শহর সমাজসেবা কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শহর সমাজসেবা কার্যক্রমের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদফতরের দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রমগুলোর মধ্যে অন্যতম
হচ্ছে শহর সমাজসেবা (টৎনধহ ঝড়পরধষ ঝবৎারপব-টঝঝ) কার্যক্রম। বাংলাদেশে পেশাগত সমাজকর্মের বিকাশে শহর
সমাজসেবা কার্যক্রমের যোগসূত্র রয়েছে। শহরাঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে তৎকালীণ সরকার ১৯৫৫ সালে গঠন করে। এই বোর্ডের অনুমোদনক্রমে ১৯৫৫ সালে
ঢাকায় কায়েতটুলীতে পরীক্ষামূলকভাবে শহর সমষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষামূলক প্রকল্পটির সাফল্যের
পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৭-৫৮ সালে ঢাকার গোপীবাগ, লালবাগ ও মোহাম্মদপুরে আরো ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৫৯-৬০ সালে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, দিনাজপুর, যশোর ও ময়মনসিংহে মোট ১২টি প্রকল্প
গ্রহণ করা হয়। ১৯৬১ সালে সমাজকল্যাণ পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হবার পর বাস্তব প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে শহর সমষ্টি
উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর শহরে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর
উন্নয়নের জন্য শহর সমষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা সম্প্রসারণ করা হয়। প্রশাসনিক পুনর্গঠনের ফলে ১৯৮৪ সালে
সমাজকল্যাণ বিভাগের নাম পরিবর্তন করে সমাজসেবা অধিদফতর করা হয়। তখন শহর সমাজসেবা উন্নয়ন প্রকল্পের
নামকরণ করা হয়েছিলো পৌর সমাজসেবা প্রকল্প যা পরবর্তীতে শহর সমাজসেবা কার্যক্রম (টৎনধহ ঝড়পরধষ ঝবৎারপবটঝঝ) নামে পরিচালিত হচ্ছে। সমাজসেবা অধিদফতর (২০১৬) এর তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ৮০টি ইউনিটের মাধ্যমে শহর সমাজসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে যার মধ্যে ৫০টি রাজস্ব এবং ৩০টি উন্নয়ন খাতে রয়েছে।
৬.৭.২ শহর সামাজসেবার ধারণা
শহর সমাজসেবা কার্যক্রম হলো সমষ্টিকেন্দ্রিক সমাজসেবা কার্যক্রম যা শহরবাসীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পারস্পারিক,
সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে শহর জীবনকে সুন্দর করে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। অন্যভাবে বলা যায়, শহর সমাজসেবা হচ্ছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধীদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত একটি দারিদ্র্য
বিমোচন কর্মসূচি যা শহরের জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমষ্টিকেন্দ্রিক প্রয়াস চালায়।
সুতরাং বলা যায়, শহর সমাজসেবা হচ্ছে শহর এলাকায় পরিচালিত একটি সমষ্টি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম যা সরকারের
আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে শহররে জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রচেষ্টা
চালায়। এ কার্যক্রমে জনগণের সুখী ও সুন্দর জীবন গঠনের লক্ষ্যে এখানে পারস্পরিক সম্পর্ক, সোহার্দ্য ও সহযোগিতার উপর গুরুতা¡রোপ করা হয়।
৬.৭.৩ শহর সমাজসেবা কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
শহর সমাজসেবা কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে শহর এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করা। শহর সমাজসেবা
কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে শহর এলাকায় বসবাসরত স্বল্প-আয়ের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি,
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম গ্রহণ এবং সামাজিক উন্নয়নমূলক
কর্মকাÐে নিয়োজিত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সহায়তা প্রদান।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ এইচ. চার্লস শহর সমষ্টি উন্নয়নের দুটি উদ্দেশ্য চিহ্নিত করেছেন। তা হলো:
১) শহর এলাকার লোকজন যাতে সেখানকার জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপখাইয়ে চলতে পারে সে জন্য তাদের মধ্যে
সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি এবং নীতি অনুসরণ করে তাদেরকে সহযোগিতামূলক কর্মসূচিতে উদ্বুদ্ধ করা; এবং
২) দায়িত্বশীল ও প্রতিনিধিত্ব মূলক নাগরিক সংস্থা গঠন করে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন জোরদার করা। পৌরসভা ও
সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে পৌর এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক প্রকাশিত শহর সমাজসেবা কার্যক্রম নীতিমালায় শহর সমজসেবা কার্যক্রমের নি¤েœাক্ত
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়েছেÑ
১) শহর এলাকায় বসবাসরত স্বল্প আয়ের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবারের সদস্যদের
সংগঠিতকরণ;
২) আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লক্ষ্যভুক্ত জনগণের দক্ষতা বৃদ্ধি;
৩) দরিদ্র জনগণের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম গ্রহণ; এবং
৪) সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নিয়োজিত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সহায়তা প্রদান।
এছাড়া সমাজসেবা অধিদফতর ওয়েবসাইট অনুযায়ী শহর সমাজসেবা কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো:
১) শহরাঞ্চলের বস্তিবাসীদের সামাজিক জরিপের মাধ্যমে সমস্যা ও চাহিদা চিহ্নিতকরণ এবং তাদের বসবাসের
পরিবেশের উন্নয়ন;
২) দরিদ্র বস্তিবাসীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা;
৩) বিভিন্ন পরিবেশে বসবাসরত শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মসূচি প্রণয়ন করা;
৪) প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান।
৫) গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিতদের গ্রামে ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধকরণ;
৬) বস্তিবাসী এবং শহরের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় সাধন;
৭) স্থানীয় নেতৃত্ব তৈরি এবং প্রকল্প সমন্বয় পরিষদ গঠন এবং
৮) চাহিদা এবং সম্পদের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপনের লক্ষ্যে কল্যাণমূখী কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ।
সুতরাং বলা যায়, স্থানীয় জনগণের যৌথ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় আর্থ-সামাজিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের
প্রচেষ্টা চালানোই শহর সমাজসেবার মূল লক্ষ্য।

সারসংক্ষেপ
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.৭
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় কতটি ইউনিটের মাধ্যমে শহর সমাজসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে?
ক) ৮০টি খ) ৮১টি
গ) ৮২টি ঘ) ৮৩টি
২। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ এইচ. চার্লস (ঐ. ঈযধৎষবং) শহর সমষ্টি উন্নয়নের কয়টি উদ্দেশ্য চিহ্নিত করেছেন?
ক) একটি খ) দুইটি
গ) তিনটি ঘ) চারটি
শহর সমাজসেবা (টৎনধহ ঝড়পরধষ ঝবৎারপব-টঝঝ) কার্যক্রম হচ্ছে অন্যতম দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম যা শহরাঞ্চলে
বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালে চালু হয়। বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ৮০টি
ইউনিটের মাধ্যমে শহর সমাজসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে যার মধ্যে ৫০টি রাজস্ব এবং ৩০টি উন্নয়ন খাতে রয়েছে।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]