রাষ্ট্রতত্তে¡র ইতিহাসে পলিবিয়াসের খ্যাতির কারণসমূহ সিসোরোর রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রধান দিকগুলো

ঐতিহাসিক পলিবিয়াস (২০০-১২০ খ্রী: পূ:) তাঁর লেখা গ্রন্থ ‘হিস্ট্রি অব রোম’ রচনার মাধ্যমে
বিশ্বে খ্যাতিমান হয়ে আছেন। বিখ্যাত গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস এবং থুসিডাইডস্ এর
পরই তাঁর অবদান স্বীকৃত। তিনি আর্কেডিয়া নগর রাষ্ট্রের অন্তর্গত মেগালোপলিস নামক স্থানে
জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়সেই তিনি একজন প্রতিশ্রæতিশীল প্রশাসক হিসেবে নগর রাষ্ট্রসমূহের
কনফেডারেশন আচেনাস-এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত হন।
মেসিডোনিয়ায় রোমান আক্রমণ ও বিজয়ের পর একজন সম্ভ্রান্তআচেয়ান হিসেবে অপরাপর
হাজারো বন্দীদের সাথে পলিবিয়াস খ্রি. পূ. ১৬৮ সালে যুদ্ধবন্দী হন। আচেয়ান লীগের নেতা
হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে বন্দী অবস্থায় রোমে
স্থানান্তর করা হয়। রোমে অবশ্য পলিবিয়াসের আশ্রয় মিলে জেনারেল আমেলাস পাওলাসের
গৃহে তাঁরই দুই পুত্র সন্তানের গৃহ শিক্ষক হিসেবে। তন্মধ্যে অনুজ ছাত্র স্কিপিও শীঘ্রই ইটালীর
গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োগ লাভ করলে পলিবিয়াসের ভাগ্য কিছুটা সুপ্রসন্ন। ষোল বছর
নির্বাসিত জীবন যাপনের পর রোমান সিনেট (১৫১ খ্রিঃ পূঃ) জীবিত আচিয়ানদের গ্রীসে ফিরে
যাবার অনুমতি প্রদান করলে পলিবিয়াস তাঁর বন্ধুপ্রতিম ছাত্র স্কিপিও-র সান্নিধ্যে রয়ে যান।
স্কিপিও পরিচালিত আফ্রিকা অভিযানে পলিবিয়াস তাঁর সঙ্গী হন এবং খ্রিঃ পূঃ ১৪৬ সালে
কার্থেজের পতন ও পোনিক যুদ্ধের সমাপ্তি প্রত্যক্ষ করেন।
রোমান রাষ্ট্রনায়কদের সাহচর্য ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্তি এবং পলিবিয়াসের নিজস্ব প্রশাসনিক
দক্ষতা ও যোগ্যতা তাঁদের কাছে স্বীকৃত ও সমাদৃত হবার ফলে পলিবিয়াস রোম ও আচেনাসের
মধ্যেকার সমঝোতা স্থাপন মিশনের দায়িত্ব নিয়ে গ্রীসে গমনের সুযোগলাভ করেন। যদিও এই
মিশনটি সাফল্য লাভে ব্যর্থ হয়, তথাপি তিনি গ্রীসের পুনর্গঠনে রোমান সরকারের
প্রতিনিধিত্বের সুযোগপ্রাপ্ত হন। এ ছাড়াও তিনি ‘রোমানদের’ পক্ষে ইউরোপ ও এশিয়ায় বিভিন্ন
সামরিক ও ক‚টনৈতিক মিশনে অংশগ্রহণ করেন।
পলিবিয়াসের পান্ডিত্যপূর্ণ বাস্তব জ্ঞানের প্রতিফলন পাওয়া যায় চল্লিশ খন্ডে সমাপ্ত তাঁর লেখা
‘হিস্ট্রি অব রোম’ গ্রন্থে। গ্রিক বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার পটভূমি এবং রোমান রাজনীতি ও প্রশাসনের
সাথে তাঁর দীর্ঘকালীন সংশ্রব উভয়ের সমন্বয়ে প্রথমবারের মত তাঁকে রোমান সাম্রাজ্যের
বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। একটি ছোট্ট নগর রাষ্ট্র থেকে বিশাল রোমান সাম্রাজ্যে
পরিণত হওয়ার যুগ সন্ধিক্ষণে (২৬৪-১৪৬ খ্রিঃ পূঃ) যেসব রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ সংঘটিত
