মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন।

ভ‚মিকা: রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসকে এর প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার
প্রেক্ষিতে সাধারণতঃ তিনটি যুগে ভাগ করা হয়। এগুলো হল প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক
যুগ। এই অধ্যায়ে আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা। মধ্যযুগ আপন বৈশিষ্ট্যে
বৈশিষ্ট্যমÐিত। মধ্যযুগের সূচনাকাল নিয়ে বিতর্কথাকলেও অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে
টিউটোনিক উপজাতিদের দ্বারা রোমান সাম্রাজ্যের সূচনাকাল থেকে এর যাত্রা শুরু হয়। ষোড়শ
শতাব্দীতে জাতি রাষ্ট্রের উদ্ভব পর্যন্তএ যুগ বিস্তৃত ছিল। হার্নশ একাদশ শতাব্দীর গ্রেগরীয়
আন্দোলন থেকে প্রটেষ্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলন পর্যন্তমধ্যযুগের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণপর্যায় হিসেবে
চিহ্নিত করেন। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীতে মধ্যযুগের নতুন ভাবধারা পরিলক্ষিত হয়। বিদ্যমান
আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নানা শ্রেণীর মানুষের সংগ্রাম ও প্রতিবাদ দ্বারা এ যুগ
তাৎপর্যমন্ডিত। অধ্যাপক ডানিং যথার্থই বলেছেন যে, মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইতিহাসের
মূল বিষয় হচ্ছে ইউরোপের প্রায় সর্বত্র খ্রিষ্টধর্মের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। বৈশিষ্ট্য:-
● ধর্মবিশ্বাস: মধ্যযুগে ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা দ্বারা রাষ্ট্রীয় জীবনের সবদিক নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা
পরিলক্ষিত হয়। এই যুগে ধর্মবিশ্বাস ছিল মানব জীবনের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি।
রাষ্ট্রচিন্তা গভীরভাবে খ্রিষ্ট ধর্মের মূলনীতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। চার্চও রাষ্ট্রছিল এক ও
অভিন্ন। গির্জার পুরোহিতের গুরুত্বছিল অপরিসীম। তিনি ছিলেন ধর্মের ধারক ও বাহক।
কোন সৃজনশীল, স্বাধীন ও স্বকীয় চিন্তা-ভাবনা মধ্যযুগে গড়ে উঠে নি। গির্জাই ছিল যাবতীয়
জ্ঞানের রক্ষক ও প্রচারক। পুরোহিততন্ত্রের উত্থান মধ্যযুগের একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।
অধ্যাপক স্যাবাইন বলেন “ঈযৎরংঃরধহরঃু ধিং ধ ফড়পঃৎরহব ড়ভ ংধষাধঃরড়হ”
● বিশ্বজনীনতাবাদ: মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য হল তার বিশ্বজনীনতাবাদ। রোমানরা বিশ্বাস
করতেন যে, তাঁদের সাম্রাজ্য ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রত্যক্ষ ফল। অতত্রব তা সার্বজনীন ও
শ্বাশত। খ্রিষ্টধর্ম এই গভীর বিশ্বাসের প্রতি জোরালো সমর্থন দিয়েছিল। সম্রাট
কনষ্ট্র্যানটাইন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের পর এই ধর্ম সরকারীভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। রোম
সাম্রাজ্যের মাধ্যমে গির্জা একটি বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এ বিশ্বজনিন সমাজের
একটি রূপ হল সাম্রাজ্য এবং অন্যরূপ হল চার্চ।
