সুদূর অতীত থেকেই ভারতবর্ষে মানবহিতৈষী দর্শন ও স্বেচ্ছাসেবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভিন্ন বেসরকারি
সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করা গেছে। উপনিবেশিক আমলে নানারকম বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ,
মহামারি ও যুদ্ধ বিগ্রহে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহযোগিতা করার জন্য অনেক স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ডের প্রসার ঘটেছিলো। এসব
স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকান্ডের মূলে ছিলো জমিদার পরিবারের সদস্য, তরুণ ও অভিজাত পরিবারের সদস্যবৃন্দ। সাধারণত
ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উপনিবেশিক আমলে স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাÐ পরিচালিত হতো।
তবে উপনিবেশিক আমলে বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে ব্যাপটিস্ট মিশনারি
সোসাইটি এর মাধ্যমে সংগঠিত ভাবে। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৯৪ সালে। এ সংস্থা দারিদ্র পীড়িত অঞ্চলে হাসপাতাল, স্কুল,
এতিমখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৮০ সালে রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতাল। স্থানীয়ভাবে
যেসব প্রতিষ্ঠান সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে অত্যন্ত ভালো ছিলো তার মধ্যে বিদেশী সাহায্যপুষ্ট কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার
টাস্ট সবচেয়ে পুরাতন যা ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। উপনিবেশিক আমলে বাংলাদেশের বেসরকারি সমাজউন্নয়নমূলক
সংস্থাগুলো বিশেষ করে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও দাতব্য সংস্থাগুলোর অন্যতম ছিলো মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি
(১৮৫৯), ব্রাহ্মসমাজ (১৮২৮) রামকৃষ্ণ মিশন-১৮৯৬ প্রভৃতি।
৭.১.২ পাকিস্তান আমলে বেসরকারি সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর তাৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নানাবিধ বেসরকারি সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম
লক্ষ্য করা যায়। পূর্ব পাকিস্তান তুলনামূলকভাবে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ছিলো। তারপরও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও
বৈষম্যমূলক শাষনের কারণে এ অঞ্চলে ক্ষুধা দুর্ভিক্ষ বিদ্যমান ছিলো। ১৯৬০-১৯৭০ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে প্রায় ১০ টি
বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে এ অঞ্চলের বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী। মানুষের দুর্দশা লাঘবে
করতে সমাজ উন্নয়নে এসময় বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। বহুমুত্র সমিতি, পরিবার পরিকল্পনা সমিতি তার মধ্যে
অন্যতম। গ্রামীণ উন্নয়নে সর্বপ্রথম প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে কুমিল্লায় চধশরংঃধহ অপধফবসু ভড়ৎ জঁৎধষ
উবাবষড়ঢ়সবহঃ (১৯৫৯) গঠন করা হয়,যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পল্লী উন্নয়ন গবেষক, দার্শনিক ও সমাজসেবক ড. আখতার
হামিদ খান। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে এই একাডেমির নাম পরিবর্তিত হয়ে নামেও পরিচিত। এর আগে ১৯৫৩ সালে ঠ-অওউ কর্মসূচী গ্রহণ
করা হয়। ঠ-অওউ কর্মসূচীর ব্যর্থতাই এই একাডেমি প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে। পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে বেসরকারি
সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেসরকারি সংস্থা ঈঅজঊ দরিদ্র
ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ করে। ঈঅজঊ পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে ঢাকায় অফিস প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৭০
সালের ১২ নভেম্বর যে প্রলংয়কর ঘূর্নিঝড় বাংলাদেশে হয়েছিল তখনও বিভিন্ন বেসরকারি কার্যক্রম সমাজ উন্নয়নে কাজ
করেছে।
৭.১.৩ স্বাধীনতা পরবর্তী বেসরকারি সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম
১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর
পর্যন্ত পাকিস্তান বাহিনীর ধ্বংসলীলা বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ১৯৭০ সালে প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় এবং ১৯৭১
সালে পাকিস্তানি বর্বরতা ও ধ্বংসলীলার কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দারুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। এসময়
যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র যেমন এগিয়ে আসে তেমনি ত্রাণ ও পুনবার্সন কার্যক্রমে
বেসরকারিভাবে কর্মকান্ড চলতে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শক্তিশালী করার জন্য গঠিত
হয় ইজঅঈ (১৯৭২)। শরণার্থী মানুষদের ত্রাণ ও পুনবার্সনে ইজঅঈ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরপর বিভিন্ন
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৭৬ সালে প্রশিকা ও ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক
প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠান ত্রাণ পুনবার্সনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করে। আশির
দশকের পরে বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ইস্যূ পরিবর্তিত হয়। নতুন ইস্যূ হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা,
স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার প্রসার অন্যতম ইস্যূ হয়ে ওঠে। বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় ২০,০০০ এর আধিক বেসরকারি সমাজ
উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশের বেসরকারি সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক দুই ভাবেই
বেসরকারি সমাজ উন্নয়ন কার্যক্রমের দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করা গেছে। ১৭৯৪ সালে ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটি থেকে
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেসরকারি সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলছিলো তা আজও বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে
চলমান। তবে সময় ও সমাজের অনুভূত চাহিদার প্রেক্ষিতে বেসরকারি সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের প্রকৃতি ও পরিধি
পরিবর্তিত হয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৭.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটি কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
(ক) ১৭৯৫ সালে (খ) ১৮০৫ সালে
(গ) ১৭৯০ সালে (ঘ) ১৭৯৪ সালে
২। ইঅজউ এর প্রতিষ্ঠাতা-
(ক) আখতার হামিদ খান (খ) আতাউর রহমান খান
(গ) নওজেশ আলী খান (ঘ) খাজা নাজিমুদ্দিন
৩। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত বিভিন্ন বেসরকারি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মূল উদ্দেশ্য কী ছিলো-
(ক) ত্রাণ ও পুনবার্সন (খ) নারী উন্নয়ন
(গ) মানবাধিকার (ঘ) জেন্ডার সমতা
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র