হয় সবকিছুই উঠে আসে তাঁর ইতিহাস রচনায়। বিশেষতঃ পোনিক যুদ্ধের সময় থেকে মেডিসন
বিজয় পর্যন্ততেপ্পান্ন বছরের যুদ্ধ-বিগ্রহের ইতিহাস আপন অভিজ্ঞতায় ব্যাখ্যা করেন তিনি।
কেন এবং কিভাবে পৃথিবীর সভ্যজাতিসমূহ একের পর এক রোমান শাসনের পতাকাতলে
বিলীন হয়ে যায় সেই শৌর্য-বীর্যের কাহিনী স্থান পায় এই গ্রন্থে।
‘হিষ্ট্রি অব রোম’ গ্রন্থে পলিবিয়াস সরকারের শ্রেণীবিভাগ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এদের
প্রকৃতিগত রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধারাকে ব্যাখ্যা করেন। প্লেটো এবং এরিস্টটলের অনুসরণে
পলিবিয়াস সরকারের ত্রি-মাত্রিক শ্রেণীবিভাগ তুলে ধরেন। যেমন: স্বাভাবিক অবস্থায় রাজতন্ত্র,
অভিজাততন্ত্র ও গণতন্ত্র এবং এদের অধঃপতিত অবস্থায় যথাক্রমে স্বেচ্ছাতন্ত্র, কতিপয়ন্ত্র এবং
হুজুগতন্ত্রে পরিণত হয়। তবে এরিস্টটলের চাইতেও তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন যে এ
সব সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে এর অধঃপতনের বীজ রোপিত
হয় সেই সরকার ব্যবস্থার অভ্যন্তরেই। পলিবিয়াস এটাও বিশ্বাস করতেন যে রাজতন্ত্র,
অভিজাততন্ত্র ও গণতন্ত্রের ভাল উপাদানগুলো যদি একত্র কোন সরকার ব্যবস্থায় প্রয়োগ করা
যায় তা’হলে সেটি সরকারের অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে স্থিতিশীলতা আনয়নে সহায়ক হবে।
স্পার্টা এবং রোমের উদাহরণ টেনে পলিবিয়াস তার যুক্তির যথার্থতা প্রমাণের চেষ্টা করেন।
রোমের সাংবিধানিক নীতিমালার উল্লেখ করে পলিবিয়াস উল্লেখ করেন যে, এখানে
কনসালদের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের নীতিমালা, সিনেটের মাধ্যমে অভিজাতদের প্রতিনিধিত্ব এবং
জনপ্রতিনিধি পরিষদের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সংমিশ্রণ ঘটানো হয় এবং সরকারের প্রতিটি কাঠামো
একে অপরের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের অভ্যন্তরে একপ্রকার ভারসাম্য রক্ষা
করে। এ ভাবে পলিবিয়াসই হলেন প্রথম লেখক যিনি মিশ্র সরকার ব্যবস্থার পক্ষে জোরালো
মতামত জ্ঞাপন করেন।
একজন ইতিহাসবেত্তা হিসেবে কেবলমাত্র ইতিহাসের ঘটনা ও দিন-তারিখ লিখেই তিনি ক্ষান্ত
হন নি, বরং সেগুলোর রাজনৈতিক পটভূমির অনুসন্ধান ও বিচার-বিশ্লেষণের কাজে
আত্মনিয়োগ ও সেসবের ভবিষ্যত দিক নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি। তাঁর লেখার পদ্ধতি
সাধারণ অথচ উপস্থাপনা সাবলীল এবং পরিচ্ছন্ন। এটিক ভাষায় লেখা গ্রীক রাজনৈতিক
সাহিত্যে অত্যন্তমূল্যবান দলিল এটি। পলিবিয়াস হলেন প্রথম ঐতিহাসিক যিনি রাজনীতি
পাঠে ‘প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি’ ব্যবহার করেন এবং পরীক্ষা করে দেখান যে একটি রাষ্ট্রের সাবলীল
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো জাতীয় শক্তি সঞ্চয়ে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা পালনে সক্ষম। রোমের
