ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক চিন্তাজগতে সেন্ট অগাষ্টিন একটি বিশিষ্ট নাম। মধ্যযুগের চিন্তাবিদদের
মধ্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণস্থান দখল করে আছেন। বিশ্বইতিহাসের এক সংকটময় মুহ‚র্তে৩৫৪
খ্রিষ্টাব্দে উত্তর আফ্রিকার নুমিদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন নিঃধর্মগোষ্টীয় প্যাগান
(চধমধহ) এবং মাতা ছিলেন একজন গোঁড়া খ্রিষ্টান। তাঁর মাতার কাছ থেকেই তিনি খ্রিষ্ট
ধর্মের প্রাথমিক ধারণা লাভ করেন। বাল্যকালে অগাষ্টিন তাঁর গুরু সেন্ট এমব্রোসের
(অসনৎড়ংব) সান্নিধ্য ও সাহচর্যলাভ করেন। স্বল্পকালের মধ্যে তিনি তাঁর সাধনা ও পরিশ্রম
দ্বারা গুরুর প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেন। এটা ছিল তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। ৩৮৭
খ্রিষ্টাব্দে তিনি খ্রিষ্টান ধর্মেদীক্ষিত হন। তাঁর অসাধারণ ধর্মজ্ঞান ও পান্ডিত্যের জন্য তিনি
উত্তর আফ্রিকার হিপ্পো নামক স্থানের ধর্মযাজকের পদ অলংকৃত করেন। ৪৩০ সালে মৃত্যুর
পূর্বপর্যন্ততিনি এ পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন। অগাষ্টিনের চিন্তার উল্লেখযোগ্য দিক হল খ্রিষ্টান
কমনওয়েলথ সম্পর্কেধারণা। কমনওয়েলথকে তিনি আধ্যাত্মিক বিকাশের চরম রূপ বলে গণ্য
করেছেন। খ্রিষ্টান কমনওয়েলথের ধারণা শুধুমধ্যযুগেই নয়, আধুনিক যুগেও ব্যপ্তি লাভ
করেছে। সেন্ট অগাষ্টিনের রচনাবলীর মধ্যে (ঞযব ঈরঃু ড়ভ এড়ফ) অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের নগরী' হচ্ছে
সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। অগাষ্টিনের সামগ্রিক চিন্তা-ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায় এই
গ্রন্থটিতে। তাঁর এই রচনা সমগ্রমধ্যযুগের চিন্তাধারাকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছিল। পঞ্চম
শতাব্দীতে এটি ছিল অত্যন্তপ্রভাবশালী গ্রন্থ। তাঁর মতে সমগ্রমানব সমাজ এই নগরীর
অন্তর্ভুক্ত। তাঁর সময়ে তিনি যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন সে পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁর
রাজনৈতিক দর্শন উপস্থাপন করেছেন। রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে তাঁর প্রভাব অপরিসীম। রাষ্ট্রচিন্তায়
মধ্যযুগীয় যে স্রোত ধারা প্রবাহিত হয় তার গতিসীমা বহুলাংশে তিনি নির্ধারিত করে
দিয়েছিলেন। অধ্যাপক স্যাবাইন যথার্থই বলেছেন, তাঁর রচনাগুলো ছিল চিন্তার খনি বিশেষ
যা থেকে পরবর্তীকালে ক্যাথলিক, প্রটেস্ট্যান্ট চিন্তাবিদ ও লেখকগণ মনিমুক্তা আহরণ
করেছেন। তাঁর “ঞযব ঈরঃু ড়ভ এড়ফ” গ্রন্থটি প্রত্যেকের নিকট ছিল একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ।
ইতিহাসের এক সংকটকালে লিখিত হয়েছিল এ গ্রন্থটি। কতকগুলো নির্দিষ্ট চিন্তার সন্ধান এ
গ্রন্থেপাওয়া যায়। ‘সিটি অব গড’ এর মধ্যে আমরা মধ্যযুগের একটা সুন্দর চিত্র পাই। সেন্ট
অগাষ্টিনের চিন্তাধারার মূলে ছিল রোম সাম্রাজ্যের বিপর্যয়। তাঁর সময় রোমান সভ্যতা চরম
সংকটের সম্মুখীন হয়। রোমান সাম্রাজ্য ছিন্ন-বিচ্ছিন্নহয়ে যাবার পর বহিরাগত জাতিগুলো
এসে রোমান সভ্যতা ও খ্রিষ্ট ধর্মের উপর চরম আঘাত হানে। জাতীয় ঐক্য ও সংহতিতে চরম
সংকট দেখা দেয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সর্বত্র বিরাজ করতে শুরু করে।
গির্জা ও রাজশক্তির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ ও সংকটকে আরো ঘনিভ‚ত করে তুলেছিলো।
