শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিবিড় তত্ত¡বধানের মাধ্যমে আইনের সংস্পর্শে আশা (পড়হঃধপঃ রিঃয ষধ)ি এবং আইনের
সাথে সংঘর্ষে (পড়হভষরপঃ রিঃয ষধ)ি জড়িত শিশু-কিশোরদের কেস ওয়ার্ক, কেস ম্যানেজমেন্ট, গাইডেন্স, কাউন্সেলিং,
শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং ডাইভারশন ও বিকল্প পরিচর্যা পদ্ধতির মাধ্যমে পরিবার ও সমাজে পুনঃএকত্রিত করার লক্ষ্যে কার্যক্রম
পরিচালনা করে। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কার্যক্রম তিনটি অঙ্গের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অঙ্গ তিনটি হলোÑ ক) কিশোর
হাজত খ) কিশোর আদালত এবং গ) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা সংশোধনী প্রতিষ্ঠান। নি¤েœ তা আলোচনা করা হলো:
৬.১০.১.১ কিশোর হাজত: শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অন্যতম অঙ্গ হচ্ছে কিশোর হাজত। শিশু-কিশোর অপরাধীদের বিচারের
পূর্বে বা বিচার চলাকালীণ সময়ে অথবা বিচারের পর সংশোধনের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রেরণের পূর্ব পর্যন্ত যেখানে রাখা
হয়, তাকে কিশোর হাজত বলা হয়। সাধারণ জেল-হাজতের প্রাপ্ত বয়স্ক ও দাগী অপরাধীদের কু-প্রভাব হতে শিশু-কিশোর
অপরাধীদের মুক্ত রাখার লক্ষ্যেই এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিশোর হাজতকে শিশু-কিশোর অপরাধীদের পর্যাবেক্ষণে রাখা
হয়। কিশোর হাজতকে আটক নিবাসও বলা হয়। কিশোর হাজত বা আটক নিবাসের কার্যক্রম প্রশাসন, সমাজকর্মী,
আদালতের কর্মকর্তা এবং শিশু বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। নিবাসে অবস্থানরত নিবাসীদের চারিত্রিক ও নৈতিক
উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা এবং ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। কিশোর অপরাধীদের অপরাধমূলক আচরণ সংশোধনে
এ ব্যবস্থা অনুকূল প্রভাব সৃষ্টি করে।
৬.১০.১.২ কিশোর আদালত: শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে কিশোর আদালত। কিশোর আদালত
হচ্ছে শিশু-কিশোর অপরাধীদের বিচারের জন্য বিশেষ ধরনের আদালত ব্যবস্থা যেখানে অত্যন্ত ঘরোয়া পরিবেশে তাদের
সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়। সাধারণ আদালতের মতো বাদী-বিবাদী, আইনজীবী নিয়োগ ও শাস্তিদানের ব্যবস্থা
কিশোর আদালতে নেই। কিশোর আদালত ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের বিধান অনুযায়ী গঠিত হয়েছিলো। বর্তমানে শিশু
আইন, ২০১৩ অনুযায়ী কিশোর আদালত পরিচালিত হচ্ছে। এখানে যেসব কিশোর অপরাধীদের বয়স ১৮ বছরের নিচে
শুধু তাদের বিচার করা হয়। একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট, প্রবেশন অফিসার, মনোচিকিৎসক, কিশোর-কিশোরীর
পিতামাতা বা অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্টদের উস্থিতিতে সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে কিশোর অপরাধীর অপরাধের সঠিক দিক
বিশ্লেষণ করে সংশোধন ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিশোর আদালতের বিচারকার্য শাস্তি প্রদানের
লক্ষ্যে নয় বরং কিশোর অপরাধীদের চরিত্র সংশোধনের জন্য পরিচালিত হয়। ফলে এখানে কোনো উকিল নিয়োগ বা
আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রয়োজন হয় না। কিশোর আদালতে দুই ধরনের কেসে শিশু-কিশোর অপরাধীদের বিচার করা হয়।
একটি হচ্ছে অভিভাক কেস এবং অন্যটি হচ্ছে পুলিশ কেস। শিশু-কিশোরের আইনসঙ্গত অভিভাবক কর্তৃক দায়েরকৃত
কেসকে অভিভাবক কেস বলা হয়। ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের ধারা অনুযায়ী শিশুর আইনসঙ্গত অভিভাবক অবাধ্য বা
অপরাধপ্রবণ কোনো শিশু-কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন। মামলা দায়েরে পর ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়
অভিভাবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শিশু-কিশোর অপরাধীকে কিশোর হাজতে রাখার হুকুম দেন এবং চূড়ান্ত ফয়সালার জন্য
তারিখ ঘোষণা করেন। অন্যদিকে যেসব শিশু-কিশোর বাংলাদেশ দÐবিধি মোতাবেক কোনো অপরাধ করে এবং তাদের
বিরুদ্ধে পুলিশ থানায় মামলা দায়ের করে তাকে পুলিশ কেস বলা হয়। পুলিশ কেসে শিশু-কিশোর অপরাধীদের বিচারও
কিশোর আদালতে সম্পন্ন হয়। যে কোনো আদালত হতে মামলাগুলো কিশোর আদালতে স্থানান্তর করা যায়। এসব মামলা
পরিচালনার সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন। এসব মামলার ক্ষেত্রে শিশু-কিশোর অপরাধীর পক্ষে উকিল
নিয়োগ করা যেতে পারে। মধ্যবর্তী সময়ে একজন প্রবেশন অফিসার মামলাটি তদন্ত করেন। প্রবেশন অফিসার
অপরাধপ্রবণ কিশোরের সার্বিক দিক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন পেশ করেন। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চূড়ান্ত
বিচারকার্য সম্পন্ন করা হয়।
৬.১০.১.৩ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা সংশোধনী প্রতিষ্ঠান: শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা
