সমালোচনাসহ এরিস্টটলের দাসতত্ত¡আলোচনা করুন।

দাসতত্ত¡এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তার এক উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। তবে বিষয়টি অত্যন্ত
স্পর্শকাতর। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বেযেখানে দৃশ্যত ও আনুষ্ঠানিক বিচারে ‘সকল মানুষ
সমান' এমন চিন্তা সর্বজনভাবে স্বীকৃত। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে, এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তায়
বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেছিল। সমসাময়িক গ্রীক সমাজ ছিল দাস নির্ভর সমাজ। নগর রাষ্ট্রের
উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে দাসের শ্রমের উপর নির্ভরশীল ছিল। এই দাসদের কোন প্রকার সামাজিক
বা রাজনৈতিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না। নগর রাষ্ট্রের প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজনই ছিল
দাস। মাঝে মধ্যে দাস বিদ্রোহ নগর রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অস্থির করে তুলতো। তাছাড়া সফিষ্ট
সম্প্রদায়ের চিন্তাধারায় দাসদের সমানাধিকারের কথা বার বার উচ্চারিত হতো। উপরোক্ত
রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে একজন যুক্তিবাদী ও সংরক্ষণবাদী চিন্তাবিদ হিসাবে এরিস্টটল
নগর রাষ্ট্রেদাস ব্যবস্থাকে শুধুসমর্থনই করেন নি, এর পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে গিয়েছেন।
এরিস্টটল তাঁর ‘দি পলিটিকস’ পুস্তকের ১ম অধ্যয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ইতিমধ্যে
আমরা দেখেছি [পূর্ববর্ত্তীপাঠ দ্রষ্টব্য] এরিস্টটল তাঁর রাষ্ট্রচিন্তায় পরিবারকে একটি বিশেষ মর্যাদা
দিয়েছেন। পরিবার থেকে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গার্হস্থ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার
কথা বলেছেন। গার্হস্থ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার একটি অপরিহার্যউপকরণ হিসাবে তিনি দাস
এবং দাসব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে এরিস্টটল আইনগত, নৈতিক,
অর্থনৈতিক বিবিধ যুক্তির অবতারণা করেছেন।
● তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেছেন যে, দাসরা জৈব বা সজীব যন্ত্রপাতির সামিল (অহরসধঃব
ঃড়ড়ষং)। তিনি বলতে চান গৃহস্থালী কাজের জন্য কিছুউপকরণের দরকার। আর এ সব
উপকরণ দু' প্রকারÑযথা অজৈব ও জৈব উপকরণ (
তাঁর যুক্তিতে দা ক‚ড়াল ইত্যাদি যেমন ‘অজৈব যন্ত্রপাতি’ তেমনি গৃহস্থালী কাজের জন্য
গৃহপালিত পশু, দাস ইত্যাদি ‘জৈব যন্ত্রপাতি।’ এগুলো মূলত: জীবন্তসম্পদ। এ সব
হাতিয়ার ব্যতীত গৃহস্থালী কার্যসম্পাদন সম্ভব নয়। অর্থাৎ এরিস্টটলের
মতে গৃহস্থালী পশু ও দাসের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। পশুর যেমন যুক্তিবোধ নাই, দাসেরও
তেমনি যুক্তিবোধ নাই। আর এ জন্যই তারা দাস। এ কারণে, তাদের নিজস্ব সত্তা ও
স্বাধীনতা থাকার কোন অর্থনাই। সুতরাং সফিস্ট সম্প্রদায়ের যুক্তির বিপরীত প্রান্তেদাঁড়িয়ে
এরিস্টটল বলতে চান, দাস ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক, তথা কৃত্রিম নয়।
● এ প্রসঙ্গে এরিস্টটল যুক্তির অবতারনা করেছেন এ ভাবে যে, সব সময়ই কোন গঠিত