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তার অমিত ঐশ্বর্য বয়ে আনার পেছনে কতটা অবদান রেখেছে সেটিও
তিনি পরীক্ষা করে দেখান। তাঁর বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যবেক্ষণ, রোমান রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানাদির
পরীক্ষা-নিরীক্ষা সবকিছু মিলিয়ে তাঁর ইতিহাস রচনাকে কেবলমাত্র ইতিহাসের ঘটনাবলীর
ধারাবাহিক বর্ণনায় সীমাবদ্ধ রাখে নি।
সিসেরো
প্রাচীন রোমান যুগের প্রধান রাজনৈতিক দার্শনিক, রাষ্ট্রনায়ক ও সুবক্তা মার্কাস টালিয়াস
সিসেরো (১০৬-৪৩ খ্রী: পূ:) বর্তমান ইটালীর আর্পিনো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর
বয়সে তিনি টালি নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। যৌবনে তিনি আইন , বাগ্মিতা, দর্শন
ইত্যাদি বিষয়াদি অধ্যায়ন করেন। সংক্ষিপ্ত সময় সামরিক বিভাগের চাকুরী এবং তিন বছরের
আইন পেশায় অভিজ্ঞতা ছাড়া গ্রীস ও এশিয়া ভ্রমণকালে তিনি পাঠাভ্যাস অব্যাহত রাখেন।
তিনি ৭৭খ্রি: পূ: রোমে প্রত্যাবর্তন করে রাজনৈতিক পেশা শুরু করেন। এবং ৭৪ খ্রি: পূর্বাব্দে
সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন।
সিসেরো নিজে অভিজাত পরিবারভুক্ত না হয়েও তাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির কারণে ৬৪ খ্রী:
পূর্বাব্দে কনসালশিপ নির্বাচনে অধিকাংশ বিত্তবান ও ক্ষমতাশালী রোমনদের সমর্থনে বিজয়ী
হন। তাঁর প্রতিদ্ব›দ্বী কেটলিন তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠলে সিসেরো প্রতিদ্ব›দ্বী
দলের কিছু সদস্যকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে
দ্রæত বিচারকার্য সম্পন্ন করার অভিযোগে সিসেরোকে মিসেডোনিয়ায় নির্বাসনে যেতে হয়। তাঁর
নির্বাসনের এক বছরের মাথায় রোমান নরপতি জেনারেল পম্পেই‘র সরকারে যোগদান করেন।
পম্পেই‘র সাথে তখন জুলিয়াস সিজারের চলছিল ঘোর শত্রæতা। ৪৮ খ্রী: পূর্বাব্দে সিজারের
কাছে পম্পেইর পরাজয়ের পর সিসেরো একজন সাধারণ নাগরিকের জীবনযাপন শুরু করেন
এবং প্রচুর লেখালেখির কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ৪৪ খ্রী: পূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজারের পালক
পুত্র সম্রাট অগাস্টাসকে মার্ক এন্টানির সাথে ক্ষমতার লড়াই-এ সমর্থন করেন। পরবর্তীতে
অগাস্টাস ও এন্টোনিওর মাঝে সমঝোতা স্থাপিত হলে ৪৩ খ্রী: পূর্বাব্দে সিসোরোকে
রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে আত্মাহুতি দিতে হয়।
রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সিসেরো ছিলেন একজন চমকপ্রদ লেখক
ও দার্শনিক। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন : কবিতা, বাগ্মিতা, বাগাড়ম্বরতা, নীতিশাস্ত্র,
রাজনৈতিক দর্শন প্রভৃতি ক্ষেত্রে তার ছিল অবাধ বিচরণ। তাঁর লেখার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল
স্বদেশের মানুষকে গ্রীসের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের ধ্যান
