সেভ দ্য চিলড্রেন’র উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম (Objectives and Programmes of Save the Children)

একটি সুস্থ, নিরাপদ, পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে শিশুদের বেড়ে ওঠা, সকল প্রকার দুর্যোগ থেকে
শিশুদের রক্ষা করা এবং শিশুর সার্বিক উন্নয়নে বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯১৯ সাল থেকে সেভ দ্য চিলড্রেন কাজ
করে যাচ্ছে। বর্তমানে ১২০টির দেশে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে ১৯১৯ সালে সমাজসেবী ইগলেনটাইন
জেব এবং তাঁর বোন সেভ দ্য চিলড্রেন প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব এবং রাশিয়া বিপ্লবের পর
ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দাভাব চলছিল। বিশ্বব্যাপী সেভ দ্যা চিলড্রেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেভ
দ্যা চিলড্রেন সংস্থা গড়ে উঠে। বর্তমানে সেভ দ্যা চিলড্রেন এলায়েন্স বা জোট
হিসেবে শিশুকল্যাণে নিয়োজিত। বিশ্বব্যাপী সেভ দ্যা চিলড্রেন এলায়েন্স এর
সদস্য প্রায় ৩০টি। বংলাদেশে এ সংস্থার মূল রুপকল্প হচ্ছে প্রত্যেক শিশু যাতে
সম্মানিত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার ক্ষেত্রে তাদের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ
এবং অধিকারের ব্যাপারে সচেষ্ট হয় তা নিশ্চিত করা। এ রুপকল্পকে সামনে
রেখে সেভ দ্য চিলড্রেন নি¤েœাক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করছেÑ
ক. শিশুদের জন্য সর্বোচ্চ ইমপ্যাক্ট নিশ্চিত করনে প্রত্যেক সম্পদের কার্যকর
ব্যবহার নিশ্চিত করা
খ. শিশুদের জন্য সুস্থ ও নিরাপদ পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ তৈরি করা;
গ. আপৎকালীন সময়সহ অন্যান্য সময়েও উদ্ভাবনী জ্ঞান, এ্যাডভোকেসি এবং গুনগত কর্মসূচির মাধ্যমে অন্যান্য শিশু
অধিকার রক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করা এবং নেতৃত্ব দেয়া; এবং
ঘ. শিশুরা যাতে তাদের অধিকার সচেতন হয় এবং সম্ভাবনাময় নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে তা নিশ্চিত করা।
৮.২.২ সেভ দ্য চিলড্রেন’র এর কার্যক্রম
শিশুদের উন্নয়ন ও বিকাশে সহযোগিতার লক্ষ্য সামনে রেখেই ১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেন কার্যক্রম
পরিচালনা করছে। সাধারণত ছয়টি বিষয়ে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে। যথা: শিশু সুরক্ষা, শিশু দরিদ্রতা, স্বাস্থ্য,পুষ্টি
এবং এইচআইভি/এইডস, শিক্ষা এবং শিশু অধিকার গর্ভনেন্স, এবং মানবতাবাদী কর্মকান্ড। প্রত্যেক বছর সেভ দ্যা
চিলড্রেন ১৫ মিলিয়নের বেশি জনগণকে সেবা দিয়ে থাকে। ১০০ টি পার্টনার প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত হয়ে ৮০০ এর
বেশি কাজ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেভ দ্য চিলড্রেন। অক্টোবর ২০১১ সালে বাংলাদেশে কর্মরত সেভ দ্যা
চিলড্রেন প্রতিষ্ঠানসমূহ একসাথে হয়ে সেভ দ্যা চিলড্রেন ইন্টারন্যাশন্যাল নামে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেভ দ্যা
চিলড্রেন এর উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ হলো:
ক. শিশু দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি: বাংলাদেশের অনেক শিশুই দারিদ্র্যের কারণে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তাদের বিকাশ ও বৃদ্ধি দারুনভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দারিদ্রপীড়িত পরিবারের শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য
সেভ দ্য চিলড্রেন তিনটি কৌশল ব্যবহার করে থাকে। প্রথমত: চাইল্ড সেনসেটিভ লাইভলিহুডস কৌশল যেখানে কমিউনিটি
ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি কর্মসূচি চালু আছে। এক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এ প্রতিষ্ঠান অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের
সাথে শক্তিশালীভাবে অংশীদারিত্ব তৈরি করে। দ্বিতীয়ত: শক্তিশালী চাইল্ড সেনসেটিভ সোশ্যাল প্রোটেকশন। এ কৌশলের
মাধ্যমে সেভ দ্যা চিলড্রেন বাংলাদেশ সরকার এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে শক্ত অংশীদারিত্ব তৈরি করে কমিউনিটি
ভিক্তিক জীবিকা নির্বাহের উপায়গুলোতে শিশু আছে এমন দারিদ্রপীড়িত পরিবারকে প্রাধান্য দেয়া হয়। ভিজিডি, ভিজিএফ
এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে মেয়েশিশুদের বৃত্তি এই কৌশলের অংশ। ততৃীয়ত: কিশোরদের উন্নয়নে
শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া যার নাম এ্যাডোলেসেন্ট স্কিল ফর সাকসেসফুল ট্রানজিশন। যেসব কিশোর-কিশোরী
অথবা শিশু বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমনÑ কৃষি, ঝুঁিকপূর্ণ শ্রম, গৃহকর্মী ইত্যাদি কর্মে নিয়োজিত তাদের ত্রিমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