সমগ্রের সেই অংশ কর্তৃত্ব করে থাকে যে অংশ উৎকৃষ্ট। এরিস্টটল বলতে চান যে,
প্রকৃতিগতভাবে সকল মানুষ সমান নয়। কিছুলোক জ্ঞান বা প্রজ্ঞার অধিকারী এবং উক্ত
প্রজ্ঞার কারণে তারা শুধুআদেশ দানেরই উপযুক্ত। অন্যদিকে অধিকাংশ লোক শুধুমাত্র
দৈহিক শক্তির বলে শক্তিমান। তারা শুধুহুকুম তামিল করার উপযুক্ত। প্রজ্ঞার অভাব আছে
বলে এরা হুকুম দানে অক্ষম। অন্য কথায় প্রভুতাঁরা যারা জ্ঞানী এবং দাস তারা যারা নগর রাষ্ট্রের উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে দাসের শ্রমের উপর নির্ভরশীল ছিল। দাস ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক, তথা কৃত্রিম নয়। উত্তমের অধীনে অধমের থাকার মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা নাই।
প্রজ্ঞাবানের আদেশ মান্য করে। প্রভুরা মস্তিস্ক ও আত্মা দ্বারা চালিত হয়। আর দাসেরা
দেহ বা আবেগ দ্বারা চালিত হয়। দেহ প্রজ্ঞার অধীনে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। উত্তমের
অধীনে অধমের থাকার মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা নাই।
● এরিস্টটল উন্নত ও নৈতিক জীবন যাপনের লক্ষ্যের সাথে দাস ব্যবস্থাকে এক করে
দেখেছেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন যে, প্রভুদের যদি গৃহস্থালী কাজে ব্যাপৃত থাকতে হয়,
তবে উন্নত জীবন নির্দেশনার জন্য তারা পর্যাপ্ত সময় ‘অবসর’ পাবেন না। তাই রাষ্ট্রের
পরম লক্ষ্য তথা উন্নত নৈতিক জীবন অর্জনের নিমিত্তে দাসব্যবস্থা অপরিহার্য।
● এরিস্টটল যুক্তি দেখিয়েছেন যে, দাসদের কল্যাণার্থেই তাদের দাস হয়ে থাকা উত্তম।
কেননা প্রজ্ঞার অভাব থাকায় তাদের পক্ষে স্বাধীন ও মানবীয় সুস্থ্য জীবন যাপন সম্ভব নয়।
এমতাবস্থায় প্রভুর অধীনে থেকে তাঁর গুণাবলীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দাসেরা নৈতিক উৎকর্ষ
লাভ করতে পারে। এমন হলে একদিকে দাসরা মুক্ত মানুষ হতে পারে, অন্যদিকে প্রভুরা
দাসের উপর উৎপাদনের ভাব ছেড়ে দিয়ে উন্নত জীবন রচনায় মনোনিবেশ করতে পারে।
সুতরাং দাস প্রথাটি দাস, প্রভুএবং নগর রাষ্ট্রসবার জন্যই কল্যাণকর। তবে এ প্রসঙ্গে
তিনি বলতে চান যে, দাসদের উপর উৎপাদনের ভার ছেড়ে দিয়ে অবসরকে যদি প্রভুরা
সদ্ব্যবহার না করেন তবে দাস ব্যবস্থার কোন নৈতিক ভিত্তি থাকে না। তিনি বলতে চান
দাসদের সৃষ্ট অবসরকে প্রভুরা যদি উন্নত জীবন রচনায় ব্যবহার করতে না পারেন, তবে
ঐ সব প্রভুরা প্রভুথাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেন। মোট কথা এরিস্টটল দাস ব্যবস্থাকে
প্রাকৃতিক, স্বাভাবিক, অকৃত্রিম এবং নগর রাষ্ট্রও মানুষের জন্য কল্যাণকর একটি প্রতিষ্ঠান
হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
সমালোচনা
এরিস্টটল ‘দাস ব্যবস্থা’ সমর্থন করে তার পক্ষে অত্যন্তজোরালো যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু
তৎকালে এবং বর্তমানে তাঁর এ তত্ত¡বিপুলভাবে সমালোচিত হয়েছে।
● এরিস্টটলের এ তত্ত¡ মানবতা বিরুদ্ধ। সমতার নীতিকে তিনি অস্বীকার করে সার্বজনীন
মানবতার বিরুদ্ধে কথা বলে গিয়েছেন।
● তিনি যে নীতির ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজন করতে চেয়েছেন, তাও খুব যুক্তিযুক্ত
নয়। ‘মানুষ মাত্রই যুক্তিবাদী এবং পূণ্যের প্রতি অনুরক্ত’-এ বাণীই সত্যবাণী বলে তৎকালীন