রোমান সাম্রাজ্যের পতনের জন্য খ্রিষ্টান ও বহু প্যাগানরা পরস্পরের উপর দোষারোপ করতে
থাকে। বহু প্যাগানদের উত্থান এবং খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব হ্রাস তাঁকে চিন্তিত করে তোলে। তিনি
রোমের পতনকে ঐশ্বরিক ইচ্ছার বাস্তবায়ন বলে মনে করেন। তিনি প্যাগানদের আক্রমণ
থেকে খ্রিষ্টধর্মরক্ষা করার উপায় উদ্ভাবনে মনোনিবেশ করেন।
অগাষ্টিন রাষ্ট্রও খ্রিষ্টধর্মকে পাশাপাশি রাখেন। তাঁর মতে রাষ্ট্রকে মান্য করার প্রধান কারণ হল
এই যে, রাষ্ট্রের সামাজিক ও রাজনৈতিক শৃঙ্খলার পেছনে ঐশ্বরিক এক পরিকল্পনা থাকে যা
তার কার্যকলাপকে ধর্মীয় লক্ষে পৌছাতে সহায়তা করে। এ ছাড়া রাষ্ট্রকে মান্য করার আর
অগাষ্টিনের ঈশ্বরের
নগরী একটি বিমূর্ত
ধারণা।
একটি কারণ হল রাষ্ট্রশান্তি, শৃঙ্খলা ও সম্পত্তি রক্ষা করে। তিনি উল্লেখ করেন যে, রাষ্ট্রের
প্রতি জনগণের আনুগত্য এমন হওয়া প্রয়োজন যা স্রষ্টার বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। রাষ্ট্রের
কোন আইন ইশ্বরের আইনের বিরোধি হলে নাগরিকগণ সে আইন মানবে না। অগাষ্টিন ধর্মতত্ত¡
ও খ্রিষ্টীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জোরালোভাবে বলেন যে,
রোমান সাম্রজ্যের পতনের জন্য কোন ক্রমেই খ্রিষ্টধর্মদায়ী নয়। তিনি বুঝাবার চেষ্টা করেন
যে, কোন দেবতার ইচ্ছা বা অনিচ্ছা অথবা আর্শিবাদ বা অভিশাপের কারণে কোন সাম্রাজ্য
ধ্বংস হতে পারে না। তাঁর গ্রন্থ‘সিটি অব গড’ এ তিনি দার্শনিক তত্ত¡ও ইতিহাসের পটভ‚মিকায়
রোমের পতনের কারণ বিশ্লেষণ করেন। ‘সিটি অব গডের’ চমকপ্রদ বিষয় হল দুই শহরের
কাহিনী। একটি শহরের অবস্থান স্বর্গে, অন্যটি পৃথিবীতে । মানুষের দু'টি সত্তা যেমন দেহ ও
আত্মা, এই দুই রাজ্যের প্রতীক। প্রতিটি মানুষ উভয় রাজ্যের নাগরিক।
স্বর্গরাজ্য হল সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও মহত্বের সাম্রাজ্য। বিধাতার প্রতি অকুন্ঠ আনুগত্য এবং
স্বর্গীয় আনন্দ ও শান্তিহল এর বৈশিষ্ট্য। পার্থিব রাজ্য লোভ-লালসা, স্বার্থপরতা, নীচতা ও
হিংসায় ভরপুর। এই রাষ্ট্রঅস্থায়ী, কিন্তুস্বর্গরাজ্য চিরস্থায়ী। পার্থিব রাজ্য অন্ধকার, মোহ,
ক্ষমতালিপ্সা, আত্মপ্রীতি, কালিমা ও কামনায় আচ্ছন্ন। অন্যদিকে স্বর্গরাজ্য জ্যোর্তিময়,
চিরভাস্বর প্রেম-প্রীতি, আত্মত্যাগ ও আধ্যাত্মিক শক্তির জগত। পরিপূর্ণআলোর জন্য এটা
হচ্ছে অনাবিল শান্তির জগত। সেন্ট অগাষ্টিন বলেন যে, ন্যায়নীতি ও শান্তিহল স্বর্গরাজ্যের
দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। ন্যায়নীতি ও শান্তির আদর্শবাস্তবায়িত হতে পারে কেবল স্বর্গরাজ্যের
অনুরূপ শাসন ব্যবস্থায়। ন্যায়নীতি হল সেই গুণ ও সততা যার ফলে যার যা প্রাপ্য তা মিটিয়ে
দেওয়া হয়।
ন্যায়নীতি হলো রাষ্ট্রের ভিত্তিস্বরূপ। ন্যায়নীতি প্রত্যাহার করা হলে রাষ্ট্রও এক বিরাট দস্যু
দলের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। এ ভাবে স্বর্গরাজ্যের প্রশংসা করে তিনি সার্বজনীন রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। অগাষ্টিন বিশ্বাস করতেন যে, গির্জার প্রতি আনুগত্য ও প্রেম
স্বর্গরাজ্যে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ। তিনি উল্লেখ করেন যে, পৃথিবীতে গ্রির্জাই হল স্বর্গরাজ্যের
প্রতিনিধি। আর এ কারণে গির্জাকে মান্য করা উচিত। গির্জার মাধমে সমাজ পরিচালিত হবে।
তাঁর স্বপ্নছিল সার্বজনীন খ্রিষ্টীয় সমাজ (টহরাবৎংধষ ঈযৎরংঃরধহ ঝড়পরবঃু) প্রতিষ্ঠা করা। তাঁর
মতে গির্জা একটি বাস্তব ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান,যার মাধ্যমে মানুষ মুক্তির সন্ধান পেতে পারে।