● রাষ্ট্রও গির্জার মধ্যে বিরোধ: মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণবৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাষ্ট্রও
গির্জার মধ্যকার বিরোধ ও সংঘর্ষ। দীর্ঘসময় ধরে এই বিরোধ বিদ্যমান ছিল। ফলে ধর্ম
ও রাজনীতি কোনটাই সঠিক পথে পরিচালিত হয় নি। ওয়ানলাস বলেন, “মধ্যযুগীয়
রাষ্ট্রদর্শন গির্জা ও রাষ্ট্রশক্তির আধিপত্য বিস্তারের বিরোধিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।” রাষ্ট্রের
প্রধান হিসেবে সম্রাট এবং গির্জার প্রধান হিসেবে পোপ-এই দুই কর্তৃত্বের বিরোধের মধ্যে
মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা পরিব্যাপ্ত ছিল। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্পেনসহ সমগ্রইউরোপে গীর্জার
প্রভাব ছিল অপ্রতিহত। গির্জার প্রভাব বৃদ্ধি ও হ্রাস দু'টোই ঘটেছিল মধ্যযুগে। এয়োদশ
শতাব্দী পর্যন্তপোপ তাঁর আধিপত্য ও কর্তৃত্ব অক্ষুন্নরাখতে সক্ষম হয়েছিল। ষোড়শ
শতাব্দীতে জাতি রাষ্ট্রের উদ্ভবের ফলে পোপের প্রতিপত্তি বহুলাংশে হ্রাস পেতে থাকে।
● অরাজনৈতিক: মধ্যযুগ ছিল মূলত অরাজনৈতিক। তবে এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
অধ্যাপক গেটেলের মতে,“রোমান আইনশাস্ত্রের প্রসারের কথা বাদ দিলে গ্রীক নগর রাষ্ট্রের
পতনের পর থেকে জাতীয় রাষ্ট্রের উত্থানের আগ পর্যন্তরাষ্ট্রদর্শন ছিল অরাজনৈতিক
ধরনের।” অধ্যাপক ডানিং বলেন “ এ যুগের
আশা-আকাক্সক্ষা ও মতাদর্শধর্মীয় বিশ্বাসের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। মুক্তচিন্তার অভাবে
রাজনৈতিক দর্শন ধর্মীয় চেতনা ও ন্যায় শাস্ত্রের গভীর গহবরে বন্দি ছিল। মধ্যযুগে রাষ্ট্রচিন্তা ছিল, কিন্তরাষ্ট্রতত্ত¡ ছিল না। রাজনৈতিক বিষয়াদির ব্যাপারে মধ্যযুগ গভীরভাবে পাঠ-১ মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা ধর্মীয় গÐির বাইরে ছিল না।
মনোনিবেশ করেনি। জনগণ নিজেদেরকে মূলত ঐশ্বরিক চিন্তা-ভাবনায় নিয়োজিত রাখত।
খ্রিষ্টীয় চিন্তাবিদদের ধারণায় মানব সমাজে দ্বৈতসংগঠন ও নিয়ন্ত্রণ পরিলক্ষিত হয়। একটি
হচ্ছে আত্মিক এবং অপরটি জাগতিক। গির্জা এবং পুরোহিতগণ মানুষের আধ্যাত্মিক
জীবনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করতো। অপরদিকে সম্রাট রাজনৈতিক জীবনে শান্তি,
শৃঙ্খলা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতো।
● শোষণের ইতিহাস: মধ্যযুগের ইতিহাসকে দীর্ঘশোষণের ইতিহাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সমাজের বিকাশের গতি ছিল অত্যন্তমন্থর। যাজকেরা পাপ-পূণ্য ও পরলোকের ভয়ের কথা
বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থও আনুগত্য আদায় করত। বিদ্যমান আর্থ-সামজিক
ব্যবস্থা এবং শ্রেণী বিশেষের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে।
● সামন্তবাদ: মধ্যযুগে রাজা ও গির্জার মধ্যে বিরোধ যখন তুঙ্গে, ঠিক সে সময় উদ্ভব ঘটে
সামন্ততন্ত্রের। সামন্তবাদ এক ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যার
কেন্দ্রছিল ভ‚মি। ভ‚মিভিত্তিক ক্ষমতা, অধিকার ও সুবিধা প্রভৃতি ছিল এর বৈশিষ্ট্য।
মধ্যযুগের শাসক বলতে সামন্তপ্রভুদের বোঝাতো। অধ্যাপক ডানিং উল্লেখ করেন,
মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা একদিকে গির্জা বনাম রাষ্ট্র, অন্যদিকে সামন্ততন্ত্রকে কেন্দ্রকরে বিকাশ
লাভ করেছিল।
● রাজতন্ত্রের বিকাশ: রাজতন্ত্রও রাষ্ট্রপ্রায় সমার্থক ছিল। হার্নশ এর মতে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের
চুক্তির গোড়াপত্তন হয় মধ্যযুগে। জনগণ তখন ধারণা পোষণ করতো যে, রাজার ক্ষমতা
ঈশ্বর প্রদত্ত তাই তিনি জনস্বার্থবিরোধী কাজ করতে পারেন না।
● সুসংগঠিত রাষ্ট্রের অনুপস্থিতি: মধ্যযুগে কোন সুসংগঠিত রাষ্ট্রছিল না। এই যুগের শেষের
দিকে জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে এবং এর প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তবে রাষ্ট্রের প্রভাব খুব ব্যাপক
ভিত্তিক ছিল না।
● সাম্রাজ্য: মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণউপাদান হল সাম্রাজ্য। রোম সাম্রাজ্যের
পতনের পর তাদের আইনী কাঠামো ভাঙ্গনের মুখে এসে দাঁড়ায়। রাষ্ট্রচিন্তা ও দর্শন চিন্তার
ক্ষেত্রে ভাটা পড়লেও মধ্যযুগের শাসন ব্যবস্থায় সাম্রাজ্য প্রতিষ্টার চিন্তা ও ধারাবাহিকতা
ছিল একটি বাস্তব সত্য।
● অবৈজ্ঞানিক রাষ্ট্রচিন্তা: অনেকের মতে মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা ছিল অবৈজ্ঞানিক। তবে আধুনিক
বিচারে কোনক্রমেই তা গুরুত্বহীন ছিল না। মধ্যযুগের সংঘাতময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপর ভর করেই আধুনিক যুগের আগমন ঘটেছে। মধ্যযুগের সুদীর্ঘসংগ্রামের ফসল হচ্ছে আধুনিক ইউরোপ। সারকথা মধ্যযুগে ধর্মবিশ্বাস ছিল মানব জীবনের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি। রাজনীতি ধর্মের বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। মধ্যযুগে সমাজ বিকাশের গতি ছিল মন্থর। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুছিল ভ‚মি। মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা গির্জা ও সামন্ততন্ত্রকে কেন্দ্রকরে বিকাশ লাভ করেছিল। মধ্যযুগে সমগ্র রাষ্ট্রের প্রতীক ছিল রাজা
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। মধ্যযুগে মানব জীবনের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি কি ছিল?
(ক) রাজতন্ত্র; (খ) পোপ;
(গ) ক্ষমতা; (ঘ) ধর্মবিশ্বাস।
২। “ঈযৎরংঃরধহরঃু ধিং ধ ফড়পঃৎরহব ড়ভ ংধষাধঃরড়হ" এই বক্তব্যটি কার?
(ক) টমাস একুইনাস; (খ) সেন্ট অগাষ্টিন;
(গ) অধ্যাপক স্যাবাইন; (ঘ) অধ্যাপক ডানিং।
৩। ‘ঞযব সরফফষব ধমব ধিং ঁহঢ়ড়ষরঃরপধষ' এই উক্তিটি কার?
(ক) কনাষ্ট্রানটাইন; (খ) অধ্যাপক ডানিং;
(গ) অধ্যাপক গেটেল; (ঘ) অধ্যাপক স্যাবাইন।
৪। জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে কোন শতাব্দীতে?
(ক) ষোড়শ শতাব্দীতে; (খ) এয়োদশ শতাব্দীতে;
(গ) পঞ্চদশ শতাব্দীতে; (ঘ) চতুর্থদশ শতাব্দীতে।
উত্তরমালা ঃ- ১। ঘ ২। ঘ ৩। খ ৪। ক
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্নঃ
১। মধ্যযুগে গির্জা ও রাষ্ট্রের সম্পর্ককেমন ছিল?
২। অধ্যাপক ডানিং মধ্যযুগ সম্পর্কেকি মন্তব্য করেছেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১। মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]