বাংলাদেশ প্রবীণহিতৈষী সংঘ’র উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম

প্রবীণদের কল্যাণে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে প্রবীনহিতৈষী সংঘ তার মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম। ১৯৬০ সাল
হতে দেশের এ প্রাচীনতম ও সর্ববৃহৎ প্রবীণ কল্যাণ সংঘটি সকল শ্রেণির প্রবীণদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও
আধ্যাত্মিক সেবাদানের পাশাপাশি সমাজের অন্যান্য প্রজন্মকে বার্ধক্য বিষয়ে সংবেদনশীল ও তাৎপর করার প্রচেষ্টা চালিয়ে
আসছে। প্রবীণহিতৈষী সংঘ ১৯৬১ সালের সমাজকল্যাণ সংস্থা নিবন্ধীকরণ ও নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে নিবন্ধনকৃত একটি
অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। ঢাকার কেন্দ্রীয় অফিস ছাড়াও ৫৫ টি জেলা শাখা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রবীনদের স্বল্প ও
বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা প্রদান, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ, প্রচার, প্রকাশনা ও পুনর্বাসন; চিত্তবিনোদন; ধর্মীয় ও
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাচ্ছে। সাধারণত শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মাপকাঠিতে জীবনচক্রের সবশেষ
অবস্থাকে বার্ধক্য বলা হয়। জাতিসংঘের সাধারণ মাপকাঠি অনুযায়ী এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বসবাসরত ৬০ বছর
বা তদ্বর্ধর বয়সি ব্যক্তি সাধারণকে প্রবীণ শ্রেণিভুক্ত করা হয়। পরিসংখ্যানুসারে ধারণা করা হয়, ১৯৯৫ সাল হতে ২০২৫
সালের মধ্যে জনসংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে। এসময়ে ৬০ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের জনসংখ্যা বেড়ে ছয়গুণ এবং ৮০ বছরের
বেশি প্রবীণদের সংখ্যা দশগুণ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ প্রবীণহিতৈষী সংঘ নিম্নোক্ত উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেÑ
১. প্রবীণ বয়সে সবার জন্য শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ও চিন্তা-ভাবনাহীন শান্তিপূর্ণ আনন্দময় জীবন যাপনের দিকে নিদের্শনা দেয়া;
২. বার্ধক্যজনিত ব্যাধিসমূহের কারণ, ধরন, প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও অন্যান্য সমস্যার অনুসন্ধানে গবেষণা পরিচালনা;
৩. সক্ষম প্রবীণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা;
৪. বার্ধক্যে আর্থিক, সামাজিক, পারিবারিক ও অন্যান্য সমস্যা ও তার সমাধান বিষয়ে জ্ঞান লাভ ও তথ্য বিস্তার এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করা; এবং
৫. প্রবীনরা তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগায় দেশ ও সমাজের কল্যাণে আবদান রাখতে পারেন সেজন্য তাদের কল্যাণ সাধন করা।
৭.৬.২ প্রবীনহিতৈষী সংঘ’র কার্যক্রম
বিশিষ্ট সমাজসেবী ড. এ কে এম আব্দুল ওয়াহেদ ১৯৬০ সালে তার ধানমন্ডির নিজস্ব বাসভবনে পূর্ব পাকিস্তান প্রবীণ
সোসাইটি নামে যে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান চালু করে ছিলেন তাই আজকের প্রবীণহিতেষী সংঘ। বাংলাদেশ প্রবীণহিতৈষী সংঘ
মহৎ উদ্দেশ্যবলী অর্জনে নিম্নোক্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে:
ক. স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম : অত্যন্ত কম খরচে প্রবীণ ও অন্যান্য বয়সি রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রবীণহিতৈষী
সংঘ একটি অত্যাধুনিক ও বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে প্রতিষ্ঠানটির সদরদপ্তর ঢাকার আগারগাঁওয়ের প্রধান
ভবনে। শুক্রবার ছুটির দিন ব্যতীত সপ্তাহে ছয়দিন সকাল ৮.০০ হতে দুপুর ২.০০ টা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ঔষধসহ প্রবীণদের
স্বল্পমূল্যে/বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। মেডিসিন, হৃদরোগ, চক্ষু, গাইনি, ফিজিওথেরাপী, মনোরোগ, চর্ম ও
যৌন, রেডিওলজি ইত্যাদি বিভাগের অধীনে পরিচালিত হয় চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতালে ৩০ শতাংশ দরিদ্র প্রবীণকে
বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। গরীব ও অসহায় রোগীদের ঔষধ ও বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা এবং
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিনামূল্যে করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে প্রবীণ হাসপাতালে বৈকালিক শিফটের জন্য মেডিসিন.