তিনি গির্জাকে সামাজিক মানুষের মহা মিলন স্থান বলেছেন। সমাজে গির্জার ভ‚মিকা উপেক্ষা
করা যায় না। এভাবে অগাষ্টিন রাষ্ট্রের উপর গির্জার প্রধান্য বিস্তারের কথা ব্যাখ্যা করেন।
অগাষ্টিনের চিন্তাধারার একটি গুরুত্বপূর্ণদিক হল এই যে, তিনি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও
সামাজিক স্বার্থের উপরে আআত্মিক মুক্তিকে বেশী গুরুত্বদিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা ও ধর্মকে বাদ
দিয়ে তিনি কোন কিছুই আলোচনা করেন নি। মানুষের চরিত্র গঠন ও সমাজকে সুন্দর করার
জন্য রাজনীতির চেয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ অধিক প্রয়োজন। তাঁর মতে ধর্মবর্জিত রাজনীতি
মানুষকে কুপথে পরিচালিত করে। তিনি উল্লেখ করেন যে, জনগণের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ
জাগিয়ে তোলা রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণকাজ। অগাষ্টিনের মতে মানুষের ইতিহাস হল স্বর্গীয়
ও পার্থিব শহরের সংগ্রামের ইতিহাস। সভ্যতার উষালগ্নথেকেই ন্যায়, অন্যায়, ধর্মও অধর্মের
বিরোধ চলে আসছে। সৎ-অসৎ, শুভ-অশুভর প্রতীক হল স্বর্গীয় ও পার্থিব শহর। সমাজে দুটি
পরস্পর বিরোধী শক্তি থাকবেই। এবং এদের মধ্যে দ্বন্দ¡ও সংঘাত অনিবার্য। শেষ পর্যন্তসত্য
ও ন্যায়ের জয় হবে। স্বার্থপরতা, ক্ষমতা ও অর্থের লিপ্সা মানুষকে বিপথে পরিচালিত করে।
মানুষ যখন আত্মার দ্বারা শাসিত হয় তখনই ন্যায় বিচার অর্জিত হয়। অগাষ্টিন ন্যায় বিচার
তত্ত¡কে সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেছেন।
সারকথা
ন্যায়নীতি ছাড়া
আদর্শ রাষ্ট্র গঠন
সম্ভব নয়
সততা ও
ন্যায়নীতিই
মানুষের মুক্তি
আনতে পারে
মধ্যযুগে গির্জা ও রাষ্ট্রশক্তির মধ্যে বিরোধের সন্ধিক্ষণে সেন্ট-অগাষ্টিনের চিন্তাধারা
রাষ্ট্রনায়ক, চিন্তাবিদ ও যাজকদের প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিল। চিন্তাবিদ ক্রিষ্টোফার
মরিস যথার্থই বলেছেন,“অগাষ্টিনের চিন্তাধারা মধ্যযুগে সবচেয়ে বেশী সমাদৃত হয়েছে।”
রোমান সাম্রাজ্যের দুর্দিনে সেন্ট-অগাষ্টিন খ্রিষ্টধর্মের ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে আসেন।
সেন্ট অগাষ্টিন ছিলেন মধ্যযুগের খ্রিষ্টীয়-চার্চের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণনাম।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক () চিহ্ন দিন।
১। সেন্ট অগাষ্টিন খ্রিষ্ট ধর্মের প্রাথমিক ধারণা কার কাছ থেকে লাভ করেন?
(ক) বাবার কাছ থেকে; (খ) মা'র কাছ থেকে;
(গ) গুরু এমব্রোসের কাছ থেকে; (ঘ) পোপের কাছ থেকে।
২। মধ্যযুগের চিন্তাধারাকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছিল কোন গ্রন্থটি?
(ক) আল মোকদ্দিমা; (খ) দি রিপাবলিক;
(গ) দি সিটি অব গড।
৩। মানুষের চরিত্র গঠন ও সমাজকে সুন্দর করার জন্য রাজনীতির চেয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ
অধিক প্রয়োজন। এই বক্তব্যটি কার?
(ক) সেন্ট-এমব্রোসের; (খ) প্যাগানদের;
(গ) অষ্টিনের; (ঘ) সেন্ট অগাষ্টিনের।
৪। সেন্ট অগাষ্টিনের মতে ক্ষমতা, স্বার্থপরতা ও অর্থের লিপ্সা মানুষকে কোন পথে
পরিচালিত করে?
(ক) সুপথে; (খ) বিপথে;
(গ) কল্যাণের দিকে; (ঘ) শান্তির দিকে।
উত্তরমালা ঃ ১। খ ২। গ ৩। ঘ ৪। খ
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সেন্ট-অগাষ্টিনের চিন্তাধারা আলোচনা করুন।
২। সিটি অব গড পুস্তকটির মূল বক্তব্য কি?
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র