এরিস্টটলকে কেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলা হয়? কেন এরিস্টটলকে আইনের শাসনের মূল প্রবক্তা বলা হয়?

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এরিস্টটলের অবদান উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ। এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের
জনক বলা হয়। এ বক্তব্যের যথার্থতা বিশ্লেষণের দাবী রাখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তাঁর অবদানসমূহ
পরীক্ষা করে এ বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা যায়। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে
গ্রীসের নগর রাষ্ট্রের বাস্তবতার নিরিখে তিনি রাজনৈতিক বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন। কিন্তু
কালের আবর্তেতাঁর কিছুকিছুচিন্তা ভাবনা বর্তমানেও বজায় আছে। সম্ভবত রাষ্ট্রবিজ্ঞানে
এরিস্টটলই সবচেয়ে বেশি কালোত্তীর্নের মর্যাদা পেয়েছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তাঁর উল্লেখযোগ্য
অবদানসমূহ নি¤œরূপ:
● এরিস্টটলই রাজনীতি বিজ্ঞানকে সর্বপ্রথম একটি ‘স্বতন্ত্র’ মর্যাদায় নিয়ে
আসার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর দীক্ষাগুরু প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তা ছিল দার্শনিকোচিত
অর্থাৎ বাস্তব অবস্থা নয় বরং ‘কি হওয়া উচিত’ এটিই ছিল প্লেটোর মূল
জিজ্ঞাসা। এ ছাড়া নীতিশাস্ত্রকে সর্বাধিক মর্যাদা দিয়ে প্লেটো রাষ্ট্রনীতিকে নীতিশাস্ত্রের
অধীনস্থকরেছেন। ফলে, প্লেটোর হাতে রাষ্ট্রনীতি কোন পৃথক ও স্বাধীন মর্যাদা পায়নি।
কিন্তু এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বলেছেন গধংঃবৎ ঝপরবহপব বা ‘প্রভ‚ত্বকারী বিজ্ঞান।’
নীতিশাস্ত্রকে তিনি ম্যাকিয়াভেলীর মত বর্জন করার কথা বলেননি। কিন্তুরাষ্ট্রনীতির উপর
নীতিশাস্ত্রের প্রধান্যকে অস্বীকার করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে ‘স্বতন্ত্র' মর্যাদায় সমাসীন করে
গিয়েছেন।
● এরিস্টটল রাজনৈতিক বিষয়গুলো অধ্যয়নের যে পদ্ধতির প্রবর্তন করেছিলেন তা ছিল
বিজ্ঞানভিত্তিক। গ্যাটেলের মতে ‘এই পদ্ধতির ফলে রাষ্ট্রসম্মন্ধীয় আলোচনা বিজ্ঞানের
পর্যায়ভুক্ত হতে পেরেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তব গবেষণা এই আরোাহী পদ্ধতির মাধ্যমে
রাজনৈতিক বিষয় পঠন ও পাঠনের জন্য এরিস্টটল চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
● বাস্তববাদীতা এবং অভিজ্ঞানবাদকে রাজনীতি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে এরিস্টটল
রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে দর্শন ঘেঁষা, অনুমান ও কল্পনা নির্ভরতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে সমাজ
বিজ্ঞানের একটি শক্তিশালী শাখায় উন্নীত করেছেন।
● রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অধুনা রাজনীতির একটি বড় সমস্যা। এরিস্টটল স্থিতিশীলতা
সম্পর্কেযে তত্ত¡ দিয়েছেন, তা আজও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে চলেছে। রাজনীতি ও
অর্থনীতির চিরন্তন সম্পর্কের বিষয়ে তিনিই প্রথম উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। ধনী ও
দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট হলে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়। এ সত্য
উপলব্ধি করে এরিস্টটল বিশৃঙ্খলা ও বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে লাগামহীন
অর্থনৈতিক বৈষম্যকে দায়ী করেছেন। শুধুমার্কসীয় দৃষ্টিতে নয়, সমাজবিজ্ঞানের কোন
লেখকই তাঁর এ বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন নি। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য
মধ্যবিত্তের নেতৃত্তে¡র ধারণা এরিস্টটলকে যুগোত্তীর্নকরেছে।
● ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর শাসনের চেয়ে আইনের শাসনই যে উত্তম, এ ধরনের বক্তব্যের জন্য
এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অমর হয়ে আছেন। কারণ যুগে যুগে প্রমাণিত হয়েছে এবং হচ্ছে
যে বিধি সম্মত আইনের প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমেই ব্যক্তির স্বাধীনতা ও মুক্তি সুনিশ্চিত
হতে পারে। আইন নৈব্যক্তিক, নিরাশক্ত এবং যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আধুনিক
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এ ধারণার গোড়াপত্তন হয়েছে এরিস্টটলের হাতে। এরিস্টটল ছিলেন বাস্তববাদী রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট হলে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়। আইন নৈব্যক্তিক, নিরাশক্ত এবং যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
● সীমিত সরকারের ধারণা এরিস্টটলের সৃষ্টি। আইনের সার্বভৌমত্বের কথা বলে এরিস্টটল
