সরকার সম্পর্কেএরিস্টটলের ধারণা আলোচনা করুন। তিনি কোন্ প্রকারের সরকারকে উত্তম বলে চিহ্নিত করেছেন এবং কেন?

সরকারের শ্রেণী বিভাগ রাজনীতি অধ্যয়নের বিশেষত: তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে
বিশেষ গুরুত্বপূর্ণদিক। এরিস্টটল তৎকালীন সময়ের প্রায় ১৫৮টি দেশের সংবিধান সংগ্রহ
করে সেগুলো পর্যালোচনা করেছিলেন এবং একটি উত্তম সংবিধান বা সরকার ব্যবস্থার ইঙ্গিত
দিয়েছিলেন। ‘দি পলিটিক্স’ গ্রন্থের চতুর্থঅধ্যায়ে এরিস্টটল বিভিন্নধরনের সংবিধান, সরকার
এবং তাদের শ্রেণীবিভাজন সম্পর্কেআলোচনা করেছেন।
এরিস্টটল কর্তৃক প্রদত্ত সরকারের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কেআলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই একটি
বিষয় সম্পর্কেপরিস্কার হওয়া দরকার, তা হলো আধুনিক কালে আমরা সরকার, রাষ্ট্র,
সংবিধান প্রভৃতি প্রত্যয়গুলোকে স্বতন্ত্রমনে করি এবং পৃথক পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করে থাকি।
কিন্তুএরিস্টটল এগুলোকে অভিন্নমনে করতেন না। তিনি এ প্রত্যয়গুলো আলাদাভাবে বিচার
বিশ্লেষণ করেন নি। এর কারণ সম্ভবত: তৎকালীন গ্রীসের রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে নিহিত।
তাঁর সমসাময়িক গ্রীসের নগর রাষ্ট্রগুলোতে ধনিকতন্ত্র(ঙষরমধৎপযু) এবং গণতান্ত্রিকদের
(উবসড়পৎধপু) মধ্যে ক্ষমতার প্রতিনিয়ত অদল বদল হতো। আর প্রায়শই তা হতো চরম
রাজনৈতিক অস্থিরতার ভেতর দিয়ে। উপরোক্ত শ্রেণী দু'টির যে কোন একটি ক্ষমতাচ্যূত হলে
শুধুসরকার নয়, রাষ্ট্রের চরিত্র বা প্রকৃতিই বদলে যেতো। তাই এরিস্টটলের একথা ভাববার
যথেষ্ট কারণ ছিল যে, সংবিধান, রাষ্ট্রও সরকার অভিন্নএবং এদের যে কোন একটির পরিবর্তন
ঘটলে রাষ্ট্রের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে। এরিস্টটল সংবিধানের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন এভাবে,
‘সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসমূহের বিন্যাসব্যবস্থা।’ অন্যকথায় এরিস্টটলের
মতানুযায়ী বলা যায়, সার্বভৌম নগর রাষ্ট্রের সংগঠন ও পরিচালনা সংক্রান্তবিষয়ই সংবিধান।
এরিস্টটল কর্তৃক প্রদত্ত সরকারের শ্রেণী বিভাগ কোন নতুন আবিষ্কার ছিল না। কেননা, প্লেটো
তাঁর রিপাবলিক গ্রন্থের ৮ম পুস্তকে সরকারের যে শ্রেণী বিন্যাস করেছিলেন, এরিস্টটল তার
দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, প্লেটো যেখানে সমাপ্ত করেছিলেন এরিস্টটল
সেখান থেকেই শুরু করেছিলেন।
এরিস্টটলের মতে নগর রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য প্রধানত: দু'টি। যথা-
(ক) সৎ জীবন যাপনে সাহায্য করা এবং (খ) ব্যক্তিগত সন্তষ্টি বিধান করা। সকলের অভিন্ন
স্বার্থসংরক্ষণ করাই উত্তম লক্ষ্য। কিন্তুসকল সংবিধান এ নীতিতে অবিচল থাকে না। তিনি
বলেন যে, কোন কোন সংবিধানে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা সকলের অভিন্নস্বার্থরক্ষাকে
প্রাধান্য দেন। এ জাতীয় সংবিধানই যথার্থবা সঠিক (জবধষ)। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে
শাসকগোষ্ঠী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থঅর্জনকে প্রাধান্য দেয়। এ জাতীয় সংবিধান হলো বিকৃত