সার্জারী, গাইনী, চর্মরোগ বিভাগ খোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হাসপাতাল কার্যক্রম নিয়মিত চলছে, যেখানে মাত্র
১০০ টাকা দৈনিক ফি দিয়ে সাধারণ বেডে এবং ৩০০ টাকা ফি দিয়ে কেবিনে রোগীরা থাকতে পারেন।
খ. সামাজিক সচেতনামূলক কার্যক্রম: বাংলাদেশ প্রবীণহিতৈষী সংঘ শুধুমাত্র প্রবীণদের বিভিন্ন কার্যকরী সেবা প্রদান করে
তাই নয় বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাধর্ক্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে সদাতৎপর। তাই বার্ধক্য, বার্ধক্যকালীন নিরাপত্তা
জটিলতা, মা বাবার অধিকার সম্পর্কে বিভিন্ন সচেতনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তাছাড়া যৌতুকপ্রথা ও বাল্যবিবাহ
নিরোধসহ সামাজিক সচেতনমূলক শীর্ষক সেমিনার ও প্রচারের আয়োজন করে। পাশাপাশি শাখাগুলি সংশ্লিষ্ট জেলায় যৌতুকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
গ. প্রবীণ নিবাস: বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শহরের ও গ্রামীণ প্রবীণদের সমস্যার প্রকৃতি ভিন্নরকম।
একাকীত্ব ও পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্নতা ও তাদের উর্পাজনক্ষম প্রবীণদের জন্য সাময়িক বসবাসের জন্য কেন্দ্রীয়
কার্যালয়ে ১টি আছে। প্রবীণ নিবাসগুলোতে প্রবীণদের জন্য সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা, লাইব্রেরি, নামাজ ঘর এবং ইনডোর গেমস এর ব্যবস্থা আছে।
ঘ. প্রবীণ বর্ষ ও প্রবীন দিবস উদ্যাপন: প্রবীনহিতৈষী সংঘ প্রতিবছর আন্তজার্তিক প্রবীণ দিবস নানা আয়োজনের মধ্যে
দিয়ে পালন করে থাকে। প্রতিবছর ১লা অক্টোবর বিশ্ব প্রবীণ দিবসে সংঘ দিনব্যাপী নানা আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন
সংস্থার সাথে যৌথভাবেও বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। এ দিবসের গুরুত্ব ধরে আলোচনা সভা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা,
রচনা প্রতিযোগিতা, সমাবেশ এবং র‌্যালীর আয়োজন করে থাকে।
ঙ. প্রবীণসেবা পুরস্কার: পারিবারিক পর্যায়ে প্রবীণদের পরিচর্যাকে উৎসাহিত করার জন্য প্রবীণহিতৈষী সংঘ মমতাময় ও
মমতাময়ী পুরুষ্কার প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। এ পুরষ্কারের উদ্দেশ্য হলে সেবাদানকারীদের অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করা,
কেন্দ্রীয় অফিস ছাড়াও জেলা শাখাগুলো হতে এ পুরস্কার দেবার ব্যবস্থা রয়েছে।
চ. আর্ন্তজাতিক কার্যক্রম : প্রবীণদের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠনের অধিভুক্ত হওয়া এবং সংঘের স্বার্থের উন্নয়ন ঘটবে
এমন আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাতে নিবিড়ভাবে কাজ করে প্রবীনহিতৈষী সংঘ। প্রবীণহিতৈষী সংঘও অনুরূপ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সংঘের যোগাযোগ রয়েছে।
ছ. চিত্তবিনোদন: পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় প্রবীণরা অনেক সময় একাকীত্বে ভোগে এবং আনন্দহীন জীবনযাপন করেন।
প্রবীণদের নির্মল আনন্দ দান ও একাকীত্ব, একঘেয়েমী দূর করবার জন্য সংঘের আয়োজনে প্রবীণদের জন্য বার্ষিক
বনভোজন ছাড়াও মিলাদ মাহফিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে পালন করা হয়। সকল জেলা শাখাতেও অনুরুপ কর্মসূচির ব্যবস্থা আছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় আনন্দ মূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জ. পাঠাগার ও প্রকাশনা : প্রবীণহিতৈষী সংঘের প্রতিষ্ঠা কাল থেকে একটি পাঠাগার চালু আছে। এখানে ধর্মীয় বই,
মনীষীদের জীবনী, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, কম্পিউটার বিজ্ঞান, বিখ্যাত লেখকের রচনাবলীসহ বিভিন্ন সাময়িকী ও দৈনিক
পত্রিকা রয়েছে। প্রবীণহিতৈষী সংঘের নিজস্ব মুখপাত্র হলো, প্রবীন হিতৈষী সংঘের নিজস্ব মুখপাত্র হলো ‘প্রবীণ হিতৈষী
পত্রিকা’, এ ষান্মাসিক পত্রিকায় প্রবীণদের অবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম, প্রবীন বিষয়ক আলোচনা, প্রবীণ বিষয়ক গবেষণা ইত্যাদি স্থান পায়।
সারসংক্ষেপ
প্রবীণরা যাতে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনাহীন শান্তিপূর্ণ, সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারেন এ
লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রবীণহিতৈষী সংঘের প্রতিষ্ঠা। প্রবীণদের কল্যাণে সংঘ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে তার
মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চিকিৎসাসেবা, বিনোদনমূলকসেবা, প্রশিক্ষণ, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, প্রবীণ দিবস উদ্যাপন
এবং প্রবীণ পুরস্কার।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। প্রবীণহিতৈষী সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় কত সালে?
ক) ১৯৬০ সালে খ) ১৯৬৫ সালে
গ) ১৯৭৫ সাল ঘ) ১৯৮০ সালে
২। বিশ্বব্যাপী প্রবীণ দিবস পালিত হয় কত তারিখে?
ক) ০১লা নভেম্বর খ) ০১লা অক্টোবর
গ) ০১লা সেপ্টেম্বর ঘ) ০১লা ডিসেম্বর
৩। প্রবীণহিতৈষী সংঘ কোন দুটি পুরস্কার প্রদান করে থাকে?
ক) সাহসী ও সাহসিনী খ) কল্যাণ ও কল্যাণী
গ) মমতাময় ও মমতাময়ী ঘ) কন্যা ও জননী

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]