ব্রিটিশ শাসিত বাংলাদেশে ১৯৪৩ সালে সরকারি পর্যায়ে ৪টি এতিমখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারি
সমাজকল্যাণ কার্যক্রমের সূচনা হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশ দ্বি-জাতিতত্তে¡ ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে
ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। বাংলাদেশ পাকিস্তানের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। যার নাম ছিল
পূর্ব পাকিস্তান। ভারত বিভক্তির পর ব্যাপক সংখ্যক মোহাজের ভারত থেকে বাংলাদেশে আগমনের ফলে সৃষ্ট আর্থ-
সামাজিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য তৎকালীন সরকার জাতিসংঘের নিকট আবেদন করে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলের
সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৫৩ সালে ঢাকায় সমাজকর্মের ওপর তিন মাসব্যাপী স্বল্পকালীন ‘প্রশিক্ষণ কোর্স’ প্রবর্তন করা হয়
যার মাধ্যমে বাংলাদেশে পেশাদার সমাজকর্ম শিক্ষার সূচনা হয়। ১৯৫৪ সালে ‘ঢাকা প্রজেক্ট’ নামে পরীক্ষামূলকভাবে শহর
সমষ্টি উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এই প্রজেক্টের সাফল্যের ভিত্তিতে ঢাকার কায়েতটুলীতে ১৯৫৫ সালে
পরীক্ষামূলকভাবে শহর সমষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে। এ
প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক সমাজকর্মের গোড়াপত্তন হয়। স্বেচ্ছামূলক সমাজসেবার
প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দানের লক্ষ্যে ১৯৫৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম প্রবর্তন করা হয়।
সময়ের প্রয়োজনে সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার জন্য ১৯৬১ সালে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে
হস্তান্তরিত ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র শিক্ষা পরিদপ্তর থেকে হস্তান্তরিত সরকারি এতিমখানা এবং জাতীয় সমাজকলাণ পরিষদ
থেকে হস্তান্তরিত হাসপাতাল সমাজসেবা এ তিনটি কার্যক্রম পৃথক প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্তির
মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজকল্যাণ পরিদপ্তর সৃষ্টি হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবার পর
১৯৭৪ সালে সমাজকল্যাণ পরিদপ্তর সমাজকল্যাণ বিভাগে উন্নীত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে সমাজকল্যাণ বিভাগকে
সমাজকল্যাণ অধিদফতর উন্নীত করা হয়। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের আর্থ-
সামাজিক সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে গৃহীত সরকারি সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে এর পরিধি বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৪ সালে
গ্রামীণ সমাজসেবা (জঁৎধষ ঝড়পরধষ ঝবৎারপব-জঝঝ) গ্রহণের মধ্য দিয়ে সরকারি সমাজসেবা কার্যক্রম গ্রাম পর্যায়ে
বিস্তার লাভ করে। নারীদের ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি তথা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে পল্লী মাতৃকেন্দ্র
(জঁৎধষ গড়ঃযবৎং ঈষঁন-জগঈ) কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পৃথক ও স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করার পূর্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথ
মন্ত্রণালয় হিসেবে সংযুক্ত ছিল। ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
নামে পৃথক ও স্বতন্ত্র দুটি মন্ত্রণালয়ের সৃষ্টি হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচিকে প্রতিষ্ঠানিক ও টেকসই মর্যাদা
এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের আওতায় আনয়নের জন্য , ১৯৬১; কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের
বিশেষ সুবিধা আইন, ২০০৬; ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১; শিশু আইন, ২০১৩; প্রতিবন্ধী ব্যক্তির
অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩; এবং নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন, ২০১৩ সহ উল্লেখযোগ্য
সংখ্যক আইন, বিধিামালা ও নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে আসছে। জাতিসংঘ ঘোষিত সর্বজনীন
মানবাধিকার সনদ, শিশু অধিকার সনদ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারসহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং অধিকার ও
ক্ষমতায়ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন নতুন কার্যক্রম বাস্তবায়নে স¦ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
৬টি দপ্তর ও সংস্থার মাধ্যমে দেশের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সমস্যাগ্রস্ত মানুষের সমস্যা
মোকাবিলায় জাতীয় চাহিদা, আকাঙ্খা, সরকারের অনুসৃত নীতি, আইন ও সাংবিধানিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কার্যক্রম
পরিচালনা করছে।। দপ্তর ও সংস্থাগুলো হচ্ছেÑ ১৯৫৬ সালে সৃষ্ট বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, ১৯৬১ সালে
সৃষ্ট সমাজকল্যাণ পরিদপ্তর যা ১৯৮৪ সালে সামাজসেবা অধিদফতরে রুপান্তরিত হয়, ১৯৮৪ সালে সৃষ্ট শেখ জায়েদ-বিনসুলতান আল-নাহিয়ান ট্রাস্ট, ১৯৮৮ সালে সৃষ্ট শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট বাংলাদেশ, ২০০০ সালে সৃষ্ট জাতীয়
প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এবং ২০১৪ সালে সৃষ্ট নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট।
সমাজকলাণ মন্ত্রণালায় ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ বিষয়ক কর্মকাÐ এবং আইন, বিচার ও
সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক কার্যক্রম ।
সারসংক্ষেপ
ব্রিটিশ শাসিত বাংলাদেশে ১৯৪৩ সালে সরকারি পর্যায়ে ৪টি এতিমখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারি সমাজসেবা
কার্যক্রমের সূচনা হয়। দেশ বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে ভারত থেকে আগত মোহাজেরদের সমস্যা মোকাবিলায়
জাতিসংঘের সুপারিশের ভিত্তিতে গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও সম্প্রসারণের মধ্য
দিয়ে সরকারি সমাজসেবা কার্যক্রম আরো বিকাশ লাভ করে। বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন ৬টি সংস্থার
মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এছাড়াও খ্যাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের
অধীনে দুর্যোগবিষয়ক কর্মকান্ড আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক কার্যক্রম
চালু রয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংস্থা কয়টি?
ক) চারটি খ) পাঁচটি
গ) ছয়টি ঘ) সাতটি
২। কত সালে সমাজকল্যাণ পরিদপ্তর সমাজকল্যাণ বিভাগে উন্নীত হয়?
ক) ১৯৭৪ সালে খ) ১৯৭৫ সালে
গ) ১৯৭৬ সালে ঘ) ১৯৭৭ সালে
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র