ধারণার সাথে পরিচয় ঘটানো এবং সেগুলো কিভাবে রোমানদের জীবন যাত্রায় প্রযোজ্য হতে
পারে তা তুলে ধরা। তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা স্টোয়িকদের দ্বারা এতোই প্রভাবিত হয়েছিল
যে তিনি পুরোপুরিভাবে স্টোয়িক দার্শনিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
সিসেরোর রাজনৈতিক লেখাগুলো প্লেটো এবং এরিস্টটলের চিন্তাধারার কাছাকাছি হলেও তাঁর
লেখায় রয়েছে লক্ষ্যণীয়ভাবে ‘অধিকতর ব্যতিক্রম ও সজীবতা’। প্লেটো এবং এরিস্টটল
যেখানে নগর রাষ্ট্রের চৌহদ্দির বাইরে তাঁদের চিন্তাকে সম্প্রসারিত করতে পারেন নি সিসেরো
সেখানে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে রাষ্ট্রের আলোচনাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যান। প্লেটো
এবং এরিস্টটলের লেখায় গ্রীকদের জাতিগত উৎকর্ষতা প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রীকদের ‘বর্বর’ হিসেবে
দেখার অবকাশ থাকলেও সিসেরো রোমের রাজনৈতিকও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার আলোকে
বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গী ফুটিয়ে তোলেন। সিসেরো তার ‘ডি রিপাবলিকা’ গ্রন্থের মাধ্যমে রাষ্ট্রের
প্রকৃতি ও উদ্ভব, সরকারের শ্রেণীবিভাগ এবং এর শাখাসমূহ দ্বারা কিভাবে, ন্যায়বিচার
পরিচালনা করা যায় ইত্যাদি বিষয়াদি আলোচনা করেন। প্লেটোর ল’জ গন্থের সাথে সাজুজ্যপূর্ণ
‘ডি লেগিবাস’ গ্রন্থের মাধ্যমে সিসেরো রোমান আইন সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সিসেরো বলেন, রাষ্ট্র কেবলমাত্র জনগণের সংঘবদ্ধ প্রয়াস নয় বরং
এটি সর্বসাধারণের কল্যাণের উদ্দেশ্য আইনের প্রতি সম্মতি জ্ঞাপনের এক সমবেত প্রচেষ্টা।
রাষ্ট্র টিকে থাকে সকল মানুষের সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে আইন প্রয়োগের মধ্য দিয়ে।
সিসেরোর মতে, আইনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা রাষ্ট্রকে একটি নৈতিক সম্প্রদায় হিসবে
চিহ্নিত করা কর্তব্য। রাষ্ট্র যদি নৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে একটি নৈতিক সমষ্টি হিসেবে দায়িত্ব
পালনে ব্যর্থ হয় এবং এটি যদি নৈতিক ও আদর্শগত বন্ধন দ্বারা যুক্ত না থাকে তা হলে তা
রাষ্ট্র না বরং রাজপথে মারাতœক ডাকাতির’ মত ঘটনায় পরিণত হয়। তিনি মনে করেন রাষ্ট্র
যদি একনায়ক কর্তৃক কঠোর আইন দ্বারাও শাসিত হয় রাষ্ট্রের টিকে থাকার প্রয়োজনে নৈতিক
আইনকে অব্যাহত রাখতে হবে। সিসেরোর মতে মানুষ রাষ্ট্র গড়ার পেছনে একতাবদ্ধ হয়
তাদের প্রকৃতির দূর্বলতার জন্যে নয় বরং প্রকৃতিগত সান্নিধ্যের কারণে।
সিসেরোর মতে, রাষ্ট্রকে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে হলে তার জন্য প্রয়োজন সরকারী ক্ষমতারবণ্টনের পরিকল্পনা। সরকার নির্দেশনা দায়িত্ব একজনের হাতে থাকতে পারে এবং সে সুবাধে
এটি স্বাভাবিক অবস্থায় রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্রর বা গণতন্ত্র হতে পারে। এরিস্টটলের মতোই