সংশয়বাদী ও স্টোয়িকবাদীরা প্রচার করে গিয়েছেন। বলাবাহুল্য, বর্তমান কালেও এরূপ
দর্শনই সর্বজন স্বীকৃতি পেয়েছে।
● দাসদেরকে পশু ও গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির সাথে তুলনা করে এরিস্টটল গোঁড়া ও রক্ষণশীল
দৃষ্টিভংগির পরিচয় দিয়েছেন।
● দাসতত্তে¡র ভেতর দিয়ে তার গ্রীক অহংবোধের সংকীর্ণপ্রকাশ ঘটেছে। কারণ, গ্রীকরা
দাস হতে পারে না, এমন কিছুবক্তব্যও তিনি দিয়েছেন।
● তৎকালীন গ্রীক নগর রাষ্ট্রেদাসদের মধ্যে যে উপর্যুপরী বিদ্রোহ সংঘটিত হতো তা তাঁকে
কিছুটা বিব্রত করে তুলেছিল। তিনি সফিস্ট সম্প্রদায়ের মত প্রগতির পথে চিন্তা না করে
রক্ষণশীল দৃষ্টিভংগিতে দর্শন ও যুক্তির মাধ্যমে তা প্রতিহত করে ক্রম:ক্ষয়িষ্ণুগ্রীক সমাজের
মূল্যবোধকে সংরক্ষণ করতে চেয়েছেন। তবে এ কথা বলা যায় যে, সমতা ও মানবতার
দৃষ্টিকোণ থেকে এরিস্টটলের দাসতত্ত¡প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন বলে মনে হলেও এবং আধুনিক
যুগে তা দৃশ্যত নিন্দনীয় হলেও বাস্তবে বর্তমানে আমরা কি দেখি? মানবতার নামে বিত্তহীন মানুষ এখনও সমাজের উচ্চবিত্ত ও ধনীদের ইচ্ছার দাস। সুতরাং এরিস্টটল অবাস্তব চিন্তা করেছিলেন, এমন কথা বলার কোন ভিত্তি নাই। দাস প্রথাটি দাস, প্রভু এবং নগর রাষ্ট্র সবার জন্যই কল্যাণকর
সারকথা
তৎকালীন গ্রীসের সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এরিস্টটল দাস ব্যবস্থাকে সমর্থন
করেছিলেন। সফিস্ট সম্প্রদায়ের বিপরীত প্রান্তেঅবস্থান নিয়ে এরিস্টটল দাস ব্যবস্থাকে
নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যথার্থবলেছেন। তাছাড়া আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ
বলেছেন এবং দাস ব্যবস্থাকে প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক বলে গণ্য করেছিলেন। তবে তাঁর
এ তত্ত¡বর্তমানের সার্বজনীন মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে নানাভাবে সমালোচনা করা হয়।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। এরিস্টটলের সমসাময়িক গ্রীক সমাজ ছিলÑ
(ক) ধনতান্ত্রিক;
(খ) দাসভিত্তিক;
(গ) সমাজতান্ত্রিক;
(ঘ) সামন্ততান্ত্রিক।
২। এরিস্টটল দাসব্যবস্থাকে প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক বলে মনে করতেন, কারণÑ
(ক) মানুষ সকলেই সমান;
(খ) মানুষে মানুষে জ্ঞানে বা প্রজ্ঞার পার্থক্য আছে;
(গ) অধিকাংশ দাস ছিল অ-গ্রীক;
(ঘ) দাসব্যবস্থা গ্রীক সমাজে প্রচলিত ছিল।
৩। এরিস্টটল দাসদেরকে মনে করতেনÑ
(ক) সজীব যন্ত্রপাতির সামিল;
(খ) বুদ্ধিমান প্রাণী;
(গ) শাসক হওয়ার মত যোগ্যতা সম্পন্নমানুষ;
(ঘ) হুকুম তামিল করার যোগ্যতা সম্পন্নমানুষ।
সঠিক উত্তর: ১। খ ২। খ ৩। ক
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। দাস সমাজ কি?
২। নৈতিকতার দৃষ্টিতে কেন এরিস্টটল দাসব্যবস্থা সমর্থন করেছিলেন?
৩। দাসব্যবস্থা সম্পর্কেসফিষ্ট সম্প্রদায় কি দৃষ্টিভংগি পোষণ করতেন?
৪। এরিস্টটলের দাসতত্ত¡সম্পর্কেবর্তমান দৃষ্টিতে কি কি সমালোচনা আছে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। এরিস্টটলের দাসতত্ত¡সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।
২। সমালোচনাসহ এরিস্টটলের দাসতত্ত¡আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]