(চবৎাবৎঃবফ) সংবিধান। তিনি আরও বলেছেন শাসনক্ষমতা একজন, অল্প কয়েকজন এবং
বহুজনের হাতে ন্যাস্তথাকতে পারে। সুতরাং শাসকের গুণ (অভিন্নস্বার্থ) বা সংকীর্ণস্বার্থএবং
শাসকের সংখ্যা (এক জন, কয়েকজন বা বহুজন) এ দুটি নীতির উপর ভিত্তি করে এরিস্টটল এরিষ্টটলের নিকট রাষ্ট্র, সংবিধান ও সরকার সব ছিল অভিন্ন।
সংবিধান বা রাষ্ট্রের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। সঠিক বা খাঁটি সংবিধানে একজন শাসক বা
কয়েকজন শাসক বা বহুজন শাসক সমাজের সকলের অভিন্নস্বার্থের দিকে দৃষ্টি রেখে শাসন
পরিচালনা করেন। এরিস্টটল একজনের শাসনকে রাজতন্ত্র, অল্প কয়েকজনের শাসনকে
অভিজাততন্ত্রএবং বহুজনের শাসনকে পলিটি বলেছেন। শাসকের সংখ্যা একজন, অল্প
কয়েকজন বা বহুজন থাকলেও যদি উদ্দেশ্য ভিন্নহয় অর্থাৎ তিনি বা তাঁরা যদি সকলের অভিন্ন
স্বার্থের প্রত্যয় থেকে বিচ্যূত হন তবে সে অবস্থায় যে ধরনের সংবিধান পাওয়া যাবে তাকে
এরিস্টটল বলেছেন বিকৃত সংবিধান। তাঁর মতে, এরূপ ক্ষেত্রে রাজতন্ত্রের বিপরীত হলো
স্বৈরতন্ত্র, অভিজাতন্ত্রের বিপরীত হলো সংকীর্ণগোষ্ঠীতন্ত্রএবং পলিটির বিপরীত হলো গণতন্ত্র।
নি¤েœর ছকের মাধ্যমে শ্রেণীবিন্যাসটির প্রকাশ করা যায়:
শাসকের সংখ্যা শুদ্ধ বা স্বাভাবিক রূপ বিকৃত রূপ
একজনের শাসন রাজতন্ত্র স্বৈরতন্ত্র
মুষ্টিমেয়র শাসন অভিজাততন্ত্র ধনিকতন্ত্র
বহুজনের শাসন পলিটি গণতন্ত্র
অধ্যাপক বার্কার এরিস্টটলের সংবিধান বিভাজনের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন যে,
এরিস্টটলের এ বিভাজনের মধ্য দিয়ে রাজনীতি ও অর্থনীতির সম্পর্কের প্রতিফলন
ঘটিয়েছেন। বিকৃত সংবিধান মূলত: অর্থনৈতিক শ্রেণী স্বার্থরক্ষার প্রতিফলন।
এরিস্টটল উপরোক্ত বিভাজনের মধ্যে পলিটিকে সর্বোৎকৃষ্ট বলেছেন। যদিও এটি বহুজনের
শাসন, তবুও বিশেষ অর্থেপলিটি বলতে তিনি একধরনের ভারসাম্য রক্ষাকারী মধ্যবিত্তের
শাসন বলতে চান। কারণ এখানে চরম প্রকৃতির ধনিকতন্ত্রও গণতন্ত্রের ক্রটিগুলোকে পরিহার
করে তাদের গুণাবলীর মিশ্রণ ঘটানো যায়। এটি ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ভারসাম্য বজায়
রাখে। তাঁর এই শ্রেণীবিভাগের মধ্যে দিয়ে এরিস্টটল সামগ্রীক স্বার্থকে বেশী প্রাধান্য দিয়ে
রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করার প্রতি ইঙ্গিত দিযেছেন। রাষ্ট্রের, সরকারের ও সংবিধানের স্বাভাবিক
লক্ষ্য হলো সামগ্রীক কল্যাণ সাধন এ সত্যটি তিনি প্রতিষ্ঠিত করতে ব্রতী হয়েছেন।
সমালোচনা
● গণতন্ত্রের প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাবের প্রকাশ ঘটায় এরিস্টটলের সংবিধানের শ্রেণীবিভাগ
সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে। তিনি গণতন্ত্রকে বিকৃত শাসন বলেছেন। এটি
আজকাল গ্রহণযোগ্য নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা শাসনকার্যপরিচালিত হলে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য
তথা সামগ্রীক কল্যাণ সাধিত হতে পারে বলে বর্তমানে মনে করা হয়।
● রাজতন্ত্রউত্তম হতে পারে, এমন বক্তব্য বর্তমানে অচল। রাজতন্ত্রঅতি সহজে স্বৈরতন্ত্রে
পরিণত হয়ে থাকে। তাই এখানে বিকৃতির ঝুঁকি বেশি।
● সরকার, সংবিধান ও রাষ্ট্রকে একই অর্থেব্যবহার করাকে বর্তমানে আর যুক্তিসংগত মনে