সিসেরো মনে করতেন শাসকরা আতœস্বার্থে অথবা জনগণের সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে সরকার
পরিচালনা করবে। এই নীতিমালার ভিত্তিতে তিনি ন্যায়নীতির মাপকাঠি নির্ধারণ করেন।
সিসেরো সরকারের ত্রিমাত্রিক শ্রেণীবিভাগের ক্ষেত্রে রাজতন্ত্রকে উত্তম বলে মনে করেন। তবে
তিনি এটাও মনে করেন যে, রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ও গণতন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত ভারসাম্যপূর্ণ চতুর্থ ধাঁচের রিপাবলিক সরকার হবে সর্বোত্তম।
সিসোরো রচিত ‘ডি রিপাবলিকা’ গ্রন্থটি ছিল ন্যায়নীতির পক্ষে একটি বলিষ্ঠ দলিল। এ গ্রন্থের
বেশিরভাগ স্থান জুড়েই বিস্তৃত রয়েছে ন্যায়নীতির আলোচনা। তাঁর মতে সত্যিকারের আইন
হল প্রাকৃতিক আইন যা যুক্তিশীল চিন্তার দ্বারা পরিচালিত হয়। এ ধরনের আইন সব যুগের
সকল মানুষকে আকৃষ্ট করে। আইন সর্বত্রই এক প্রকার, অপরিবর্তনশীল এবং সব জাতির
সকল মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক। প্রকৃতির আইন তথা পরমার্থিক আইনের ধারণাকে
বিকশিত করার মাধ্যমে সিসেরো প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানাদিতে বিশুদ্ধ যুক্তিশীলতার উপাদান
সন্ধান করেন। এ ধরনের আইনকে সিসেরো সভ্য জীবনের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করেন।
প্রাকৃতিক আইনকে দেশের জন্য ইতিবাচক বলে চিহ্নিত করে তিনি বলেন এগুলোর আইন
যেহেতু উচ্চমার্গীয় যুক্তির মাধ্যমে প্রয়োগযোগ্য এর বাস্তবায়নের জন্য কোন আনুষ্ঠানিক
কর্তৃপক্ষের বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন নেই। সিসেরোর এই দর্শন প্রাথমিক যুগের গীর্জা ও
মধ্যযুগীয় খ্রীষ্টিয় ভাবধারার উপর ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করে।
প্লেটো এবং এরিস্টটলের অসমতার ধারাকে খন্ডন করে সিসেরো মানুষের সমতার প্রতি
গুরুত্বারোপ করেন। মানুষের সমতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সিসেরো জানান মানুষ শিক্ষা দীক্ষা
অথবা সম্পদের দিক থেকে অসমান হলেও মনস্তাত্বিক দিক থেকে তথা যুক্তিশীল চিন্তার
অধিকারী হিসেবে প্রত্যেকেই সমান। তার মতে, ভ্রান্ত পদক্ষেপ, বদ গুণাবলী, মিথ্যাচার
মানুষের মধ্যে অসমতা তৈরি করে। সিসেরো এরিস্টটলের মত বর্ণগত বৈষম্যে বিশ্বাসী ছিলেন না। তাঁর মতে সব মানুষ টিকে থাকার জন্য সমান সামর্থ্য ধারণ করে এবং সব ধরনের
অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেই তাঁরা ভাল মন্দের প্রকারভেদ নির্ণয় করতে সক্ষম। সিসেরোর রাজনৈতিক
চিন্তাধারার অপর উল্লেখ্যযোগ্য দিকটি হল উত্তম সরকারের ভিত্তি হিসেবে জনগণের সম্মতির
প্রতি গুরুত্বারোপ করা। সিসেরোর মতে জনগণের এই ক্ষমতার স্বীকৃতি ছাড়া স্বাধীনতার
কোন অর্থ হতে পারে না। তাঁর মতে, স্বাধীনতার চাইতে সুন্দর আর কিছু নেই; এর মাত্রা
সবার জন্য এক ও অভিন্ন। মোটকথা, সিসেরোর স্বাধীনতা বিষয়টিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল
প্রথমত: স্বাধীনতা সকল নাগরিককে তাদের শ্রেণী-বর্ণ নির্বিশেষে দেয়া প্রয়োজন এবং দ্বিতীয়ত:
জনগণের সম্মতিকে বৈধ সরকারের একমাত্র ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ভাবে সম্মতির
প্রতি গুরুত্বারোপের বিষয়টি যা কিনা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ জন লকের চিন্তাধারায় গুরুত্বের
সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রতত্তে¡র ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
সারকথা
ঐতিহাসিক পলিবিয়াস রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান বিষয়ক রাজনৈতিক গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে
খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন। তাঁর বস্তুনিষ্ঠ লেখনীতে মাত্র অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে একটি
ছোট্ট নগর রাষ্ট্র থেকে রোম কিভাবে একটি বিশ্ব সাম্রাজ্যে পরিণত হয় তা বিধৃত হয়েছে।
রোমের এই অসামান্য সাফল্যের পেছনে এর মিশ্র সরকার ব্যবস্থা, ক্ষমতার ভারসাম্য,
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিয়ন্ত্রণ নীতি ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানাদির অবদানকে তিনি
অত্যন্ত তাৎপর্যের সাথে ব্যাখ্যা করেন।
সিসেরো প্রাচীন গ্রীক চিন্তাধারার ভিতকে খন্ডনের মাধ্যমে মানুষের সমতা ও স্বাধীনতার
ধারণাকে সম্প্রসারিত করে প্রত্যেক ব্যক্তির প্রাপ্ত সম্মানের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
মানুষের যুক্তিশীল চিন্তানির্ভর ন্যায়বিচার ধারণা তাঁরই উদ্ভাবিত। তিনি নৈতিককতা ও
আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে কাজ করেন। মানবতাবাদী রাষ্ট্রচিন্তার ও
বিশ্বভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রে তিনিই প্রথম চিন্তাবিদ। তাঁর দর্শন নীতিশাস্ত্র, সাহিত্য, আইনশাস্ত্র ও রাজনীতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এবং এখানেই তাঁর চিন্তার বিশেষত্ব।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। পলিবিয়াস কোথাকার নাগরিক ছিলেন?
(ক) স্পার্টা;
(খ) আর্কেডিয়া;
(গ) রোম;
(ঘ) এথেন্স।
২। সিসোরো কোন দেশের মানুষ ছিলেন।
(ক) ভারতবর্ষের;
(খ) চীন দেশের;
(গ) রোম দেশের;
(ঘ) ইতালীর।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। পলিবিয়াস প্রণীত সরকারের শ্রেণীবিভাগ কি?
২। ক্ষমতার ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে পলিবিয়াসের মতামত কি ছিল?
৩। সিসোরো কি জন্য বিখ্যাত?
৪। ন্যায়বিচার অর্থে সিসেরো কি বুঝাতে চেষ্টা করেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। রাষ্ট্রতত্তে¡র ইতিহাসে পলিবিয়াসের খ্যাতির কারণসমূহ আলোচনা করুন।
২। সিসোরোর রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রধান দিকগুলো আলোচনা করুন।
সঠিক উত্তর : ১। খ, ২। গ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]