজিক সমস্যার উপর পিএইচডি করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। রাতের ঢাকার স্বাভাবিক চিত্র
দেখে তিনি অবাক হন। রাস্তার পাশে, রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালে শুয়ে রাত কাটাচ্ছে নানা ধরনের মানুষ। এসব
দৃশ্য একদিকে তাকে মর্মাহত করে, অন্যদিকে তিনি তার প্রশ্নের জবাবটি খুঁজে পান। তার ধারণা, মৌলিক মানবিক
চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকেই সৃষ্টি হয় সামাজিক সমস্যা।
ক) মানুষের আশ্রয়স্থল কী? ১
খ) মৌলিক মানবিক চাহিদা বলতে কী বোঝায়? ২
গ) উদ্দীপকটিতে কোন মৌলিক মানবিক চাহিদাটির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা করুন। ৩
ঘ) উদ্দীপকের সর্বশেষ উক্তিটি কতটুকু যুক্তিসংগত বলে আপনার মনে হয়? মতামত দিন। ৪
উত্তরমালা
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১.১ : ১। গ ২। গ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১.২ : ১। খ ২। খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১.৩ : ১। ক ২। খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১.৪ : ১। খ ২। খ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১.৫ : ১। খ ২। ক
পাঠোত্তর মূল্যায়ন- ১.৬ : ১। খ ২। খ
চূড়ান্ত মূল্যায়ন- ১ : ১। খ ২। ঘ ৩। ক ৪। ঘ ৫। ঘ ৬। গ ৭। খ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]