করা হয়। যাতে করে নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারে।
খ. চাইল্ড প্রোটেকশন কর্মসূচি: এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের সকল প্রকার নির্যাতন, হয়রানি ও অপব্যবহার
থেকে রক্ষা করা। বাংলাদেশে শিশুরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুরা বাল্যবিবাহ, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ,
যৌন নির্যাতন, অপহরণ ও পাচারের শিকার হচ্ছে। এসব নির্যাতন, হয়রানি ও অপব্যবহার থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য
সেভ দ্য চিলড্রেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে একত্রিত হয়ে অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ দেয়, আইনী সহায়তা দেয়, পাচারের
শিকার হলে যথাযথ ব্যবস্থার গ্রহণের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করে।
গ. শিক্ষামূলক কর্মসূচি: শিক্ষা শিশুর মৌলিক অধিকার। সেভ দ্য চিলড্রেন সকল শিশু যাতে মানসম্মত শিক্ষা লাভ করতে
পারে সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাথে সেভ দ্য চিলড্রেন অত্যন্ত
নিবিড়ভাবে কাজ করে চলছে। দরিদ্র শিশুদের বৃত্তি প্রদান, লেখাপড়ার সামগ্রী প্রদান দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা করা,
মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেভ দ্য চিলড্রেন শিশুদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে কাজ করছে।
ঘ. স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং এইচআইভি/এইডস: নবজাতক, শিশু, কিশোর, তরুণ এবং মাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি চিহ্নিত করে তা
দূরীকরণে কাজ করে সেভ দ্য চিলড্রেন। এক্ষেত্রে সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকারকে মা ও শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যার সাথে সংশ্লিষ্টদের
প্রশিক্ষণ দিতে সহায়তা করে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদফতরে নিয়োজিত কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়। যেসব
এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো দুরূহ সেসব এলাকায় সেভ দ্য চিলড্রেন আপৎকালীন সাময়িক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য
ভাসমান ক্লিনিকের ব্যবস্থা করে। যেমনÑ হাওড় অঞ্চল। এছাড়াও কমিউনিটি ভিত্তিক যেসব স্বাস্থ্যসেবক আছে তাদের
প্রশিক্ষণ দেয় এবং নবজাতক শিশুর লালনপালন ও গর্ভবর্তী মায়ের সেবা নিয়ে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়।
ঙ. মানবিক কর্মকান্ড: বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। সেভ দ্যা চিলড্রেন দুর্যোগকবলিত এলাকায় মানুষ ও
প্রাণীর জীবনহানি হ্রাস, রোগের প্রাদুর্ভাব বন্ধ করা এবং দুর্যোগের ব্যাপারে সচেতন করার ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য
দুর্যোগ কবিলত এলাকা ও উপকূল এলাকায় ক্যাপাসিটি ফিল্ডিং ও আশ্রয়স্থল নির্মাণে কাজ করে সেভ দ্যা চিলড্রেন। ত্রাণ ও
পুনর্বাসনের পাশাপাশি দুর্যোগকবিলত এলাকায় শিশুস্বাস্থ্য রক্ষায় সেভ দ্য চিলড্রেন নানাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে।
চ. পলিসি রাইটস গভর্নেন্স: সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের নাগরিকসমাজ, সংসদ-সদস্য, তরুণসমাজ এবং জাতীয়
প্রতিষ্ঠান (যেমনÑ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন) এর সাথে শিশুদের অপব্যবহার বন্ধ। শিশুশ্রম দূরীভূত করার ক্ষেত্রে সেভ
দ্যা চিলড্রেন তরুণ সমাবেশ, কিশোর কিশোরীদের সমাবেশ, বির্তকের আয়োজন ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
সারসংক্ষেপ
শিশুদের উন্নয়নে বিনিয়োগ ভবিষ্যত বিনির্মাণের শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। তাই শিশুর বিকাশ ও উন্নয়নে সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ
গড়ে তোলা, শিশুর অধিকার রক্ষা ও সম্ভাবনাময় নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই সেভ দ্য চিলড্রেন কাজ করে
যাচ্ছে। উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এ সংস্থা স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, এ্যাডভোকেসি, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, চাইল্ড প্রোটেকশনসহ বিভিন্ন
কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৮.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন:
১। ভবিষ্যত বিনির্মাণের শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ হলোÑ
(ক) রাস্তা-ঘাট নির্মাণে বিনিয়োগ (খ) শিশুদের উন্নয়নে বিনিয়োগ
(গ) কল কারখানায় বিনিয়োগ (ঘ) ব্যবসায় বিনিয়োগ
২। সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে কত সালে?
(ক) ১৯৭২ সালে (খ) ১৯৭৩ সালে
(গ) ১৯৭১ সালে (ঘ) ১৯৭৪ সালে

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]