সংশোধনী প্রতিষ্ঠান। কিশোর আদালতে বিচারে দোষী সাব্যস্ত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংশোধনের প্রয়োজন হলে অপরাধপ্রবণ
শিশু ও কিশোর অপরাধীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা সংশোধনী প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়। তাদের অপরাধমূলক আচরণ সংশোধনের
পাশাপাশি বিভিন্ন বৃত্তিমূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যাতে করে ভবিষ্যত জীবনে তারা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে
সুষ্ঠুভাবে পুনর্বাসিত হয়ে স্বনির্ভর জীবনযাপনে সক্ষম হয়ে ওঠে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অবস্থানরত শিশু ও কিশোর অপরাধীদের
নিবাসী বলা হয়। নিবাসীদের শারীরিক গঠন, শিক্ষার মান, আগ্রহ, বুদ্ধিমাত্রা ও মননশীলতা পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করে
কারিগরি শিক্ষার কোর্স বা বিষয় নির্বাচন করা হয়। এছাড়া নিবাসীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির জন্য
নিয়মমাফিক শারীরিক প্ররিশ্রম ও শারীরিক চর্চা, বিচিত্রানুষ্ঠান, বনভোজন, খেলাধুলা এবং চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা রাখা
হয়েছে। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কিশোর অপরাধী ও অপরাধপ্রবণ শিশু-কিশোরদের অপরাধমূলক আচরণ সংশোধন করে
সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস চালায়। এ কেন্দ্রের মধ্যমে নি¤েœাক্ত কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়িত হচ্ছেÑ
ক) নিবাসীদের ভরণপোষণ, প্রযতœ, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান;
খ) নিবাসীদের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ;
গ) সাধারণ শিক্ষা কর্মসূচি;
ঘ) ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা কর্মসূচি;
ঙ) নিবাসীদের চরিত্র গঠন, মানসিক উন্নয়ন, সংশোধন ও পুনর্বাসনে উদ্বুদ্ধকরণ ও কাউন্সিলিং সেবা;
চ) বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ;
ছ) বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক পুনর্বাসনে সহায়তা করা;
জ) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিশোর নিবাসীদের আত্মকর্মসংস্থানকল্পে স্থানায়মান তহবিল কর্মসূচির আওতায় সেবা প্রদান; এবং
ঝ) নিবাসীদের সোশ্যাল কেস ওয়ার্কার ও সাইকিয়াট্রিক ওয়ার্কের তত্ত¡াবধানে সেবা প্রদান করা।
৬.১০.২ শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে সমাজকর্ম পদ্ধতির প্রয়োগ
সংশোধন ক্ষেত্রে সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে সোশ্যাল কেস ওয়ার্কার, সাইকিয়াট্রিক
সোশ্যাল ওয়ার্কার ও প্রবেশন অফিসার নিবাসীদের সমাস্যা সমাধানে সমাজকর্মের পদ্ধতি, নীতি ও কৌশল প্রয়োগ করে
থাকেন। তারা অনুধ্যানের (ংঃঁফু) মাধ্যমে নিবাসীদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক তথ্য সংগ্রহ, তাদের সমস্যা
নিরুপণ (ফরধমড়হড়ংরং) এবং সমস্যা সমাধান করেন। সোশ্যাল কেস ওয়ার্কার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত
সোশ্যাল কেস ওয়ার্কের বিভিন্ন কলাকৌশল প্রয়োগ করেন। অপরাধপ্রবণ নিবাসীদের সমস্যা সমাধানে দল সমাজকর্ম
পদ্ধতি প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। অপরাধপ্রবণ নিবাসীদের নিয়ে ট্রিটমেন্ট গ্রæপ (ঃৎবধঃসবহঃ মৎড়ঁঢ়) গঠন করে দলীয়
অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করা যায়। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নিবাসীদের আর্থ-সামাজিক তথ্যাদি সংগ্রহের ক্ষেত্রে সমাজকর্ম গবেষণা
পদ্ধতি প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। কেন্দ্রসমূহে সমাজকর্মের মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগের মাধ্যমে নিবাসীদের
সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব। এখানে নিবাসীদের তথ্যাদির গোপনীয়তা রক্ষা করা
হয় যা সমাজকর্মের অন্যতম একটি নীতি। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কার্যক্রমে ক্লিনিক্যাল ও সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কসহ
প্রভৃতি বিশেষায়িত শাখার জ্ঞান প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সারসংক্ষেপ
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কিশোর হাজত, কিশোর আদালত এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা সংশোধনী প্রতিষ্ঠান এই তিনটি অঙ্গের
মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। শিশু-কিশোরদের অপরাধমূলক আচরণ সংশোধনে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে
সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.১০
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অঙ্গ কয়টি?
ক) ২টি খ) ৩টি
গ) ৪টি ঘ) ৫টি
২। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অবস্থানরত শিশু-কিশোর অপরাধীদের কী বলা হয়ে যায়?
ক) কিশোর অপরাধী খ) আবাসী
গ) নিবাসী ঘ) কয়েদী
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র