করা হয় না। বর্তমানে গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, ক্ষমতাপৃথকীকরণ ইত্যাদি ধারণাগুলোর
সাথে তাঁর শ্রেণীবিন্যাস সংগতিপূর্ণনয়।
● বর্তমানে সরকারের শ্রেণীবিভাগের প্রশ্নেশুধুমাত্র সংখ্যা ও উদ্দেশ্য বা গুণ নির্ভর বিভাজন অচল। অধুনা জটিল ধরনের জাতি রাষ্ট্রের বিভিন্নমুখী সমস্যা ও সংঘাতের আলোকে বিভিন্ন শাসকের গুণ ও সংখ্যা এ দু’টি নীতির উপর ভিত্তি করেই এরিস্টটল সরকারের শ্রেণী বিভাগ করেছেন পলিটি বলতে তিনি একধরনের ভারসাম্য রক্ষাকারী মধ্যবিত্তের শাসন বলতে চান।
চরিত্রের সরকারের অস্তিত্বলক্ষ্য করা যায়। তাই সরকার বিভাজনের মানদন্ড ভিন্নতর ও
বহুমুখী।
তবে শুধুমাত্র আধুনিক দৃষ্টি দিয়ে দেখলে এরিস্টটলের প্রতি অন্যায় করা হবে। আড়াই হাজার
বৎসর পূর্বেবিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তিনি এ বিভাজন করেছিলেন, এ
কথাটি মনে রাখা আমাদের কর্তব্য।
সারকথা
এরিস্টটল সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। তবে তাঁর কাছে সরকার, সংবিধান ও রাষ্ট্রের
অর্থছিল অভিন্ন। তিনি সংখ্যা এবং গুণ এ দু'টি নীতির উপর ভিত্তি করে সংবিধানের
শ্রেণীবিভাজন করেছেন। এটি করতে গিয়ে তিনি স্বাভাবিক রূপ যথা: নির্বিশেষে সমাজের
সকলের স্বার্থদেখা এবং বিকৃতরূপ যথা: ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থেরাষ্ট্রপরিচালনা করাকে
বুঝিয়েছেন। রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্রএবং পলিটিকে তিনি স্বাভাবিক রূপ এবং যথাক্রমে
স্বৈরতন্ত্র, ধনিকতন্ত্রএবং গণতন্ত্রকে বিকৃত রূপের সরকার বলেছেন। গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোন
থেকে আধুনিক সমালোচকগণ এরিস্টটলের এ শ্রেণীবিন্যাসকে নানামুখী সমালোচনা করে থাকেন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। আধুনিক কালে সরকার, রাষ্ট্রএবং সংবিধানকে ভিন্নভিন্নঅর্থেবুঝায় কারণক. এর ফলে গণতান্ত্রিক চেতনা উপকৃত হয়;
খ. এর ফলে স্বৈরতান্ত্রিক চেতনা উপকৃত হয়;
গ. এর ফলে অভিজাততন্ত্রউপকৃত হয়;
ঘ. এর ফলে ধনিকতন্ত্রউপকৃত হয়।
২। পলিটি স্বাভাবিক রূপ, এর বিকৃতরূপ হলোক. রাজতন্ত্র;খ. অভিজাততন্ত্র;
গ. গণতন্ত্র; ঘ. স্বৈরতন্ত্র।
৩। রাজতন্ত্রেশাসক বা শাসকবর্গ‘বিকৃতভাবে শাসন করলে যে রূপ পাওয়া যায় তা হলো:
ক. রাজতন্ত্র;খ. অভিজাততন্ত্র;
গ. পলিটি; ঘ. স্বৈরতন্ত্র।
সঠিক উত্তর ১। ক ২। গ ৩। ঘ
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। ‘দি পলিটিকস্’ গ্রন্থের কোন অধ্যায়ে এরিস্টটল সংবিধানের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে
আলোচনা করেছেন?
২। পলিটি কি?
৩। এরিস্টটলের মতে কেন মধ্যবিত্ত দ্বারা শাসিত সরকার উত্তম?
৪। সংবিধানের শ্রেণীবিন্যাসের ভিত্তি দু'টি কি?
৫। সংবিধানের শ্রেণীবিন্যাস করতে গিয়ে এরিস্টটল কাকে অনুসরণ করেছেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সমালোচনাসহ এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণীবিভাগের বর্ণনা দিন।
২। সরকার সম্পর্কেএরিস্টটলের ধারণা আলোচনা করুন। তিনি কোন্ প্রকারের সরকারকে
উত্তম বলে চিহ্নিত করেছেন এবং কেন?

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]