নিয়মতান্ত্রিক সরকারের ধারণার সূচনা করেছেন। যার মূল কথা হচ্ছে, সরকার ব্যবস্থা
আইনের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং সরকারও আইন দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হবে।
● রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উপর ভৌগলিক উপাদানের প্রভাবের কথা বলে এরিস্টটল একজন
অত্যাধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মত কথা বলে গেছেন। কারণ রাষ্ট্রও সরকার ব্যবস্থার সাথে
দেশের জলবায়ু, ভৌগলিক ও প্রতিবেশের সম্পর্কচিরন্তন। আধুনিক ভ‚-রাজনীতিতত্ত¡,
ব্যবস্থাতত্ত¡তাঁর কাছে ঋণী।
● এরিস্টটল তাঁর রাষ্ট্রচিন্তায় রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও উৎপত্তির যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার ভেতর দিয়ে
তিনি এ সংগঠনটির মহৎ উদ্দেশ্যের চিরন্তন বানী উচ্চারণ করে গিয়েছেন। মানুষের সার্বিক
উন্নতি ও কল্যাণ সাধনই হলো রাষ্ট্রের চরম ও পরম লক্ষ্য। একথা কেউই অস্বীকার করতে
পারেন নি। রাষ্ট্রছাড়া কোন ব্যক্তিই সম্পূর্নহতে পারে না, তাঁর এ বক্তব্যের কোন বিকল্প
নাই। এ ভাবে তিনি রাষ্ট্রও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ধারণাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন।
তবে তাঁর অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন, তার চিন্তার মধ্যে রক্ষণশীল দৃষ্টিভংগির প্রতিফলন,
দাস ব্যবস্থাকে সমর্থন, রাষ্ট্রকে অতিরিক্ত গুরুত্বদিতে গিয়ে ব্যক্তি ও সমাজকে গুরুত্বহীন করা
এ সব সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য এরিস্টটল হয়তো
চিরদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।
সারকথা
এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কিছুগুরুত্বপূর্ণএবং স্থায়ী অবদান রেখে গেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে
একটি স্বতন্ত্রও স্বাধীন বিষয় হিসেবে তিনিই প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রাজনৈতিক
বিষয়গুলোকে বিজ্ঞান ভিত্তিক পরীক্ষা নিরীক্ষা, যাচাই, পুনযাচাইয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে
উপনীত হওয়ার মত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির তিনিই অবতারণা করেছিলেন। তিনি ছিলেন
আইনের শাসনের প্রবক্তা। এরিস্টটলই নিয়মতান্ত্রিক সরকারের ধারণা র্সবপ্রথম দেন।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নেতিনি ব্যাপক গবেষণা করে যে ফলাফল রেখে গিয়েছেন
তা আজও আমরা ব্যবহার করে থাকি। রাষ্ট্রকে একটি প্রয়োজনীয় মানবীর সংগঠন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার মূল কৃতিত্বএরিস্টটলের। এ সব অবদানের জন্য এরিস্টটল অমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কারণ তিনিÑ
(ক) রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও প্রকৃতি সম্পর্কেবাস্তবসম্মত ব্যাখ্য দিয়েছেন;
(খ) ব্যক্তির শাসনের চাইতে আইনের শাসনকে উত্তম বলেছেন;
(গ) ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে কোন পার্থক্য নিরূপন করেন নি;
(ঘ) রাষ্ট্রনীতি অধ্যয়নে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অবতারণা করেছিলেন।
২। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এরিস্টটলের মতে শাসন ক্ষমতা থাকা উচিত
(ক) উচ্চবিত্তদের হাতে;
(খ) নি¤œবিত্তদের হাতে;
(গ) জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিদের হাতে;
(ঘ) মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাতে।
৩। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে নীতিশাস্ত্রের সম্পর্কএরিস্টটলের মতে কেমন হওয়া উচিত?
(ক) রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে হতে হবে নীতিশাস্ত্রের অধীনস্থ;
(খ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান নীতিশাস্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দিবে;
(গ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও নীতিশাস্ত্রপরস্পর থেকে সম্পূর্ণপৃথক থাকবে;
(ঘ) নীতিশাস্ত্ররাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধীনস্থথাকবে।
সঠিক উত্তর: ১। ঘ ২। ঘ ৩। ঘ।
রচনামূলক প্রশ্ন
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন:
১। এরিস্টটলকে কেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলা হয়?
২। কেন এরিস্টটলকে আইনের শাসনের মূল প্রবক্তা বলা হয়?
৩। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এরিস্টটলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণঅবদান কি?
রচনামূলক প্রশ্ন:
১। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এরিস্টটলের অবদান মূল্যায়ন করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]